ক্রোমোজোম কাকে বলে 

ক্রোমোজোম কাকে বলে 

ক্রোমোজোম কাকে বলে 

জীব বিজ্ঞানের একটি গুরুপ্তপূর্ণ বিষয় হল,  জিনতত্ব এর ধারণা। এই জিনতত্ত্বের বা প্রাণীর প্রজননের মতো গুরুপ্তপূর্ণ বিষয় ব্যাখ্যা করতে প্রয়োজন হয় ক্রোমোজোমের ধারণা।  আজকের এই লেখায় আমরা জন্য, ক্রোমোজোম কাকে বলে এবং এর সমন্ধে বিস্তারিত আলোচনা।   

ক্রোমোজোম কাকে বলে

ক্রোমোজোম হল কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত একটি দীর্ঘ, সূক্ষ্ম, সুতোর মতো কাঠামো যা ডিএনএ এবং প্রোটিন দিয়ে তৈরি। ক্রোমোজোমগুলি জিন বহন করে, যা কোষের কার্যকলাপকে নিয়ন্ত্রণ করে।

ক্রোমোজোমগুলি সাধারণত দৈর্ঘ্য এবং আকৃতির ক্ষেত্রে পৃথক হয়। মানুষের প্রতিটি কোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে, যার মধ্যে ২২ জোড়া অসম এবং একটি জোড়া সমমিত। অসম ক্রোমোজোমের একটি জোড়াকে অ্যালোসোম বলা হয়, এবং সমমিত ক্রোমোজোমের জোড়াকে অটোজোম বলা হয়।

ক্রোমোজোম আবিষ্কার 

ক্রোমোজোম আবিষ্কারের ইতিহাসের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা:

  • ১৮৮২: ভিক্টর হেইনরিখ ফন বেলিনের নেতৃত্বে একটি দল মাছ এবং উটের বীর্য কোষের মধ্যে ক্রোমোজোম পর্যবেক্ষণ করে।
  • ১৮৮৮: থিওডর বোভেরি এবং আলফ্রেড স্ট্রেসবার্গার স্বাধীনভাবে আবিষ্কার করেন যে ক্রোমোজোমগুলি জিন বহন করে।
  • ১৯৫৩: জেমস ডি. ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক আবিষ্কার করেন যে ডিএনএ হল জিনের উপাদান।

ক্রোমোজোমের কাজ

ক্রোমোজোমের প্রধান কাজ হল একটি জীবের জিনগত তথ্য সংরক্ষণ করা। জিন হল ডিএনএ অণুর অংশ যা প্রোটিন তৈরির জন্য নির্দেশাবলী সরবরাহ করে। ক্রোমোজোমগুলি ডিএনএ অণুগুলিকে একটি সংগঠিত, ঘনীভূত আকারে সংরক্ষণ করে যাতে এগুলি সহজেই পুনরুৎপাদন করা যায়।

ক্রোমোজোমের অন্যান্য কাজগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • কোষ বিভাজনের সময় জিনগত তথ্যকে সঠিকভাবে সন্তান কোষে স্থানান্তর করা।
  • জিনগত বৈচিত্র্য তৈরি করা, যা প্রজাতির বিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • কোষের বৃদ্ধি এবং বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করা।

ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন

ক্রোমোজোম ভৌত গঠন অধ্যায়ন করার উপযুক্ত দশা হল মাইটোটিক মেটাফেজ দশা। এই মাইটোটিক মেটাফেজ দশায় একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের গঠন নিম্নরূপ হয়:

  • মুখ্য খাঁজ (primary constriction) বা সেন্ট্রোমিয়ার: সেন্ট্রোমিয়ার হল ক্রোমোজোমের কেন্দ্রীয় অংশ যা ক্রোমোজোমকে দুটি সমান অংশে বিভক্ত করে। সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমকে মাইটোটিক স্পিন্ডলে সংযুক্ত করে, যা কোষ বিভাজনের সময় ক্রোমোজোমগুলিকে তাদের স্থানে রাখে।
  • গৌণ খাঁজ বা (secondary constriction), স্যাটেলাইট অঞ্চল: কিছু ক্রোমোজোমে, সেন্ট্রোমিয়ামের কাছে একটি ছোট, ঘন অংশ থাকে, যাকে গৌণ খাঁজ বা স্যাটেলাইট অঞ্চল বলা হয়। গৌণ খাঁজ ক্রোমোজোমকে একটি বড় এবং একটি ছোট ক্রোমাটিডে বিভক্ত করে।
  • ক্রোমাটিড: ক্রোমোজোমের দুটি সমান অংশকে ক্রোমাটিড বলা হয়। ক্রোমাটিডগুলি ডিএনএ এবং হিস্টোন প্রোটিনের দ্বারা গঠিত।
  • ক্রোমোনেমা: ক্রোমাটিডের একটি দীর্ঘ, সূক্ষ্ম অংশকে ক্রোমোনেমা বলা হয়। ক্রোমোনেমা ডিএনএ এবং হিস্টোন প্রোটিনের একটি ঘন, সুসংগঠিত কাঠামো।
  • ক্রোমোমিয়ার: ক্রোমোনেমার একটি ছোট, ঘন অংশকে ক্রোমোমিয়ার বলা হয়। ক্রোমোমিয়ার ক্রোমোনেমার আকার এবং আকৃতি নির্ধারণ করে।
  • সেন্ট্রোমিয়ার: সেন্ট্রোমিয়ার হল ক্রোমোজোমের কেন্দ্রীয় অংশ যা ক্রোমাটিডগুলিকে সংযুক্ত করে।
  • কাইনেটোকোর: সেন্ট্রোমিয়ামের চারপাশে অবস্থিত একটি প্রোটিন কাঠামোকে কাইনেটোকোর বলা হয়। কাইনেটোকোর মাইটোটিক স্পিন্ডলে সংযুক্ত হয় এবং ক্রোমোজোমগুলিকে তাদের স্থানে রাখতে সাহায্য করে।
  • নিউক্লিওলার অর্গানাইজার: কিছু ক্রোমোজোমে, সেন্ট্রোমিয়ামের কাছে একটি ছোট, ঘন অংশ থাকে যাকে নিউক্লিওলার অর্গানাইজার বলা হয়। নিউক্লিওলার অর্গানাইজার নিউক্লিয়াস গঠনের জন্য প্রয়োজনীয়।

মাইটোটিক মেটাফেজ দশায়, ক্রোমোজোমগুলি কোষের মাঝখানে টেট্র্যাড আকারে সাজানো থাকে। এই অবস্থায়, ক্রোমোজোমগুলি সবচেয়ে ভালভাবে দৃশ্যমান হয়।

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন

ক্রোমোজোমগুলি ডিএনএ এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত। 

ডিএনএ 

ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান হল ডিএনএ। ডিএনএ হল একটি দীর্ঘ, সূক্ষ্ম অণু যা দুটি সমান অংশ নিয়ে গঠিত। প্রতিটি অংশকে একটি স্ট্র্যান্ড বলা হয়। দুটি স্ট্র্যান্ড একটি দ্বৈত হেলিক্স গঠনে একে অপরের সাথে জোড়া লাগানো হয়।

প্রোটিন

ক্রোমোজোমের  অন্যতম উপাদান হল প্রোটিন। প্রোটিনগুলি ডিএনএকে একটি ঘন, সুসংগঠিত কাঠামোতে প্যাক করে।

ক্রোমোজোমে দুটি প্রধান ধরনের প্রোটিন রয়েছে: হিস্টোন প্রোটিন এবং নন-হিস্টোন প্রোটিন।

  • হিস্টোন প্রোটিন: হিস্টোন প্রোটিনগুলি ডিএনএ-এর চারপাশে একটি বল তৈরি করে যাকে নিউক্লিওজোম বলা হয়।
  • নন-হিস্টোন প্রোটিন: নন-হিস্টোন প্রোটিনগুলি ডিএনএ-এর সংগঠন এবং কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিউক্লিওজোম

নিউক্লিওজোম হল ডিএনএ এবং হিস্টোন প্রোটিনের একটি সংমিশ্রণ। নিউক্লিওজোমগুলি ডিএনএ-কে একটি ঘন, সুসংগঠিত কাঠামোতে পরিনিত করতে সাহায্য করে।

একটি নিউক্লিওজোমে ডিএনএর একটি টুকরো থাকে যা দুটি হিস্টোন অণু দ্বারা আবৃত থাকে। ডিএনএ টুকরোটিকে ডিঅক্সিরিবোজ-ফসফেট ব্যাকবোন বলা হয়। হিস্টোন অণুগুলিকে H2A, H2B, H3 এবং H4 বলা হয়।

নিউক্লিওজোমগুলি একটি টেট্র্যাড গঠনে একসাথে জোড়া লাগানো থাকে। একটি টেট্র্যাড চারটি নিউক্লিওজোম নিয়ে গঠিত।

নিউক্লিক এসিড

ক্রোমোজোমে দুটি প্রধান ধরনের নিউক্লিক এসিড রয়েছে: ডিএনএ এবং আরএনএ।

  • ডিএনএ: ডিএনএ হল একটি দীর্ঘ, সূক্ষ্ম অণু যা কোষের জিন বহন করে।
  • আরএনএ: আরএনএ হল একটি ছোট, সূক্ষ্ম অণু যা কোষের প্রোটিন সংশ্লেষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ক্রোমোজোমে ডিএনএর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি,প্রায় ৯০% থাকে। আরএনএর পরিমাণ খুব কম,  প্রায় ১০% 

FAQ | ক্রোমোজোম

সেক্স ক্রোমোজোম কাকে বলে

মানুষের জননের সময় লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোমকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে।  সেক্স ক্রোমোসোমের জন্য পুরুষে হলে, তাদের জোড়ে হয় XY, আর মহিলা হলে, তাদের জোড়ে হয় XX।

মানুষের প্রতিটি দেহকোষে কয়টি ক্রোমোজোম রয়েছে

মানুষের প্রতিটি দেহকোষে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে, যা মোট ৪৬টি । এই ক্রোমোজোমের মধ্যে ২২ জোড়া অটোসোম এবং এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম রয়েছে। 

জনন কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা কত

মানুষের জনন কোষগুলিতে ক্রোমোজোম সংখ্যা দেহকোষের অর্ধেক। অর্থাৎ, মানুষের প্রতিটি শুক্রাণু কোষে ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে এবং প্রতিটি ডিম্বাণু কোষে ২৩টি ক্রোমোজোম থাকে। যখন একটি শুক্রাণু কোষ একটি ডিম্বাণু কোষকে নিষিক্ত করে, তখন তারা তাদের ক্রোমোজোমগুলিকে একত্রিত করে একটি নতুন কোষ তৈরি করে যার মোট ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে।

x ক্রোমোজোম y ক্রোমোজোমের চেয়ে কত গুন বড়

X ক্রোমোজোম সাধারণত Y ক্রোমোজোমের চেয়ে প্রায় ১.৫ গুণ বড়। 

ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান কোনটি

ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান হল ডিএনএ

ক্রোমোজোমের দ্বিত্বন হয় কোন পর্যায়ে

ক্রোমোজোমের দ্বিত্বন হয় কোষ বিভাজনের এনাফেজ পর্যায়ে। 

স্যাটেলাইট যুক্ত ক্রোমোজোম কে কি বলে

স্যাটেলাইট যুক্ত ক্রোমোজোম স্যাট ক্রোমোজোম বলে। 

ক্রোমোজোমস কোথায় পাওয়া যায়?

ক্রোমোজোমস কোষের নিউক্লিয়াসে পাওয়া যায়।

ক্রোমোজোমের সংখ্যা কি সব জীবের জন্য একই?

না, ক্রোমোজোমের সংখ্যা সব জীবের জন্য একই নয়। বিভিন্ন প্রজাতির বিভিন্ন সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। উদাহরণস্বরূপ, মানুষের ২৩টি জোড়া ক্রোমোজোম থাকে, যেখানে ব্যাঙের ২৬টি জোড়া ক্রোমোজোম থাকে এবং ইয়েলোফ্লাইয়ের ১৮টি জোড়া ক্রোমোজোম থাকে।

ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা কি সবসময় খারাপ?

না, ক্রোমোজোমের অস্বাভাবিকতা সবসময় খারাপ নয়। কিছু ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা কোন লক্ষণ বা উপসর্গ সৃষ্টি করে না। যাইহোক, অন্যান্য ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতা বিভিন্ন জিনগত রোগের সাথে যুক্ত হতে পারে।

Also Read:  মৌলিক সংখ্যা কাকে বলে

Scroll to Top