জন্মদিনের সন্ধ্যা অনুচ্ছেদ | ২ টি ভিন্ন অনুচ্ছেদ | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা

জন্মদিনের সন্ধ্যা

জন্মদিনের সন্ধ্যা | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য

আজ আমার জন্মদিন। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। আকাশে পূর্ণিমা চাঁদ  উঠেছে। চাঁদের আলোতে চারপাশ ঝলমল করছে।  আজ আমার জীবনের আরেকটি অধ্যায় শুরু হল। আমি নিজেকে অনেক  ভাগ্যবান মনে করছি। কারন তারা আজ আমার জন্মদিন উপলক্ষে অনেক কিছুর আয়োজন করেছে। আমি আজ অনেক আনন্দিত। আমার মনে হচ্ছে আজ সারা পৃথিবীর আনন্দ গুলো এসে আমার মনে ভর করেছে। আমাকে সবাই বারবার ডাকছিল আমি বারান্দা থেকে সরে এসে ঘরের ভেতরে গেলাম। আমার বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে। তারা আমাকে দেখে হাসিমুখে অভিনন্দন জানালো। বাবা মধুর সুরে আমাদের সবাইকে গান শোনালো। আমরা সবাই  সবার সাথে গল্প করছিলাম আর অনেক মজা করছিলাম। আমি সবাইকে আমার প্রিয় খাবার পরিবেশন করলাম। আমরা সবাই একসাথে বসে খাচ্ছিলাম। আমি আমার বাবা-মা কে  ধন্যবাদ জানালাম কারন তারা আমাকে অনেক ভালোবাসে।  আমি আমার বন্ধু-বান্ধবদের কৃতজ্ঞতা জানালাম  তারা আমাকে এত আনন্দঘন একটি দিন উপহার  দিয়েছে বলে। খাওয়া শেষ হলে আমরা সবাই একসাথে গান গাইলাম। আমরা নাচলাম। আমরা অনেক মজা করলাম। যখন রাত হলো তখন বাবা আমাদের সবাইকে নিয়ে একটি জায়গায় নিয়ে গেল। দেখলাম অনেক গুলো শিশু ও কিছু গরীব লোক বসে আছে। বাবা আমাকে জানালো আমার জন্মদিন উপলক্ষে আজ রাতে তাদের খাওয়ানো হবে এবন বাচ্চাদের নতুন কাপর উপহার দেয়া হবে। তখন আমি বাবাকে খুশি হয়ে জরিয়ে ধরলাম। আমাকে এতবড় একটি চমক দেয়ার জন্য। তারপর আমি নিজ হাতে সব গরীব মানুষ গুলোকে খাবার পরিবেশন করলাম এবং শিশুদের নতুন নতুন জামা কাপর উপহার দিলাম।  সবাই আমাকে নিয়ে অনেক আনন্দ করল। তারপর সবাই চলে গেল। আমরাও বাসায় ফিরে এলাম।  আমি একা হয়ে গেলাম। কিন্তু আমার মনটা খুব ভালো ছিল। আমি মনে মনে ভাবলাম আজকের এই দিনটা আমি কখনো ভুলব না। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর দিন। তারপর আমি ঘুমিয়ে গেলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি সকাল হয়ে গেছে। তখন আমি আমার বিছানা থেকে উঠে  নতুন দিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করলাম। আমি মনে মনে ভাবলাম, আজ থেকে আমি আরও ভালো মানুষ হব। আমি সবার সাথে ভালো ব্যবহার করব। আমি সবার সাথে সুখী  দিন কাটাব।

জন্মদিনের সন্ধ্যা | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য

জন্মদিন প্রতিটি মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও আনন্দের দিন। এই দিনটি সবার জীবনে আনন্দ নিয়ে আসে। আমার বেলায়ও ব্যতিক্রম নয়। গতকাল আমার জন্মদিন ছিল। দিনটি আমার জীবনে  সারাজীবন স্মরনীয় হয়ে থাকবে। গতকাল সন্ধ্যায় আমার জন্মদিন পালিত হয়েছিল। তাই সকাল থেকে অনেক রাত পর্যন্ত আমার বাড়িতে অনেক আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। জন্মদিন উপলক্ষে বাবা আমাদের অনেক আত্নীয়স্বজন ও আমার বন্ধুদের নিমন্ত্রন করেছিল। তারা সবাই আমাদের বাড়িতে এসে সারাদিন অনেক গল্প, আড্ডা,গান নাচে মেতেছিল। যখন আমাদের বাড়িতে নিমন্ত্রিত সব মেহমান এসেছিল তখন বাবা আমাকে চমকে দেয়ার জন্য অনেক বড় একটি জন্মদিনের কেক বের করে দিয়েছে। সত্যি তখন আমি অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছিলাম। কারন কেকটি ছিল টুকটুকে লাল রঙের একটি গোলাপের মতন।  তারপর আমরা সবাই মিলে মজা করে কেক কেটে খেয়েছি। কেক কাটার পরে আমার বন্ধুরা সবাই আমার জন্য আনা উপহার একে একে আমার হাতে তুলে দিয়েছিল। আমার জন্মদিন উপলক্ষে বাবা আমাকে একটি সুন্দর স্মার্ট ওয়াচ এবং মা কয়েকটি বই উপহার দিয়েছে। এছাড়াও আমার বন্ধু এবং আত্নীয় সবাই মিলে আমাকে অনেক গুলো উপহার দিয়েছে। যেগুলো পেয়ে আমি অনেক বেশি আনন্দিত হয়েছি। কেক কাটা ও উপহার পর্ব শেষে আমরা বন্ধুরা সবাই মিলে অনেক নাচানাচি ও গান করি। আমার বন্ধু নিরব, শ্যামল চমৎকার গান পরিবেশন করে। আমার বন্ধু জোত্যি আমার অনেক পছন্দের একটি গান পরিবেশন করে। “আজ এই দিনটিকে স্মৃতির খাতায় লিখে রাখ…  যখন পরবে মনে কাছে দূরে যেখানেই থাকো।” যা শুনে আমরা সবাই অনেক মুগ্ধ হয়েছিলাম। আমার একজন আংকেল আমার জন্মদিন নিয়ে লিখা একটি কবিতা  আবৃত্তি করে আমাকে চমকে দিয়েছিল। আমি নিজেকে নিয়ে খুব গর্ব বোধ করছিলাম সেই  সময়। আমরা সবাই সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছিলাম যখন আমার বন্ধু জয় মিষ্টার বিনের অভিনয় করে দেখিয়েছে। আমরা সবাই ওর চেহারার জন্য মিষ্টার বিন বলে ডাকতাম। কিন্তু ও বিনের মতো অভিনয়ও  করতে পারত আমরা জানতাম না। অভিনয় দেখে আমরা সবাই হেসে গড়াগড়ি করছিলাম।  তারপর আমরা মিলে নাচ, গান,  কবিতা সহ অনেক ধরনের মজা করার পর খেতে বসলাম। আমার মা সারাদিন আমার জন্য অনেক পদের রান্না করেছিল। সবগুলোই ছিল আমার পছন্দের খাবার। সবাই মিলে মজা করে খেয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে একে একে যখন আমার সব বন্ধু ও আত্নীয় বিদায় নিয়ে চলে যায়  তখন আমার মন কিছুটা খারাপ হয়েছিল।  সারাদিনের কথা মনে হতেই আমার মন আবার অনেক আনন্দিত হয়ে গেছে। সত্যি গতকালকের সন্ধ্যাটি সারাজীবন আমার জীবনে স্মরনীয় একটি দিন হিসেবে রয়ে যাবে। 

জন্মদিনের সন্ধ্যা | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য

সূর্য ঢলে পড়ছে আস্তে আস্তে, লালচে আভা ছেঁকে গেছে আকাশে। ঘর ঝলমলে করে নীল-সবুজ বাতিতে, জন্মদিনের সন্ধ্যা নেমে এসেছে। চারপাশে উৎসাহের এক ঝড় বয়ে যাচ্ছে, বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, সবাই মিলে তৈরি করেছে এক জমকালো পরিবেশ। হৃদয়টা তালে তালে নেচে উঠছে, চোখে কৌতূহল, একটু উত্তেজনা। কেমন হবে উপহারগুলো? বাবার হাতের লাল রঙের প্যাকেটটি কী লুকিয়ে রেখেছে? মার পিছনে লুকানো বইটিতে কী গল্প আছে? বন্ধুর হাসিমাখা মুখের ভেতরে কী রহস্য আছে? এই সব মিলেই গড়ে ওঠে সন্ধ্যার রঙিন পটভূমি। সবশেষে জন্মদিনের সন্ধ্যা নেমে আসে। ঘরে এক অন্য রকম উৎসাহের ঝিলিক, মা রান্নাঘরে ব্যস্ত আমার প্রিয় খাবার তৈরিতে, আজ তো বিশেষ খাবার! ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের বাসায় দাওয়াত করি। ভাইবোনরা রুম সাজাচ্ছেন, রঙিন বেলুন আর রঙ্গিল বাতির ঝালরে ঘর ছেয়ে যায় উৎসবের আলোয়। সন্ধ্যা গভীর হতেই আসে আমাদের ছোট্ট পার্টি আরও জমে উঠে। গল্প হয়, গান হয়, গেমস হয়, হাসি আর আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। মা আমাদের প্রিয় খাবারগুলি নিয়ে হাজির হন, পেটপূরে গিলে যায় সবাই। তারপর, সেই কাঙ্ক্ষিত মুহূর্ত আসে! টেবিলে এসে পড়ে কেক, মোমবাতির আলো ঝিলমিল করে তার ওপর। সবার মুখে হাসি, চোখে আনন্দ। “হ্যাপি বার্থ ডে” গানের তালে, ফুঁ দিয়ে মোমবাতি নিভিয়ে দেই। কেক কাটা হয়, টুকরা সুখ ভাগাভাগি করে, খেয়ে মাতোয়ারা হয়ে যাই সবাই সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে জন্মদিন অন্য রূপ পেয়েছে। লাইক, কমেন্ট আর ভার্চুয়াল মিডিয়ার সাথে মিলে গেছে বন্ধুদের শুভেচ্ছা আর মেমোরিজের ফেসবুক পোস্ট। অনলাইন শপ এনে দেয় চমৎকার সব উপহার। দুরের বন্ধুদের জন্মদিনের – ভালোবাসা, আন্তরিকতা প্রকাশের এই এক জনপ্রিয় মাধ্যম। তবে, ফেসবুক পোস্ট – মেসেজ, রিটুইটের চেয়ে হাতের লেখা কার্ড, ইমোজির চেয়ে ভিডিও কল, লাইকের চেয়ে বন্ধুর ফোন – এগুলি আমার কাছে বেশি প্রিয়। রাত যত গভীর হয়, মনে হয় উৎসাহ আর বাড়তে থাকে। পুরনো স্মৃতি আর নতুন পরিকল্পনায় মজে যায় সবাই। এই ছোট্ট ঘরে, ঘনিষ্ঠ মানুষের মাঝে জন্মদিনের সন্ধ্যাটা হয়ে ওঠে স্বপ্নের রাজ্য। কিন্তু জন্মদিন শুধু উপহার আর আনন্দে মাতোয়ারা হওয়ার দিন নয়। এই সন্ধ্যায় মনে পড়ে যায় গত এক বছর। কী কী ভালো কাজ করেছি, কী কী ভুল করেছি? ভবিষ্যতের পথ আরো উজ্জ্বল করার প্রত্যয় জাগে বুকে। নিজের কাছেই প্রতিজ্ঞা করি, আসছে যে বছর, তা কাটবে আরো বেশি ভালো করে, আরো বেশি ভালো মানুষ হয়ে। জন্মদিনের সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত্রি গভীর হয়ে এসেছে, কিন্তু আনন্দ চলছেই। গল্প, গান, হাসি ছড়ীয়ে পড়ে চারপাশে। জন্মদিনের এই সন্ধ্যা, জীবনের পথে একটা মাইলফলক। স্মৃতির ঝুলি আরো একবার ভরে দেয় ভালোবাসা, আনন্দ, প্রতিজ্ঞা, সব মিলিয়ে তৈরি করে একটা মধুর দিন। এমনই সুন্দর, এমনই বিশেষ এই জন্মদিনের সন্ধ্যা।

Scroll to Top