ট্রাপিজিয়াম কাকে বলে? ট্রাপিজিয়ামের প্রকারভেদ 

ট্রাপিজিয়াম কাকে বলে?

যে চতুর্ভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান্তরাল কিন্তু অসাম এবং অন্য বাহুদ্বয় অসমন্তরাল তাকে ট্রাপিজিয়াম বলে। অর্থাৎ যে সমস্ত চতুর্ভুজের এক জোড়া বিপরীত বাহু সমান্তরাল তাকে ট্রাপিজিয়াম বলে। সমান্তরাল বাহুদ্বয়কে ট্রাপিজিয়ামের ভূমি বলে আর এই সমান্তরাল বাহু দুইটির মধ্যের দুরত্বকে ট্রাপিজিয়ামের উচ্চতা বলে। ট্রাপিজিয়ামকে যুক্তরাষ্ট্রে তথা উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে ট্রাপিজয়িড বলে। 

ভাষা ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে ট্রাপিজিয়াম ও ট্রাপিজয়িড সম্পর্কে সারা দুনিয়ায় পরস্পর বিরোধী একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে । ট্রাপিজিয়াম শেখার শুরুতে সে বিষয়টি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরী। 

  • বৃটেনে যার ট্রাপিজিয়াম (Trapezium in UK) = যুক্তরাষ্ট্রের তা ট্রাপিজয়িড ( Trapezoid in US)
  • ব্রিটেনে যা বিষমবাহু চতুর্ভুজ ( Irregular Quadrilateral in UK) = যুক্তরাষ্ট্রের তার ট্রাপিজিয়াম ( Trapezium in US).

ট্রাপিজিয়াম কাকে বলে?

কোনো চতুর্ভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান্তরাল হলে তাকে ট্রাপিজিয়াম বলে। ট্রাপিজিয়াম হল চতুর্ভুজের একটি বিশেষ রূপ। এক্ষেত্রে আয়তক্ষেত্র,রম্বস,

সামান্তরিক ও বর্গ এক একটি ট্রাপিজিয়াম কারণ এদের একজোড়া বহু পরস্পর সমান্তরাল। ট্রাপিজিয়ামের তির্যক বাহুদ্বয় সমান হলে একে সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম বলে।ট্রাপিজিয়ামের কর্ণদ্বয় তাদের ছেদবিন্দুতে একই অনুপাতে বিভক্ত হয়।ট্রাপিজিয়ামের দুইটি বাহুর সমান্তরাল হয়।ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহুদ্বয় সমান হলে তা একটি আয়তক্ষেত্রে বা বর্গক্ষেত্রে পরিণত হবে। ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহুদ্বয় কখনো সমান হতে পারেনা। ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের একেকটিকে ভূমি এবং অসমান্তরাল  বাহুদ্বয় কে তীর্যক বাহু বলা হয়। বিত্তস্থ ট্রাপিজিয়ামের তীর্যক বাহুদ্বয় পরস্পর সমান। ট্রাপিজিয়ামের তির্যক বাহুদ্বয়ের মধ্যবিন্দুর সংযোগ রেখাংশ সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমান্তরাল। তির্যক বাহু সংলগ্ন কোণ দুটির সমষ্টি দুই সমকোণ বা ১৮০°।

ট্রাপিজিয়ামের বৈশিষ্ট্য

  • ট্রাপিজিয়ামের চারটি বাহু ও চারটি শীর্ষবিন্দু রয়েছে। 
  • ট্রাপিজিয়াম ২ সমান্তরাল হয়ে থাকে। 
  • সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের এক একটিকে ভূমি বলা হয়। 
  • অপর দুটি পরস্পর সমান্তরাল নয়। 
  • সমান্তরাল বাহু দুইটি কখনো সমান হতে পারে না। 
  • সমান্তরাল বাহু দুইটি ছাড়া অন্য দুইটি বাহুকে তীর্যক বাহু বলে।
  • আয়তক্ষেত্র, রম্বস, বর্গক্ষেত্র, সামন্তরিক এক  একটি ট্রাপিজিয়াম।
  • সমবাহু ট্রাপিজিয়ামের কর্ণ দুইটি পরস্পর সমান হয়। 
  • ট্রাপিজিয়ামের উচ্চতা হল সমান্তরাল বাহু দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব। 
  • ট্রাপিজিয়ামের কর্ণদয় তাদের ছেদবিন্দুতে একই অনুপাতে বিভক্ত হয়ে থাকে। 
  • ট্রাপিজিয়ামের একটি কর্ণ দ্বারা ট্রাপিজিয়ামটি যে দুটি ত্রিভুজের বিভক্ত হয় তাদের ক্ষেত্রফল গুণফল অপর কর্ণ দ্বারা গঠিত ত্রিভুজ দুটি ক্ষেত্রফলের গুণফলের সমান। 
  • সংযোগ সরলরেখা এর সমান্তরাল বাহু বাহুদ্বয়ের সমান্তরাল। 
  • ট্রাপিজিয়ামের তির্যক বাহুদ্বয়ের মধ্যবিন্দু এর সংযোগ রেখাংশের দৈর্ঘ্য এর সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমষ্টির অর্ধেক। 
  • ট্রাপিজিয়ামের বিপরীত বাহুদ্বয়ের মধ্যবিন্দু দুইটির সংযোগ রেখাংশকে দ্বিমধ্যমা  বলে। 
  • ট্রাপিজিয়ামের একটি দ্বিমধ্যমা ট্রাপিজিয়ামটিকে দুইটি সমান ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট চতুর্ভুজ এ বিভক্ত করে। 
  • ABCDএকটি ট্রাপিজিয়াম হলে sinA sinC =sinB sinD সম্পর্কটি সবসময়ই সত্য হয়।
  • ট্রাপিজিয়ামের কর্ণ দুইটি পরস্পরকে একই অনুপাতে বিভক্ত করে। 
  • ট্রাপিজিয়ামের কর্ণদ্বয় দ্বারা ট্রাপিজিয়ামটি যে চারটি ত্রিভুজে বা বিষমবাহু ত্রিভুজে বিভক্ত হয় তাদের মধ্যে একজোড়া বিপরীত ত্রিভুজ পরস্পর সাদৃশ্য। 
  • ABCD ট্রাপিজিয়ামের একজোড়া সন্নিহিত কোণের কোসাইন (cosain)  এর সমষ্টি শুণ্য অর্থাৎ, cosA+ cosB = 0. কারণ cosA + cosB = cosA + cos(180°- A)=cosA – cosA = 0.  ফলে অপর দুইটি সন্নিহিত কোণের কোসাইন (cosaine) এর সমষ্টিও শূন্য। অর্থা, cosC + cosD = 0. 
  • ট্রাপিজিয়ামের কর্ণদয় দ্বারা ট্রাপিজিয়ামটি  যে চারটি ত্রিভুজের বিভক্ত হয়, তাদের মধ্যে এক জোড়া বিপরীত ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল যদি X বর্গ একক ও বর্গ একক এবং ট্রাপিজিয়ামটির ক্ষেত্রফল A বর্গ একক হয় তাহলে, √A = √X + √Y.
  • ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহু দুইটি জানা থাকলে এর কর্ণদ্বয়ের মধ্যবিন্দুর সংযোগ রেখাংশের দৈর্ঘ্য নির্ণয় করা যায়। 

ট্রাপিজিয়ামের প্রকারভেদ 

সাধারণত ট্রাপিজিয়াম তিন প্রকার। যথা –

  1. সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম 
  2. বিষমবাহু ট্রাপিজিয়াম 
  3. সমকোণী ট্রাপিজিয়াম 

সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম : যে ট্রাপিজিয়ামের তীর্যক বাহু দুইটি পরস্পর সমান হয় তাকে মূলত সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম বলে। সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়ামের ভূমি সংলগ্ন কোণ দুটি পরস্পর সমান হয়ে থাকে এবং কর্ণ দুটি ও পরস্পর সমান হয়ে। 

সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম

বিষমবাহু ট্রাপিজিয়াম :

যে ট্রাপিজিয়ামের চারটি বাহু পরস্পর সমান নয় বা অসমান তাকে বিষমবাহু ট্রাপিজিয়াম বলে। যেহেতু বিষমবাহু ট্রাপিজিয়ামের চারটি বাহু সমান নয় সেহেতু এদের কোণগুলো সমান নয়। এদের কর্ণ দুটিও পরস্পর অসমান। 

ট্রাপিজিয়াম কাকে বলে?

সমকোণী ট্রাপিজিয়াম :

যে ট্রাপিজিয়ামের দুইটি কোন সমকোণ বা ৯০° তাকে সমকোণী ট্রাপিজিয়াম বলে। সমকোণী ট্রাপিজিয়ামের দুইটি কোণ ৯০° হলে এদের ওপর দুইটি কোণ পরস্পর সম্পূরক কোণ হয়।

ট্রাপিজিয়ামের সূত্র 

ট্র্যাপিজয়েড নিয়ম হলো এমন একটি নিয়ম যা আয়তক্ষেত্রের ব্যবহার না করে মোট ক্ষেত্রফলকে ছোট ট্র্যাপিজয়েডগুলোতে ভাগ করে বক্র রেখার নিচের দিকের ক্ষেত্রফলকে মূল্যায়ন করে 

ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল=½×উচ্চতা ×সমান্তরাল বাহুদ্বয়ের সমষ্টি। 

অর্থাৎ = 1/2×h×(a+b)

ট্রাপিজিয়ামের পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র 

যেকোনো বদ্ধ চিত্রের বাহুর সমষ্টিকে পরিসীমা বলা হয়। অর্থাৎ একটি ট্রাপিজিয়ামের পরিসীমা হল তার চারটি বাহুর যোগফল।

ট্রাপিজিয়ামের পরিসীম (p)= a+b+c+d

এখানে, a,b,c,d হলো এক একটি টাপিজিয়ামের বাহু। 

ট্রাপিজিয়ামের বাহুগুলো অসমান। ট্রাপিজিয়ামের পরিসীমার নির্ণয়ের সাধারণ কোন নিয়ম বা সূত্র নেই। চারটি বাহুর সমষ্টি ট্রাপিজিয়ামের পরিসীমা অর্থাৎ, 

ট্রাপিজিয়ামের পরিসীমা = ১ম বাহু + ২য় বাহু + ৩য় বাহু+৪র্থ বাহু।

উদাহরণ: যদি একটি ত্রিভুজের চারটি বাহুর দৈর্ঘ্য যথাক্রমে ৫ সে.মি, ৮ সে.মি, ১০ সে.মি এবং ৭ সে.মি হয় তাহলে ট্রাপিজিয়ামের পরিসীমা নির্ণয় কর। 

সমাধান : 

দেওয়া আছে,

১ম বাহু, A = ৫ সে.মি

২য় বাহু, B = ৮ সে.মি

৩য় বাহু, C = ১০ সে.মি

৪র্থ বাহু , D = ৭ সে.মি

আমরা জানি, 

ট্রাপিজিয়ামের পরিসীমা = A + B + C + D

=( ৫ + ৮ + ১০ + ৭) সে.মি

= ৩০ সে.মি

সুতরাং, পরিসীমা = ৩০ সে.মি

ট্রাপিজিয়াম এর প্রশ্ন সমাধান 

প্রশ্ন: একটি ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহু দুইটির দৈর্ঘ্য যথাক্রমে 10 সে.মি এবং 15 সে.মি এবং বাহু দুইটির মধ্যবর্তী দূরত্ব বা উচ্চতা 8 সে.মি হলে,ঐ ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর। 

সমাধান :

মনে করি,

ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহু দুইটি 

   a=10 সে.মি

   b=15 সে.মি

এবং উচ্চতা h= 8 সে.মি

সুতরাং, ট্রাপিজিয়ামটির ক্ষেত্রফল =

1/2× (a+b)×h বর্গ একক

=1/2×(10+15)×8 বর্গ সে.মি

= 1/2×(25×8) বর্গ সে.মি

= 1/2×200 বর্গ সে.মি

সুতরাং, ট্রাপিজিয়ামটির ক্ষেত্রফল= 100 বর্গ সে.মি।

ট্রাপিজিয়ামের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলো বোঝার জন্য, আসুন নিচের নিম্নলিখিত গুলো বিবেচনা করি 

  • ঘাঁটিগুলি – ঘাঁটিগুলি হল ট্রাপিজিয়ামের সমান্তরাল বাহু। তারা এর আকৃতি এবং ঘটনার প্রাথমিক ভিত্তি প্রদান করে। 
  • পা – পা হচ্ছে ট্রাপিজিয়ামের অসামান্তরাল বাহু। এই দিকগুলি ঘাঁটিগুলিকে সংযুক্ত করে, চতুর্ভুজের অবশিষ্ট দুটি প্রান্ত তৈরি করে। 
  • কোণ – একটি ট্রাপিজিয়ামের চারটি কোণ থাকে। যথা-দুটি তীব্র কোণ এবং দুটি স্থূলকোণ। যেকোনো চতুর্ভুজের অভ্যন্তরীণ কোণের সমষ্টি ৩৬০°।
  • উচ্চতা – ঘাঁটিগুলির মধ্যে লম্ব দূরত্ব কে ট্রাপিজিয়ামের উচ্চতা বলা হয়। ট্রাপিজিয়ামের ক্ষেত্রফল গণনার জন্য এটি খুবই অপরিহার্য। 

ট্রাপিজিয়ামের সামান্তরিক ও বৃত্ত 

সামান্তরিক 

সামান্তরিকের চারটি বাহু থাকে এবং বিপরীত বাহুগুলো পরস্পর সমান ও সমান্তরাল। 

সামান্তরিকের চারটি কোণ থাকে এবং বিপরীত কোণগুলো পরস্পর সমান কিন্তু কোন কোনই সমকোণ নয়। সামান্তরিকের দুটি কর্ণ থাকে কর্ণদ্বয় অসমান এবং পরস্পর সমদ্বিখন্ডিত করে। 

বৃত্ত 

বৃত্ত একটি আবদ্ধ বক্ররেখা। বৃত্ত একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে অঙ্কিত হয়। বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধির উপর সব বিন্দুর দূরত্ব সমান হয়।

উপসংহার 

ট্রাপিজিয়াম হলো জ্যামিতিক চিত্র যা অনন্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে অ্যাপ্লিকেশন খুঁজে পায়।সুতরাং চতুর্ভুজের একজন বিপরীত বাহু এবং সমান্তরাল সেজেকে আমরা যে চতুর্ভুজের এক জোড়া বিপরীত বাহু এবং সমান্তরাল সেই চতুর্ভুজকে আমরা ট্রাপিজিয়াম বলি। অর্থাৎ যে চতুর্ভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান্তরাল কিন্তু অসমান এবং অন্য বাহুদয় অসামন্তরাল তাকে ট্রাপিজিয়াম বলে। 

আশা করি ট্রাপিজিয়াম কাকে বলে এই নিবন্ধনটি আপনাদের পছন্দ হয়েছে। যদি আপনাযে চতুর্ভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান্তরাল কিন্তু অসমান এবং অন্য বাহুদ্বয় অসন্তরাল তাকে ট্রাপিজিয়াম বলে দের পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে তথ্য গুলি আপনি আপনার বন্ধুদের সাথেও শেয়ার করবেন। 

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন 

১. ট্রাপিজিয়াম কাকে বলে? 

উওর : যে চতুর্ভুজের দুইটি বাহু পরস্পর সমান্তরাল কিন্তু অসমান এবং অন্য বাহুদ্বয় অসামান্তরাল তাকে ট্রাপিজিয়াম বলে। 

২. ট্রাপিজিয়াম কত প্রকার ও কি কি? 

উত্তর  : ট্রাপিজিয়াম  তিন প্রকার। যথা – সমদ্বিবাহু ট্রাপিজিয়াম, বিষমবাহু ট্রাপিজিয়া,  সমকোণী ট্রাপিজিয়াম। 

Also Read: রম্বসের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র 

Scroll to Top