বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ রচনা [PDF] | ২০ টি পয়েন্ট | উক্তি – কবিতা সহকারে ২৫০০+ শব্দে

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকে আমরা হাজির হয়েছি খুবই গুরু্বপূর্ণ একটা রচনা “বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ” নিয়ে। প্রয়োজনীয় উক্তি – কবিতা সহকারে রচনাটি ২০+ পয়েন্টে ২৫০০+ শব্দে লেখা, যেন শিক্ষার্থীরা একবার পড়েই রচনাটি মাথায় রাখতে পারে । 

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ

ভূমিকা

বাংলাদেশের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধের গল্প একে অপরের পরিপূরক, যা আলাদা করে লেখা অসম্ভব। বঙ্গবন্ধু ছিলেন স্বপ্নদ্রষ্টা, আর মুক্তিযুদ্ধ ছিল সেই স্বপ্নের প্রতিবাদী রূপ। তার জীবনের প্রতিটি নিঃশ্বাসে ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন।

নয় মাসের রক্তাক্ত যুদ্ধে বাঙালি জাতি তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ অর্জন করে। লক্ষ লক্ষ শহীদ, মা-বোনের ত্যাগ, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য সাহস ছাড়া এই মহান বিজয় অসম্ভব ছিল। কিন্তু এই সবকিছুরই অন্তরালে ছিল বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনা, তার অবিচল বিশ্বাস। তিনি ছিলেন এই যুদ্ধের আত্মা, তার নেতৃত্ব ছাড়া বাঙালি জাতি হয়তো এত শক্তিশালী ঐক্য গড়ে তুলতে পারত না। গৌরী প্রসন্ন মজুমদার এর কবিতায় সেই একই সুর –  

শোন একটি মুজিবরের থেকে 

লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি

 আকাশে বাতাসে ওঠে রণী 

বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।। 

অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধ ছাড়া বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন অপূর্ণ থেকে যেত। লক্ষ লক্ষ শহীদের ত্যাগ ছাড়া, মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব ছাড়া স্বাধীন বাংলাদেশের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তারা একে অপরেরই প্রতিচ্ছবি,পাখির দুই পাখা, যারা একসঙ্গে উড়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের গগনে লিখেছে স্বাধীনতার মহাকাব্য।

বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান নেতা। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার স্বপ্ন ছিল একটি স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। বিখ্যাত পত্রিকা  -ফিনান্সিয়াল টাইমস এর ভাষায়, 

মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনই জন্ম নিতনা।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার স্বপ্ন তার শৈশব থেকেই শুরু হয়েছিল। তিনি দেখেছিলেন যে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অধীনে বাঙালিরা কীভাবে শোষিত ও নিপীড়িত হচ্ছে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও এই শোষণ ও নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। পাকিস্তানি শাসকদের বৈষম্যমূলক আচরণে বাঙালিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

শেখ মুজিবুর রহমান এই শোষণ ও বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করেন। তিনি বাঙালিদের জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগ্রত করতে কাজ করেন। তিনি বিভিন্ন আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের মাধ্যমে তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন এবং হয়ে উঠেন মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেয়না। 

ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু 

ভাষা আন্দোলন ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন ভাষা আন্দোলনের অন্যতম নেতা। তিনি এই আন্দোলনে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দুকে ঘোষণা করে। এতে বাঙালিরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। শেখ মুজিবুর রহমান এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। তিনি বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বক্তৃতা দেন। তিনি ছাত্রদের আন্দোলনে যোগ দেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানি পুলিশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর গুলি চালায়। এই দিনে শহীদ হন রফিক, জব্বার, এবং সালাম সহ অনেকে। এই শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাঙালিরা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে অর্জন করে।

ভাষা আন্দোলন ছিল বাঙালি জাতির জাতীয় চেতনার বিকাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসাবে কাজ করে। শেখ মুজিবুর রহমান এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে বাঙালি জাতির মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা জাগ্রত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

মুক্তির প্রথম সোপান, ভাষার বিজয়

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন মাতৃভাষা বাংলাকে আত্মপরিচয়ের প্রতীকে পরিণত করার পাশাপাশি, স্বাধীনতার পথে প্রথম সোপান হিসেবে কাজ করে। ছাত্রদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই বিজয় বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গৌরবপূর্ণ অধ্যায়। বাঙালি জাতি তাদের মাতৃভাষার অধিকার দাবি করে শুধু সভা-সমাবেশ, মিছিল ও পদযাত্রায় অংশ নিয়ে খান্ত না জীবনও দিতে পারে।

এই তীব্র আন্দোলনের মুখে পাকিস্তানি সরকার অনুধারণা করে। তারা বুঝতে পারে, বাঙালি জাতির ভাষা ও সংস্কৃতির উপর এই আক্রমণ আরও অস্থিরতা ও বিচ্ছিন্নতা ডেকে আনবে। ফলস্বরূপ ১৯৫৬ সালে সংবিধানে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

এই বিজয় বাঙালি জাতির আত্মপরিচয়ের স্বীকৃতি ছিল। এটি দেখায় যে, আমারা একসঙ্গে লড়াই করে জয়লাভ করতে পারে। ভাষা আন্দোলনের অভিজ্ঞতা বাঙালি জাতির একতা ও জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগিয়ে তোলে। এটি আমাদের আগামী দিনের লড়াইয়ের জন্য শক্তি ও অনুপ্রেরণা দেয়।

ছয় দফাঃ মুক্তির পথে আরেক ধাপ 

১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের উত্থাপিত ছয় দফা দাবি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ক্রান্তিকাল। পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে উত্থাপিত এই ছয় দফা ছিল বাঙালি জাতির মনের কথা, বঞ্চনার প্রতিবাদ। ছয় দফার দাবি সমূহঃ 

  • প্রস্তাব – ১ : শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি
  • প্রস্তাব – ২ : কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা
  • প্রস্তাব – ৩ : মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
  • প্রস্তাব – ৪ : রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা
  • প্রস্তাব – ৫ : বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা
  • প্রস্তাব – ৬ : আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

ছয় দফা আন্দোলন পাকিস্তানি রাজনীতিতে তুমুল ঝড় সৃষ্টি করে। পূর্ব পাকিস্তানের অবহেলিত মানুষের গর্জন ছিল এই দাবিগুলো, যারা বঞ্চনার কালো ছায়া কাটিয়ে স্বাদ অনুভব করতে চেয়েছিল। আন্দোলনের ফলে জাতীয়তাবাদী চেতনা জাগরিত হয়, আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা বাড়ে। যদিও পাকিস্তানি সরকার পুরোপুরি মেনে নেয়নি, তবুও ছয় দফা ছিল স্বাধীনতার পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে, স্বপ্নের বাংলাদেশ অর্জনের সংগ্রামে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে।

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান 

ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের পতন হয় এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেওয়া হয়।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ছয় দফা আন্দোলনের পর পাকিস্তানি সরকার শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় বাঙালি জাতি গভীর ভাবে ক্ষুব্ধ হয়।  শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে আওয়ামী লীগ ও ছাত্র সংগঠনগুলো গণঅভ্যুত্থানের ডাক দেয়।

গণঅভ্যুত্থান ক্রমশ জোরদার হতে থাকে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ মিছিলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে মতিউর রহমান মল্লিকসহ অনেক জন নিহত হয়।

গণঅভ্যুত্থানের মুখে আইয়ুব সরকার পিছু হটে এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে মুক্তি দেওয়া হয়।  ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ছিল। এই গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের শক্তি ও ঐক্য প্রদর্শন করে। এটি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর ভিত কাঁপিয়ে দেয় এবং স্বাধীনতার পথকে সুগম করে।

৭০ এর নির্বাচন

 ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের আওয়ামী লীগ বিপুল জয়লাভ করে। জাতীয় পরিষদে আওয়ামী লীগ ১৬০টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সাধারণ নির্বাচনের একই সাথে প্রাদেশিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টিতে জয়লাভ করে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রধান নেতা। তিনি নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক সরকার বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকার করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য পাকিস্তানি সরকারের কাছে একাধিকবার আবেদন করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সরকার বঙ্গবন্ধুর আবেদনকে উপেক্ষা করে।

পাকিস্তানি সামরিক সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তর না করার সিদ্ধান্তের ফলে পূর্ব পাকিস্তানে গণআন্দোলন শুরু হয়। যা আমাদের নিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত যুদ্ধের ময়দানে। 

বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক বিশাল জনসভায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তিনি পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণের কিছু উল্লেখযোগ্য অংশ হল:

“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।”

তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে স্বাধীনতার জন্য একত্রিত করে। এই ভাষণের পর পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধীনতার আন্দোলন আরও জোরদার হয়। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই ভাষণটি বাঙালি জাতির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে নতুন মাত্রা দেয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের পথে বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করে।

বঙ্গবন্ধু ও স্বাধীনতার ঘোষণা  

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ শুরু করে। এদিন রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে হামলা চালায়। বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তারের আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তিনি তার ভাষণে বলেন, “এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার পর সারা পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার স্মরণে প্রতি বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশে স্বাধীনতা দিবস পালিত হয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবদান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত ধাপ মুক্তিযুদ্ধ। লাল-সবুজের সুন্দর দেশটি স্বাধীন করতে বঙ্গবন্ধুর অসামান্য অবদান রাখেন। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই পাকিস্তানি সেনারা তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা সেনানিবাসে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে পশ্চিম পাকিস্তানের লায়ালপুর কারাগারে স্থানান্তর করে দীর্ঘ ১০ মাস বন্দী করে রাখে। কিন্তু এ দেশের মানুষেরা বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের নির্দেশনা মোতাবেক মুক্তিযুদ্ধ করে এ দেশ স্বাধীন করে। বঙ্গবন্ধুর নামেই পরিচালিত হয়েছে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধ। মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানি কুচক্রী সরকার স্বাধীনতা ঘোষণার অপরাধে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহের অপরাধে ফাঁসির আদেশ দেয়। কিন্তু প্রতিবাদী সুশীল বিশ্বনেতাদের চাপে বারবার তাঁকে ফাঁসির দড়ি থেকে ফিরিয়ে এনেছে। ১৯৭২ সালের ১০ মার্চ যখন তিনি দেশে ফিরেছিলেন এ দেশের মানুষ আবেগে উচ্ছ্বাসে বরণ করেছিল এ বিশ্ববরেণ্য নেতাকে। পশ্চিম জার্মানী পত্রিকা তা ই হয়তো লিখেছিলেন,  

শেখ মুজিবকে চতুর্দশ লুই য়ের সাথে তুলনা করা যায়। জনগন তার কাছে এত প্রিয় ছিল যে লুই ইয়ের মত তিনি এ দাবী করতে পারেন আমি ই রাষ্ট্র।

সুতরাং এ কথা নিশ্চিত বলা যায়, বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অপরিসীম। পূর্ব পাকিস্তানের আমজনতা এক হয়েছিল তাঁর বজ্রকঠিন ভাষণে। পুরো বাঙালি জাতি সংগঠিত হয়েছিল তাঁর নেতৃত্বে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এ দেশের মানুষ সব আন্দোলন ও সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ত বলে পশ্চিমা শাসকেরা সব সময় সুযোগ খুঁজত, কীভাবে তাঁকে কারারুদ্ধ রাখা যায়। বস্তুত বাঙালি জাতির ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা আর এ স্বাধীনতা অর্জনের অগ্রদূত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

স্বাধীন দেশ বিনির্মাণে বঙ্গবন্ধু 

স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ধ্বংসস্তুপের উপর দাঁড়িয়ে স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেন, তা অকল্পনীয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ, ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো, দারিদ্র্যের কালোছায়া – এই ছিল তৎকালীন বাংলাদেশের চিত্র। কিন্তু বঙ্গবন্ধু দমেন নি। তিনি অদম্য ইচ্ছাশক্তি, দূরদর্শী নেতৃত্ব ও অকুতোভয় মনোভাব নিয়ে দেশ গঠনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

প্রথমেই ধ্বংসের সংস্কারে মনোযোগ দেন বঙ্গবন্ধু। রাস্তা-ঘাট, সেতু, কলকারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, যোগাযোগ ব্যবস্থা – সবকিছুই পুনর্গঠন করা হয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষদের পুনর্বাসন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গ্রামীণ উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করে দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা করেন। শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কারেও গুরুত্ব দেন তিনি। প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনর্গঠন করা হয়।

রাষ্ট্র গঠন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নেও বঙ্গবন্ধুর অবদান অবিস্মরণীয়। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করেন, মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেন। মিশ্র অর্থনৈতির প্রবর্তন করে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন করেন। কৃষিতে সবুজ বিপ্লব, রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠা, অবকাঠামো উন্নয়নের মধ্য দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যান। বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করে অর্থনৈতিক অগ্রগতির গতি বাড়ান।

বিশ্ব মঞ্চেও বাংলাদেশকে সম্মানীয় অবস্থানে নিয়ে যেতে ভূমিকা রাখেন বঙ্গবন্ধু। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অভিজ্ঞতা বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন। আন্তর্জাতিক বিরোধ নিরসনে মধ্যস্থতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচারের মধ্য দিয়ে বিশ্বে শান্তির বাণী ছড়িয়ে দেন।

১৫ আগস্টের কালো রাত 

১৫ আগস্টের কালো রাত – বাংলাদেশের ইতিহাসের এক বিষাক্ত ক্ষত, যা কখনোই শুকিয়ে যাবে না। এ রাতে ঘটেছিল এমন এক জঘন্য ঘটনা, যা জাতির আত্মাকে কেঁপে উঠিয়েছিল। রাত যখন নিবিড়, একদল নির্মম হত্যাকারী, বিপদগামী সেনা সদস্য  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসভবনে আক্রমণ করে।

মাত্র চার বছর আগেই এই মহান নেতা, যে ব্যক্তি তার নিরলস প্রচেষ্টায়, অকুতোভয় নেতৃত্বে বাংলাদেশকে জন্ম দিয়েছিলেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু কৃতজ্ঞতার বদলে, তারই স্বদেশবাসীরা, ক্ষমতার নোংরা খেলায় মাতাল হয়ে তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। শুধু তাকেই হত্যা করে ক্ষান্ত হয়নি, শিশু রাসেল সহ প্রায় পুরো পরিবারকে নিরমম্ভাবে হত্যা করে। 

এই হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত ছিল, তারা শুধু দেশকে এক মহান নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত করেনি, তারা বঞ্চিত করেছে একটি স্বপ্ন, একটি আদর্শ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল একটি শোষণমুক্ত, সাম্যবাদী, উন্নত বাংলাদেশ গঠন করা। তিনি সেই পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু ক্ষমতার পিপাসু কিছু মানুষ তার স্বপ্নের পথে বিষ ছিঁড়ে দিয়েছিল। এই জঘন্য হত্যার পর জেমসলামন্ড দুঃখ করে লিখেছিলেন, 

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে বাঙলাদেশই শুধু এতিম হয় নি বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে। 

কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন মরেনি। তা বুকে লালন করে রেখেছে বাংলাদেশের কোটি কোটি মানুষ। তার আদর্শ আজও আমাদের পথপ্রদীপ। 

বঙ্গবন্ধুর পারিবারিক জীবন 

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ, ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা শেখ লুৎফর রহমান এবং মা শেখ সায়েরা খাতুন। ৪ কন্যা এবং ২ পুত্রসন্তানের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। মা-বাবা তাঁকে ‘খোকা’ বলে ডাকতেন।

বিয়েঃ ১৯৩৮ শেখ মুজিবুর রহমান ১৮ বছর বয়সে শেখ ফজিলাতুন্নেসা (রেনু)-কে বিয়ে করেন। তাঁরা দুই কন্যা শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা এবং তিন পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল এর জনক-জননী ছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক জীবন ছিল এক দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য অধ্যায়। তিনি ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতিতে জড়িত ছিলেন। ১৯৩৯ সালে তিনি মিশনারি স্কুলে পড়াকালীন বিদ্যালয়ের ছাদ সংস্কারের দাবিতে শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর কাছে একটি দলের নেতৃত্ব দেন। এ ঘটনার মাধ্যমেই তার রাজনৈতিক জীবনের সূচনা হয়।

  • ১৯৪২ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং এখানে পড়াকালীন তিনি বাংলার অগ্রণী মুসলিম নেতা হোসেন শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর সংস্পর্শে আসেন। একই বছর কলকাতায় ছাত্রনেতা আবদুল ওয়াসেক প্রমুখের নেতৃত্বে হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ঐ সময় থেকে তিনি সক্রিয়ভাবে ছাত্র রাজনীতি শুরু করেন।
  • ১৯৪৪ সালে তিনি ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। 
  • ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। একই বছর তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগে যোগ দেন।
  • ১৯৪৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম লীগের কাউন্সিল সদস্য নির্বাচিত হন।
  •  ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাজনের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে যান এবং সেখানে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় হন।
  • ১৯৫৪ সালে তিনি যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করে। শেখ মুজিব যুক্তফ্রন্টের মুখপাত্র হিসেবে সরকারের মন্ত্রীসভায় যোগ দেন।
  • ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক অভ্যুত্থানের পর শেখ মুজিবসহ অনেক নেতাকে গ্রেফতার করা হয়।
  •  ১৯৬২ সালে সামরিক শাসনের অবসানের পর শেখ মুজিব মুক্তি পান।
  • ১৯৬৬ সালে তিনি ছয় দফা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ছয় দফা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন ও অধিকার আদায়ের সংগ্রামে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর শেখ মুজিবকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করা হয়। 
  • ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর শেখ মুজিব রাষ্ট্রপতি ও সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের সংবিধান রচনা, অর্থনীতির উন্নয়ন ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন মহান নেতা আর দেশপ্রেমিক ছিলেন না, তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনারই প্রতিমূর্তি। তার প্রতিটি চিন্তা, প্রতিটি কর্মে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলত তাঁর গণতান্ত্রিক, সামাজিক ও স্বাধীনচেতনা।

গণতন্ত্র আর মানবাধিকার ছিল বঙ্গবন্ধুর রক্তে মেশানো আদর্শ। সার্বজনীন ভোটাধিকার, মৌলিক অধিকার আর কথন স্বাধীনতা তার কণ্ঠে কখনো থেমে থাকেনি। তিনি ছিলেন একজন মহান নেতা,  যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি সুখী, সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের, যেখানে প্রত্যেকেই পাবে সমান অধিকার ও সুযোগ। এই আদর্শগুলোই হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূল। প্রতিটি বাঙালিকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের প্রতি, নিবেদিত হতে হবে জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষায়। বঙ্গবন্ধুর শিখানো সমাজতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী হতে হবে আমাদের, লক্ষ্য করতে হবে সকল মানুষের সমতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার।

বঙ্গবন্ধুর জীবন আমাদের জন্য নির্দেশিকা, তার কর্ম আমাদের অনুপ্রেরণা। তাই অন্নদাশঙ্কর রায় লিখেছেন,  

যতকাল রবে পদ্মা যমুনা গৌরী মেঘনা বহমান 

ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।  

তিনি দেখিয়ে গেছেন, দেশপ্রেম ও গণতন্ত্রের জন্য কীভাবে লড়াই করতে হয়, দেখিয়ে গেছেন, কীভাবে বিশ্বাস করতে হয় দেশপ্রেমের আদর্শে, কীভাবে কাজ করতে হয় সবার সমতা ও ন্যায়বিচারের জন্য। আমরা যদি তার পথ অনুসরণ করি, তাহলেই গড়ে তুলতে পারব আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।

উপসংহার 

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম আর মুক্তিযুদ্ধ – এ দুটোই বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে খচিত, অম্লান হীরকের মতো উজ্জ্বল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে, বাংলার মানুষের অদম্য সাহস ও ত্যাগের ফলে জন্ম নেয় স্বাধীন বাংলাদেশ, এই মহামূল্যবান অর্জনের পথে ছিল রক্তের ঝর্ণা, ছিল অবিচল দৃষ্টিভঙ্গি, ছিল বীরত্বের অগণিত কাহিনী। এই মহান নেতা ও মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুধু ইতিহাসের পাতায় লেখা নেই, এটি প্রতি বাংলাদেশীর হৃদয়ে গেঁথে আছে। প্রতিটি শিশু, প্রতিটি যুবক, প্রতিটি প্রবীণ এই গল্প শুনে বুক ফুলে ওঠে, গর্ব অনুভব করে। বঙ্গবন্ধুর অদম্য নেতৃত্ব, মুক্তিযোদ্ধাদের অকুতোভয় সাহস, এই দুইয়ের মিলনেই জন্ম নিয়েছে আমাদের স্বাধীন মাতৃভূমি, বাংলাদেশ।

তাই, আমরা প্রতিজ্ঞা করি, এই স্বাধীনতাকে লালন করব, এই দেশকে আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ করব। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনই হবে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য। এটাই হবে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে সার্থক করা।

বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ – রচনা পিডিএফ 

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের সুবিধার্থে, রচনার পিডিএফ কপিটি দেওয়া হল। এখনই ডাউনলোড করে তোমারদের ফোনে/পিসিতে রেখে দাও। 

 

Scroll to Top