আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
২১ ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাঙালি জাতির জন্য গৌরবের দিন এবং সারা বিশ্বের মাতৃভাষাভাষী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। ১৯৫২ সালে এই দিনেই বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে বাঙালি ছাত্রদের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন রফিক, সালাম, বরকত, জব্বারসহ বেশ কয়েকজন। তাদের আত্মত্যাগের রক্তে রাঙানো এই দিনটি শুধু ভাষার দাবির পক্ষে আন্দোলন নয়, এ বাঙালি জাতিসত্তার স্বাধীনতার পূর্বাভাস। ভাষা আন্দোলন শুরু হয় ১৯৪৭ সালে, যখন বাংলাদেশ তৎকালীন পাকিস্তানের অংশ ছিল। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার সিদ্ধান্তে বাঙালি জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবির মিছিলের ওপর গুলি চালায় পুলিশ। শহীদদের রক্তে উত্তাল হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে ভাষা আন্দোলন। এই আন্দোলনই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত পর্বের পথ রচনা করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বরে বাংলাদেশের উদ্যোগে জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এটি শুধুমাত্র বাঙালিদের জন্য নয়, সারা বিশ্বের মাতৃভাষাভাষী মানুষের জন্য মর্যাদার দিন। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, মাতৃভাষা আমাদের অস্তিত্বের মূল, আমাদের স্বাধীনতার শক্তি। তাই মাতৃভাষাকে ধারণ করার, লালন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। চলুন, এই ২১ ফেব্রুয়ারিতে আমরা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, মাতৃভাষাকে লালন করি। কেননা মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করা মানেই আমাদের স্বাধীনতার মর্যাদা রক্ষা করা।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হল প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি পালিত একটি বিশেষ দিবস, যা ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘ কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবছর ২১শে ফেব্রুয়ারি বিশ্বব্যাপী পালন করা হয়। এটি শহীদ দিবস হিসাবেও পরিচিত। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তানের পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিবর্ষণে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউলসহ অসংখ্য মানুষ নিহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলন শুরু হয়। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বরে জাতিসংঘের ৬৫তম অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তাবে ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করা হয়। এই ঘোষণার ফলে বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলন নতুন করে প্রাণ লাভ করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন এই দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্বের সকল ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা হয়। মাতৃভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলনকে শক্তিশালী করা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন উপলক্ষে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে: সমাবেশ ও সভা-সমিতি, রচনা, কবিতা, ও গান প্রতিযোগিতা। এই দিনে ভাষা শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। এ দিবসটি মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে তোলে। মাতৃভাষা দিবস বাঙালিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বাঙালি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক। বাংলা ভাষা বাঙালি জাতির প্রাণের ভাষা। এই ভাষার মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের চিন্তাভাবনা, সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্যকে প্রকাশ করে। মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে। মাতৃভাষা দিবস বাঙালিদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটি বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলনের অনুপ্রেরণা দেয়। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাতৃভাষার অধিকারের জন্য সংগ্রামরত মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। মাতৃভাষা দিবস বাঙালিদের কাছে একটি গৌরবময় দিন। এই দিনটি পালনের মাধ্যমে বাঙালিরা তাদের ভাষার অধিকারের জন্য সংগ্রামরত শহীদদের স্মরণে শ্রদ্ধা জানায়। বাংলা ভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে সচেতন করে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্ববাসী জানতে পারে যে, বাংলা ভাষা একটি সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী ভাষা। এই ভাষার মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের চিন্তাভাবনা, সংস্কৃতি, ও ঐতিহ্যের প্রকাশ করতে পারে। এই দিবস মাতৃভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলনের অনুপ্রেরণা দিচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মাতৃভাষার অধিকারের জন্য সংগ্রামরত মানুষদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। এই দিবসটি তাদের মনে সাহস ও শক্তি জোগায়। এই দিনটি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক দিন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
“আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।” প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশী সব জায়গায় এই গানটি গাওয়া হয়। এই গানটি মূলত স্মরণ করিয়ে দেয় ১৯৫২ সালের শহীদ হওয়া ভাষা সৈনিকদের ত্যাগের কথা। ভাষার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে এমন উদাহরণ পৃথিবীতে খুব কমই আছে। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি এই দিনটি ইতিহাসের পাতায় সারা জীবন থেকে যাবে বা অমরত্ব লাভ করেছে। ১৯৪৭ সালে যখন ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটে তখন পাকিস্তান সৃষ্টি হলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা পূর্ব পাকিস্তানের কথা বলার অধিকার দিতে চায়নি। পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম শুরু করে। এই সংগ্রামের একটি অন্যতম মুখ্য দাবি ছিল বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই দাবি মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এই পরিপেক্ষিতে ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র-জনতা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। মিছিলটি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি আসে তখন পুলিশ তাদের উপর গুলিবর্ষণ করে। এই গুলিবর্ষণে রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিক সহ অসংখ্য মানুষ নিহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পূর্ব পাকিস্তানে ব্যাপক গণআন্দোলন শুরু হয়। ২৪শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ধর্মঘট শুরু করে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানের সব সরকারি অফিস-আদালত বন্ধ করে দেওয়া হয়। ২৮শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এই ঘোষণার ফলে মাতৃভাষা আন্দোলন সফল হয়। মাতৃভাষা আন্দোলন পূর্ব পাকিস্তানে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার আন্দোলনকেও প্রভাবিত করে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করার সাহস ও শক্তি অর্জন করে। মাতৃভাষা আন্দোলনের প্রভাব বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলনেও লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মর্যাদার প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও মর্যাদার প্রতি বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধা বৃদ্ধি করছে। এই দিবসটি তাদের মনে বাঙালি জাতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জাগ্রত করে। বাংলাদেশের মাতৃভাষা দিবস পালন বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার অধিকারের জন্য আন্দোলনের একটি প্রতীক। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ববাসীর কাছে একটি গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকারসম্মত দেশ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।