ইন্টারনেট | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
ইন্টারনেট, একদিন যেন বিজ্ঞান কল্পকাহিনী ছিল, এখন এটি আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। ছাত্র থেকে কৃষক, ব্যবসায়ী থেকে গৃহিণী, সবার জীবনেই গভীরভাবে ঢুকে গেছে এই ইন্টারনেট। পড়াশোনা করার জন্য আর মোটা বই খুঁজতে হয় না, গুগল থেকে সব তথ্য পাওয়া যায়! কৃষককে আবহাওয়ার খবর আর বাজারের দর জানতে আর গ্রামের পীরের কাছে যেতে হবে না, মোবাইলেই সব জানতে পারে! ইতিহাস বলে, আমেরিকা ও রাশিয়ার মাঝে কোল্ড ওয়ার এর সময় সামরিক প্রয়োজনে জন্ম নেয় ইন্টারনেট। কিন্তু সেই বীজ থেকে গজিয়েছে অসীম সম্ভাবনার বন। ছাত্রদের জন্য এখন এটি এক বিশাল লাইব্রেরি, যেখানে কয়েকটি ক্লিকে খুঁজে পাওয়া যায় জ্ঞানের সাগর। কৃষকরা ডিজিটাল পঞ্জিকা দেখে আবহাওয়ার ঠিকঠাক খবর জানেন, বাজারের চাহিদা অনুযায় ফসল উৎপাদন করেন। ব্যবসায়ীরা বিশ্বের কোণে কোণে পৌঁছে যান তাদের পণ্য নিয়ে, অ-পরিচিত দেশেও খুঁজে পান গ্রাহক। আমরা সাধারণ মানুষও আনন্দের উৎস পাই এই নেটমাধ্যমে, দুরের মানুষের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান, বন্ধুত্ব হয়, সারা পৃথিবী এখন ছোট্ট এক হাতের মুঠোয়। এক কথায় ইন্টারনেট এখন জীবনের সব কাজের সাথে যুক্ত হয়ে গেছে, এটি ছাড়া আমাদের কাজ বা বিনোদন কোনটিই সম্ভব না। কিন্তু অতিরিক্ত ইন্টারনেটের ব্যাবহার আমাদের মানসিক ও শারীরিক অনেক ক্ষতি করছে, বাস্তবের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। মিথ্যাতথ্যের বন্যা এই নেটমাধ্যমে, বিভ্রান্ত করে, সামাজিক সম্প্রিতি নষ্ট করে। ইন্টারনেটের নেশা, এক মায়াবী সাপের ফাঁদ, আমাদের আটকায় এই ডিজিটাল জগতে, বাস্তবতা আর ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে সীমা টেনে দেয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন অনেক অপরাধ বেড়ে গেছে। কিন্তু এটিকে বাদ দেবার কোন উপায় নেই। তাই প্রতিটা তথ্য যাচাই করতে হবে, অনালাইন দুনিয়ার সাথে সাথে বাস্তবতা রক্ষা করতে হবে। আমরা সবাই এই শক্তিকে ব্যবহার করবো, ভালোর কাজের জন্য, নিজেদের রক্ষা করবো বিপদ থেকে। ইন্টারনেট এক আয়না, যা শুধু দুনিয়া না, আমাদের নিজেদেরও প্রতিফলন দেখায়। চেষ্টা করবো সেই প্রতিফলনটা আরও উজ্জ্বল করতে। যাই হোক, ইন্টারনেট এক জাদুকারি জিনিস! সুবুদ্ধি আর সতর্কতা নিয়ে চললেই এটি হবে আমাদের সহায়ক, আমাদের বন্ধু।
ইন্টারনেট | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
ইন্টারনেট হলো একটি বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। এটি কম্পিউটারের একটি নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। ইন্টারনেটের ইতিহাস শুরু হয় ১৯৬০-এর দশকে। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিল যার নাম ছিল ARPANET। ARPANET ছিল একটি সামরিক নেটওয়ার্ক। এর উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধের সময় সামরিক তথ্য আদান-প্রদান করা। ১৯৭০-এর দশকে ARPANET জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এরপর থেকে ইন্টারনেটের ব্যবহার দ্রুত বৃদ্ধি পেতে থাকে। বর্তমানে ইন্টারনেট বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় যোগাযোগ মাধ্যম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে এখন খুব সহজে টেক্সট মেসেজ, ইমেইল, ওয়েবসাইট ইত্যাদি পাঠানো যায়। বিভিন্ন কারনে ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় অডিও ফাইল, গান, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদি পাঠানো যায়। ইন্টারনেট ছাড়া আগে যে কোনো ধরনের অডিও ভিডিও আদান প্রদান করতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হতো। এখন ইন্টারনেটের জন্য খুব সহজে ভিডিও ফাইল, ভিডিও কনফারেন্স ইত্যাদি পাঠানো যায়। একপ্রান্ত থেকে অনুপ্রান্তে খুব সহজে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছবি, গ্রাফিক্স, অ্যানিমেশন ইত্যাদি পাঠানো যায়। ইন্টারনেটের ব্যবহারের ফলে আমাদের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমরা একে অন্যের সাথে খুব দ্রুত যোগাযোগ করতে পারি। ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করতে পারি, এবং শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। ইন্টারনেটের ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের জীবনযাত্রার মান অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে। আধুনিক যুগে ইন্টারনেট ছাড়া কোনো কিছুই কল্পনা করা যায়না। ইন্টারনেট পুরো বিশ্বকে এখন হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। ইন্টারনেটের সুযোগ সুবিধার জন্য দিনদিন এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। সকল শ্রেনি পেশার মানুষ তাদের কাজের জন্য এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। ইন্টারনেট আমাদের জীবনে আশীর্বাদ স্বরুপ।
ইন্টারনেট | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
ইন্টারনেট এর পূর্ণরূপ হলো Interconnected Network। এর অর্থ হলো পরস্পরের সাথে সংযুক্ত নেটওয়ার্ক। ইন্টারনেট হলো একটি বিশ্বব্যাপী কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। এটি কম্পিউটারের একটি নেটওয়ার্ক যার মাধ্যমে পৃথিবীর এক প্রান্তের কম্পিউটার থেকে অন্য প্রান্তের কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। ইন্টারনেটের আবিষ্কারক হিসেবে সাধারণত চারজন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়। তারা হলেন: .সি.আর. লিকি । তিনি ছিলেন একজন মার্কিন বিজ্ঞানী। তিনি ১৯৬০-এর দশকে ইন্টারনেটের ধারণা দেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি হলেন লেওনার্ড ক্লাইনরোক । তিনি ছিলেন একজন মার্কিন বিজ্ঞানী। তিনি ইন্টারনেটের জন্য প্রয়োজনীয় নেটওয়ার্ক তত্ত্বের বিকাশ করেন। তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যক্তি হলেন বিল গেটস এবং পল অ্যালেন । তারা হলেন মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের প্রতিষ্ঠাতা। তারা ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে মানুষের জীবনযাত্রা ছিল অনেকটাই ভিন্ন। ইন্টারনেটের আবিষ্কারের আগে মানুষ তথ্যের জন্য প্রধানত লাইব্রেরি, পত্রিকা, এবং টেলিভিশনের উপর নির্ভর করত। যোগাযোগের জন্য মানুষ চিঠি, ফোন, এবং টেলিগ্রাফ ব্যবহার করত এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মানুষ টেলিফোন, ফ্যাক্স, এবং ডাক ব্যবহার করত। কিন্তু বর্তমানে ইন্টারনেটের ব্যবহারের ফলে মানুষের জীবনযাত্রা অনেক সহজ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষ যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে তথ্যের অ্যাক্সেস করতে পারে। যোগাযোগের জন্য মানুষ এখন ইমেইল, সোশ্যাল মিডিয়া, এবং ভিডিও কনফারেন্স ব্যবহার করে। ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য মানুষ এখন ই-কমার্স, ওয়েবসাইট, এবং ইমেইল ব্যবহার করে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের গুরুত্ব অপরিসীম। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা যেকোনো বিষয়ে দ্রুত ও সহজে তথ্যের অ্যাক্সেস করতে পারে। লাইব্রেরিতে গিয়ে বই খুঁজে পেতে অনেক সময় লাগে। কিন্তু ইন্টারনেটের মাধ্যমে যেকোনো সময়, যেকোনো জায়গা থেকে যেকোনো বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। ইন্টারনেটে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক সামগ্রী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ভিডিও, লেকচার, ক্লাস, টেস্ট, এবং প্রশ্নোত্তর। শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষামূলক সামগ্রী ব্যবহার করে বিষয়টিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে পারে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের সৃজনশীল কাজ করতে পারে। তারা বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ, ওয়েবসাইট, এবং সফ্টওয়্যার তৈরি করতে পারে। ইন্টারনেট মানুষের জীবনকে যেমন সহজ করে দিয়েছে তেমনি আবার ইন্টারনেট মানুষের জীবনে ক্ষতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে। ইন্টারনেট সবসময় সঠিক তথ্য প্রদান করেনা। অনেক সময় ইন্টারনেটে অনেক ভুল তথ্য থাকে। শিক্ষার্থী এবং অন্যান্য ব্যবহারকারী ভুল তথ্য বিশ্বাস করলে ক্ষতির স্বিকার হন। সাইবার অপরাধ এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের সাইবার অপরাধ হতে পারে। সাধারন মানুষ বিশেষ করর মেয়ে মানুষ সাইবার অপরাধের স্বিকার হতে পারে। অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারনে মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা হতে পারে। ইন্টারনেটের অত্যধিক ব্যবহার মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে হতাশা, উদ্বেগ, এবং একাকিত্বতা। ইন্টারনেট এর অতিরিক্ত আসক্তির কারনে শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে যাচ্ছে। যার কারনে সেই শিক্ষার্থী পড়াশোনাতে অনেক পিছিয়ে যায়। ইন্টারনেন্টের অতিরিক্ত সুবিধা নিয়ে মানুষ দিনদিন অলসে পরিনত হচ্ছে। এছাড়াও বাচ্চারা ইন্টারনেটে দিন দিন আসক্ত হয়ে পরছে। যার জন্য বাচ্চাদের শারিরীক ও মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আমাদের সবাইকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যাতে করে আমরা ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে মূল্যবান সময় অপচয় না করতে পারি।