কর্মমুখী শিক্ষা | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
কর্মমুখী শিক্ষা হলো এমন শিক্ষা ব্যবস্থা যা শিক্ষার্থীদেরকে কর্মক্ষেত্রে সফল হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা, জ্ঞান এবং মানসিকতা অর্জনে সহায়তা করে। অল্প কথায় বলতে গেলে কর্মমুখী শিক্ষা বলতে বোঝায় কর্মকে কেন্দ্র করে যে শিক্ষা গড়ে ওঠে। ব্যক্তিজীবনে এবং দেশের উন্নয়নের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের দেশ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় জর্জরিত। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রকট সমস্যা হলো বেকার সমস্যা, কর্মহীনতা ও দরিদ্রতা। আমাদের দেশ এক সময় সম্পদে ভরপুর ছিল। ইংরেজরা যখন বাংলাদেশে শাসন করতে এসেছিল তারা আমাদের দেশের সম্পদ পাচার করে আত্নসাদ করে দিয়েছে। তখন থেকেই আমাদের দেশের অধঃপতন শুরু হয়েছিল। দেশ ধীরে ধীরে দরিদ্র হয়ে পরেছে। কিন্তু আমরা চাইলেই দেশকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত না হওয়ার কারনেই মুলত আমরা দরিদ্র অবস্থা থেকে নিস্তার পাচ্ছিনা। আমরা বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থায় আছি সেটা পরিবর্তন করে যদি যোগ্যতা অনুযায়ী প্রশিক্ষন দেয়া হয় তাহলে আমাদের দেশ আবারো আগের অবস্থায় ফিরে যাবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান করার ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। এ জন্য সাধারন শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। আমাদের দেশের এখন যে অবস্থা সেই অবস্থার পরিপেক্ষিতে কারিগরি শিক্ষাই হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা পদ্ধতি। আমাদের দেশের সরকার ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করেছে এবং অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কারিগরি শিক্ষা প্রদান শুরু হয়েছে। দেশে যে ভোকেশনাল প্রশিক্ষন ইনষ্টিটিউট গুলো আছে সেখানে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি প্রশিক্ষন দেয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কারিগরি প্রশিক্ষন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু হয়েছে। দেশে যদি সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থা গুলো বিনামূল্যে বা নামমাত্র মুল্যে কারিগরি প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা গ্রহন করে তাহলে খুব শিঘ্রই আমাদের দেশের জনগন জনশক্তি তে রুপান্তরিত হতে পারবে। দেশকে আধুনিক ও উন্নত করতে চাইলে কারিগরি শিক্ষা গ্রহনের বিকল্প নেই।
কর্মমুখী শিক্ষা | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
কর্মমুখী শিক্ষা হলো এমন শিক্ষা ব্যবস্থা যা শিক্ষার্থীদেরকে নির্দিষ্ট একটি পেশা বা ক্ষেত্র সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদেরকে কর্মজীবনে সফল হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। অর্থাৎ কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে কোনো শিক্ষার্থীকে তার যোগ্যতা বা আগ্রহনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা অর্জনে যথাযথ প্রশিক্ষনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সাহায্য করা করাকেই কারিগরি শিক্ষা বলে। কারিগরি শিক্ষাকে অন্য ভাষায় জীবনমুখী শিক্ষা বলা হয়। যখন কোনো শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা হয়, তখন সেই শিক্ষার্থী নিজের জীবনে খুব দ্রুত সফলতা আনার পাশাপাশি অন্য বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে পারে। কারিগরি শিক্ষার মূল উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে ডিগ্রি অর্জনের মোহ থেকে বের করে আনা। দেশে যেমন ডিগ্রিধারী শিক্ষিত মানুষের প্রয়োজন আছে তেমনি প্রয়োজন দক্ষ কারিগরের। কারন দেশে যখন শুধু শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যায় তখন একই ভাবে বেকারের সংখ্যাও বেড়ে যায়। দেশে চাকরির পদের তুলনায় শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেলে তখন শিক্ষার্থীরা বেকার হয়ে পড়ে, হতাশায় ভোগে। কিন্তু যখন জেনারেল শিক্ষার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে কারিগরি শিক্ষা প্রদান করা হয়, কারিগরি শিক্ষা শেষে সেই শিক্ষার্থী স্বনির্ভর হতে পারে। সে নিজেকে বেকার অবস্থা থেকে একজন সফল কর্মজীবি মানুষ হিসেবে দাড় করাতে পারে। একটি দেশে যখন কারিগরি শিক্ষা প্রদান বেড়ে যায় তখন সেই দেশের বেকার সমস্যা দূরীকরণ করা যায়। চীনে যখন যুদ্ধের পর অর্থসংকট দেখা গিয়েছিল তখন সেই দেশে কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থার উপর জোর দেয়া হয়। ফলে কয়েক বছরের মধ্যে চীনের অর্থনৈতিক অবস্থা পরিবর্তিত হয়ে যায়। যদিও আমাদের দেশেও ইতিমধ্যে কারিগরি শিক্ষার উপর জোর দেয়া হয়েছে। সরকার যেমন কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করে দিয়েছে, সরকারের পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব হলো আমাদের সন্তানকে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কারিগরি শিক্ষা গ্রহনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা। তাহলে নিজের পরিবার এবং সেই সাথে দেশের উন্নতি করা সম্ভব হবে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। যেমন ডাক্তার, প্রকৌশলী, কৃষিবিদ। নিজের পছন্দ ও যোগ্যতা অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসব প্রশিক্ষন নিয়ে উচ্চ ডিগ্রি লাভ করে স্বাধীন পেশায় নিয়োজিত হতে পারে। আমাদের দেশে আর একধরনের কারিগরি শিক্ষা রয়েছে যেখানে উচ্চতর ডিগ্রির প্রয়োজন হয় না। যেমন কুটিরশিল্প নির্মান করা, সেলাই কাজ শেখা, মৎস্য, হাস মুরগি পালন ও নার্সারি। এই ধরনের কারিগরি শিক্ষা যে কোনো বয়সের নারী পুরুষ করে নিজেকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারে। আমাদের দেশে এখন সরকারী উদ্যগে বিনামূল্যে এসব প্রশিক্ষন প্রদান করা হচ্ছে। আমরা দেশের মানুষ সবাই এক হয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করর পাশাপাশি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নত করতে পারি। নিজের ও দেশের উন্নতির জন্য কারিগরি শিক্ষা অপরিহার্য।
কর্মমুখী শিক্ষা | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে শিক্ষা ব্যবস্থাকে কেবল তথ্য ও জ্ঞানের ভাণ্ডার না, বরং দক্ষতা অর্জন ও কর্মসংস্থানের পথ উন্মোচনের কারখানায় পরিণত করতে হবে। এই চাহিদা পূরণ করতেই আসে কর্মমুখী শিক্ষার ধারণা। তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি বাস্তব জীবনে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের ওপর জোর দেয় এই শিক্ষা। ফলে এটি শুধুমাত্র বেকারত্ব দূর করেই না, বরং দারিদ্র্যকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবল চালকশক্তি হয়ে উঠতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান চিত্রে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে গেছে। বেকারত্বের হাতছানি এড়াতে প্রতিবছর লাখ লাখ তরুণ শিক্ষাঙ্গন থেকে বেরিয়ে আসলেও তাদের সবার জন্য চাকরির সুযোগ নেই। ফলে হতাশা ও অস্থিরতা বৃদ্ধি পায়। কর্মমুখী শিক্ষা এই সমস্যার সমাধানে কার্যকরী পথ দেখায়। এটি তরুণদের চাকরি খোঁজার পরিবর্তে চাকরি সৃষ্টির দিকে উৎসাহিত করে। কৃষি, কারিগরি, তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন, উদ্যোক্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে তারা নিজেদের ব্যবসা গড়ে তুলে স্বাবলম্বী হতে পারে। এমনকি অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগও সৃষ্টি করতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষা বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতেও সহায়তা করে। বিশ্বায়নের এই যুগে প্রতিযোগিতা বেড়েছে, যেখানে দক্ষ জনশক্তি ছাড়া টিকে থাকা কঠিন। কর্মমুখী শিক্ষা দেশের শিল্প-কারখানা, সেবা খাত, কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষ জনশক্তি সরবরাহ করে। ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। কর্মমুখী শিক্ষাকে ব্যাপক আকারে সফল করার দায়িত্ব সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী সবারই। সরকারকে উচিত কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও মান উন্নত করা, শিক্ষাক্রম আধুনিকীকরণ করা, ব্যবসায় উদ্যোগের প্রশিক্ষণ জোরদার করা, শিল্প-কারখানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলা এবং কর্মমুখী শিক্ষার প্রচার করা। শিক্ষকদের কর্মমুখী শিক্ষার পদ্ধতি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ নেওয়া দরকার। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের শুধুমাত্র ঢালাও পড়াশোনা নয়, বরং বাস্তব জীবনে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনের জন্য উৎসাহিত করা। তারা তাদের সন্তানদের বিভিন্ন ধরনের কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ দিতে পারেন। এছাড়াও, তারা তাদের সন্তানদের বাস্তব জীবনের সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, নেতৃত্ব, যোগাযোগ, এবং সহযোগিতা ইত্যাদি দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করতে পারেন।সুতরাং, বলা যায় কর্মমুখী শিক্ষা বাংলাদেশের উন্নয়নের চাবিকাঠি। সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক, শিক্ষার্থী সবার একযোগে কাজ করার মধ্যে দিয়েই এই চাবিকাঠি দেশের ভাগ্যর দরজা খুলে দিতে পারে। কর্মমুখী শিক্ষাকে জনপিয় করার মাধ্যমে আমরা দারিদ্র্য দূর করতে পারি, বেকারত্ব নিরসন করতে পারি, দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলে অর্থনীতির চাকা সচল করতে পারি। আসুন, সবাই মিলে কর্মমুখী শিক্ষার আলো ছড়িয়ে, নিজেদের জীবন গড়ার পাশাপাশি বাংলাদেশকে উন্নতির শীর্ষে পৌঁছে দেই।