প্রিয় শিক্ষার্থীরা আমাদের আজকের রচনা কর্মমুখী শিক্ষা বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা নিয়ে। আজকের এই রচনাটি ২০ টি পয়েন্টে প্রায় ২৫০০+ শব্দে লেখা হয়েছে যেন পরীক্ষার্থীরা একবার পড়েই নিজের মতো করে লিখতে পারে। রচনাটি SSC/HSC সহ যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কর্মমুখী শিক্ষা
ভূমিকা
শিক্ষা হলো একটি জাতির মেরুদণ্ড। একটি জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। আর এই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ একটি রুপ হলো বৃত্তিমূলক বা কর্মমুখী শিক্ষা। এটি শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। এটি মূলত ব্যবহারিক ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা। তাই, কর্মমুখী শিক্ষা তথা বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল –
“কারিগরি শিক্ষা নিলে বিশ্ব জুড়ে কর্ম মিলে।”
বর্তমান বিশ্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিবর্তনের ফলে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে দক্ষ জনশক্তির প্রয়োজন। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এই দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা সম্ভব।
কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার ধারণা
শিক্ষা মানুষকে বদলে দেয়, গড়ে তােলে একজন প্রকৃত মানুষ হিসাবে। শিক্ষা মানুষকে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। তবে মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষকে কাজ করতে হয়। এজন্য তাত্ত্বিক শিক্ষার পাশাপাশি কর্মমুখী শিক্ষার দরকার। এটি হলো সেই শিক্ষা যা বাস্তব জীবনের কাজে ব্যবহার করা যায়। এটি মানুষকে একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কর্মক্ষেত্রে সফল হতে প্রস্তুত করে তুলে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এর মতে,
“কর্মমুখী শিক্ষা হলো এমন শিক্ষা যা শিক্ষার্থীদের জীবনকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে ও কর্ম পেতে সাহায্য করে।”
আধুনিক বিশ্বে প্রতিনিয়ত নিত্য নতুন আবিষ্কার এবং সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক অগ্রগতির কারনে কর্মসংস্থানের ধারণা ক্রমেই পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রতিদিন উন্মোচিত হচ্ছে নিত্য নতুন কাজের দরজা। এক সময় বংশনাক্রমিক কাজ অনেকেরই একমাত্র উপায় ছিল। বংশানুক্রমিক পেশাগত প্রথা অবলম্বন করে নিশ্চিত জীবনযাপনের দিন এখন আর নেই। এখন এমন সব কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে যার সাথে বিশেষায়িত শিক্ষা অপরিহার্য হয়ে পরেছে। ফলে সাধারণ শিক্ষার চেয়ে কর্মমুখী বা বৃত্তিমূলক শিক্ষা ক্রমেই অধিকতর গুরুত্ব পাচ্ছে।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রকারভেদ
কর্মমুখী শিক্ষা একাডেমিক শিক্ষার মতো গতানুগতিক শিক্ষা নয়। এটি একটি জীবনমুখী শিক্ষা যা শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করে। কর্মমুখী শিক্ষাকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়:
১. উচ্চতর কর্মমুখী শিক্ষা ও
২. সাধারন কর্মমুখী শিক্ষা।
উচ্চতর কর্মমুখী শিক্ষা
এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পেশায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করে। এই ডিগ্রি তাদেরকে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। যার ফলে ভালো বেতনে উচ্চপদস্থ কর্মচারী হওয়ার সুযোগ পায়। যেমন, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা।
সাধারণ কর্মমুখী শিক্ষা
এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পেশায় দক্ষতা অর্জন করে। এই দক্ষতার মাধ্যমে তারা খুব দ্রুত নিজেকে সাবলম্বী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। শুধু যে নিজের কাজের ব্যবস্থা হয় তা নয় পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। সাধারন কর্মমুখী শিক্ষা বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন:
- কৃষি: কৃষক, কৃষিবিদ, খামারী, মাছ চাষি, হাঁস-মুরগি পালন করা।
- শিল্প: কামার, কুমার, তাঁতি, দর্জি, ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রাজমিস্ত্রি, ছাপাখানা শ্রমিক, চামড়ার কাজের শ্রমিক, গ্রাফিক্স ডিজাইনার
- সেবা: নার্স, ধাত্রী, শিক্ষক, গাড়ি চালক, দোকানদার, সেলসম্যান, হেয়ার ড্রেসার, মেকানিক, ইত্যাদি।
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। যখন থেকে বাংলাদেশে এই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু হয়েছে তখন থেকে দেশের বেকার সমস্যার কিছুটা হলেও সমাধান হয়েছে। কারন এই শিক্ষা ব্যবস্থা মানুষকে দ্রুত আত্ননির্ভরশীল হতে সাহায্য করে।
কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব নিম্নরূপ:
কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি: কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করে। এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কর্মক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে ওঠে, যা তাদেরকে চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তোলে। একজন শিক্ষার্থী যখন নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর হাতে কলমে শেখার সুযোগ পায় তখন সেই শিক্ষার্থী অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব জীবনে কাজে লাগিয়ে নিজের কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে পারে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা যে সাধারন শিক্ষা গ্রহন করে সেখানে এত দ্রুত কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়ার সুযোগ থাকেনা। সাধারন পড়াশোনা শেষ করে কর্মক্ষেত্রে যোগদানের জন্য বিভিন্ন ধরনের কোর্স বা ট্রেনিং এর প্রয়োজন পরে। কর্মমুখী শিক্ষার মধ্যে এরকম কোনো জটিলতা নেই।
আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করে: কর্মমুখী শিক্ষা মানুষকে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করে। আমরা জানি যে, এই শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট একটি বিষয়ের উপর দক্ষতা অর্জন করে। যার কারনে অন্যের উপর নির্ভর করতে হয় না। চাকরির জন্য কোথাও ছুটতে হয়না। নিজেই দক্ষ হওয়ার কারনে ব্যবসা বা কলকারখানা বানিয়ে কাজ শুরু করতে পারে। যেমন একজন শিক্ষার্থী যখন ইলেকট্রিক কাজ শেখে তখন সে নিজেই উদ্যক্তা হিসেবে কাজ করতে পারে। তখন চাকরির জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হয়না। স্বাধীন ভাবে নিজের জীবিকা নির্বাহ করতে সক্ষম হয়।
সমাজে সফল হতে সহায়তা করে: কর্মমুখী শিক্ষা মানুষকে সমাজে সফল হতে সহায়তা করে। এই পেশায় যারা কাজ করে তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ পায়। বাস্তব জ্ঞান থাকার কারনে খুব দ্রুত উন্নতি করতে পারে। কারিগরি শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী অর্থনৈতিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় সেই সাথে অন্য বেকার মানুষদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেয়। যার কারনে অর্থনৈতিক ভাবে উন্নত হয়ে সমাজ থেকে বেকার সমস্যা হ্রাস করতে ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারের জন্য অর্থনৈতিক ভাবে অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের লক্ষ লক্ষ তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব।
কর্মমুখী শিক্ষা উন্নতির জন্য পদক্ষেপ
কর্মমুখী শিক্ষা গ্রহনের ফলে কিভাবে একজন শিক্ষার্থী নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে তা আমরা জেনেছি। কর্মমুখী শিক্ষার মাঝে কিছু সমস্যা রয়েছে। সেই সমস্যা সমাধানের জন্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে। যেমন:
কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি না পাওয়ার কারনে সবাই এই শিক্ষা গ্রহন করতে পারছেনা। যদি কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করা হয় তাহলে দেশের অধিকাংশ মানুষ এই শিক্ষা গ্রহন করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যেতে অবদান রাখতে পারবে। তাই প্রাথমিক, মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষায় কর্মমুখী শিক্ষার প্রোগ্রাম এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
কর্মমুখী শিক্ষার মান উন্নত করলে শিক্ষার্থীরা আরো ভালো ভাবে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে। দেশে যখন দক্ষ নাগরিক থাকে সেই দেশ তখন দক্ষ জনশক্তিতে রুপান্তরিত হয়। তাই কর্মমুখী শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য এই শিক্ষা ব্যবস্থার সাথে শিল্প-কারখানার সমন্বয় করতে হবে। এছাড়াও, কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান গুলোর মান নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন।
কর্মমুখী শিক্ষার জন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে আগ্রহ তৈরি করার জন্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। তাই কর্মমুখী শিক্ষার যে সুবিধা রয়েছে সে সম্পর্কে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক গনের সাথে আলোচনা করতে হবে এবং উদ্বুদ্ধ করতে হবে। আগ্রহ নিয়ে শেখার ফলে শিক্ষার্থীরা আরো ভালো ভাবে দক্ষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য কর্মমুখী শিক্ষা একটি অপরিহার্য হাতিয়ার। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অবস্থা পুরোপুরি পরিবর্তন করা সম্ভব।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। বাংলাদেশে জনসংখ্যার পরিমান অনেক বেশি। অধিকাংশ মানুষ এখনো দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে। এর প্রধান কারন হলো দেশে কর্মসংস্থানের অভাব। দেশে যে হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই তুলনায় কাজের কোনো ব্যবস্থা নেই। বাংলাদেশে শিক্ষার হার আগের তুলনায় অনেক বেড়ে গেলেও দেশ থেকে বেকার সমস্যা দূর হচ্ছেনা। কারন প্রতি বছর দেশ থেকে যে পরিমান ছাত্র ছাত্রী গ্রাজুয়েট হয়ে বের হয় সেই তুলনায় বাজারে চাকরি নেই। যার কারনে শিক্ষার্থীরা বেকার সমস্যায় ভুগছে, মানসিক ভাবে ভেঙে পরছে। অনেকে অভাব এবং পরিবারের দায়িত্ব নিতে না পারার জন্য আত্নহত্যা করছে। বাংলাদেশ কে এরকম ভয়ংকর অবস্থা থেকে মুক্ত করতে পারে কর্মমুখী শিক্ষা। দেশের মানুষকে যখন কর্মমুখী শিক্ষার আওতায় আনা যাবে তখন শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা শেষে আর বেকার বসে থাকবেনা। এই শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তব জীবনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ন হওয়ার কারনে নিজেরাই কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে সক্ষম হবে। নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা গ্রহন করে শিক্ষার্থীরা দেশ থেকে বেকার নামক অভিশাপ মুছে দিতে পারবে। যেমন একজন শিক্ষার্থী যদি নিজেকে কৃষি উদ্যক্তা বানাতে চায়, তাহলে কৃষির উপর কারিগরি শিক্ষা নিয়ে নিজেই ফার্ম দিতে পারে। ফার্ম থেকে আয়কৃত অর্থ দিয়ে নিজের এবং পরিবারের আর্থিক সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তার ফার্মে কর্মচারী নিয়োগ করে দেশ থেকে বেকারের সমস্যা কমিয়ে ফেলতে পারে। কারিগরি শিক্ষা নিয়ে এভাবে প্রতিটি সেক্টরের শিক্ষার্থী নিজেকে বেকার অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে। সেই সাথে দেশের উন্নয়নেও অগুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে দেশে কারিগরি শিক্ষাকে বেশি প্রাধান্য দিকে দেশের অনেক সামাজিক সমস্যা দূর করা সম্ভব।পরিশেষে বলা যায়, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব।
বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও কর্মমুখী শিক্ষা
বাংলাদেশের নতুন কারিকুলাম ২০২৩ সালের জুলাই মাসে চালু করা হয়। এই কারিকুলামের লক্ষ্য হল শিক্ষার্থীদেরকে কর্মমুখী শিক্ষা প্রদান করা, যাতে তারা তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত হতে পারে। নতুন কারিকুলামে বেশকিছু পরিবর্তন হয়েছে। যেমন :
- শিক্ষার নতুন কারিকুলামের উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষ, কর্মমুখী ও নৈতিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা।
- নতুন কারিকুলামে বিষয়বস্তুকে বাস্তব জীবনের সাথে সংযুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে বাস্তব সমস্যা সমাধানের দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
- নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদেরকে কেন্দ্র করে শিক্ষাদানের পদ্ধতি গ্রহণ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদেরকে তাদের নিজস্ব মেধা ও দক্ষতা অনুযায়ী শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে।
- এই কারিকুলামে শিক্ষার্থীদেরকে ধারাবাহিকভাবে মূল্যায়ন করা হবে। এতে পরীক্ষার পাশাপাশি প্রকল্পভিত্তিক কাজ, অ্যাসাইনমেন্ট, শ্রেণী কার্যক্রম ইত্যাদির মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে।
নতুন কারিকুলামের মাধ্যমে কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানের উদ্যোগটি ইতিবাচক। এটি শিক্ষার্থীদেরকে তাদের ভবিষ্যৎ কর্মজীবনের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করবে। তবে, এই উদ্যোগটি সফল হওয়ার জন্য শিক্ষকদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া অপরিহার্য। শিক্ষকদেরকে নতুন কারিকুলামের উদ্দেশ্য, বিষয়বস্তু, শিক্ষা পদ্ধতি ও মূল্যায়ন পদ্ধতি সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে হবে। নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের জন্য পর্যাপ্ত শিক্ষা উপকরণ ও পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
অর্থনীতিতে কর্মমুখী শিক্ষার প্রভাব
কর্মমুখী শিক্ষা বাস্তব ধর্মী শিক্ষা হওয়ায় এর মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি উন্নয়ন করা যায়। আর এ জন্য অর্থনৈতিক এর প্রভাব ব্যাপক। এটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্মমুখী শিক্ষার অর্থনৈতিক প্রভাব নিম্নরূপ:
১। বেকারত্ব হ্রাস: কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানযোগ্য করে তোলে। এতে বেকারত্বের হার হ্রাস পায়। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।
২। দারিদ্র্য বিমোচন: কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে জিডিপি বৃদ্ধি পায়।
৪। প্রযুক্তিগত উন্নয়ন: কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করে। এতে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে নতুন নতুন শিল্প গড়ে ওঠে।
৫। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলকতা বৃদ্ধি: কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষতা প্রদান করে। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলকতা বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বৃদ্ধি পায়।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কর্মমুখী শিক্ষার প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই তরুণ। এই তরুণ জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানো অপরিহার্য। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের বেকারত্ব হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতামূলকতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব।
বাংলাদেশ সরকার কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়াও, সরকার বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলো কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
টেকসই উন্নয়নের কর্মমুখী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা
টেকসই উন্নয়ন হল এমন উন্নয়ন যা বর্তমান প্রজন্মের চাহিদা পূরণ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের চাহিদা পূরণের ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ন না করে। টেকসই উন্নয়নের জন্য অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত উন্নয়নের সমন্বয় প্রয়োজন। কর্মমুখী শিক্ষা টেকসই উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা দক্ষতা অর্জন করে যা তাদেরকে কর্মসংস্থান পেতে এবং আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এর ফলে দারিদ্র্য বিমোচন হয় এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে।
বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে কর্মমুখী শিক্ষা
বেকারত্ব একটি বৈশ্বিক সমস্যা যা বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে আরও বেশি প্রকট। ২০২২ সালের হিসাবে, বাংলাদেশের বেকারত্বের হার ছিল ৫.৪%। এটি একটি উল্লেখযোগ্য সমস্যা কারণ এটি অর্থনৈতিক অস্থিরতা, দারিদ্র্য এবং সামাজিক অস্থিরতার দিকে পরিচালিত করতে পারে। বিশ্ব ব্যাংকের মতে,
“কর্মমুখী শিক্ষাই হলো কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা।”
কর্মমুখী শিক্ষা বেকারত্ব সমস্যা সমাধানে একটি কার্যকর উপায়। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কর্মক্ষেত্রে দক্ষ ভাবে গড়ে তোলে। যার কারনে শিক্ষার্থীদের বেকার ভাবে বসে থাকতে হয়না। নির্দিষ্ট মেয়াদী প্রশিক্ষন শেষে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ও অন্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা গড়ে তোলে। একজন শিক্ষার্থী কারিগরি প্রশিক্ষন শেষে তার দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠান গঠন করতে পারে। সেই প্রতিষ্ঠানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। বাংলাদেশে এখন কারিগরি শিক্ষার কদর অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছে। দেশের বেকার জনগন কারিগরি শিক্ষা নিয়ে অর্জিত জ্ঞান দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছে। দেশের যে সকল কৃষি উদ্যক্তা রয়েছে তারা কৃষি পন্যের উৎপাদন বাড়িয়ে দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি করছে। যার কারনে বাংলাদেশে বিদেশী মূদ্রাতে অবদান রাখছে সেই সাথে নিজের এবং সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন হচ্ছে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লব ও কর্মমুখী শিক্ষা
“জ্ঞানের সাথে কর্মদক্ষতা, সমাজের চালিকা শক্তি। কর্মমুখী শিক্ষা, স্বাবলম্বী ভবিষ্যতের গতি।” – অজ্ঞাত
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলো প্রযুক্তির দ্রুতগতিতে বিকাশের একটি নতুন যুগ, যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ডেটা বিশ্লেষণ, জিনগত চিকিৎসাসহ নানাবিধ উদ্ভাবন শিল্প ও সমাজকে আমূল পরিবর্তন করে দিচ্ছে। আগের শিল্প বিপ্লবগুলোতে মানুষ যন্ত্রকে পরিচালনা করতো। কিন্তু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে যন্ত্র নিজেরাই কাজ করতে, শিখতে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে। মুলত এই বিল্পবের কারনে প্রচুর মানুষ চাকরিচ্যুত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু একজন কর্মী যখন অনেক দক্ষা হয় তার জায়গা কখনো কোনো কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা দখল করতে পারবেনা। তথাকথিত শিক্ষা গ্রহন থেকে বেরিয়ে এসে নিজেকে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত করলে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা কখনো একজন মানুষের জায়গা দখল করতে পারবেনা।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লব নতুন ধরনের চাকরি সৃষ্টি করছে। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ, ডেটা বিজ্ঞানী, রোবোটিক্স প্রকৌশলী ইত্যাদি। এই ধরনের চাকরির জন্য শিক্ষার্থীদের বৃত্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ করে দিলে এই চাকরির জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের বৃত্তিমূলক কাজে নিযেদের নিয়োজিত করতে পারবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব আরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রযুক্তি উদ্ভব নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করছে, কিন্তু এটি বর্তমান চাকরির স্থানকেও বিলুপ্ত করে দিতে পারে। তাই কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের এই নতুন চাকরির সুযোগের জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করতে পারে।
বাংলাদেশে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের জন্য কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ রয়েছে। সরকারের উদ্যোগে বিভিন্ন ধরনের কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এছাড়াও, সরকার বিভিন্ন কর্মসংস্থানমূলক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই পদক্ষেপগুলো কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তবে, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আরও অনেক কিছু করা যেতে পারে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ বিষয়ে আরও বেশি উদ্যোগী হতে হবে। এছাড়াও, শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কর্মমুখী শিক্ষার জন্য নিম্নলিখিত বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া উচিত:
- নতুন প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়াগুলির উপর দক্ষতা বিকাশ: কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের নতুন প্রযুক্তি এবং প্রক্রিয়াগুলির উপর দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করতে হবে। এতে শিক্ষার্থীরা এই প্রযুক্তিগুলি ব্যবহার করে নতুন ধরনের কাজ করতে সক্ষম হবে।
- সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের উন্নয়ন: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনের উপর জোর দেয়। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের এই দক্ষতাগুলি বিকাশে সহায়তা করতে হবে।
- দলবদ্ধ কাজের দক্ষতা: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব দলবদ্ধ কাজের উপর জোর দেয়। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের এই দক্ষতাগুলি বিকাশে সহায়তা করতে হবে।
- যোগাযোগ দক্ষতা: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব যোগাযোগ দক্ষতার উপর জোর দেয়। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের এই দক্ষতাগুলি বিকাশে সহায়তা করতে হবে।
- আইটি দক্ষতা: চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আইটি দক্ষতার উপর জোর দেয়। কর্মমুখী শিক্ষা শিক্ষার্থীদের এই দক্ষতাগুলি বিকাশে সহায়তা করতে হবে।
এই বিষয়গুলোর উপর জোর দেওয়া হলে কর্মমুখী শিক্ষা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারবে।
কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত জাতির উদাহরণ
জাপান এবং চীন দুটি দেশ যা কর্মমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত জাতির উদাহরণ। এই দুটি দেশই তাদের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে।
জাপানে, কর্মমুখী শিক্ষাকে “ওয়াকাজা” বলা হয়। ওয়াকাজা হল একটি জাপানি শব্দ যার অর্থ “দক্ষতা” বা “মাস্টারি”। জাপানি শিক্ষা ব্যবস্থায়, ওয়াকাজাইকে খুব গুরুত্ব দেওয়া হয়। জাপানি শিক্ষার্থীরা স্কুল এবং কলেজ থেকে ওয়াকাজাই শিক্ষার সুযোগ পায়।
জাপানের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। জাপানের শিক্ষা ব্যবস্থা ব্যবহারিক এবং বাস্তবভিত্তিক। যারব্ কারনে শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুমের পাশাপাশি বাস্তব-বিশ্বের কাজের অভিজ্ঞতা পায়। তাদের শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষতা-ভিত্তিক। শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট দক্ষতা বিকাশের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা কর্মসংস্থান-ভিত্তিক। যার কারনে শিক্ষার্থীরা তাদের দক্ষতা কাজে লাগাতে পারে নিজেদের সেভাবেই প্রস্তুত করে।
জাপানের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে দেশটিতে একটি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে উঠেছে। এই দক্ষ শ্রমশক্তি জাপানের অর্থনীতিকে গতিশীল রাখতে সাহায্য করেছে। জাপান এখন বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতির মধ্যে একটি।
চীনে, কর্মমুখী শিক্ষাকে “জিয়াওজু” বলা হয়। জিয়াওজু হল একটি চীনা শব্দ যার অর্থ “কারিগরি শিক্ষা”। চীনা সরকার কর্মমুখী শিক্ষার উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়েছে।
চীনের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন :
চীনে কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থাটি প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত বিস্তৃত করা রয়েছে। চীনের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিক প্রযুক্তি এবং সরঞ্জামের সাথে সজ্জিত। যার কারনে শিক্ষার্থীরা খুব ভালোভাবে শিখতে পারে। চীনের কর্মমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার ফলে দেশটিতে একটি দক্ষ শ্রমশক্তি গড়ে উঠেছে। এই দক্ষ শ্রমশক্তি চীনের অর্থনীতিকে দ্রুত বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি।
জাপান এবং চীন উভয় দেশই কর্মমুখী শিক্ষার উপর জোর দেওয়ার মাধ্যমে বিশ্বের প্রধান অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই দুই দেশের উদাহরণ থেকে বোঝা যায় যে কর্মমুখী শিক্ষা একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারে সরকারের করণীয়
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলিতে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই তরুণ। এই তরুণ জনশক্তিকে দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তর করতে হলে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানো অপরিহার্য। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যা সমাধান, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং টেকসই উন্নয়ন সম্ভব।
কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারে সরকারের করণীয় নিম্নরূপ:
- কর্মমুখী শিক্ষার উপর গুরুত্ব বৃদ্ধি: সরকারকে কর্মমুখী শিক্ষার উপর গুরুত্ব বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য সরকারের শিক্ষানীতিতে কর্মমুখী শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
- কর্মমুখী শিক্ষার মানোন্নয়ন: কর্মমুখী শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করতে হবে।
- কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার: কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
- কর্মমুখী শিক্ষার জনসচেতনতা বৃদ্ধি: কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য বিভিন্ন প্রচারণামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।
- কর্মমুখী শিক্ষার কর্মসংস্থানমুখীকরণ: কর্মমুখী শিক্ষার কর্মসংস্থানমুখীকরণ নিশ্চিত করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে। এজন্য কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে শিল্প-কারখানার সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।
- কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি: নারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধির জন্য কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা অপরিহার্য।
- কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে দরিদ্র ও প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের সুযোগ বৃদ্ধি: দরিদ্র ও প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের কর্মমুখী শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে সরকারকে পদক্ষেপ নিতে হবে।
- কর্মমুখী শিক্ষার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি: কর্মমুখী শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা জরুরি।
এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই বিষয়গুলিতে সরকারের নজর থাকলে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসারে আরও বেশি অগ্রগতি করা সম্ভব হবে।
কর্মমুখী শিক্ষায় পরিবার ও সমাজের করণীয়
বাংলাদেশে পরিবার ও সমাজের অনেকেই কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন নন। তারা মনে করেন যে, শুধুমাত্র মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লেই ভালো চাকরি পাওয়া যায়। তারা বিশ্বাস করেন যে, বেসরকারি চাকরির সম্ভাবনা কম। এই ধারণাগুলি পরিবর্তন করতে হবে। পরিবার ও সমাজের সকল সদস্যদের কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
পরিবার ও সমাজের উচিত সন্তানদের কর্মমুখী শিক্ষার জন্য উৎসাহিত করা। এজন্য সন্তানদের কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। সন্তানদের কর্মমুখী শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে।
কর্মমুখী শিক্ষার মানোন্নয়নে পরিবার ও সমাজের সহায়তা গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার ও সমাজের উচিত কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সমস্যাগুলি সম্পর্কে অবগত হতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়নে সহায়তা করতে হবে।
কর্মমুখী শিক্ষার কর্মসংস্থানমুখীকরণে পরিবার ও সমাজের সহায়তা অপরিহার্য। পরিবার ও সমাজের উচিত শিল্প-কারখানাগুলির সাথে কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টিতে সহায়তা করতে হবে।
এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহণের মাধ্যমে পরিবার ও সমাজ কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই নেতিবাচক ধারণাগুলি ভেঙে ফেলতে পরিবার ও সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। পরিবার ও সমাজের সকল স্তরের মানুষের মধ্যে কর্মমুখী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা হলেই কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটানো সম্ভব হবে।
কর্মমুখী শিক্ষার অন্তরায়
কর্মমুখী শিক্ষা হল এমন শিক্ষা যা শিক্ষার্থীদের একটি নির্দিষ্ট পেশা বা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় দক্ষতা ও জ্ঞান প্রদান করে। এটি মূলত ব্যবহারিক ও বাস্তবভিত্তিক শিক্ষা।
বাংলাদেশে কর্মমুখী শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে বেশ কিছু অন্তরায় রয়েছে। এই অন্তরায়গুলি হল:
- পরিবার ও সমাজের নেতিবাচক ধারণা: বাংলাদেশের সমাজে এখনও কর্মমুখী শিক্ষার প্রতি অনেক নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। অনেক পরিবার ও সমাজের মানুষ মনে করেন যে কর্মমুখী শিক্ষা শুধুমাত্র নিম্ন শ্রেণীর মানুষের জন্য। তারা মনে করেন যে কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সীমিত।
- কর্মমুখী শিক্ষার মানোন্নয়নের অভাব: কর্মমুখী শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও জনবলের অভাব রয়েছে। অনেক কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আধুনিক প্রযুক্তি ও সরঞ্জামের অভাব রয়েছে। এছাড়াও, কর্মমুখী শিক্ষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার অভাব রয়েছে।
- কর্মমুখী শিক্ষার কর্মসংস্থানমুখীকরণ নিশ্চিতকরণের অভাব: কর্মমুখী শিক্ষার কর্মসংস্থানমুখীকরণ নিশ্চিতকরণের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। অনেক কর্মমুখী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে শিল্প-কারখানার সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। এছাড়াও, কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে প্রাপ্ত দক্ষতা ও যোগ্যতা শিল্প-কারখানার চাহিদা পূরণ করে না।
এই পদক্ষেপ গুলো গ্রহণ করলে কর্মমুখী শিক্ষার বিকাশের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব হবে।
উপসংহার
বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা সম্ভব। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে কর্মসংস্থানের চাপ বাড়ছে। এতে করে কর্মসংস্থানহীন যুব শক্তির সংখ্যাও বাড়ছে। এই যুব শক্তিকে কর্মমুখী শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে তুলতে পারলে আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব।