কৃষিকাজে বিজ্ঞান রচনা
এইচএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় প্রতিবছর বিজ্ঞান বিষয়ে কমপক্ষে একটি রচনা আসে, তার মধ্যে ‘কৃষিকাজে বিজ্ঞান’ রচনাটি আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি। আজকের এই লেখায় এই রচনাটির গুরুপ্তপূর্ণ ২০ টি সহকারে দেওয়া হলো।
ভূমিকা
মানব সভ্যতার আদিমতম পেশা কৃষি। মানুষ যখন শিকার করা ছেড়ে কৃষিকাজ শুরু করল, তখন থেকেই আধুনিক সভ্যতার বুৎপত্তি হয়। সেই শুরুর সময় থেকে আজ অবধি মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার খাদ্য উৎপাদনের ভার কৃষকরা বয়ে আসছেন। তাই তো কবি বলেছেন,
সব সাধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।
খাদ্য ছাড়াও অন্নান্ন মৌলিক অধিকার সমূহ বস্ত্র, চিকিৎসা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষির সাথে যুক্ত। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে জলবায়ুর পরিবর্তন, জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে খদ্দর চাহিদা বৃদ্ধি, ফসলি জমির পরিমান কমে যাওয়ার কারণে কৃষিখাত যখন হুমকির মুখে তখন বিজ্ঞানের আবির্ভাব হয় ত্রাণকর্তা হিসাবে। কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে খাদ্য ও কৃষি পণ্য উৎপাদনে।
কৃষির অতীত-কথা
কৃষি কাজ প্রায় ১০,০০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। প্রথম দিকে শিকার ছেড়ে কৃষকরা গম, বার্লি এবং চালের মতো ফসল ও পশুপালন শুরু করেছিল। তারা ভেড়া, ছাগল এবং শূকর জাতীয় বন্য প্রাণীকে গৃহপালিত করেছিলেন। সময়ের সাথে সাথে কৃষকরা সেচ , সার প্রয়োগ, লাঙ্গলের ব্যবহার শুরু করে। প্রাচীন কালে বেশিরভাগ শহর ও সভ্যতার সূচনা হয় কৃষিভিত্তিক উর্বর অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। কৃষির জন্য চাই পানি , তাই তো নীলনদের তীরে মিরশরীয়, সিন্ধু নদীর তীরে সিন্ধু, দোলযা ফেরাতের মাঝে মেসোপটেমীয় সভ্ভতার সূচনা হয়। তাই ইংরেজিতে একটা প্রবাদ আছেঃ
‘Men invented the art of agriculture and then civilization followed.
জাতি হিসেবে আমারা বাঙ্গালিরা প্রাচীন কাল থেকেই কৃষিজীবী, নদীবিধৌত বাংলার এই উর্বর অঞ্চল প্রাচীন কাল থেকেই সবুজ শ্যামলা ছিল।
যার প্রতিফলন পাই আমরা দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য ও উৎসবে। যেমন ফসল কাটার সময় বিবেচনা করে নবান্ন, বৈশাখ ইত্যাদি উৎসব পালন হয়।
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের সূচনা
কৃষিকাজে বিজ্ঞান ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সূচনা হয়েছিল প্রাচীনকালে। সেই সময়ের কৃষকরা লক্ষ্য করেছিল যে সেচের ফলে ফসলের ফলন বৃদ্ধি পায়। তারা আবিষ্কার করেছিল যে কিছু ফসল অন্য ফসলের তুলনায় বেশি ফলনশীল। তারা কীটপতঙ্গ এবং রোগের বিরুদ্ধে কীভাবে লড়াই করতে হয় তাও আবিষ্কার করেছেছিলেন। যেমন, বাংলার বিখ্যাত কিংবদন্তি খনার কৃষিভিত্তিক বচনগুলি এখনো অনেক প্রসংগিক ও বৈজ্ঞানিক:
‘খনা ডেকে বলে যান
রোদে ধান ছায়ায় পান’
তবে কৃষিকাজে বিজ্ঞানে ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয় ১৮ শতকে, কৃষি বিপ্লবের সময়, বিজ্ঞান কৃষিক্ষেত্রে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। এই সময়ের মধ্যে, বিজ্ঞানীরা কৃষিক্ষেত্রে প্রয়োগ
করার জন্য নতুন প্রযুক্তি উদ্বোধন করেন করেছিলেন। ২০ শতকে, বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত, সিন্থেটিক সার, জিন প্রযুক্তি এবং কীটনাশক ব্যবহার করে কৃষি উৎপাদনশীলতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হন।বর্তমানে, বিজ্ঞান কৃষি ক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
আধুনিক কৃষি ও বিজ্ঞান
আধুনিক কৃষি বিজ্ঞানের উপর নির্ভরশীল। বিজ্ঞান কৃষি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, কীটপতঙ্গ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং পানি সংরক্ষণের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।
‘পানি হচ্ছে কৃষির প্রাণশক্তি’
এখন আর চাষাবাদের জন্য আকাশে মেঘের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না, আধুনিক সেচ যন্ত্রের সাহায্য যেকোন সময় প্রয়োজন অনুসারে সেচ প্রদান করা যায়।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কৃষি ক্ষেত্রে অবদান:
- ১৯৬১ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী ফসলের ফলন ৭০% বৃদ্ধি পেয়েছে।
- ১৯৯০-এর দশক থেকে কীটনাশকের ব্যবহার ২০% হ্রাস পেয়েছে।
- বিশ্বব্যাপী ১০০ মিলিয়ন একর অনাবাদী জমিকে চাষযোগ্য করা হয়েছে।
- বিশ্বব্যাপী ১০% সেচ কৃত জমিতে এখন ড্রিপ সেচ ব্যবহার করে ফসল ফলানো যায়।
বিজ্ঞান আধুনিক কৃষিক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। বিজ্ঞান কৃষকদের কম খরচে আরও বেশি ফসল উৎপাদনে সহায়তা করছে।
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের পরিধি
কৃষি মানুষের সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর, সবচেয়ে উপকারী এবং সবচেয়ে মহত কর্মসংস্থান।-– জর্জ ওয়াশিংটন
আর এই মহৎ কর্মের সাথে যুক্ত হয়েছে বিজ্ঞান। কৃষিতে বিজ্ঞানের পরিধি ব্যাপক এবং সম্ভাবনাময়।
আধুনিক কৃষি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের কিছু ব্যাবহারঃ
- ক) জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং: এর সাহায্য বিজ্ঞানীরা কীটপতঙ্গ এবং রোগ প্রতিরোধী, উচ্চ ফলনশীল বা আরও পুষ্টিকর নতুন ফসলের জাত তৈরি করছেন।
- খ) কৃষি প্রযুক্তি: কৃষকরা জিপিএস এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার এবং কীটনাশক আরও সঠিকভাবে উপযুক্ত সময়ে প্রয়োগ করছেন, যা অধিক উৎপাদনে সাহায্য করছে।
- গ) কীটপতঙ্গ ব্যবস্থাপনা: কৃষকরা জৈবিক নিয়ন্ত্রণ এজেন্ট এবং সাংস্কৃতিক অনুশীলন সহ কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করছেন।
- ঘ) আবহাওয়া পর্যবেক্ষণঃ স্যাটেলাইট থেকে তথ্য নিয়ে ফসল লাগানো, তোলার ও পরিচর্যার সময় বের করা হয়।
- ঙ) মাটি পরীক্ষাঃ মাটির স্বাস্থ্য পরিখা ও জরিপের ক্ষেত্রে অনেক সেন্সর যন্ত্র ব্যাবহার করা হয়।
এছাড়াও কৃষির সম্পৃক্ত আরও বিভিন্ন বিষয়ের সাথে বিজ্ঞান জরিত।
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা একই জমিতে আরও বেশি খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম। যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি অর্জন। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা পধতি বিভিন্ন আবিষ্কার করেছে যা কীটপতঙ্গ এবং রোগের ক্ষতি থেকে ফসল রক্ষা করতে সাহায্য করে। কৃষকরা সেচের পানি আরও দক্ষতার সাথে ব্যবহার করার জন্য জিপিএস এবং অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন। আবার, মাটির স্বাস্থ্য কৃষি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিজ্ঞানীরা মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করার নতুন উপায় উদ্ভাবন করছেন, যেমন আবরণ ফসল ব্যবহার এবং চাষ কমানো। যা মাটির পানি ধরে রাখতে এবং ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে।
খাদ্য নিরাপত্তায় কৃষিকাজে বিজ্ঞান
খাদ্য নিরাপত্তা হল, পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সবসময়ের জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করা। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব জনসংখ্যার চাহিদা মেটাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে, কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ভূমিকা অপরিসীম।
বিজ্ঞান কৃষিকাজে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে যেভাবে সাহায্য করে:
- ফসলের ফলন বৃদ্ধি: বিজ্ঞানীরা উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা খাদ্য উৎপাদন এবং খাদ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি করে।
- কীটপতঙ্গ ও রোগ নিয়ন্ত্রণ: বিজ্ঞানীরা কীটনাশক, জৈবিক নিয়ন্ত্রণ এবং আক্রমণাত্মক পদ্ধতি সহ বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যা কীটপতঙ্গ এবং রোগের হাত থেকে ফসল রক্ষা করতে সাহায্য করে। পাশাপাশি এটি ফসলের ফলন ও গুণমান উন্নায়ন করে এবং খাদ্যের অপচয় হ্রাস করে।
- পানি সংরক্ষণ ও সেচ: পানি সংরক্ষণ কৃষিক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। বিজ্ঞানীরা পানি সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে যা কৃষকদের কম পানি ব্যবহার করে আরও বেশি ফসল উৎপাদন করতে সাহায্য করে। আমাদের দেশের বিজ্ঞানীরা কম পানিতে ধান চাষের উপযুক্ত জাত আবিষ্কার করেছেন।
- মাটির স্বাস্থ্য উন্নতকরণ: মাটির স্বাস্থ্য কৃষি উৎপাদনের জন্য অত্যন্ত জরুরি, তাই বিজ্ঞানীরা মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করার নতুন উপায় উদ্ভাবন করছেন। যেমন আবরণ ফসল ব্যবহার এবং চাষ কমানো যা মাটিকে আরও উর্বর করে তোলে ।
বিজ্ঞানের অবদানের ফলে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৬০ সালের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বের খাদ্য উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।
ভার্টিকাল এগ্রিকালচার
ভার্টিক্যাল কৃষি হল একটি কৃষি পদ্ধতি যা উল্লম্বভাবে ফসল ফলাতে সাহায্য করে। এই পদ্ধতিতে, উদ্ভিদ গুলোকে বিশেষ শেড বা পাইপের মাঝে রোপণ করা হয়। ভার্টিকাল কৃষির অনেকগুলি সুবিধা আছে।
প্রথমত, ভার্টিকাল কৃষি ব্যবস্থায়, একই পরিমাণ জমিতে অধিক পরিমাণে ফসল উৎপাদন করা যায়।
দ্বিতীয়ত, ভার্টিক্যাল কৃষি পরিবেশগতভাবে টেকসই। এটি পানি এবং সার ব্যবহারের পরিমাণ এবং কীটনাশক এবং অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার হ্রাস করে।
তৃতীয়ত, ভার্টিক্যাল কৃষি শহরগুলিতে খাদ্য উৎপাদন করা সহজ করে তোলে। এটি শহরবাসীদের তাদের খাবারের জন্য স্থানীয় উৎস থেকে নির্ভরশীল হতে সাহায্য করে।
ভার্টিকাল কৃষি বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন ফল, শাকসবজি, এবং ফুল। এটি এখনও অপেক্ষাকৃত নতুন কৃষি পদ্ধতি, তবে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জন করছে।
গ্রিনহাউস চাষাবাদ
কৃষিকাজে বিজ্ঞানের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরন হল গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে চাষাবাদ। এটি এমন একটি পদ্ধতি যেখানে ফসলকে কৃত্রিমভাবে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে চাষ করা হয়। গ্রিনহাউস গুলি সাধারণত স্বচ্ছ প্লাস্টিক বা কাচ দিয়ে তৈরি হয় যা সূর্যের আলো প্রবসে সহায়ক। গ্রিনহাউসের ভিতরে তাপমাত্রা এবং আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়, যা উদ্ভিদদের বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিবেশ তৈরি করে। এটি কীটপতঙ্গ এবং রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
যেসব অঞ্চলে সারাবছর তুষারপাত হয় বা চাষাবাদের উপযুক্ত পরিবেশ নেই সেখানে গ্রিনহাউস পধতিতে চাষাবাদ অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।
কৃষি কাজে ড্রোনের ব্যবহার
কৃষি কাজে ড্রোন ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বিভিন্ন ধরনের কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন:
- ফসল পর্যবেক্ষণ: ড্রোন ফসলের স্বাস্থ্য এবং বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি কৃষকদের ফসলের কোনও সম্ভাব্য সমস্যা চিহ্নিত করতে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সহায়তা করে।
- কীটপতঙ্গ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ: ড্রোন কীটপতঙ্গ এবং রোগ সংক্রমণ সনাক্ত করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করা হয়। এটি বীজ রোপণ, কীটনাশক ছিটানো, এবং ফসলের পরিচর্যা করার মতো কাজ গুলো স্বয়ংক্রিয় করতে পারে।
কৃষি কাজে ড্রোন ব্যবহারের ফলে কৃষিকাজে উৎপাদন বারে খরচ কমে।
রোবট কৃষক
আমেরিকান বিখ্যাত কৃষি বিজ্ঞানী এবং নোবেল বিজয়ী – নরম্যান বরলাগ বলেন,
“বিজ্ঞান কৃষির ভিত্তি, এবং কৃষি সভ্যতার ভিত্তি”
বর্তমানে, কৃষিতে বিজ্ঞান তার সেরা সময় পার করছে। কৃষি রোবট হল এমন মেশিন যা মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়া কৃষিভিত্তিক কাজগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পাদন করতে পারে। কৃষি রোবটগুলি বিভিন্ন ধরনের কাজ করতে পারে, যেমন: রোবট বীজ এবং চারা সুনির্দিষ্টভাবে রোপণ করতে পারে।এটি ফসল থেকে আগাছা চিহ্নিত এবং অপসারণ করতে পারে। রোবটগুলি ফসলে সুনির্দিষ্টভাবে এবং সমানভাবে সার প্রয়োগ করতে পারে, যা মানুষের সাহায্য করা সম্ভব নয়।
কৃষিভিত্তিক রোবটগুলি বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করে, যেমন সেন্সর, ক্যামেরা এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। সেন্সরের সাহায্য রোবটকে ফসলের মাঠের আদ্রতা, তাপমাত্রা ও ইত্যাদি তথ্য সংগ্রহ করে, ক্যামেরাগুলি ভিসুয়াল ডেটা সরবরাহ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সংগৃহীত ডাটা বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়। একজন শ্রমিক যেখানে অবসর নেয় ও ছুটিতে যায়, রোবটগুলি সেখানে ২৮ ঘণ্টা ৭ দিন ফসলের পরিচর্যা করতে পারে।
কৃষি পণ্য সংরক্ষণে বিজ্ঞান
মৌসুমে ফসল উৎপাদনের পর সেগুলি সংরক্ষণ করতে হয়, কেননা সারাবছর সব ফসল উৎপাদন হয় না কিন্তু চাহিদা থাকে। আগে যেটুকু দরকার কেবল ততটুকুই ফসল উৎপাদন করা হত, অতিরিক্ত ফসল নষ্ট হয়ে যেত। আবার যেসব দেশে তুষার ও মরুভুমি তারা সবজি থেকে বঞ্চিত হত। এই সমস্যার সমাধান করেছে বিজ্ঞান।
কৃষি পণ্য সংরক্ষণে বিজ্ঞান বিজ্ঞানের ব্যবহার
- CAS প্রযুক্তি: এটি ফল এবং শাকসবজির পাকা এবং বার্ধক্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। এটি ফল এবং শাকসবজির সেলফ লাইফ কয়েক সপ্তাহ বা এমনকি কয়েক মাস পর্যন্ত বাড়াতে পারে।
- ইনরেডিয়েশন: এই প্রক্রিয়া সংরক্ষিত পণ্যের কীটপতঙ্গ এবং পোকামাকড় মারতে আয়নাইজিং বিকিরণ ব্যবহার করে। এটি কীটপতঙ্গ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণের একটি নিরাপদ এবং কার্যকী, ফলে ফসল অনেকদিন ভালো থাকে।
- স্মার্ট প্যাকেজিং: এতে সেন্সর রয়েছে যা ভিতরে থাকা খাবারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারে।
- কোল্ড স্টোরেজঃ এটি হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে খাদ্য বা অন্যান্য পণ্যকে ঠান্ডা রাখা হয় যাতে এগুলির মান এবং স্থায়িত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়।
নতুন এবং উন্নত সংরক্ষণ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার মাধ্যমে বিজ্ঞান কৃষকদের খাদ্যের ক্ষয়ক্ষতি এবং অপচয় হ্রাস করতে এবং ভোক্তাদের তাজা, নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ করতে সাহায্য করছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ও বাংলাদেশের কৃষি
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট। ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর এই স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। স্যাটেলাইটটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। এর মধ্যে কৃষি হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে কৃষি ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত সুবিধা গুলো পাওয়া যাচ্ছে:
- আবহাওয়া পূর্বাভাস: স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তারা আগাম আবহাওয়া পূর্বাভাস দিয়ে থাকেন। এতে কৃষকরা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারছেন।
- ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ: স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে ফসলের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে ফসলের কোনো রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে তা তাৎক্ষণিকভাবে নির্ণয় করে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে।
- জমির উর্বরতা পরীক্ষা: স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে জমির উর্বরতা পরীক্ষা করা সম্ভব হচ্ছে।
- ফসলের বীজ নির্বাচন: স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে ফসলের জন্য উপযুক্ত বীজ নির্বাচন করা সম্ভব হচ্ছে।
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। স্যাটেলাইটটির ব্যবহার বৃদ্ধি পেলে কৃষি ক্ষেত্রে আরও বেশি সুবিধা পাওয়া সম্ভব হবে।
উন্নত বিশ্বে কৃষি
আধুনিক বিশ্বে কৃষি দ্রুত রূপান্তরিত হচ্ছে, যা প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, বিশ্বায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সম্পর্কিত। কৃষি পেয়েছে শিল্পের মর্যাদাঃ
“কৃষি সকল শিল্পের জননী।” – প্লিনি দ্য এল্ডার্স
আধুনিক কৃষির অন্যতম উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হল সুষম কৃষির (Precision Agriculture) এর উত্থান। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে জিপিএস, সেন্সর এবং ডেটা বিশ্লেষণের মতো প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় যা উৎপাদন বৃদ্ধি, খরচ হ্রাস এবং পরিবেশবান্ধব।
আধুনিক বিশ্বে কৃষি:
- কৃষকরা তাদের ফসল এবং গবাদি পশু পর্যবেক্ষণ করতে ড্রোন ব্যবহার করেন।
- রোবট ফসল রোপণ, আগাছা পরিষ্কার এবং ফসল কাটতে ব্যবহৃত হয়।
- শহুরে এলাকায় ফসল উৎপাদনের জন্য ভারটিকাল চাষ পধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।
- জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে পোকামাকড় এবং রোগের প্রতিরোধী নতুন ফসলের জাত আবিষ্কার করা হচ্ছে।
- কৃষকরা তাদের খামার গুলি চালানোর জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস, যেমন সৌর এবং বায়ু শক্তি ব্যবহার করেন।
বাংলাদেশের কৃষি ও গবেষণা
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৬০% কৃষিখাতে জড়িত। কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত, যা জিডিপির প্রায় ২২% অবদান রাখে।
চাষী আর চষা মাটি
এ দু’য়ে হয় দেশ খাঁটি।
আমাদের এই সোনার দেশে চাষি আর চষা মাটি দুটোই আছে। চাই এখন আরও কৃষি গবেষণা। বাংলাদেশের কৃষি গবেষণার ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৮৮০ সালে ব্রিটিশ সরকারের অধীনে “বেঙ্গল ল্যান্ড রেকর্ডস ডিপার্টমেন্ট”-এর একটি ছোট্ট শাখা হিসেবে কৃষি গবেষণার সূচনা হয়। ১৯০৮ সালে ১৬১.২০ হেক্টর জমির উপর ঢাকা ফার্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ফার্মটি কৃষি গবেষণার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশে “ডাইরেক্টরেট অব এগ্রিকালচার (রিসার্চ এন্ড এডুকেশন)”-এর মাধ্যমে কৃষি গবেষণার উন্নয়ন ও সমন্বিত কার্যক্রমের পর্যাপ্ত সুযোগ সৃষ্টি হয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ নং-৬২ এর মাধ্যমে “বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই বা BARI)” স্বায়ত্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI)
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএআরআই) দেশের কৃষি গবেষণার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান। বিএআরআই এর অধীনে বর্তমানে ১৮টি কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, ৩টি আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং ৪টি উপ-কেন্দ্র রয়েছে।
- বিএআরআই ধান, গম, পাট, মসলা, ফল, শাকসবজি, মাছ, গবাদি পশু, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ইত্যাদি বিভিন্ন কৃষি ফসল ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনা করে থাকে।
- বিএআরআই এর গবেষণার ফলে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
- বিএআরআই এর উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ফসলের জাত, কৃষি প্রযুক্তি ও পদ্ধতি কৃষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষকদের আয় ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। জলবায়ু পরিবর্তন, কৃষি জমি হ্রাস, কৃষি শ্রমিকের সংকট, কৃষি পণ্যের বাজারজাতকরণ ইত্যাদি চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কৃষি গবেষণাকে আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের কৃষি গবেষণা উন্নত করার জন্য আরও পদক্ষেপগুলো নিতে হবে:
- কৃষি গবেষণার জন্য আরও বেশি বরাদ্দ করা।
- কৃষি গবেষণায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।
- কৃষি গবেষণার ফলাফল কৃষকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
কৃষি গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব। এতে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন নিশ্চিত হবে।
বাংলাদেশের কৃষি কাজে বিজ্ঞান দৃষ্টান্ত
বাংলাদেশের কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগের ফলে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি এবং মোট খাদ্য উৎপাদন ছিল ৭.৮ মিলিয়ন টন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৭ কোটি এবং মোট খাদ্য উৎপাদন হয়েছে ৪৭.৫ মিলিয়ন টন।
অর্থাৎ, বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের চেয়ে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির হার বেশি হয়েছে। তাই তো গানের ভাষায় কবি বলেছেন,
…সোনা নয় তত খাঁটি
বলো যত খাঁটি
তার চেয়ে খাঁটি বাংলাদেশের মাটি রে
আমার জন্মভূমির মাটি…
বাংলাদেশের কৃষি কাজে বিজ্ঞানের প্রয়োগেরউদাহরণ হল:
- উচ্চ ফলনশীল ধানের জাত: বিএআরআই এর উদ্ভাবিত ব্রি-ধান-২৯, ব্রি-ধান-৩০, ব্রি-ধান-৩২, ব্রি-ধান-৪২, ব্রি-ধান-৫০ ইত্যাদি জাতগুলো ধানের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
- উচ্চ ফলনশীল গমের জাত: বিএআরআই এর উদ্ভাবিত ব্রি-গম-৩, ব্রি-গম-৫, ব্রি-গম-৭, ব্রি-গম-৯ ইত্যাদি জাতগুলো গমের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে।
পাটের জিন রহস্য আবিষ্কার
পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং ২০১০ সালে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীদের একটি দল সাফল্যর সাথে সম্পন্ন করে। এই দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলম। পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং এর জন্য অর্থায়ন করেছিল বাংলাদেশ সরকার।
পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং এর ফলে পাট গবেষণা ও উন্নয়নে যেসব সুবিধা পাওয়া গেছে:
- উন্নত জাতের পাট উদ্ভাবন সম্ভব হয়েছে।
- পাটের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।
- পাটের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে।
- পাটের আঁশের গুণগতমান উন্নত করা সম্ভব হয়েছে।
পাটের জিনোম সিকোয়েন্সিং এর মাধ্যমে পাটকে একটি লাভজনক ও টেকসই ফসলে রূপান্তর করা সম্ভব হবে।
এক রোপণে পাঁচবার ধান!
এক রোপণে পাঁচবার ধান! এটা অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটাই সত্যি করেছেন বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী বাংলাদেশি জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী এই অসাধ্য সাধন করেছেন। তিনি বোরো জাতের একটি জাত উদ্ভাবন করেছেন, যা একবার রোপণ করলে একই গাছ থেকে পাঁচবার ধান সংগ্রহ করা যাবে।
ড. আবেদ চৌধুরী জানান, তিনি দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে এই গবেষণায় কাজ করেছেন। তিনি বিভিন্ন দেশের ধানের জিন নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই জাতের ধান উদ্ভাবন করেছেন। এই ধানগাছের বিশেষত্ব হল, এটি একটি বিশেষ জিনের কারণে একবার রোপন করলে বারবার শীষ দেয়।
তিনি এই ধান গাছের নাম দেওয়া হয়েছে “পঞ্চব্রীহি”। এই ধান গাছটি অত্যন্ত উচ্চ ফলনশীল। একবার রোপণ করলে প্রতি শতকে ১৮ কেজি ধান উৎপাদন হয়। পঞ্চব্রীহি ধান এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। তবে, পরীক্ষামূলক চাষাবাদ এর উচ্চ ফলনশীলতা ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রমাণিত হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, অচিরেই এটি বাজারজাত করা হবে।
কৃষি বিজ্ঞান ও অর্থনীতি
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি প্রধান খাত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে কৃষি খাতের অবদান জিডিপির ১৫.১৪%। কৃষি খাত বাংলাদেশের কর্মসংস্থানের প্রধান উৎস। মোট কর্মশক্তির প্রায় ৪০% সরাসরি কৃষি খাতে কর্মরত।
কৃষি বিজ্ঞানের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদন রেকর্ড ৪৬.২৩ মিলিয়ন মেট্রিক টন।
কৃষি বিজ্ঞানের মাধ্যমে কৃষি পণ্যের গুণগত মান উন্নত করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের কৃষি পণ্য রপ্তানি বাড়ছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের কৃষি পণ্যের রপ্তানি আয় ২.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
কৃষি বিজ্ঞানের মাধ্যমে কৃষির আধুনিকায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হচ্ছে। এর ফলে কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দারিদ্র দূরীকরণে সহায়তা হচ্ছে।
কৃষি বিজ্ঞানের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
কৃষিতে বিজ্ঞানের বিকাশের অন্তরায়
বিশ্ব এবং বাংলাদেশের কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহারের অন্তরায় যেসব কারন রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম:
- কৃষি গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগের অভাব।
- কৃষি সামগ্রী যেমন বীজ, সার ও কীটনাশকের সীমিত প্রাপ্যতা।
- ঋণ ও বীমার সীমিত প্রাপ্যতা।
- ছোট খামারের আকার এবং খন্ডিত জমির মালিকানা।
- কৃষকদের মধ্যে শিক্ষা ও দক্ষতার অভাব।
- দুর্বল অবকাঠামনা এবং অনিয়ন্ত্রিত বাজার।
- জলবায়ু পরিবর্তন এবং অন্যান্য পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ।
- সরকারি নীতি যা উদ্ভাবন ও বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করে।
- বাণিজ্যিক বাধা যা কৃষি পণ্য এবং প্রযুক্তির প্রবাহকে স্থবির করে।
- ঐতিহ্যবাহী এবং স্থানীয় খাদ্য পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের দুর্বলতা।
- বিজ্ঞান প্রযুক্তির অত্যধিক দাম।
- দুর্বল ইন্টারনেট কাঠামো।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা এবং স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য।
কৃষিতে বিজ্ঞানের ব্যাবহারে আমাদের করণীয়
কৃষিতে বিজ্ঞানের ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, কৃষি বিজ্ঞানের ব্যবহার আরও বৃদ্ধি করার জন্য আমাদের কিছু করণীয় রয়েছে।
১। কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা
কৃষি বিজ্ঞানের উন্নয়নের জন্য কৃষি গবেষণায় বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা জরুরি। কৃষি গবেষণার মাধ্যমে উন্নত জাতের ফসলের জাত, রোগ-প্রতিরোধী ফসল, টেকসই কৃষি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি উদ্ভাবন করা সম্ভব।
২। কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করা
কৃষি গবেষণার ফলাফল কৃষকদের কাছে পৌঁছানোর জন্য কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন। কৃষি সম্প্রসারণ কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব।
৩। কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া
কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষণ দেওয়া জরুরি। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে কৃষকরা উচ্চ ফলনশীলতা অর্জন করতে পারবেন।
৪। কৃষি খাতের জন্য একটি উপযুক্ত নীতি-পরিবেশ তৈরি করা
কৃষি খাতের জন্য একটি উপযুক্ত নীতি-পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন। কৃষি খাতের জন্য সহায়ক নীতি-পরিবেশ তৈরি হলে কৃষকরা কৃষি উৎপাদনে আরও আগ্রহী হবেন।
কৃষি বিজ্ঞানের ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি খাত আরও শক্তিশালী হবে এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
উপসংহার
বাংলাদেশ বিশ্বের ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলির অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও কৃষিকাজে বিজ্ঞানে ব্যবহারের ফলে খাদ্যে প্রায় সয়ংসংপূর্ণতা অর্জন করেছে। আমরা যদি আরও ব্যাপকভাবে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের ব্যবহার করতে হবে, কেননা
Agriculture needs science to feed the world.
এর জন্য সরকারের কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, উচ্চতর গবেষণা করতে হবে, এবং আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি আমদানি করমুক্ত ও সহজ করতে হবে। সর্বোপরি শিক্ষিত যুব সমাজকে কৃষিতে আগ্রহী করে তুলতে হবে তাহলে শিক্ষিত কৃষক আরো ভালোভাবে বিজ্ঞান প্রয়োগ করে নিরাপদ অধিক ফসল ফলাতে পারবে। কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন ও ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত পৃথিবী গরতে কৃষিকাজে বিজ্ঞানের বিকল্প নেই।