কোণ কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি
কোণ কাকে বলে? বলতে মুতল বুঝায়, জামিতিক কোণ (Angle) কাকে বলে। আপনি যদি স্কুল কলেজের শিক্ষার্থী কিংবা চাকরী প্রত্যাশী হয়ে থাকেন, তাহলে আমাদের আজকের লেখাটি আপনার জন্যই। এই লেখায় আমারা জামিতিক কোণ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা ও প্রকারভেদ সম্পর্কে জানব।
কোণ কাকে বলে
দুটি রেখাংশের মধ্যবর্তী অন্তর্বর্তী অংশকে কোণ বলে।
অথবা, উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞানুসারে –
জ্যামিতিতে কোণ বলতে দুইটি রশ্মির মিলনস্থলকে বোঝায় এবং রশ্মি দুইটি একই শীর্ষবিন্দুতে মিলিত হয় এবং উৎপন্ন কোণ একই সমতলে অবস্থান করে।
চিত্রে ,OP ও OQ রশ্মিদ্বয় এদের সাধারণ প্রান্তবিন্দু O তে <POQ উৎপন্ন করেছে।
কোণের মান প্রকাশ
সাধারণত গ্রিক অক্ষরগুলো (α, β, γ, θ, φ) কোণের মান প্রকাশ করতে ব্যবহার করা হয়। কোণকে ডিগ্রি বা রেডিয়ানে পরিমাপ করা হয়।
- ডিগ্রি পদ্ধতিতে, কোণের মানকে 0° থেকে 360° এর মধ্যে প্রকাশ করা হয়।
- রেডিয়ান পদ্ধতিতে, কোণের মানকে 0 থেকে 2π এর মধ্যে প্রকাশ করা হয়।
কোণ কত প্রকার ও কি কি
কোণের কোন নির্দির্ষ্ট প্রকারভেদ নেই। এখানে বহুল পরিচিত ও গুরুপ্তপূর্ণ কোনগুলি সংজ্ঞাসহ দেওয়া হলো:
আকার-আকৃতির ভিত্তিতে কোণের প্রকারভেদ
- শূন্য কোণ: ০ ডিগ্রি কোণকে শূন্য কোণ বলে।
- সূক্ষ্ম কোণ: ০ ডিগ্রি থেকে ৯০ ডিগ্রির কম কোণকে সূক্ষকোণ বলে।
- সমকোণ: ৯০ ডিগ্রি কোণকে সমকোণ বলে।
- স্থূলকোণ: ৯১ ডিগ্রি থেকে ১৮০ ডিগ্রির কম কোণকে স্থুলকোণ বলে।
- সরল কোণ: ১৮০ ডিগ্রি কোণকে সরল কোণ বলে।
- প্রবৃদ্ধ কোণ: ১৮১ ডিগ্রি থেকে ৩৬০ ডিগ্রির কম কোণকে প্রবৃদ্ধ কোণ বলে।
- পূর্ণ কোণ: ৩৬০ ডিগ্রি কোণকে পূর্ণ কোণ বলে।
গঠনের ভিত্তিতে কোণের প্রকারভেদ
- তির্যক কোণ: একই সরলরেখার উপর অবস্থিত দুটি কোণকে তির্যক কোণ বলে।
- বিপ্রতীপ কোণ: একই সরলরেখার বিপরীত দিকে অবস্থিত দুটি কোণকে বিপ্রতীপ কোণ বলে।
- সন্নিহিত কোণ: একই বেস এবং একই শীর্ষবিন্দু বিশিষ্ট দুটি কোণকে সন্নিহিত কোণ বলে।
দুটি কোণের পরিমাপের ভিত্তিতে, কোণের প্রকারভেদ
- পূরক কোণ: দুটি কোণের পরিমাপের যোগফল ৯০ ডিগ্রি হলে তাদেরকে পূরক কোণ বলে।
- সম্পূরক কোণ: দুটি কোণের পরিমাপের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি হলে তাদেরকে সম্পূরক কোণ বলে।
- পরিপূরক কোণ: দুটি কোণের পরিমাপের যোগফল ৩৬০ ডিগ্রি হলে তাদেরকে পরিপূরক কোণ বলে।
কোণের অন্যান্য প্রকারভেদ
- অনুরূপ কোণ: একই বৃত্তের একই বৃত্তচাপের উপর অবস্থিত কোণকে অনুরূপ কোণ বলে।
- একান্তর কোণ: একই সরলরেখার উপর পরপর অবস্থিত দুটি কোণকে একান্তর কোণ বলে।
- ধারাবাহিক অন্তঃস্থ কোণ: একই বৃত্তের একই বৃত্তচাপের উপর পরপর অবস্থিত দুটি কোণকে ধারাবাহিক অন্তঃস্থ কোণ বলে।
কোণ ও ত্রিকোণমিতির মধ্যে সম্পর্ক
ত্রিকোণমিতি হল গণিতের একটি শাখা যা ত্রিভুজের কোণ, বাহু ও তাদের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করে। কোণ হল ত্রিভুজের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তাই ত্রিকোণমিতিতে কোণের ধারণা অপরিহার্য। ত্রিকোণমিতিতে কোণকে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করে ত্রিভুজের কোণ পরিমাপ নির্ণয় করা যায়। এছাড়াও, ত্রিকোণমিতি ব্যবহার করে ত্রিভুজের বাহু পরিমাপ নির্ণয় করা যায়, যদি কোণের পরিমাপ জানা থাকে।
ত্রিকোণমিতির ছয়টি প্রধান ত্রিকোণমিতিক অনুপাত রয়েছে: সাইন (sine), কোসাইন (cosine), ট্যাঞ্জেণ্ট (tangent), কোট্যাঞ্জেণ্ট (cotangent), সেক্যাণ্ট (secant) এবং কোসেক্যাণ্ট (cosecant)। এই অনুপাতগুলি কোণের মান এবং ত্রিভুজের বাহুগুলির মধ্যে সম্পর্ক প্রকাশ করে।
কোণ হল ত্রিকোণমিতির ভিত্তি। ত্রিকোণমিতিতে কোণের ধারণা ছাড়া অন্য কোনও কিছু বোঝা সম্ভব নয়।
শেষ কথা
কোণের ধারণা প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের কাছে পরিচিত ছিল। প্রাচীন মিশরীয়, গ্রীক এবং রোমানরা কোণের ধারণা ব্যবহার করত। তারা কোণকে পরিমাপ করার জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করত। আধুনিক যুগে কোণের ধারণা জ্যামিতি, ত্রিকোণমিতি, ভূগোল, শিল্প, স্থাপত্যে এবং প্রযুক্তিতে ব্যবহৃত হয়।
ধারাবাহিক প্রশ্ন উত্তর | FAQ on Angle
কোণ সম্পর্কিত ইন্টারনেটে সর্বাধিক জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন সমূহের উত্তরঃ
প্রশ্ন: কোণ পরিমাপের বিভিন্ন পদ্ধতি কি কি?
উত্তর: কোণ পরিমাপের দুটি প্রধান পদ্ধতি হলো:
- ডিগ্রি পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে কোণকে ডিগ্রিতে পরিমাপ করা হয়। একটি বৃত্তকে ৩৬০ ডিগ্রিতে ভাগ করা হয়। একটি কোণের পরিমাপ ডিগ্রি স্কেলে লেখা ডিগ্রি সংখ্যার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
- রেডিয়ান পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে কোণকে রেডিয়ানে পরিমাপ করা হয়। একটি বৃত্তকে ২π রেডিয়ানে ভাগ করা হয়। একটি কোণের পরিমাপ রেডিয়ান স্কেলে লেখা রেডিয়ান সংখ্যার দ্বারা নির্ধারিত হয়।
প্রশ্ন: কোণ পরিমাপের যন্ত্র কোনগুলো?
উত্তর: কোণ পরিমাপের জন্য বিভিন্ন ধরনের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি হলো:
- কোণমাপক: এই যন্ত্রটি দিয়ে কোণকে ডিগ্রিতে পরিমাপ করা হয়।
- ট্রাইগোনোমিট্রিক চার্ট: এই চার্টটি দিয়ে কোণকে ডিগ্রিতে এবং রেডিয়ানে পরিমাপ করা হয়।
প্রশ্ন: পূরক কোণ কি?
উত্তর: দুটি কোণের যোগফল ৯০ ডিগ্রি হলে তাদেরকে পূরক কোণ বলে।
প্রশ্ন: সম্পূরক কোণ কি?
উত্তর: দুটি কোণের যোগফল ১৮০ ডিগ্রি হলে তাদের সম্পূরক কোণ বলে।
প্রশ্ন: বহিঃস্থ কোণ কাকে বলে?
উত্তর: কোনো বহুভুজের একটি বাহুকে বর্ধিত করলে যে কোণ উৎপন্ন হয় তাকে বহিঃস্থ কোণ বলে।
প্রশ্ন: অন্তঃস্থ কোণ কাকে বলে?
উত্তর: কোনো বহুভুজের দুটি বাহু এবং তাদের মধ্যবর্তী অন্তর্বর্তী অংশকে অন্তঃস্থ কোণ বলে।
প্রশ্ন: একটি কোণের কয়টি শীর্ষবিন্দু থাকে?
উত্তর: একটি কোণের একটি মাত্র শীর্ষবিন্দু থাকে।
প্রশ্ন: কেন্দ্রস্থ কোণ কাকে বলে?
উত্তর: কোনো বৃত্তের কেন্দ্র থেকে নির্গত এবং বৃত্তের পরিধির উপর অবস্থিত যেকোনো দুটি বিন্দুর মধ্যবর্তী কোণকে কেন্দ্রস্থ কোণ বলে।
প্রশ্ন: সূক্ষ্মকোণ কাকে বলে?
উত্তর: ০ ডিগ্রি থেকে ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত কোণকে সূক্ষ্মকোণ বলে।
প্রশ্ন: সমকোণ কাকে বলে?
উত্তর: ৯০ ডিগ্রি কোণকে সমকোণ বলে।
প্রশ্ন: স্থুলকোণ কাকে বলে?
উত্তর: ৯০ ডিগ্রি থেকে ১৮০ ডিগ্রি পর্যন্ত কোণকে স্থুলকোণ বলে।
প্রশ্ন: সরলকোণ কাকে বলে?
উত্তরঃ সরলকোণ হল এমন একটি কোণ যার মান ১৮০ ডিগ্রি।
Also Read: প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে