খাদ্যে ভেজাল | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
খাদ্যে ভেজাল হলো খাদ্যের গুণগত মান কমিয়ে খাদ্যে শরীরের জন্য ক্ষতিকর দ্রব্য মিশিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে সংরক্ষন করে বিক্রি করা। বর্তমান যুগে এটি একটি মারাত্মক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাদ্যে ভেজাল এখন একটি নীরব ঘাতক। শহর ও গ্রাম সবখানেই এই প্রবণতা বেড়েই চলেছে। শহর ও গ্রাম কোন কিছুই এই সমস্যার আওতা মুক্ত নয়। সাধারণভাবে খাদ্যে ভেজাল বলতে বোঝায় খাবারের সঙ্গে ক্ষতিকর ও অপ্রয়োজনীয় কোন দ্রব্য মেশানো, যা মানব শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের জন্য খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের ভেজাল মিশে থাকে। এতে মানুষের স্বাস্থ হানী ঘটে এমন কি মৃত্যুবরণ ও করে। খাদ্যে ভেজাল মিশানো নিন্দনীয় ও জঘন্য অপরাধ হওয়ার পরেও দিন দিন এই সমস্যা বেড়ে চলেছে। বর্তমানে প্রতিটি খাবারই ভেজাল মেশানো হয়। সাধারণভাবে খাদ্যে ভেজাল মিশানো দুইভাবে হয়। একটি হচ্ছে অনিচ্ছাকৃতভাবে এবং অন্যটি ইচ্ছাকৃতভাবে। খাদ্যের মধ্যে কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে ইচ্ছাকৃত ভাবে ভেজাল মেশানো। খাদ্যে ভেজাল হিসেবে যে ধরনের জিনিস মেশানো হয় – কৃত্রিম রং, এমাইলাম, কেইন সুন্দর, ফরমালিন, ক্যালসিয়াম কার্বাইড, এবং ইথোপেন ইত্যাদি। বর্তমানে বাংলাদেশে যেভাবে খাদ্যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে তা থেকে আমরা কেউই রেহাই পাচ্ছিনা। সাধারনত আমরা যে ধরনের ফল খাই তার সবগুলোর মধ্যে ভেজাল মেশানো থাকে। আপেল, কলা, আম, আনারস সব কিছুতেই ভেজাল মেশানো হয়। ভেজাল মিশিয়ে এগুলো কে অনেক আকর্ষনীয় ভাবে ক্রেতার সামনে দেখানো হয়। যার ফলে ক্রেতারা অধিক দাম দিয়ে কিনে নেয়। বর্তমানে শাক, সবজি, মাছ মাংস সবকিছুতেই ভেজাল মিশিয়ে বিক্রি করা হয়। খাদ্যে ভেজাল হওয়ার কারনে অনেক মানুষ মরে যাচ্ছে, অসুস্থ হচ্ছে। তাই আমাদের উচিৎ এগুলো বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ অবলম্বন করা।
খাদ্যে ভেজাল | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
খাদ্যে ভেজাল একটি ভয়ংকর বাস্তবতা, যা প্রতি বছর কোটি কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। বাংলাদেশের মতো দেশে, যেখানে নিরাপদ খাদ্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করা কঠিন, সেখানে ভেজালযুক্ত খাদ্যের বিস্তার আরও উদ্বেগজনক। এই বিষাক্ত মিশ্রণে দুধ, মসলা, ফল, সবজি থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের খাদ্যই আক্রান্ত হতে পারে। খাদ্যে ভেজালের ফলে প্রতি বছর অসংখ্য মানুষ অসুস্থ হয়, দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত হয়, এমনকি মৃত্যুও হয়। বিশেষ করে শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং বয়স্ক মানুষজন এই বিষের কবলে পড়ার ঝুঁকি বেশি। কিডনি, লিভার, ফুসফুসের ক্ষতি, ক্যান্সার এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ে ভেজালযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে। এই বিষাক্ত মিশ্রণ সাধারণত অতি মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে অসাধু ব্যবসায়ীরা খাদ্যে মিশিয়ে থাকে। নানা কৌশলে রাসায়নিক পদার্থ, নিষিদ্ধ রং, ক্ষতিকারক মিশ্রণ ইত্যাদি খাদ্যে মিশিয়ে তা আকর্ষণীয় ও বেশিদিন টাটকা রাখার চেষ্টা করে। খাদ্যে ভেজাল রোধে সরকার, জনগণ এবং খাদ্য উৎপাদকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। সরকারের উচিত কঠোর আইন প্রণয়ন ও কার্যকরী বাস্তবায়ন, নিয়মিত খাদ্য পরীক্ষা, দোষীদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিত করা। জনগণের সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। খাবার কেনার সময় সতর্ক থাকা, লেবেল পর্যবেক্ষণ করা, অতি উজ্জ্বল বা অস্বাভাবিক রঙের খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। খাদ্য উৎপাদকদের নৈতিকতা ও মান উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। খাদ্যে ভেজাল মুক্ত একটি সমাজ গড়ার দায়িত্ব আমাদের সবারই। সচেতনতা, আইন ও নৈতিকতার সমন্বয়ে আমরা এই বিষাক্ত মিশ্রণের বিরুদ্ধে জয়লাভ করতে পারি। নিরাপদ খাদ্য আমাদের অধিকার, এই অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আমাদের সবারই ঐক্যবদ্ধ হওয়া জরুরি।
খাদ্যে ভেজাল | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
বর্তমানে বাংলাদেশের সবচেয়ে ভয়ংকর সমস্যা হচ্ছে খাদ্যে ভেজাল। সমস্যাটি এমন ভাবে ছড়িয়ে পরেছে যে সরকার বন্ধ করতে হিমশীম খাচ্ছে। গাছের শাক সবজি ফল মুল থেকে রান্না করা খাবার সবকিছুতেই ভেজাল মেশানো হচ্ছে। এটি থাকার কারনে মানুষের স্বাস্থ্যহানী ঘটছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে যার ফলে দিন দিন মানুষ অসুস্থ হয়ে পরছে। ক্যান্সারের মত ভয়ানক রোগ, লিভার সিরোসিস,কিডনি রোগ,হৃদরোগ,হাঁপানি,বমি বমি ভাব,পেটব্যথা,ডায়রিয়া দিন দিন বেড়ে চলেছে। খাদ্যে ভেজাল মেশানোর মুল কারন হচ্ছে খাদ্য যেন বেশিদিন ধরে থাকতে পারে বা নষ্ট হতে না পারে। অনেক সময় খাদ্য যখন দীর্ঘ দিন বিক্রি করা না যায়, তখন খাদ্যের উজ্বলতা নষ্ট হয়ে যায় বা খাদ্যে পচন ধরে। সেই সমস্যা দূর করার জন্য তখন খাদ্যে এই ভেজাল মেশানো হয়। এছাড়াও অনেক খাদ্য আছে যেগুলো ওজনে অনেক হাল্কা। সেই খাবার গুলোতে তখন ভেজাল মিশিয়ে ওজন বাড়ানো হয়। ওজন বাড়ানোর জন্য তারা ইটের গুড়ো, বালি, কাকর মেশাতেও দ্বিধা বোধ করেনা। মাছে ফরমালিন মিশিয়ে মাছকে দীর্ঘ দিন ধরে তাজা ও টাটকা রাখে। তখন মাছের গুনগত মান কমে যায়। বলা চলে ভেজাল মেশানোর কারনে খাদ্যের মান একেবারে নষ্ট করে দিয়ে সেই খাদ্য আরো ক্ষতিকর হয়ে ওঠে। ভেজালযুক্ত সেই খাবার খাওয়ার কারনে তখন মানুষের শরীরে বিভিন্ন ধরনের অসুখ দেখা দেয়। কেউ সহ্য না করতে মরেও যায়। এখন এই সমস্যা এতবেশি বেড়ে গেছে যে জেনেবুঝে স্বেচ্ছায় সবাই ভেজাল যুক্ত খাদ্য খাচ্ছি। কারন বেচে থাকতে হলে খাদ্য খেতে হবে, হোক সেটা ভেজালযুক্ত। প্রতিকারহীন এই সমস্যার কাছে আমরা সবাই নিজের জীবনকে সপে দিয়েছি। যার কারনে ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের লিভার ও কিডনি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাদ্যে ভেজাল হওয়ার কারনে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক উন্নতি ভালো ভাবে হতে পারছেনা। ফলে আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ ও ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীনে পরতে যাচ্ছে। মানুষের জীবনে অর্থের অবশ্যই প্রয়োজন আছে। কিন্তু সেই অর্থ যদি হারাম উপায়ে হয়, সর্বোপরি অর্থের জন্য যদি কোটি কোটি মানুষের জীবন বিপর্যস্থ হয় তাহলে সেই মুনাফালোভী ব্যবসায়ীর কঠিন শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।। কারন অন্যের জীবন হুমকিতে ফেলে অর্থ উপার্জন করা কখনো নীতির মধ্যে পরেনা। বাংলাদেশের খাদ্যে ভেজাল সমস্যা দূরীকরনের একমাত্র উপায় হচ্ছে যথাযথ আইন প্রয়োগ করা এবং মুল্যবোধ জাগ্রত কর। খাদ্যে ভেজাল দূর করার জন্য আমাদের সবাইকে সোচ্চার হতে হবে তবেই এই সমস্যা থেকে আমরা রেহাই পেতে পারব।