তথ্য প্রযুক্তি | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
তথ্য প্রযুক্তি আধুনিক সভ্যতার হৃৎপিণ্ড। এটি এমন এক অদৃশ্য জাল, যেটি আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রকে বেষ্টন করে রেখেছে। স্কুলের ক্লাসরুম থেকে গবেষণাগার, রাস্তার গাড়ি থেকে রান্নাঘর, তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়া পৌঁছে গেছে জীবনের সবখানে। শুধুমাত্র জ্ঞান অর্জন ও তথ্য আদানপ্রদানেই নয়, এটি আমাদের সৃষ্টিশীলতা, উদ্ভাবন ও যোগাযোগের ক্ষেত্রেও বিপ্লব ঘটিয়েছে। হাজার বছরের উদ্ভাবনকে কয়েক সেকেন্ডে হাতের নাগালে এনে দিয়েছে তথ্য প্রযুক্তি। চিকিৎসাবিজ্ঞান থেকে মহাকাশ গবেষণা, সবকিছুই এখন এক ক্লিকের দূরত্বে। কৃত্রিম বুদ্ধি, মেশিন লার্নিং, ব্লকচেইন – এইসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজ, দ্রুত ও আরও সুন্দর করে তুলছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা আরও নির্ভুল হয়েছে, শিক্ষায় দূরত্বের বন্ধন আর নেই, ব্যবসায় আন্তর্জাতিক সীমানা হয়ে গেছে অতীতের গল্প। কৃষকেরা মোবাইলের মাধ্যমে কৃষি তথ্য আবহাওয়ার খবর নিয়ে অধিক ফসল উৎপাদন করতে পারছে। তবে, এই আলোকিত পথের পাশেই রয়েছে অন্ধকারের ছায়াও। সামাজিক দূরত্ব বেড়ে যাওয়া, মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি, তথ্য নিরাপত্তা ঝুঁকি, সোশ্যাল মিডিয়ার গুজব, সাইবার বুলিং, হ্যাকিং, অনলাইন প্রতারনা – এসব চ্যালেঞ্জ আমাদের অবধারিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তথ্য প্রযুক্তিকে আমাদের বন্ধু বানাতে হবে, শত্রু নয়। সচেতনতা ও দায়িত্ববোধের সাথে এটি ব্যবহার করেই আমরা নিরাপদ ও উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যেতে পারি। তথ্য প্রযুক্তি একটি দ্বিমুখী অস্ত্র। এটি আমাদের ধ্বংস করতেও পারে আবার জীবনের উপকারের জন্য নতুন কিছু সৃষ্টিও করতেও পারে। আমাদের হাতেই রয়েছে এর ভবিষ্যৎ লেখার ক্ষমতা। তাই, সচেতনভাবে, দায়িত্ববোধের সাথে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা আগামীর এক সুন্দর ও সমৃদ্ধ জগত গড়ে তুলতে পারি।
তথ্য প্রযুক্তি | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
বিজ্ঞানের সবচেয়ে আশ্চর্য জনক আবিষ্কার হলো ডিজিটাল ডিভাইস আবিষ্কার করা। কারন মোবাইল,কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট হলো তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। প্রযুক্তি হলো বিজ্ঞানের জ্ঞানকে কোনো পদ্ধতির মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে কোনো আবিষ্কার ও উৎপাদনে রুপ দেওয়া। আর তথ্য প্রযুক্তি বলতে বোঝায় কোনো ইলেকট্রনিক্স বা টেলিযোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ, প্রেরন ও প্রক্রিয়াকরন করে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলা। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির প্রধান সহায়ক বা মাধ্যম হলো মোবাইলফোন ও ইন্টারনেট। ইন্টারনেট ব্যবহার করে হাজার হাজার কাজ করতে পারে মানুষ। এক সময় মানুষের একটি খবর পৌছে দেয়ার জন্য এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত কষ্ট করে যেতে হতো, কিন্তু এর কারনে মাত্র এক সেকেন্ডের কম সময়ে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে খবর পৌছে দিতে পারছে। কয়েক দশক আগে এটির কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও এখন তথ্য প্রযুক্তি হয়েছে অতি আধুনিক। খুব সহজে কাউকে ম্যাসেজ প্রদান করা,অডিও ভিডিও কলে কথা বলা, ছবি পাঠানো, গুরুত্বপূর্ণ ই মেইল পাঠানো সম্ভব হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির কারনে। শিক্ষা ক্ষেত্রে এনে দিয়েছে ব্যপক পরিবর্তন। শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যপক পরিবর্তন আনার সবচেয়ে বড় দৃষ্টান্ত হলো কোভিড বা করোনার সময়কার কথা। কারন সেই সময় মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে সবাই ঘরে বন্দি হয়েছিল তখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত যদি অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার না করে শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে না পারতো। যে কোনো ধরনের বই পড়া যায় ইন্টারনেট ব্যবহার করে। মানুষের জীবনের সবকিছুই পরিবর্তন করে দিয়েছে এটির ব্যবহার। দৈনন্দিন জীবনের এমন কোনো কাজ নেই যেখানে মানুষ তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার না করে। ইউটিউব এবং গুগল মানুষের জীবনকে আরো সহজ করে দিয়েছে। সব ধরনের শ্রেনি পেশার মানুষ গুগল ও ইউটিউব ব্যবহার করে সমস্যার সমাধান করতে পারে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে পছন্দের যে কোনো খাবার অর্ডার করলে ঘরেই খাবার এসে যায়, ঘরে বসে শপিং করা সহ রয়েছে আরো বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা। দারিদ্র বিমোচন ও বেকার সমস্যায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এটি। মানুষ এখন চাকরির জন্য না ছুটে ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং করে লাখ লাখ টাকা আয় করছে। ফলে বেকারের সংখ্যা এখন দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। তাই বলা যায় তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনে আশির্বাদস্বরুপ।
তথ্য প্রযুক্তি | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
আমরা এখন আধুনিক যুগে বাস করছি। আর এই আধুনিক যুগ মানেই তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার। মুলত তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমেই আমরা আধুনিক জীবনে পৌছাতে পেরেছি। বর্তমান যে সময়ে আমরা বাস করছি সেটি হলো তথ্য প্রযুক্তির সময়। এটিকে ইংরেজি ভাষায় বলা হয় Information Technology. বর্তমান যুগে এটির ব্যবহার ছাড়া এক মূহূর্ত চলা কঠিন হয়ে পরেছে। তথ্য প্রযুক্তি ছাড়া আমাদের জীবন এখন অচল। তথ্য শব্দটি দ্বারা অনেক কিছু বোঝায়। যেমন যথার্থতা, সত্যতা, প্রকৃত অবস্থা, তত্ব, সত্য ইত্যাদি। তথ্য বলতে বোঝায় বিজ্ঞানের জ্ঞান এবং প্রযুক্তি হলো সেই জ্ঞানের যথার্থ প্রয়োগ। অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহ করে যথাযথ ভাবে প্রয়োগ করাকেই তথ্য প্রযুক্তি বলে। বিজ্ঞান সময়ের সাথে সাথে যেমন পরিবর্তিত হচ্ছে সেই সাথে এটি উন্নতি করছে। আধুনিক প্রযুক্তি আমাদের অনেক কিছুই উপহার দিয়েছে। তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার গুলো হচ্ছে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট ও কম্পিউটার। আমাদের কঠিন জীবনকে এটি করে দিয়েছে একদম সহজ ও গতিময়। দূরত্ব সমস্যা সমাধান করে আমাদের থমকে যাওয়া জীবনে এনে দিয়েছে আলোর মতো গতি। তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনে এনে দিয়েছে হাজারো সম্ভাবনা। আমাদের জীবনের মৌলিক চাহিদা মিটিয়ে দিয়ে আমাদের জীবনকে আধুনিক হতে সাহায্য করছে তথ্য প্রযুক্রি। এটি আমাদের জীবনে আশির্বাদ স্বরুপ। কারন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে হাজারো হাজারো মানুষ দারিদ্র বিমোচন করতে পারছে। শিক্ষা, চিকিৎসা, যোগাযোগ প্রতিটি খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে তথ্য প্রযুক্তি। শিক্ষার্থীরা এটিকে পড়াশোনায় ব্যবহার করে খুব সহজে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। পড়াশোনার কাজে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করার ফলে অল্প পরিশ্রমে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করতে পারছে। ক্লাসে শিক্ষক ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের আরো ভালো করে পাঠদান করতে পারছে। বই পড়ার পাশাপাশি যখন সেই বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কোনো ভিডিও বা ডকুমেন্টারি দেখছে তখন আরো বেশি ভালো করে সেই বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারছে। আগে যখন পাবলিক পরীক্ষার ফলাফল দেখার জন্য স্কুল কলেজে শত শত মানুষের ভীড়ের মধ্যে যেয়ে ফলাফল দেখা লাগতো, এখন তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে শিক্ষার্থীরা ঘরে বসে ফলাফল দেখতে পারছে। যার কারনে অর্থ, সময় কষ্ট সবকিছুই কমে যাচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ঘরে বসে মানুষ রোগ সম্পর্কে জানতে পারছে, বড় বড় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারছে টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় বড় অফিস বা ব্যবসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে রাখতে পারছে। কোটি কোটি টাকার হিসেব খুব সহজেই কম্পিউটার ব্যবহার করে নিমিষেই করা সম্ভব হচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ এতবেশি অভ্যস্ত হয়েছে যে তথ্য কম্পিউটার, ইন্টারনেট মোবাইল ফোন ছাড়া কেউ একটি দিন কাটানোর কথা ভাবতে পারেনা।