পদার্থ কাকে বলে ! পদার্থের প্রকারভেদ
বিজ্ঞানের একটি অন্যতম শাখা হলো পর্দাথ বিজ্ঞান আর এই পদার্থবিজ্ঞানের মূল আলোচনায় পর্দাথ কেন্দ্রিক। আজকের এই লেখায় আমরা আলোচনা করবো পদার্থ কাকে বলে এর প্রকারভেদ , এই সমন্ধিয বিভিন্ন তথ্য।
পদার্থ কাকে বলে
চিরায়ত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যা কিছু কোনও স্থান বা আয়তন দখল করে এবং জড়তা ও মহাকর্ষ ধর্ম প্রদর্শন করে, তাকে পদার্থ বলে। দৈনন্দিন স্পর্শযোগ্য সমস্ত বস্তু মোটামুটিভাবে অনেকগুলি পরমাণু দিয়ে তৈরি, যেগুলি আবার পরস্পর আন্তঃক্রিয়াশীল অতিপারমাণবিক কণা।
পদার্থের উপরের সংজ্ঞাটি কঠিন মনে হলে,
পদার্থের সহজ সংজ্ঞা
যেকোনো বস্তু যা আমাদের চোখে দেখা যায় বা না দেখা যায়, কিন্তু ভর ও আয়তন ধারণ করে এবং জড়তা ও মহাকর্ষ ধর্ম প্রদর্শন করে, তাকে পদার্থ বলে।
অথবা, পদার্থ হল এমন বস্তু যার ভর আছে ও আয়তন দখল করে। ভর হল পদার্থের পরিমাণ এবং আয়তন হল পদার্থের দখলকৃত স্থান।
অন্যভাবে,
পদার্থ হল এমন বস্তু যা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে। রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পদার্থগুলির মধ্যে পরমাণুগুলির পুনর্বিন্যাসের ফলে নতুন পদার্থ তৈরি হয়।
উদাহরণস্বরূপ: ইট, কাঠ, লোহা, বাতাস, জল, আগুন, পরমাণু, অণু, ইত্যাদি।
পর্দাথের বৈশিষ্ট্য
- পদার্থের কিছু বৈশিষ্ট্য
- ভর আছে
- যায়গা দখল করে
- বল প্রয়োগে বাধা প্রদান করে
- রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংস নেয় ইত্যাদি
পদার্থের গঠন সম্পর্কে বিভিন্ন তত্ত্ব
কণা তত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুসারে, পদার্থের মূল উপাদান হল কণা।
তরঙ্গ তত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুসারে, পদার্থের মূল উপাদান হল তরঙ্গ।
কণা-তরঙ্গ দ্বৈততা তত্ত্ব: এই তত্ত্ব অনুসারে, পদার্থ কণা এবং তরঙ্গ উভয়েরই ধর্ম প্রদর্শন করে।
পদার্থের বিভিন্ন ধর্ম
পদার্থ কাকে বলে, ভালোভাবে জানতে পদার্থের বিভিন্ন ধর্ম নিয়ে জানতে হবে।
- ভর: পদার্থের পরিমাণকে ভর বলে।
- আয়তন: পদার্থের দখলকৃত স্থানকে ভলিউম বলে।
- ঘনত্ব: ভরকে ভলিউমের উপর ভাগ করলে ঘনত্ব পাওয়া যায়।
- জড়তা: পদার্থের বিশ্রাম বা গতিকে বজায় রাখার প্রবণতাকে জড়তা বলে।
- মহাকর্ষ: পদার্থের মধ্যে আকর্ষণ বলকে মহাকর্ষ বলে।
পদার্থের প্রকারভেদ
গঠনের ভিত্তিতে
গঠনের ভিত্তিতে পদার্থ কে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন:
- মৌলিক পদার্থ: প্রকৃতিতে স্বাধীনভাবে পাওয়া যায় এমন পদার্থকে মৌলিক পদার্থ বলে। যেমন: হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন, ইত্যাদি। এখন পর্যন্ত মোট ১১৮টি মৌলিক পদার্থ আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকী ২০টি কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করা হয়।
- যৌগিক পদার্থ: দুটি বা ততোধিক মৌলিক পদার্থের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থকে যৌগিক পদার্থ বলে। যেমন: জল, লবণ, ইত্যাদি।
- মিশ্রণ: দুটি বা ততোধিক পদার্থের ভৌত মিশ্রণকে মিশ্রণ বলে। যেমন: বাতাস, লোহা-কাচের মিশ্রণ, ইত্যাদি।
অবস্থার ভিত্তিতে
অবস্থার ভিত্তিতে পদার্থের তিনটি প্রধান প্রকারভেদ রয়েছে:
- কঠিন পদার্থ: কঠিন পদার্থের অণু গুলো একে অপরের খুব কাছাকাছি থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট আকার এবং আয়তন থাকে। কঠিন পদার্থ সাধারণত শক্ত, স্থিতিস্থাপক এবং অনমনীয় হয়।
- তরল পদার্থ: তরল পদার্থের অণুগুলো একে অপরের কাছাকাছি থাকে তবে একটি নির্দিষ্ট আকার থাকে না। তরল পদার্থ সাধারণত নমনীয় এবং প্রবাহিত হয়।
- গ্যাসীয় পদার্থ: গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলো একে অপরের থেকে খুব দূরে থাকে এবং কোন নির্দিষ্ট আকার বা আয়তন থাকে না। গ্যাসীয় পদার্থ সাধারণত নমনীয় এবং প্রসারণশীল হয়।
এই তিনটি প্রধান প্রকার ছাড়াও, পদার্থের আরও কিছু বিশেষ অবস্থা রয়েছে। যেমন:
- প্লাজমা: প্লাজমা হল একটি উত্তপ্ত, আয়নিত গ্যাস। প্লাজমায়, পদার্থের অণুগুলি ভেঙে যায় এবং পরমাণুগুলির ইলেকট্রনগুলি নিউক্লিয়াস থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। প্লাজমা সাধারণত উচ্চ তাপমাত্রা এবং চাপের অধীনে পাওয়া যায়।
- সুপার ফ্লুইড: সুপার ফ্লুইড হল একটি বিশেষ ধরনের তরল যা কোন সান্দ্রতা ছাড়াই প্রবাহিত হয়। সুপারফ্লুইড সাধারণত অত্যন্ত নিম্ন তাপমাত্রায় পাওয়া যায়।
- সুপার কন্ডাক্টর: সুপার কন্ডাক্টর হল একটি বিশেষ ধরনের পদার্থ যা কোন বৈদ্যুতিক প্রতিরোধ ছাড়াই বিদ্যুৎ পরিচালনা করে।
পদার্থের অবস্থা ৩, ৫ নাকি ৭?
পদার্থের অবস্থার সংখ্যা নির্ধারণের ক্ষেত্রে, “অবস্থা” শব্দের সংজ্ঞা কী তা নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। যদি “অবস্থা” শব্দটিকে পদার্থের আণবিক কাঠামো এবং আন্তঃআণবিক শক্তির উপর ভিত্তি করে একটি গুণগত বৈশিষ্ট্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তাহলে পদার্থের অবস্থার সংখ্যা ৩। এই সংজ্ঞা অনুসারে, পদার্থের অবস্থাগুলি হল:
- কঠিন, তরল ও গ্যাসীয়
যদি “অবস্থা” শব্দটিকে পদার্থের আণবিক কাঠামো এবং আন্তঃআণবিক শক্তির পাশাপাশি তাপমাত্রা এবং চাপের উপর ভিত্তি করে একটি পরিমাণগত বৈশিষ্ট্য হিসাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তাহলে পদার্থের অবস্থার সংখ্যা ৫। এই সংজ্ঞা অনুসারে, পদার্থের অবস্থাগুলি হল:
- কঠিন, তরল, গ্যাসীয়, প্লাজমা, ও সুপার ফ্লুইড
প্রথাগতভাবে, পদার্থের অবস্থার সংখ্যা ৩ ধরা হয়। তবে, প্লাজমা এবং সুপার ফ্লুইড এর মতো অন্যান্য অবস্থা গুলো বিবেচনা করা যেতে পারে।
বিশুদ্ধ পদার্থ কাকে বলে?
বিশুদ্ধ পদার্থ বলতে এমন পদার্থকে বোঝায় যা শুধুমাত্র একটি উপাদান বা একটি যৌগ নিয়ে গঠিত। বিশুদ্ধ পদার্থের মধ্যে কোনও অপদ্রব্য থাকে না। বিশুদ্ধ পদার্থের ধর্ম একই থাকে।
বিশুদ্ধ পদার্থের উদাহরণগুলি হল:
- মৌল: সোনা, রুপা, তামা, লোহা, ইত্যাদি।
- যৌগ: পানি, লবণ, চিনি, ইত্যাদি।
বিশুদ্ধ পদার্থকে সাধারণত পরীক্ষাগারে বা শিল্প কারখানায় তৈরি করা হয়। বিশুদ্ধ পদার্থ তৈরির জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। যেমন, স্ফটিকায়ন, নিষ্কাশন, বিশোধন, ইত্যাদি।
কোন বস্তুতে কি পরিমাণ পদার্থ থাকে
কোন বস্তুতে কি পরিমাণ পদার্থ থাকে তা নির্ভর করে বস্তুর ভর এবং আয়তনের উপর। আভোগ্রেডোর সংখ্যা হল একটি পদার্থের একটি নির্দিষ্ট আয়তনের কতগুলি পরমাণু বা অণু রয়েছে তার পরিমাপ। এটি একটি মৌলিক ভৌত ধ্রুবক যা সমস্ত পদার্থের জন্য একই। এর সাহায্য পরিমান বের করা যায়।
আভোগ্রেডোর সংখ্যাকে “n” দ্বারা চিহ্নিত করা হয়।
আভগ্রেদর সংখ্যার মান হল 6.022 × 10^23। এর মানে হল যে, প্রতি এককে 6.022 × 10^23 টি পরমাণু বা অণু রয়েছে।
মৌলিক পদার্থের গঠন
মৌলিক পদার্থের পরমাণুতে তিনটি ধরনের কণা থাকে:
- প্রোটন: প্রোটন হল পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ধনাত্মক আধানযুক্ত কণা।
- নিউট্রন: নিউট্রন হল পরমাণুর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আধানহীন কণা।
- ইলেকট্রন: ইলেকট্রন হল পরমাণুর চারপাশে ঘোরে এমন ঋণাত্মক আধানযুক্ত কণা।
পরমাণুতে প্রোটন এবং নিউট্রনের সংখ্যাকে পারমাণবিক সংখ্যা বলে। পারমাণবিক সংখ্যা নির্ধারণ করে পদার্থের মৌলিকত্ব।
যৌগিক পদার্থের গঠন
যৌগিক পদার্থের পরমাণুগুলির মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন থাকে। রাসায়নিক বন্ধন হল দুটি বা ততোধিক পরমাণুর মধ্যে শক্তিশালী আকর্ষণ বল।
যৌগিক পদার্থের গঠন বিভিন্ন রকম হতে পারে। যেমন, সমযোজী বন্ধন, আয়নিক বন্ধন, ধাতব বন্ধন, ইত্যাদি।
শেষ কথা
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা আজকের লেখায তোমরা পদার্থ বিজ্ঞানের অন্যতম মৌলিক বিষয় পদার্থ কাকে বলে ও এর বিভিন্ন সংজ্ঞা, প্রকারভেদ ও অবস্থা সম্পর্কে জেনেছো। এই জাতীয় আরো লেখা পড়তে চোখ রাখো আমাদের ব্লগে। ধন্যবাদ।
Also read : মৌলিক পদার্থ কাকে বলে