পদ্মা নদী | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নদী হল পদ্মা। এটি হিমালয়ে উৎপন্ন গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা। বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে, এরপর পদ্মার উত্তর তীরে অবস্থিত রাজশাহী, পাবনা, রাজবাড়ী, যশোর, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, নড়াইল, মাগুরা, বাগেরহাট, গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, বরিশাল, পটুয়াখালী ইত্যাদি জেলার উপর দিয়ে বয়ে গিয়ে চাঁদপুর জেলায় মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। পদ্মা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার মালদহ মহকুমার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মানাকোসা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর এটি রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এর দৈর্ঘ্য ৩৪৫ কিলোমিটার। পদ্মা নদীর দৈর্ঘ্য ৩৬৬ কিলোমিটার এবং গড় প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। নদীটি সর্পিলাকার গতিপথে প্রবাহিত। পদ্মার তীরবর্তী এলাকা অত্যন্ত জনবহুল। এখানে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ হয়। নদীটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ নদীর ইতিহাস অনেক প্রাচীন। প্রাচীনকালে এই নদীর উপর দিয়ে বহু বাণিজ্যিক পথ ছিল। পদ্মার তীরে অনেক প্রাচীন নিদর্শন পাওয়া গেছে। এর সাথে বাংলাদেশের মানুষের জীবন ও সংস্কৃতির গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই নদীর তীরে অনেক ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা রয়েছে। নদীর উপর দিয়ে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি বাংলাদেশের প্রধান যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পদ্মা নদীর উপর নির্মিত পদ্মা সেতু বাংলাদেশের একমাত্র বহুমুখী সেতু। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। পদ্মা বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এ নদীর তীরে অনেক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এছাড়াও, পদ্মা নদীর উপর অনেক ঐতিহ্যবাহী গান ও সাহিত্য রচিত হয়েছে।
পদ্মা নদী | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
পদ্মা নদী বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের কাছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মুর্শিদাবাদ জেলার মালদহ মহকুমার চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার মানাকোসা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নে হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর এটি রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এর দৈর্ঘ্য ৩৪৫ কিলোমিটার। এ নদীর বিস্তৃতি অত্যন্ত বিশাল। এর গড় প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। এটি বাংলাদেশের অন্যান্য নদীর তুলনায় অনেক প্রশস্ত। পদ্মার বিস্তৃততা একে আরও সুন্দর করে তোলে। এই নদীর জলপ্রবাহ অনেক বেশি। এটি গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা হিসেবে ভারত থেকে প্রচুর পরিমাণে জল নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পদ্মার জলপ্রবাহ একে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে। পদ্মা নদীর তীরে অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সবুজ বন, নীল আকাশ, সাদা মেঘ, ও ঝলমলে সূর্য। পদ্মার তীরের এই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য একে আরও মনোরম করে তোলে । এ নদী বাংলাদেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পদ্মার তীরে অনেক প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। পদ্মার উপর অনেক ঐতিহ্যবাহী গান ও সাহিত্য রচিত হয়েছে। পদ্মার এই ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব একে আরও মূল্যবান করে তোলে। পদ্মার ইলিশ সারা বিশ্বে বিখ্যাত কারণ এটি অত্যন্ত সুস্বাদু। পদ্মার ইলিশের স্বাদ অন্যান্য নদীর ইলিশের তুলনায় অনেক বেশি। এর কারণ হল পদ্মার পানিতে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য ও অক্সিজেন রয়েছে। এছাড়াও, পদ্মার পানিতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি বাস করে যা ইলিশের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পদ্মা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পদ্মা নদী বাংলাদেশের প্রধান যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর উপর নির্মিত বঙ্গবন্ধু সেতু বাংলাদেশের একমাত্র বহুমুখী সেতু। এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই নদী বাংলাদেশের প্রধান কৃষি ও শিল্প এলাকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। পদ্মার পানি কৃষিকাজ ও শিল্পকারখানার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পদ্মার পানি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা হয়। এছাড়াও, পদ্মার পানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন, লবণ উৎপাদন, ও অন্যান্য শিল্পকারখানা পরিচালনা করা হয়। এই নদী বাংলাদেশের প্রধান মৎস্য সম্পদের উৎস। পদ্মার ইলিশ, চিংড়ি, কৈ, পুঁটি ইত্যাদি মাছ বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পদ্মা নদী বাংলাদেশের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র। পদ্মার তীরে অনেক প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এসব দর্শনীয় স্থান দেশের ও বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এই নদী বাংলাদেশের পরিবেশের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই নদী বহু প্রজাতির মাছ, পাখি ও অন্যান্য প্রাণীর আবাসস্থল। এই নদীর পানি বাংলাদেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পদ্মাকে সর্বনাশ এই নদী বলার কারণ হল এটি একদিকে যেমন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, অন্যদিকে তেমনি এটি বন্যা, নদী ভাঙন, ও পরিবেশ দূষণের মতো সমস্যারও কারণ। পদ্মার পানি প্রবাহ অনেক বেশি। এ কারণে এটি বর্ষাকালে বন্যায় আক্রান্ত হয়। বন্যায় পদ্মার তীরবর্তী এলাকার অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও, পদ্মা নদীর তীরে অনেক এলাকায় নদী ভাঙন হয়। নদী ভাঙনে অনেক মানুষ তাদের বসতভিটা হারিয়ে ফেলে।
পদ্মা নদী | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
পদ্মা নদী বাংলাদেশের শিরা, দেশের আত্মার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক নিবিড় বন্ধনে। এই নদী গঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গোয়ালন্দে যমুনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে পদ্মা নামে প্রবাহিত হয় এবং চাঁদপুরে মেঘনা নদীর সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়। এটি বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। এই নদী বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবহন, কৃষি এবং সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পদ্মার প্রাণশক্তি বাড়িয়ে তোলে তার অসংখ্য ছোট উপনদী ও শাখানদী। মহানন্দা ও পুনর্ভবা মতো শক্তিশালী উপনদীগুলো পদ্মাকে আরও প্রবল করে। শাখানদীগুলো বিস্তৃত এলাকায় সেচ, যোগাযোগ ও জীবিকার প্রধান মাধ্যম। বাংলাদেশের কৃষির প্রাণ হলো পদ্মা নদী। বিশাল এই নদী কৃষিক্ষেত্রে নানাভাবে অবদান রাখে। সেচের ব্যবস্থা করে, মাটির উর্বরতা বাড়ায়, ফসল পরিবহনে সহায়তা করে এবং ভুমিকে বিভিন্ন ফসলের চাষের উপযোগী করে তুলে। তবে, বন্যা ও লবণাক্ততা পদ্মা নদীর প্রধান অভিশাপ। রাজশাহী শহর পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত। পদ্মা নদী ছিল সেকালে রাজশাহী থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। মূল পদ্মার পাশাপাশি তার শাখা-উপশাখাগুলোও রাজশাহীকে পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, ঢাকা, যশোর, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সাথে যুক্ত করেছিল। সুদূর ইউরোপ থেকে ওলন্দাজরা পদ্মার উপর ভর করে রাজশাহীতে রেশম ব্যবসা শুরু করেছিল। এ থেকেই রাজশাহী নগরীর সূত্রপাত। এই নদীর বুকেই তৈরি করা হয়েছে বাংলাদেশের গর্ব পদ্মা সেতু, এর নির্মাণের ফলে, দক্ষিণ অঞ্চলের যোগাযোগ, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হচ্ছে। ইলিশ মাছ বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং বিশ্বের অন্যতম সুস্বাদু মাছ হিসেবে বিবেচিত। পদ্মা নদীর ইলিশের স্বাদের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। পদ্মার ইলিশের স্বাদ অনন্য, যা অন্য কোন নদীর ইলিশের সাথে তুলনা করা যায় না। পদ্মা নদীর ইলিশের স্বাদ ভালো হওয়ার কারণ হলো এই নদীর পানি ও মাটির গুণমান। পদ্মা নদীর পানিতে প্রচুর পরিমাণে ফ্লোরাইড ও ক্যালসিয়াম রয়েছে, যা ইলিশ মাছের স্বাদকে বাড়িয়ে দেয়। কিন্তু ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মার পানি প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে। ফলে পদ্মার নাব্যতা কমেছে এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে পদ্মার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে। বিশেষ করে, ইলিশ মাছের প্রজনন ও বিচরণে ব্যাঘাত ঘটেছে। ফলে ডিম ভরা ইলিশ ধরা পড়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। পদ্মা নদী বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও সাহিত্যের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই নদীর তীরে বসবাসকারী মানুষের জীবনযাত্রা, নদীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও পদ্মার সাথে জড়িত বিভিন্ন ঘটনা ও চরিত্র সাহিত্যিকদেরকে বারবার অনুপ্রাণিত করেছে। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাসে পদ্মার তীরের মানুষের জীবনযাত্রার এক বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে। পদ্মা নদীর ভাঙন একটি নিয়মিত ঘটনা। নদীর প্রবাহের কারণে নদীর তীর ক্ষয়ে যায় এবং নদীর গতিপথ পরিবর্তিত হয়। এই ভাঙনের ফলে অনেক গ্রাম ও শহর ধ্বংস হয়ে যায়। রাজা রাজবল্লভের কীর্তিও পদ্মার ভাঙনের শিকার হয়েছিল। এই ঘটনার পর থেকে পদ্মার আরেক নাম হয় কীর্তিনাশা। জনশ্রুতি আছে, পদ্মার কোলে শায়িত হজরত শাহ্ মখদুম রূপোশ (রহ.) একদিন কুম্ভীর (কুমির) বাহনে পদ্মার বুকে নাপিত দম্পতির নিকট এসেছিলেন। পদ্মা নদী বাংলাদেশের গর্ব, দেশের ঐতিহ্য। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও পদ্মা নদী বাঙালি জাতীয়তাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক হিসেবে কাজ করেছিল। এই নদীকে রক্ষা করা, তার সৌন্দর্য লালন করা আমাদের সবারই দায়িত্ব।