অনলাইনে পাসপোর্ট করার নিয়ম
বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হল “পাসপোর্ট”। পূর্বে পাসপোর্ট তৈরি করার প্রক্রিয়া বেশ জটিল ছিল। এবং অনেকেই মনে করতেন যে দালাল ছাড়া পাসপোর্ট তৈরি করা সম্ভব নয়। তবে ই পাসপোর্ট সেবা চালু হওয়ার পর থেকে এখন সবাই অনলাইনে মাধ্যমে ই পাসপোর্ট সেবা গ্রহণ করছেন।
তবে পাসপোর্ট তৈরি করার প্রক্রিয়া সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে। প্রথমত আপনি নিজে পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেন, আর দ্বিতীয়ত ট্রাভেলস এর মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করতে পারেন। যদি আপনি আঠারো বছরের নিচে হয়ে থাকেন তাহলে জন্ম নিবন্ধন এর সনদ ব্যবহার করে পাসপোর্ট তৈরি করতে পারবেন।
কিন্তু আপনি যদি ১৮ বছরের বেশি বয়সী হন সে ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের প্রয়োজন হবে। আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা পাসপোর্ট করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারব। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
পাসপোর্ট করার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার সব সত্যায়িত কাগজের কপি এবং রিয়াল ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। আপনার ডকুমেন্ট যদি মিথ্যা হয় তাহলে পরবর্তীতে বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হবেন। তাই চেষ্টা করবেন সব ধরনের সত্যায়িত কপির মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য। চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে:
- প্রথমত আপনি যদি ১৮ বছরের নিচে হন তাহলে আপনার জন্ম নিবন্ধনের ফটোকপি এবং ১৮ বছরের বেশি হলে জাতীয় পরিচয়পত্রের প্রয়োজন হবে।
- ই পাসপোর্ট এর আবেদনের ফটোকপি লাগবে। তবে এটির মূল কপির দরকার হবে না। শুধুমাত্র প্রিন্ট কপি হলেই হবে।
- পাসপোর্ট অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম এর সামারির প্রিন্ট কপি এর দরকার হবে। পাসপোর্ট করতে যাওয়ার সময় এই জিনিসটি অবশ্যই সাথে রাখবেন।
- আপনি পাসপোর্ট এর ফি জমা দিয়েছেন তার প্রমাণ স্বরূপ রশিদ টি কাছে রাখবেন। এটি পাসপোর্ট অফিসে জমা দেওয়া লাগবে।
- আপনি যদি ১৮ বছরের নিচে হয়ে থাকেন তাহলে জন্ম নিবন্ধন কপির ইংরেজি ভার্সন পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে।
- নাগরিকত্বের সনদ প্রমাণ দিতে হবে। এবং পূর্বে আপনার যদি কোন পাসপোর্ট থেকে থাকে সেই পাসপোর্ট এর ফটোকপি অথবা মূল কপি জমা দিতে হতে পারে।
- কোন শিশুর পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে সেই শিশুর পিতা-মাতার জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি অথবা মূলকপি দেখাতে হতে পারে।
পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে সব সময় খেয়াল রাখবেন জরুরি কাগজপত্র নিজের হাতে পাসপোর্ট অফিসে জমা দিয়ে পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য। এক্ষেত্রে কোন দালালের সাহায্য নেওয়া মোটেও সমীচিন নয়। আশা করি আপনারা জানতে পেরেছেন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে।
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
সর্বশেষ ২০২২ সালের ২৩ শে অক্টোবর পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ই পাসপোর্ট করতে প্রধানত প্রয়োজন হয় জাতীয় পরিচয় পত্রের অথবা জন্ম সনদের। এবং আপনি যে পেশায় আছেন সেই পেশার সনদ এবং আপনার নাগরিকত্বের সনদ পাসপোর্ট অফিসে জমা দিতে হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে ধরন কিছুটা ভিন্ন।
তাদের ই পাসপোর্ট সেবা নেওয়ার জন্য GO অথবা NOC দরকার হবে। ই পাসপোর্ট তৈরি করার ক্ষেত্রে এগুলো খুবই সাধারণ বিষয়। এছাড়াও আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা জরুরি। চলুন এক নজরে দেখে নিই
ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে:
- যাদের বয়স ১৮ বছরের কম তাদের জন্ম সনদের মূল কপি অথবা ফটোকপি লাগবে। আর শিশুদের ক্ষেত্রে তার বাবা-মায়ের জাতীয় পরিচয় পত্রের কপি লাগবে।
- ১৮ বছরের বেশি বয়স হলে জাতীয় পরিচয় পত্রের মূল কপি অথবা ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- ই পাসপোর্ট আবেদন ফর্ম এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- পাসপোর্ট ফি প্রদান করতে হয় ব্যাংক ড্রাফট এর মাধ্যমে। পাসপোর্ট অফিসে এই ব্যাংক ড্রাফট এর ফটোকপি জমা দিতে হবে।
- আপনার নাগরিকত্বের সনদ এবং যেই পেশায় আছেন সেই পেশার সনদ জমা দিতে হবে।
- যদি আপনি স্টুডেন্ট হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে আপনার স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অথবা আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সার্টিফিকেট জমা দিতে হবে।
- সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে যারা নিজ প্রয়োজনে পাসপোর্ট তৈরি করতে চান তাদের অতিরিক্ত NOC অথবা GO এর মাধ্যমে করতে হবে।
- আর যারা সরকারি কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে চান তাদের GO এর মাধ্যমে দাখিল করতে হবে।
- আপনার এলাকার চেয়ারম্যান কর্তৃক প্রদত্ত সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে।
- আপনার বিদ্যুৎ অথবা গ্যাস বিলের মূল কপি অথবা ফটোকপি জমা দিতে হবে।
এই কাগজপত্র গুলো ছাড়াও পাসপোর্ট অফিস যদি আপনার কাছে অতিরিক্ত কোন ডকুমেন্ট চেয়ে থাকে তাহলে আপনাকে সেই ডকুমেন্ট জমা দিতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার পুলিশ ভেরিফিকেশন এর দরকার হতে পারে।
পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম
পাসপোর্ট আবেদন ফরম বর্তমানে সম্পূর্ণ অনলাইন ভিত্তিক হয়ে গেছে। অনলাইনের মাধ্যমেই আপনার পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে ভুল হলে সংশোধন করার সুযোগ পাবেন। ই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হলে ভিজিট করুন এই লিংকে : Epassport
তাহলে চলুন জেনে নেই পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার নিয়ম:
- প্রথমত আপনাকে উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে হবে। এই ওয়েবসাইটটি আপনাকে পাসপোর্ট সেবা প্রদানকারী সাইটে নিয়ে যাবে। সেখানে আপনি মেইন মেনুতে প্রবেশ করে অ্যাপ্লাই অনলাইন এ ক্লিক করবেন। সেখান থেকে আপনি আপনার পছন্দ মত পাসপোর্ট অফিসের নাম এবং পুলিশ স্টেশনের নাম সিলেক্ট করবেন।
2. পরবর্তীতে আপনি বাংলাদেশ থেকে পাসপোর্ট করতে চাচ্ছেন সেই “বাংলাদেশ” অপশনটাতে ক্লিক করতে হবে। এখান থেকে আপনার স্থানীয় পাসপোর্ট অফিসের নাম এবং নিজস্ব থানার নাম সিলেক্ট করুন। এক্ষেত্রে মনে রাখবেন আপনি যে থানার নাম সিলেক্ট করবেন সেই থানাতেই আপনার পুলিশ ক্লিয়ারেন্স এর সকল কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।
3. পরবর্তী ধাপে আপনার কাছ থেকে একটি ইমেইল এড্রেস চাওয়া হবে। আপনি আপনার ব্যক্তিগত বা অফিশিয়াল কাজে সচরাচর যে ইমেইল এড্রেস টি ব্যবহার করে থাকেন সেই অ্যাড্রেসটা এখানে দেওয়ার চেষ্টা করবেন। তারপর I am human এই ঘরটিতে ক্লিক করুন। পরবর্তীতে আপনাকে ভেরিফাই করার জন্য যে সিকিউরিটি ক্যাপচা দেওয়া হবে সেই ক্যাপচাটি সঠিকভাবে পূরণ করুন।
4.এই ধাপ পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে হলে পরবর্তীতে আপনার ই পাসপোর্ট এর পোর্টাল ওয়েবসাইটে অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। এখানে আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম এবং মোবাইল নাম্বার প্রবেশ করুন। মনে রাখবেন এখানে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে তাহলে আপনার পাসপোর্টেও ভুল আসবে।
5.পাসপোর্ট সার্ভার থেকে আপনার ইমেইলে একটি কোড পাঠানো হবে। কি করবি আপনার ওয়েবসাইটে লিখে নিজেকে ভেরিফাই করুন।
6. এরপর আপনি কোন ধরনের পাসপোর্ট যাচ্ছেন অর্থাৎ অর্ডিনারি পাসপোর্ট নাকি অফিসিয়াল পাসপোর্ট সেটি বাছাই করুন।
7. এরপর আপনার সামনে যে ফর্মটি আসবে সেই ফর্মটি খুবই নিখুঁতভাবে পূরণ করুন।
8. এরপর আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সহ আরো যেসব ডকুমেন্ট চাওয়া হবে সেগুলো সুন্দরভাবে পূরণ করুন।
9. পরের ধাপে আপনার আগের পাসওয়ার্ড থাকলে সেই পাসপোর্ট এর তথ্য জানতে চাওয়া হবে এবং আপনার প্যারেন্টাল এড্রেস জানতে চাওয়া হবে। আগের পাসপোর্ট থাকলে সেই তথ্য ইনপুট করুন এবং প্যারেন্টাল তথ্য যোগ করুন।
10. সবশেষে পাসপোর্ট ফ্রি প্রদানের মাধ্যমে আপনার পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করার যাবতীয় কার্যাবলী সমাপ্ত হবে।
শেষ কথা
পাসপোর্ট আবেদন ফরম এ উল্লেখ করা সব তথ্যগুলো সঠিক থাকলে মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাওয়া সম্ভব। আপনার হাতে থাকা স্মার্টফোন অথবা পার্সোনাল কম্পিউটার দিয়েও ঘরে বসে অনলাইনে ই পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে পারেন।
তবে চেষ্টা করবেন পাসপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে কোন প্রকার দালালের সাহায্য না নিতে। পাসপোর্ট তৈরির পরে যে কোন সমস্যা বা পাসপোর্টে ভুল থাকলে অবশ্যই পাসপোর্ট অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
Also read: জমির খতিয়ান অনুসন্ধান