প্রিয় শিক্ষার্থীরা আমাদের আজকের রচনা ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা’। আজকের এই রচনাটি ২০ টি পয়েন্টে প্রায় ২৫০০+ শব্দে লেখা হয়েছে যেন পরীক্ষার্থীরা একবার পরেই নিজের মতো করে লিখতে পারে। রচনাটিতে প্রাসঙ্গিক অনেকগুলি উক্তি ও কবিতা ব্যবহার করা হয়েছে যা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় সর্বাধিক নম্বর অর্জনে সাহায্য করবে। রচনাটি সহ যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অত্যান্ত গুরুপ্তপূর্ণ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা
ভূমিকা
হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালি জাতির সবচেয়ে উজ্জ্বল অধ্যায় হলো স্বাধীন বাংলাদেশ। আর এই অধ্যায়ের শিরোনামে লেখা আছে এক মহান নাম – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
কোনো জাতির মুক্তি সংগ্রামের জন্য প্রয়োজন একজন মহান নেতা, যিনি তার প্রজ্ঞায়, সাহসে, ও আত্মত্যাগে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে, বিপরীত পরিস্থিতিতেও পথ দেখান, তখন সেই নেতা হয়ে ওঠেন ইতিহাসের মহা পুরুষ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন সেই রকম একজন নেতা।
পাকিস্তানের রাষ্ট্রের গঠনের পর থেকেই অবহেলা ও শোষণের শিকার হয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। বাংলা ভাষার অবমাননা, বাঙালিদের অধিকার হরণের বিরুদ্ধে উঠেছিল প্রতিবাদ। আর এই প্রতিবাদের কেন্দ্রে ছিলেন বঙ্গবন্ধু। ভাষা আন্দোলন, ছয় দফা দাবি, সবকিছুতেই তার নেতৃত্ব জাতিকে শক্তি জুগিয়েছে।
কবি অন্নদাশংকরের ভাষায় বলতে হয়,
যতকাল রবে পদ্মা-যমুনা-গৌরী-মেঘনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তােমার শেখ মুজিবুর রহমান।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু হয়েছিলেন নবজাতক বাংলাদেশের স্থপতি। অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সবকিছুতেই তার দূরদর্শী নেতৃত্বে এগিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এক কালো দিনে অপমৃত্যুতে ঝরে পড়ে সেই মহান নেতা।
জন্ম ও ছেলেবেলা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন সম্ভ্রান্ত মুসলিম। মাতা সায়েরা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। বঙ্গবন্ধু ছিলেন পরিবারের তৃতীয় সন্তান।
বঙ্গবন্ধুর শৈশব ছিল খুবই সাধারণ। তিনি গ্রামে তার দাদার বাড়িতে বড় হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর শৈশব থেকেই তার মধ্যে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। তিনি ছোটবেলা থেকেই হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের মতো বিষয় নিয়ে চিন্তাভাবনা করতেন।
বঙ্গবন্ধুর শৈশব কালে ব্রিটিশ শাসনামল ছিল। তিনি ব্রিটিশ শাসনের অত্যাচার ও শোষণের সাক্ষী ছিলেন। এই অত্যাচার ও শোষণের বিরুদ্ধে তার মনে প্রতিবাদের আগুন জ্বলে উঠেছিল।
বঙ্গবন্ধুর শিক্ষাজীবন
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শুরু হয় গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তিনি সেখানে দুই বছর পড়াশোনা করেন। এরপর তিনি গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হন। এই রোগের কারণে তিনি চার বছর স্কুলে যেতে পারেননি। ১৯৩৮ সালে সুস্থ হয়ে তিনি মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯৪২ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন।
এরপর তিনি কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ইসলামিয়া কলেজে তিনি আই.এ. এবং ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্চশিক্ষার লক্ষ্য ছিল আইনজীবী হওয়া। তাই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে ভর্তি হন। তবে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের দাবি-দাওয়ার প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শনে উস্কানি দেয়ার অভিযোগে তাকে ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দে বহিষ্কার করা হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানের শিক্ষা জীবন তার রাজনৈতিক জীবনের ভিত্তি রচনা করে। তার শিক্ষা জীবনের অভিজ্ঞতা তাকে একজন সফল রাজনীতিবিদ ও মহান নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করে।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মতাদর্শ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক মতাদর্শ ছিল গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, গণতন্ত্র হল একটি দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যবস্থা। তিনি সমাজতন্ত্রের মাধ্যমে মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে চেয়েছিলেন। এবং তিনি ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখতে চেয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মতাদর্শ বাংলাদেশের সংবিধানে প্রতিফলিত হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক মতাদর্শ বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তাই তো বাংলাদেশের বৈশ্বিক রাজনীতির মূলনীতি হলঃ
‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’
আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মের পর থেকেই পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ তাদের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠিত হয়। দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী এবং সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান।
আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠার ফলে পূর্ব পাকিস্তানে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল গড়ে ওঠে। এই দলটি পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়।
যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনঃ ১৯৫৩ সালের ২১ অক্টোবর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ও অন্যান্য দলগুলোর সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। এই ফ্রন্টের লক্ষ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা করা। ১৯৫৪ সালের ৮ মার্চ অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। যুক্তফ্রন্টের ক্ষমতায় আসার পর পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে অস্বীকার করে। ফলে ১৯৫৮ সালে পাকিস্তানে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটে এবং যুক্তফ্রন্ট সরকারের পতন হয়।
বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ
হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার আগে ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন,
‘ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস’
বাংলা, বাঙালি, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। প্রতিষ্ঠার সময় ছিল পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ। পরবর্তী সময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের পরিবর্তে হয় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ।তৎকালীন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেরণায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় একঝাঁক সূর্য-বিজয়ী স্বাধীনতা-প্রেমী তারুণ্যের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত হয় এশিয়া মহাদেশের ‘বৃহত্তম’ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ৭৪ বছরের ইতিহাস জাতির মুক্তির স্বপ্ন, সাধনা এবং সংগ্রামকে বাস্তবে রূপদানের ইতিহাস।
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
ভাষা আন্দোলনের প্রথম দিক থেকেই শেখ মুজিব সক্রিয় ছিলেন। তিনি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে বাংলা ভাষার পক্ষে জনমত তৈরির জন্য বিভিন্ন সভা-সমাবেশ ও মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছাত্রদের সংগঠিত করেন এবং আন্দোলনের কর্মসূচি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৯৪৮ সালে ১১ মার্চ গণপরিষদে প্রস্তাব পাস হয় যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। ১১ মার্চ পূর্ব বাংলায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং দিনটিকে ‘বাংলা ভাষা দাবি দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এর জেরে শামসুল হক, শেখ মুজিবুর রহমান, অলি আহাদসহ ৭০-৭৫ জন ছাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। ফলে আন্দোলন দানা বেঁধে ওঠে। স্বাধীন পাকিস্তানে এটিই শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম গ্রেফতার। পরবর্তী এক চুক্তি হয়, ১৫ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান ও অন্যান্য নেতাসহ বন্দিরা মুক্তি লাভ করেন। আন্দোলন যাতে ঝিমিয়ে না পড়ে সেজন্য ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় ছাত্র সমাবেশ ডাকা হয়। ওই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সভাপতিত্ব করেন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান।
একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক লেখক, ড. মোহাম্মদ হান্নান তার বইয়ে লিখেন, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণ পর্বে শেখ সাহেব জেলে ছিলেন। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক ময়দানে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে বসেও নিয়মিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ প্রদান করতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধুমাত্র ভাষা আন্দোলনের নেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন বাংলা ভাষাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতেও কাজ করেছেন। তিনি আজীবন বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও প্রসারে কাজ করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি দেওয়ার জন্য কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে তিনি জাতিসংঘে বাংলা ভাষায় ভাষণ দেন।
মুক্তি আন্দোলনের পটভূমি রচনায়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহান নেতা। তিনি ছিলেন একজন দূরদর্শী ও প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পটভূমি রচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গৌরী প্রসন্ন মজুমদার এর কথায়,
শোন একটি মুজিবরের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কন্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণী
বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণ ঘটে। এই আন্দোলনের ফলে বাঙালিরা তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি গভীর দরদ ও আবেগ অনুভব করতে শুরু করে। ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পথ প্রশস্ত করে। এরপর, ছয় দফা আন্দোলন, ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান ইত্যাদি আন্দোলনের হাত ধরে আসে বাংলার স্বাধীনতা।
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও বঙ্গবন্ধু উপাধি
১৯৬৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি তৎকালীন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরু করেন। এই মামলার প্রধান আসামি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার বিচার শুরুর প্রতিবাদে সারা দেশে ব্যাপক গণআন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনকে বলা হয় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান।
গণঅভ্যুত্থানের ফলে পাকিস্তানের সামরিক শাসন পতিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছয় দফার ভিত্তিতে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
বঙ্গবন্ধু উপাধিঃ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের পর ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে “বঙ্গবন্ধু” উপাধি দেওয়া হয়। এই উপাধি দেওয়ার পর থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু নামেই পরিচিত হয়ে ওঠেন।
স্বাধীনতার ঘোষক বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সর্বজনবিদিত। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর নিরবিচ্ছিন্ন গণহত্যা শুরু করে। এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ শে মার্চ মধ্যরাতে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণাটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
২৬শে মার্চের মার্কিন ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স এজেন্সির (ডি আই এ) রিপোর্টে শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ঘোষণার উল্লেখ করা হয়,
শেখ মুজিবুর রহমান দেশের পূর্ব শাখাকে সার্বভৌম স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলা দেশ হিসাবে ঘোষণা করে পাকিস্তানকে আজ গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের গণহত্যা ও অপারেশন সার্চলাইটের অন্যতম পরিকল্পনাকারী টিক্কা খান বলেন,
“মুজিবকে গ্রেফতার করা হয়েছিলাে, কেননা আমি নিজে মুজিবের স্বাধীনতা ঘােষণার স্বকণ্ঠ বাণী শুনেছি”
শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাটি তিনটি মাধ্যম থেকে প্রচারিত হয়। স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচারের উদ্দেশ্যে অনেক পূর্বেই শেখ মুজিবুর রহমান লোক চক্ষুর অগোচরে ট্রান্সমিটার স্থাপন করিয়েছিলেন। স্বাধীনতার ঘোষণার পরপরই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তা চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেয়া হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান অপরিসীম। তিনি ছিলেন এই আন্দোলনের প্রাণপুরুষ। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চে তিনি লক্ষ মানুষের মাঝে বলেন,
এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম
তাঁর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদান নিম্নরূপ:
- তিনি ছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। তিনি বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসন ও স্বাধীনতার দাবি উত্থাপন করেন।
- তিনি ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন। এই দাবিগুলি ছিল পাকিস্তানের অখণ্ডতা বজায় রেখে পূর্ব পাকিস্তানের অধিকার আদায়ের জন্য।
- তিনি ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেন। এই গণঅভ্যুত্থানের ফলে পাকিস্তানের সামরিক শাসন পতিত হয় এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ছয় দফার ভিত্তিতে গণপরিষদ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়।
- তিনি ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেন।
- তিনি ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা আন্দোলনে অবদানের জন্য তাঁকে “বাঙালি জাতির পিতা” হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি বাঙালি জাতির মুক্তি ও স্বাধীনতার জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। তাঁর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতি একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন
স্বাধীন যুদ্ধের পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ফিরে আসেন। এটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তা আরও বাড়তে থাকে। বাঙালির পাশাপাশি বিশ্বের স্বাধীনতা ও শান্তিকামি মানুষও বঙ্গবন্ধুর মুক্তির দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠে। আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে অবশেষে ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয় পাকিস্তান। কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু সোজা লন্ডন চলে যান। সেখান থেকে ভারত হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশে ফেরেন। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর মাতৃভূমিতে মহান নেতার এই প্রত্যাবর্তন ছিল আনন্দের ঝড়, আবেগের ঢেউ, এবং মুক্তির বিজয় উৎসবের অনন্য নিদর্শন।
বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ শাসন
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি নতুন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই সময় তিনি বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, এবং সামরিক ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন।
সংবিধান রচনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মাননা
স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পরপরই বঙ্গবন্ধু তার অন্তর্বর্তী সংসদকে একটি নতুন সংবিধান রচনার দায়িত্ব দেন। ১৯৭২ সালের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানে শেখ মুজিব স্বাক্ষর করেন। এই সংবিধানে চারটি মূলনীতি-জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র, এবং ধর্মনিরপেক্ষতা অন্তর্ভুক্ত ছিল। বঙ্গবন্ধু এই মূলনীতিগুলোকে একত্রে “মুজিববাদ” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
১৫ ডিসেম্বর শেখ মুজিব সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেন। ১৬ ডিসেম্বর থেকে নতুন সংবিধান কার্যকর করা হয়।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন
৭ মার্চ, ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই নির্বাচনে শেখ মুজিব ও তার দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ মুজিব ঢাকা-১২ আসন থেকে নির্বাচিত হয়ে পুনরায় প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচিত সরকার গঠন করেন।
শাসন ব্যবস্থা ও অর্থনীতি
বঙ্গবন্ধুর শাসনব্যবস্থা ছিল সংসদীয় গণতন্ত্র। তিনি জনগণের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর আমলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়। তিনি কৃষি, শিল্প, এবং বাণিজ্য খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেন। এছাড়াও তিনি দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য
বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতেও ব্যাপক উন্নতি সাধন করেন। তিনি শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন এবং শিক্ষার মান উন্নত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি গ্রামীণ এলাকায় হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র নির্মাণের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা বৃদ্ধি করেন।
সংস্কৃতি ও সামরিক বাহিনীর উন্নয়ন
বঙ্গবন্ধু সংস্কৃতি ও সামরিক বাহিনীর উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি শিল্পকলা, সাহিত্য, এবং সংগীতের উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এছাড়াও তিনি সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়ন এবং শক্তিশালীকরণ করেন।
বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়। তিনি একজন দূরদর্শী নেতা ছিলেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেন। তার শাসনকাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্বর্ণযুগ হিসেবে বিবেচিত হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড
১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট, বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালো দিন। ভোর রাতের অন্ধকারে বাংলা সেনাবাহিনীর একদল বিদ্রোহী সৈন্য শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাসভবনে হামলা চালায়। এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে শেখ মুজিব, তার স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেছা, তিন ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মনি সহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যের জীবন ঝরে পড়ে।
এই হত্যাকাণ্ডের কারণ এখনও ধোঁয়াটে ঢাকা। কারও মতে, শেখ মুজিবের ক্রমবর্ধমান ক্ষমতা ও সামরিক বাহিনী নিয়ন্ত্রণই ছিল এই হত্যার মূল কারণ। কেউ বলে, বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রে এই ঘটনা ঘটেছে। আবার কেউ মনে করেন, অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রই ছিল হত্যার পিছনে মুল কারণ। কারণ যেই থাকুক না কেন, এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের ইতিহাসে এক কালিমা লেপন করে।
দুঃখ করে জেমসলামন্ড বলেছিলেন,
বঙ্গবন্ধুর হত্যাকান্ডে বাঙলাদেশই শুধু এতিম হয় নি বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে
এই ঘটনার ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা বেড়ে যায়। সামরিক শাসনের দিকে পা বাড়ায় বাংলাদেশ। অর্থনীতি, শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন – সব ক্ষেত্রেই পড়ে নেতিবাচক প্রভাব।
বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত জীবন
শেখ মুজিবুর রহমানের ব্যক্তিগত জীবনে বেগম ফজিলাতুন্নেছার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন আদর্শ স্বামী ও পিতা। তিনি তার পরিবারের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন। তিনি তার সন্তানদেরকে আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সর্বদা চেষ্টা করতেন।
বঙ্গবন্ধুর দাম্পত্য সঙ্গীঃ বেগম ফজিলাতুন্নেছা ছিলেন একজন অত্যন্ত ধার্মিক ও সৎ মহিলা। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর ও অনুপ্রেরণার উৎস। তিনি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের সকল ক্ষেত্রেই তার পাশে ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর সন্তানঃ বঙ্গবন্ধুর পাঁচ সন্তানই অত্যন্ত মেধাবী ও প্রতিভাবান। শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। শেখ কামাল ছিলেন একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্মকর্তা। শেখ জামাল ছিলেন একজন বিশিষ্ট ক্রীড়াবিদ। শেখ রেহানা একজন সমাজকর্মী। শেখ রাসেল ছিলেন একজন প্রতিভাবান শিশু।
তিনি ছিলেন একজন আদর্শ স্বামী, পিতা ও সন্তান। তিনি তার পরিবারের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল ছিলেন। তার পরিবারের সদস্যরা ছিলেন তার একনিষ্ঠ সহচর ও অনুপ্রেরণার উৎস।
মুজিব পরবর্তী বাংলাদেশ
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা ও সংঘাতের সূচনা হয়।
- ১. বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তার স্থলাভিষিক্ত হন খন্দকার মোশতাক আহমেদ। তবে মোশতাক সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সামরিক অভ্যুত্থানে মোশতাক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়।
- ২. খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বাধীন সামরিক সরকার দেশে গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে সে সময় দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভক্তি ও মতবিরোধ ছিল। এছাড়াও, সামরিক সরকারের মধ্যেও বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ছিল। এর ফলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিরাজ করতে থাকে।
- ৩. ১৯৭৭ সালের ১১ এপ্রিল খালেদ মোশাররফ ক্ষমতা হস্তান্তর করেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের কাছে। জিয়াউর রহমান সামরিক শাসন জারি করেছিলেন এবং তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। জিয়ার শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বিরোধী দলগুলো প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ১৯৭৮ সালের ৭ মার্চ জিয়াউর রহমানকে হত্যার চেষ্টা করা হয়। এই ঘটনার পর জিয়াউর রহমান আরও কঠোর শাসন ব্যবস্থা চালু করেন।
- ৪. ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করা হয়। জিয়ার মৃত্যুর পর সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপতি হন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদও সামরিক শাসন জারি করেন এবং তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চালু করেন। এরশাদের শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধেও বিরোধী দলগুলো প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
- ৫. ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয় এবং শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হন।
মুজিব পরবর্তী বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেশের উন্নয়নকে ব্যাহত করে। এছাড়াও, এটি দেশের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করে।
গ্রন্থাবলী ও পুরস্কার সম্মাননা
ক) বঙ্গবন্ধুর লেখা বইঃ
শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থ অসমাপ্ত আত্মজীবনী তার মৃত্যুর পর তার কন্যা শেখ হাসিনা সম্পাদনা করে প্রকাশ করেন। এই বইটিতে তিনি তার জন্ম, শৈশব, শিক্ষা, রাজনৈতিক জীবনের শুরু, এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের আগ পর্যন্ত সময়ের বিবরণ দিয়েছেন। বইটিতে তিনি তার ব্যক্তিগত জীবনের অনেক অজানা তথ্যও তুলে ধরেছেন।
- অসমাপ্ত আত্মজীবনী (২০১২)
- কারাগারের রোজনামচা (২০১৭)
- আমার দেখা নয়াচীন (২০২০)
খ) পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসাধারণ নেতৃত্ব, দূরদর্শিতা, এবং দেশপ্রেমের জন্য অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননাগুলো হল:
- জুলিও ক্যুরি শান্তি পুরস্কার (১৯৭৩): বিশ্ব শান্তি পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত এই পুরস্কারটি বঙ্গবন্ধুকে তার মহান নেতৃত্ব ও পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদানের জন্য প্রদান করা হয়।
- স্বাধীনতা পুরস্কার (২০০৩): বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার বঙ্গবন্ধুকে তার অসামান্য অবদানের জন্য ২০০৩ সালে মরণোত্তর প্রদান করা হয়।
- গান্ধী শান্তি পুরস্কার (২০২০): ভারত সরকার কর্তৃক প্রদত্ত।
এছাড়াও, বঙ্গবন্ধুকে বিভিন্ন দেশের সরকার, সংস্থা, ও প্রতিষ্ঠান থেকে অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা প্রদান করা হয়।
উপসংহার
বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন, কিন্তু তার আদর্শ, তার সংগ্রামী চেতনা, তার আত্মত্যাগ আজও উজ্জ্বল। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, সত্যের পথে সংগ্রাম করলেই জয় আসে। তিনি আমাদের শিখিয়ে গেছেন, দেশ ও জাতির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করাই হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো সাফল্য। তাই তাকে দেখে কিউবার বিপ্লবী মহান নেতা ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন,
আমি হিমালয় দেখিনি কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব এবং সাহসিকতায় তিনিই হিমালয়।
ইনিই আমাদের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। আমাদের জাতির পিতা। আমাদের স্বাধীনতার মহানায়ক। তার নাম লেখা আছে বাংলাদেশের ইতিহাসের সোনালি অক্ষরে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রচনা – পিডিএফ
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, তোমাদের সুবিধার্থে, রচনার পিডিএফ কপিটি দেওয়া হল। এখনই ডাউনলোড করে তোমারদের ফোনে/পিসিতে রেখে দাও।