বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান। এই স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমাদের আজকের রচনা “বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য” এখানে ২০ টি গুরুপ্তপূর্ণ পয়েন্ট সহকারে ২৫০০+ ওয়ার্ডের রচনাটি দেওয়া হলো। রচনাটিতে অনেক প্রসংগিক কবিতা ও উক্তি সংযুক্ত করা হয়েছে যা বোর্ড পরীক্ষা সহ যেকোন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বরের নিশ্চয়তা প্রদান করবে।
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
ভূমিকা
বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দেশ। এখানে রয়েছে সবুজ শ্যামল মাঠ, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত, নীল জলরাশি, ঘন সবুজ বন, উঁচু উঁচু পাহাড়, সুন্দর সুন্দর নদী, এবং নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের মনে আনন্দের অনুভূতি জাগায়। এই সৌন্দর্য আমাদের মনকে শান্ত করে। তাই ত কবি বলেছেন,
“এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রানী সে যে আমার জন্মভূমি”।
বাংলাদেশের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ। বাংলাদেশের রুপ আমাদের মনকে শান্তি দেয়, আমাদের মনকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম করে তোলে।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এটি দক্ষিণ এশিয়ার উত্তর-পূর্ব অংশে অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, পূর্বে ভারতের ত্রিপুরা ও আসাম, পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। বাংলাদেশের আয়তন ১৪৭,৫৭০ বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে ভূমি আয়তন ১৩৩,৯১০ বর্গকিলোমিটার এবং জলভুমি আয়তন ১০,০৯০ বর্গ কিলোমিটার।
বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। বাংলাদেশের উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা অবস্থিত। হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। তাইতো কবি বলেছেন,
হিমালয় থেকে সুন্দরবন, হঠাৎ বাংলাদেশ
কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছাসে…
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত বিচিত্র। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। এদেশের সমুদ্র সৈকত, দ্বীপ, ও চরগুলো পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানকার পাহাড়, বন, ও নদীগুলো এবং বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত।
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি
বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি অত্যন্ত বিচিত্র। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) বরেন্দ্রভূমি: বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালার পাদদেশে কিছু উঁচু এলাকা রয়েছে। এই এলাকাগুলোর উচ্চতা ১০০০ মিটার পর্যন্ত। পাশাপাশি, বরেন্দ্র ভূমি বাংলাদেশের বৃহত্তম উঁচু এলাকা। এটি বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত। বরেন্দ্র ভূমির উচ্চতা ৩০০ থেকে ৫০০ মিটার। বরেন্দ্র ভূমিতে লাল মাটি বেশি দেখা যায়। অন্যদিকে, মধুপুর ও ভাওয়ালের গড় বাংলাদেশের উত্তর-মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত। মধুপুর গড়ের উচ্চতা ২০০ থেকে ৩০০ মিটার এবং ভাওয়ালের গড়ের উচ্চতা ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার।
খ) প্লাবন সমভূমিঃ বাংলাদেশের বৃহত্তম অংশ হল পর্যায়ক্রমিক প্লাবন সমভূমি। এই এলাকাটি গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, যমুনা, পদ্মা প্রভৃতি নদীর পলি দ্বারা গঠিত। উত্তরাঞ্চলের প্লাবন সমভূমি বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এই এলাকাটি ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পলি দ্বারা গঠিত। এই এলাকাটিতে নদীর ভাঙন ও বাঁধন প্রক্রিয়া এখনও ক্রমাগত চলছে। মধ্যাঞ্চলের প্লাবন সমভূমি এলাকাটি মেঘনা নদীর পলি দ্বারা গঠিত। বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত দক্ষিণাঞ্চলের প্লাবন সমভূমি । এই এলাকাটিও মেঘনা, পদ্মা নদীর পলি দ্বারা গঠিত।
গ) উঁচু ঢালু ভূমিঃ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কিছু উঁচু ঢালু ভূমি রয়েছে। এই এলাকাগুলোর উচ্চতা ৩০০ মিটার পর্যন্ত। এই এলাকাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- পার্বত্য চট্টগ্রাম: পার্বত্য চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এটি একটি পাহাড়ি অঞ্চল। পার্বত্য চট্টগ্রামের উচ্চতা ৩০০ থেকে ১০০০ মিটার। পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন ধরনের গাছপালা ও প্রাণী রয়েছে।
- সিলেটের পাহাড়ি এলাকা: এটি একটি পাহাড়ি অঞ্চল। সিলেটের পাহাড়ি এলাকার উচ্চতা ৩০০ থেকে ৭০০ মিটার। বেশিরভাগ পাহারি অঞ্চল ভারতের সীমান্ত ঘেসা মেগালয় রাজ্যর সাথে।
বাংলাদেশের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বৈচিত্র্যতা
বাংলাদেশের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অত্যন্ত বিচিত্র। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, নদ-নদী, বন-জঙ্গল, সমুদ্র সৈকত, পাহাড়-টিলা সবকিছুই প্রকৃতির অপূর্ব সৃষ্টি। তাই তো বলে,
বাংলাদেশে প্রবেশের হাজার দুয়ার খােলা রয়েছে কিন্তু বেরুবার একটিও নেই।
বাংলাদেশের জলবায়ু ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু। বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাংলাদেশের বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ২২০০ মিলিমিটার। এদেশের বুক জুড়ে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদ-নদী। বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, যমুনা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীগুলো, মেঘনার শাখা নদীগুলো। নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে বনভূমি। বাংলাদেশের মোট ভূমির প্রায় ২১% বনভূমি। বাংলাদেশের প্রধান বনভূমি গুলোর মধ্যে রয়েছে সুন্দরবন, পাহাড়ি বন। বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে বিস্তৃত রয়েছে সুন্দর সমুদ্র সৈকত। বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে রয়েছে কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, টেকনাফ। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে রয়েছে কিছু পাহাড়-টিলা।
এই বিচিত্র ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, নদ-নদী, বন-জঙ্গল, সমুদ্র সৈকত, পাহাড়-টিলার সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে বাংলাদেশের প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
ষড়ঋতুর বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। বারো মাসে ছয়টি ঋতুর আবর্তনে বাংলাদেশের প্রকৃতি ছয় রকম রূপ ধারণ করে।
১. গ্রীষ্ম কাল
গ্রীষ্মকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে এক উদাসীন সন্ন্যাসীর মতো। প্রচণ্ড রোদ, তীব্র দাবদাহ, শুষ্ক আবহাওয়ায় মানবজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। এই সময় কালবৈশাখী তার উদ্দামতা নিয়ে আসে। কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়া, বৃষ্টি, শিলা বৃষ্টি প্রকৃতিকে নতুন করে সাজায়। এসময় নানা রকম ফলের স্বাদ পাওয়া যায়।
২. বর্ষাকাল
বর্ষাকালে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে যেন নতুন করে প্রাণের সঞ্চার হয়। তাই ত কবির কলমে উদয় হয়ঃ
নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে।
তিল ঠাই আর নাহিরে।
ওগাে, আজ তােরা যাসনে ঘরের বাহিরে।
তখন প্রকৃতি হয়ে ওঠে সজীব ও সতেজ। ফসল ভরা ক্ষেতগুলো দেখলে মনে হয় আবহমান ধানসিঁড়ির সমুদ্র। তখন মনে হয় প্রকৃতি যেন তার সমস্ত গ্লানি মুছে ফেলে। চাঁদনী রাতের শোভা তখন মনোমুগ্ধকর।
৩. শরৎ কাল
শরৎকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে ধীর, সজল, লাবণ্যময়। তার সাদা কাশফুল, স্বচ্ছ নীল আকাশে উড়ে যাওয়া বলাকার সারি আর রাতভর অবিরাম, অকৃপণ নীলিমা তার পেয়ালা থেকে ঢেলে দেয় জোছনার সফেদ স্নিগ্ধতা। তার বহিপ্রকাস হয় কবিতায়ঃ
“চাঁদনীর সাথে প্রতি রাতে রাতে
গোলা সোনা রং ঢালে যে
খুব মনোচোর শরতের ভোর
আলোছায়া ঋতু বড়সে।”
৪. হেমন্ত কাল
হেমন্তকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে মাতৃত্বের মহিমা। তাই ত জিবানন্দ দাস লিখেছেনঃ
হেমন্ত বৈকালে
উড়ো পাখপাখালির পালে
উঠানের পেতে থাকে কান, শোনে ঝরা শিশিরের ঘ্রাণ
অঘ্রাণের মাঝরাতে।
তখন সোনালি ধানের মাঠে ফসল তোলার উৎসব শুরু হয়। মাঠে মাঠে কৃষকদের ব্যস্ততা দেখা যায়।
৫. শীতকাল
শীতকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক। তখন তীব্র শীত অনুভূত হয় এবং শ্যামল প্রকৃতি যেন বুড়োদের মতো শীর্ণ মূর্তি ধারণ করে। চারদিকে বন বাদরে দেখা মিলে বুনো ফুলের।
৬. বসন্তকাল
বসন্তকালে বাংলাদেশের প্রকৃতি আবারও নতুন করে সজীবতা লাভ করে। তখন গাছ-পালা ও তরুলতায় নতুন পাতা গজায় এবং বিচিত্র রঙের ফুল ফুটে। প্রকৃতি যেন নতুন সৌন্দর্যে তার যৌবন ফিরে পায়।
বাংলাদেশের নদীর সৌন্দর্য
বাংলাদেশের নদীর সৌন্দর্য অত্যন্ত বিচিত্র। বাংলাদেশের বুক জুড়ে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদ-নদী। এই নদীগুলো বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অন্যতম আকর্ষণ। কবির ভাষায়ঃ
“পদ্মা যমুনা মধুমতি আর
মেঘনার মালা কন্ঠে পরি,
দাঁড়ায়ে রয়েছে সুজলা যে দেশ
সেই দেশে বাস আমরা করি।”
বাংলাদেশের প্রধান নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা, যমুনা, পদ্মা, সুরমা, কুশিয়ারা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রের শাখা নদীগুলো, মেঘনার শাখা নদীগুলো। এই নদীগুলোর প্রত্যেকটিরই নিজস্ব সৌন্দর্য রয়েছে। নদীর দু’কূল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, সবুজ বনানী, গ্রামীণ জনপদ। ব্রহ্মপুত্র নদীর সৌন্দর্যও অসাধারণ। এই নদীর বিশালতা এবং জলপ্রবাহের গর্জন মনোমুগ্ধকর। মেঘনা নদীর সৌন্দর্যও অনন্য।বাংলাদেশের নদীগুলো শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই নদীগুলো দিয়ে পণ্য পরিবহন, কৃষি সেচ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, মৎস্য চাষ ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
বাংলাদেশের নদীগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের উচিত এই সম্পদকে সুরক্ষিত রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা।
বাংলদেশের পাহাড়ের সৌন্দর্য
বাংলাদেশের পাহাড়ের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। বাংলাদেশের সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে অবস্থিত পাহাড়গুলো বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। যার বহিপ্রকাস হয় কবির কলমে,
এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার?
ওথায় এমন ধুম্র পাহাড়?
কোথায় এমন হড়িৎ ক্ষেত্র
আকাশ তলে মেশে?
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায়
বাতাস কাহার দেশে
বাংলাদেশের পাহাড় গুলোর উচ্চতা সাধারণত ৫০০ থেকে ১০০০ মিটার। পাহাড়গুলোর ঢাল সাধারণত খাড়া এবং ঢেউ খেলানো। পাহাড়ের গায়ে ঘন সবুজ বনভূমি এবং পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের সারি বাংলাদেশের পাহাড়ের সৌন্দর্যকে আরও মনোরম করে তোলে। পাহাড়গুলোতে রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর ঝর্না। এই ঝর্না গুলোর জলধারা পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসে। ঝর্নার শব্দ মনকে শান্ত করে। এদেশের পাহাড়গুলোতে রয়েছে জুম চাষ। জুম চাষের দৃশ্য খুবই মনোরম। আরও রয়েছে অনেক সুন্দর সুন্দর চা বাগান। চা বাগানের দৃশ্য খুবই মনোরম।
দেশের পাহাড় গুলোকে উপভোগ করার জন্য অনেকগুলো পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের পাহাড়গুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের উচিত এই সম্পদকে সুরক্ষিত রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা।
বাংলাদেশের বনাঞ্চলের সৌন্দর্য
বাংলাদেশের বনাঞ্চলের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। বাংলাদেশের মোট আয়তনের ২১.২% জুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলে রয়েছে নানা ধরনের গাছ-পালা, ঝোপঝাড়, ফুল-ফল, এবং নানা ধরনের বন্যপ্রাণী। যা বাংলাদেশকে পরিণত করেছে বিশ্বের অন্যতম সুন্দরতম দেশে।
ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা,
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা
বাংলাদেশের বনাঞ্চলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- সুন্দরবন: বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
- রাঙ্গামাটি পাহাড়ি বনাঞ্চল: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত রাঙ্গামাটি পাহাড়ি বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলে রয়েছে চিরসবুজ বন, ঝর্ণা, এবং নানা ধরনের বন্যপ্রাণী।
- বান্দরবান পাহাড়ি বনাঞ্চল: এটিও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এই বনাঞ্চলে রয়েছে বন, ঝর্ণা, ঝিরি এবং নানা ধরনের বিরল গাছের সমাহার।
- সিলেট পাহাড়ি বনাঞ্চল: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট পাহাড়ি বনাঞ্চল। এই বনাঞ্চলে রয়েছে চিরসবুজ বন, নানা ধরনের বন্যপ্রাণী এবং অনেকগুলি পাহাড়ি নদী।
বাংলাদেশের বনাঞ্চল শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই বনাঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের বনজ সম্পদ, ঔষধি গাছ, এবং খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের জলাভূমির সৌন্দর্য
‘ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূরপঙ্খি নায়…’
বাংলাদেশের জলাভূমির সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। বাংলাদেশের মোট আয়তনের ১৬.৮% জুড়ে রয়েছে জলাভূমি। এই জলাভূমিতে রয়েছে বিস্তীর্ণ বিল, হাওর, বন, এবং নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী।
হাওরের শরীরজুড়ে রাশি রাশি ঐতি জল বুক ডুবিয়ে হিজল জারুল হাসে খোল খোল।
বাংলাদেশের জলাভূমির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল: বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সুনামগঞ্জের হাওর অঞ্চল। এই হাওর অঞ্চলে রয়েছে বিস্তীর্ণ বিল, হাওর, এবং নানা ধরনের জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী।
- সিলেটের হাওর অঞ্চল: এটিও বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। এই হাওর অঞ্চলে রয়েছে বিস্তীর্ণ বিল, হাওর, যা বর্ষায় হয়ে উঠে ভ্রমনের সেরা গন্তবে।
বাংলাদেশের জলাভূমি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এগুলো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই জলাভূমি থেকে বিভিন্ন ধরনের মৎস্য, কচুরিপানা, এবং বনজ সম্পদ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের জলাভূমিগুলো আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের উচিত এই সম্পদকে সুরক্ষিত রাখা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করা।
বাংলাদেশের পল্লী-প্রকৃতির সৌন্দর্য
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সবুজ শ্যামল মাঠের দৃশ্য খুবই মনোরম। এই মাঠগুলোতে গরু, মহিষ, ঘোড়া, ইত্যাদি চরে বেড়ায়। মাঠে ফুল ফুটে থাকে। তাই কবির ডেকে বলেনঃ
তুমি যাবে ভাই, যাবে মাের সাথে। আমাদের ছােট গাঁয়?
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সবুজ শ্যামল মাঠ যেন এক অপরূপ দৃশ্য। এই মাঠে ফলে ফসল, ফুটে নানা জাতের ফুল। এর দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের ক্ষেত যেন এক মনোরম দৃশ্য। এই ক্ষেতে পাওয়া যায় ধান, গম, পাট, আলু, এবং নানা ধরনের শাকসবজি। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে রুপালী নদী যেন এক জীবন্ত সত্তা। এই নদীতে মাছ ধরার দৃশ্য, নৌকা চলাচলের দৃশ্য, এবং নদীর তীরে বসবাসরত মানুষের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর। দেশের গ্রামাঞ্চলে ঘন সবুজ বন যেন এক শান্তিপূর্ণ স্থান। এই বনে রয়েছে নানা ধরনের গাছপালা, ঝোপঝাড়, এবং বন্যপ্রাণী।
বাংলাদেশের পল্লী-প্রকৃতি আমাদের মনকে শান্তি দেয়, আমাদের মনকে প্রকৃতির সাথে একাত্ম করে তোলে।
বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য
বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল জুড়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ সমুদ্র সৈকত। এই সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত: বাংলাদেশের সবচেয়ে বিখ্যাত সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার, এটি বিশ্বের বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের বিস্তীর্ণ বালির চর, এবং নীল সমুদ্র মনোমুগ্ধকর।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত: পটুয়াখালী জেলায় অবস্থিত কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোমুগ্ধকর।
যে একবার এই রুপ দেখবে এর প্রেমে পরতে বাধ্য,
বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি ,তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর-
বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এই সমুদ্র সৈকতগুলো। এই সমুদ্র উপকূল থেকে বিভিন্ন ধরনের মৎস্য, লবণ, এবং খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের দ্বীপাঞ্চলের সৌন্দর্য
বাংলাদেশের দ্বীপাঞ্চলের সৌন্দর্য জগৎবিখ্যাত। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে রয়েছে বেশ কিছু দ্বীপাঞ্চল। এই দ্বীপাঞ্চল গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- সেন্ট মার্টিন দ্বীপ: বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, এই দ্বীপের স্বচ্ছ নীল সমুদ্র, সাদা বালির চর, এবং নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণী মনোমুগ্ধকর।
- ভোলা: বাংলাদেশের বৃহত্তম দ্বীপ ভোলা, এর দ্বীপের বিস্তীর্ণ বন, নীল সমুদ্র, এবং নানা ধরনের বন্যপ্রাণী মনোমুগ্ধকর পরিবেশ মানুষকে মুগ্ধ করে।
- বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ গুলো: বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে অনেক ছোট ছোট দ্বীপ। এই দ্বীপ গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মহেশখালী, কুতুবদিয়া, হাতিয়া, এবং নোয়াখালীর দ্বীপগুলো।
বাংলাদেশের দ্বীপাঞ্চল শুধুমাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই বিখ্যাত নয়, এই দ্বীপাঞ্চল থেকে বিভিন্ন ধরনের মৎস্য, লবণ, এবং খনিজ সম্পদ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশের ফুল-ফল-পাখির সৌন্দর্য
বাংলাদেশের ফুল-ফল-পাখির সৌন্দর্য অত্যন্ত মনোরম। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে নানা ধরনের ফুল, ফল, এবং পাখি। যার রুপে মুগ্ধ কবি লিখেন,
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী;
কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি
গুঞ্জরিয়া আসে অলি
পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে
তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে
পড়ে ফুলের মধু খেয়ে ।
ক) বাংলাদেশের ফুল
বাংলাদেশের ফুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- শাপলা: বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফুল শাপলা। এই ফুলের সাদা রঙ এবং মনোরম গন্ধ আমাদের মনকে শান্তি দেয়।
- রাধাচূড়া: বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ফুল রাধাচূড়া বা কৃষ্ণচূড়া। এই ফুলের লাল রঙ এবং সুগন্ধ আমাদের মনকে মাতাল করে তোলে।
- গাঁদা: বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফুল গাঁদা। এই ফুলের নানা রঙের সমাহার আমাদের মনকে উৎফুল্ল করে তোলে।
কবিতায় বারে বারে এসেছে ফুলের কথা,
‘বনে মোর ফুটেছে হেনা চামেলি যূথী বেলি’
আরও রয়েছে, গোলাপ,কাঠগোলাপ, মালতী, হাসনাহেনা, ঝুমকালতা, রজনীগন্ধা, রক্তকমল, মালঞ্চ ও সরষে সহ অনেক ফুল।
খ) বাংলাদেশের ফল:
বাংলাদেশের ফলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল:
- আম: বাংলাদেশের জাতীয় ফল আম। এই ফলের রসালো স্বাদ এবং সুগন্ধ আমাদের মনকে মুগ্ধ করে।
- কাঁঠাল: বাংলাদেশের আরেকটি অন্যতম জনপ্রিয় ফল কাঁঠাল। এই ফলের সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর গুণ আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে।
- লিচু: এই ফলের টক-মিষ্টি স্বাদ এবং সুগন্ধ আমাদের মনকে আনন্দ দেয়।
- বেল: বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ফল বেল প্রাচীন।
এগুলি ছারাও রয়েছেঃ জাম, পেয়ারা, কলা, বরই, আনারস ,আমড়া, লেবু, জামরুল, ও তরমুজ সহ নানান ফলের সমাহার।
বাংলাদেশের পাখি:
বাংলাদেশের পাখিগুলোর মধ্যে দোয়েল আমাদের জাতীয় পাখি। দোয়েলের সুমধুর গান আমাদের মনকে ভরিয়ে তোলে। কোকিল আমাদের বসন্তের বার্তা নিয়ে আসে। শকুন, বাজপাখি, চিল, বক, সারস, পানকৌড়ি, হাঁস, ইত্যাদি পাখি আমাদের পরিবেশের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ময়না, টিয়া, কাকাতুয়া, শ্যামা, শালিক, ঘুঘু, চড়ুই, টুনটুনি, বুলবুলি, ইত্যাদি পাখি আমাদের গ্রাম-বাংলার চিত্রকে আরও সুন্দর করে তোলে।
বাংলাদেশের ফুল-ফল-পাখির সৌন্দর্য আমাদের প্রকৃতির সাথে একাত্ম করে তোলে। এই সৌন্দর্য আমাদের মনকে শান্তি দেয়, আমাদের মনকে আনন্দ দেয়।
বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য
বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য আমাদের মনকে মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের ফুলের সৌন্দর্য, গাছের ছায়ায় বসে থাকা পাখির কলকাকলি, বনের ভেতর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঝর্ণার শব্দ, সমুদ্রের নীল জল আর সাদা বালির সৌন্দর্য আমাদের মনকে প্রশান্ত করে। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য আমাদের প্রকৃতির সাথে একাত্ম করে তোলে। এই সৌন্দর্য আমাদের মনকে আনন্দ দেয়। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের, যার ফলে এখানে নানা ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী বাস করে।
বাংলাদেশে প্রায় ১৬০০ প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১৩০০ প্রজাতির মেরুদণ্ডী প্রাণী এবং ৩০০ প্রজাতির অমেরুদণ্ডী প্রাণী। বাংলাদেশের প্রাণী বৈচিত্র্যকে বিভিন্ন অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে ভাগ করা যায়।
- স্থলজ প্রাণী: বাঘ, হাতি, হরিণ, চিতাবাঘ, কুমির, সাপ, ইত্যাদি।
- জলজ প্রাণী: মাছ, কচ্ছপ, কুমির, ইলিশ, সামুদ্রিক মাছ, ইত্যাদি।
- পক্ষী: ময়না, বুলবুলি, হাঁস, ঘুঘু, চিল, ইত্যাদি।
বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য আমাদের দেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ। এই জীববৈচিত্র্য আমাদের অর্থনীতি, পরিবেশ, এবং সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ আমাদের দায়িত্ব। আমরা সকলে মিলে এই জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য কাজ করতে পারি।
সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ। বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, ইতিহাস, এবং বিভিন্ন ধর্ম ও কিষ্টি এই সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কারণ। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের মনকে মুগ্ধ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, খাবার, পোশাক, সঙ্গীত, নৃত্য, এবং উৎসব আমাদের মনকে আনন্দ দেয়, আমাদের মনকে শান্তি দেয়।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের কিছু উল্লেখযোগ্য উদাহরণ:
ভাষা: বাংলাদেশের প্রধান ভাষা বাংলা। তবে এখানে আরও অনেক ভাষা প্রচলিত, যেমন চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ইত্যাদি।
ধর্ম: বাংলাদেশের প্রধান ধর্ম ইসলাম। তবে এখানে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, ইত্যাদি ধর্মের লোকেরাও বাস করে।
খাবার: বাংলাদেশের খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু এবং বৈচিত্র্যময়। এখানে ভাত, ডাল, মাছ, মাংস, সবজি, ইত্যাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি এবং পিঠাও প্রচলিত।
পোশাক: বাংলাদেশের পোশাকও অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এখানে শাড়ি, সালোয়ার-কামিজ, পাঞ্জাবি, ধুতি, ইত্যাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আদিবাসী পোশাকও প্রচলিত।
সঙ্গীত: বাংলাদেশের সঙ্গীত অত্যন্ত সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর। এখানে লোকসঙ্গীত, শাস্ত্রীয় সঙ্গীত, আধুনিক সঙ্গীত, ইত্যাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বাদ্যযন্ত্রও প্রচলিত।
নৃত্য: বাংলাদেশের নৃত্যও অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। এখানে লোকনৃত্য, শাস্ত্রীয় নৃত্য, আধুনিক নৃত্য, ইত্যাদির পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের আদিবাসী নৃত্যও প্রচলিত।
উৎসব: বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালিত হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পহেলা বৈশাখ, ঈদ-উল-ফিতর, ঈদ-উল-আযহা, দুর্গাপূজা, কালীপূজা, ইত্যাদি।
এই বৈচিত্র্য খোজ নিলে কবিতায়,
আমি বাংলার গান শুনেছি,
বাউলের একতারা বাজিয়ে।
শিল্পীর হাতের আলপনায় দেখেছি,
আমি এই বাংলার কারুকার্য।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য আমাদের দেশের ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্যকে প্রকাশ করে। এই সৌন্দর্য আমাদের দেশের জন্য গর্বের বিষয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা পর্যটন স্থান
বাংলাদেশ তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রয়েছে অসংখ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমন্ডিত স্থান। এই স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে অবস্থিত। এখানে রয়েছে নানা ধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী। সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। এটি পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রাকৃতিক সমুদ্র সৈকতগুলোর মধ্যে অন্যতম। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তার অপূর্ব সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। পার্বত্য চট্টগ্রামের রুপের রাজধানী রাঙামাটি তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে কাপ্তাই হ্রদ, রাজবন বিহার, ঝুলন্ত সেতু, আলুটিলা গুহা, ইত্যাদি।
আমি বাংলায় ভালোবাসি, আমি বাংলাকে ভালোবাসি
আমি তারই হাত ধরে সারা পৃথিবীর-মানুষের কাছে আসি
আমি যা কিছু মহান বরণ করেছি বিনম্র শ্রদ্ধায়
মিশে তেরো নদী, সাত সাগরের জল গঙ্গায়-পদ্মায়
বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত হাকালুকি হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক স্থানগুলো, ভ্রমনের জন্য বিখ্যাত। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত পাহাড়পুর তার প্রাচীন স্থাপত্য নিদর্শনের জন্য বিখ্যাত। এখানে রয়েছে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, ইত্যাদি।
এই ছাড়াও বাংলাদেশের আরও অনেক প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থান রয়েছে। পর্যটকদের কাছে এই স্থানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের হুমকি
বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অনেক ধরনের হুমকির সম্মুখীন হতে হয়। এই হুমকিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
১. অবৈধ বন উজাড়: বাংলাদেশের বনভূমি ধ্বংসের অন্যতম প্রধান কারণ হলো অবৈধ বন উজাড়। অবৈধ বন উজাড়ের ফলে দেশের বনভূমির পরিমাণ ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে।
২. দূষণ: দূষণ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য অন্যতম হুমকি। বায়ু দূষণ, পানি দূষণ, এবং মাটি দূষণ বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
৩. অপরিকল্পিত উন্নয়ন: অপরিকল্পিত উন্নয়ন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য আরেকটি হুমকি। অপরিকল্পিত উন্নয়নের ফলে প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মারাত্মক চাপ পড়ছে।
এই হুমকিগুলোর কারণে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। এই হুমকিগুলো মোকাবেলা করার জন্য সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।
জলবায়ুর পরিবর্তে ঝুঁকি
জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য একটি বড় ঝুঁকি।তবুও টিকে আছে আমার বাংলাদেশ, কেননাঃ
সাবাস বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয়;
জ্বলে-পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। এই প্রভাবগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- বন্যা: এর ফলে বাংলাদেশের নিম্নাঞ্চলে বন্যা ও উপকূলীয় অঞ্চলে জলোচ্ছ্বাসের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনেক অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
- খরা: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বৃষ্টিপাতের ধরন ও পরিমাণে পরিবর্তন হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই খরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য হুমকিস্বরূপ।
- ঝড়: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঝড়ের গতি ও তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঝড় বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অনেক অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সরকারের পাশাপাশি জনগণেরও সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। বন উজাড় রোধে কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ করা প্রয়োজন। সমুদ্র সৈকত সংরক্ষণে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীজগতের সংরক্ষণে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে আমরা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে রক্ষা করতে পারি।
উপসংহার
আমরা ভাগ্যবান ও গর্বিত প্রকৃতির লীলাভূমি বাংলায় জন্মগ্রহন করে। তাই কবির ভাসায় বলতে হয়ঃ
“সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে।
সার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালবেসে।”
বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ। এই সৌন্দর্য আমাদের জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আমাদের অহংকার। এই সৌন্দর্যকে রক্ষা করে আমরা আমাদের দেশকে আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য জায়গায় পরিণত করতে পারি।