বাক্য কাকে বলে ! বাক্য কত প্রকার ও কী কী?

বাক্য কাকে বলে

বাক্য কাকে বলে ? বাক্য কত প্রকার ও কী কী?

আমরা যখন এক বা একাধিক পদের মাধ্যমে নিজের মনের ভাব সম্পূর্ণ রূপে অন্যের কাছে প্রকাশ করতে পারি তখন তাকে বাক্য বলে। আবার কতগুলো পদের সমষ্টিতে বাক্য গঠিত হলেও যে কোনো পদসমষ্টিই বাক্য নয়। এখানে একটি বাক্য তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন ওই বাক্যটির দ্বারা বক্তা তার নিজের মনের ভাব অন্যে জনের কাছে সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ করতে পারবে।

 বাক্য সম্পর্কে বিভিন্ন ভাষা বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন মতামত প্রকাশ করেছেন। যেমন, ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, বাক্য হল একটি সম্পূর্ণ মনোভাব যে সমস্ত পদ দ্বারা প্রকাশ করা যায়, তাদের সমষ্টিকে বুঝায়। অন্যদিকে বাংলা ব্যাকরণবিদ মুনীর চৌধুরী ও মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরীর মতে, বাক্য হল যে সুবিন্যস্ত পদসমষ্টি দ্বারা কোনো বিষয়ে বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয়। অর্থাৎ এক কথায় বাক্য হলো, এক বা একাধিক পদের দ্বারা যখন বক্তার মনোভাব সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ পায়।

 বাক্য বাংলা ভাষার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। বাংলা ভাষা সম্পর্কে সুস্পষ্ট জ্ঞান এবং ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পর্যন্ত বাংলা বাক্যের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আজকের আর্টিকেলটিতে বাক্য কাকে বলে, বাক্য সম্পর্কে সকল তথ্য তুলে ধরব। বাক্য সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলটি এখনই পড়া শুরু করুন:

বাক্য কাকে বলে?

একটি ভাষা অসংখ্য বাক্যের সমষ্টি। বাক্যগুলো গঠিত হয় শব্দের দ্বারা। বিচ্ছিন্ন বা এলোমেলো শব্দের দ্বারা বাক্য গঠিত হয় না। শব্দগুলোর থাকতে হয় অর্থ এবং একটি শব্দের সাথে অন্য শব্দের থাকতে হয় সম্পর্ক, তবেই বাক্য গঠিত হয়। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন তা হলো, শব্দ যখন বাক্যে বসে, তখন তাকে পদ বলা হয়। যে পদ সমষ্টির দ্বারা মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশিত হয় তাকে বাক্য বলে।

বাক্যের গঠন

প্রচলিত ব্যাকরণে বাক্যকে দুটি অংশে ভাগ করা হয়। যথা- ১) উদ্দেশ্য (Subject) ও ২) বিধেয় (Predicate)।

যার সম্বন্ধে কিছু বলা হয় তাকে উদ্দেশ্য এবং যা বলা হয় তা বিধেয়। যেমন: তানিম বাড়ি যায়- এই বাক্যে ‘তানিম’ উদ্দেশ্য এবং ‘বাড়ি যায়’ বিধেয়।

উদ্দেশ্য অংশে একটি বিশেষ্য কিংবা সর্বনাম কিংবা নামপদস্থানীয় কিছু থাকে। বিধেয় অংশে অবশ্যই একটি ক্রিয়াপদ থাকে। কোন কোন বাক্যে ক্রিয়া পদ উহ্য থাকতে পারে। যেমন, শিমু ভালো মেয়ে। – এই বাক্যে ‘হয়’ ক্রিয়া পদটি উহ্য আছে।

বাক্য কত প্রকার ও কী কী?

বাক্যকে তিন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যেমন,

১) সরল বাক্য (Simple Sentence),

২) জটিল বাক্য (Complex Sentence) 

৩) যৌগিক বা সংযুক্ত বাক্য (Compound Sentence)।

১)সরল বাক্য

যে বাক্যে একটি মাত্র উদ্দেশ্য এবং একটি মাত্র বিধেয় থাকে তাকে সরল বাক্য বলে। যেমন : ছাত্ররা পড়ে, বৃষ্টি পড়ে।

সরল বাক্যে একের অধিক উদ্দেশ্য-পদ থাকতে পারে কিন্তু বিধেয়-পদ একটি থাকে। যদি একটি সমাপিকা-ক্রিয়ার একাধিক কর্তা থাকে তাহলে সবকটি কর্তা মিলিয়ে একটি মাত্র উদ্দেশ্যরূপে গণ্য করা হয়। যেমন, ‘ঠেলাগাড়িতে ইংরাজ রমণী ও ইংরাজ পুরুষাগণ বায়ু সেবনে বাহির হইয়াছেন’।

২)মিশ্র বা জটিল বাক্য

যে বাক্যে একটি প্রধান উপবাক্য থাকে এবং এক বা একাধিক অপ্রধান বা আশ্রিত উপবাক্য থাকে তাকে মিশ্র বা জটিল বাক্য বলে। যেমন, ছাত্রটি যদি পড়ে তাহলেই সে পাস করবে। এখানে ছাত্রের পাস করাই বক্তার মূল বক্তব্য। সুতরাং ‘সে পাস করবে’ হলো প্রধান বাক্য, আর ‘যদি ছাত্রটি পড়ে’ হচ্ছে পাস করার শর্ত, এটি হচ্ছে অপ্রধান বাক্য।

৩)যৌগিক বা সংযুক্ত বাক্য

যে বাক্য একের বেশি প্রধান উপবাক্য সংযুক্ত হয়ে গঠিত হয়ে থাকে তাকে যৌগিক বা সংযুক্ত বাক্য বলে। একের বেশি সরল বা মিশ্রবাক্যকে সংযোজক অব্যয় (ও, আর,এবং প্রভৃতি) বা বিয়োজক অব্যয় (বা, কিংবা,অথবা প্রভৃতি) দিয়ে যুক্ত করে যে বাক্য গঠিত হয়, তাকে যৌগিক বা সংযুক্ত বাক্য বলে। যেমন- অনিক রাতের গাড়িতে আসবে এবং এখানেই থাকবে। সে না আসলে তুমি যাবে না কিন্তু সে বলেছে যে তার অসতে অনেক দেরী হবে।

প্রকাশভঙ্গি অনুযায়ী বাক্যের শ্রেণীবিভাগ

বাক্যের প্রকাশভঙ্গির ভিত্তিতে বাক্যকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।যেমন,

১)বিবৃতিমূলক বাক্য 

২)নেতিবাচক বা নঞর্থক বাক্য 

৩)প্রশ্নসূচক বাক্য 

৪)বিস্ময়সূচক বাক্য 

৫)ইচ্ছাসূচক বাক্য 

১. বিবৃতিমূলক বাক্য 

যে বাক্যে কোন কিছুকে সাধারণভাবে বর্ণনা করা হয়  তাকে বিবৃতিমূলক বাক্য বলে।

বিবৃতিমূলক বাক্য ২ প্রকার:

ক) অস্তিবাচক বাক্য/ হাঁ বাচক বাক্য:

যে বাক্যে কোন কিছু সমর্থনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়, তাকে অস্তিবাচক বাক্য বা হাঁ বাচক বলে।

যেমন- তুমি কালকে আসবে।,আমি ঢাকা যাব।

খ)সদর্থক বা অস্তিবাচক বাক্য:

সদর্থক বা অস্তিবাচক বাক্য  কোনো নির্দেশ, ঘটনার সংঘটন বা হওয়ার সংবাদ থাকে। যেমন,

বিশ্বকাপে ইন্ডিয়া জিতেছে।

আজ দোকানপাট বন্ধ থাকবে।

২. নেতিবাচক বাক্য/ নঞর্থক বাক্য  

যে বাক্যে কোন কিছু অসমর্থনের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়, তাকে নেতিবাচক বাক্য বা না বাচক বলে।

যেমন- তুমি কালকে আসবে না।

আমি ঢাকা যাব না।

৩. প্রশ্নসূচক বাক্য 

কোন প্রশ্ন বা জিজ্ঞাসা প্রকাশিত হয় যে বাক্যে তাকে প্রশ্নসূচক বাক্য বলে। যেমন-

তুমি কেমন আছ?

৪. বিস্ময়সূচক বাক্য 

 আশ্চর্য হওয়ার অনুভূতি প্রকাশিত হয় যে বাক্যে তাকে বিস্ময়সূচক বাক্য বলে। যেমন-

সে কী ভীষণ ব্যাপার!

৫. ইচ্ছাসূচক বাক্য 

যে বাক্যে শুভেচ্ছা, প্রার্থণা, আশীর্বাদ, আকাঙক্ষা প্রকাশ করা হয়, তাকে ইচ্ছাসূচক বাক্য বলে। যেমন-

তোমার মঙ্গল হোক। ঈশ্বর সকলের মঙ্গল করচন। ভালো থেকো।

আদেশ বাচক বাক্য : যে বাক্যে আদেশ করা হয়, তাকে আদেশ সূচক বাক্য বলে। যেমন-

বের হও। এখান থেকে যাও। সব সময় মাথা খাটিয়ে কাজ করবে ইত্যাদি।

বাক্যের গুণ

ভাষার বিচারে বাক্যের তিনটা গুণ থাকা আবশ্যক। যথাঃ 

১) আকাঙ্ক্ষা

২) আসত্তি 

৩) যোগ্যতা

১) আকাঙ্ক্ষা

বাক্যের অর্থকে পরিষ্কার ভাবে বুঝতে এক পদের পর অন্য পদ শোনার যে ইচ্ছা তা-ই আকাঙ্ক্ষা ।

উদাহরণঃ মা আমাকে অনেক আদর …

উপরের বাক্যেটিতে বক্তার মনের ভাব সম্পূর্ণভাবে প্রকাশ হয়নি। বাক্য শেষ হওয়ার পরও আরো কিছু শোনার আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। তাই বাক্যের আকাঙ্ক্ষা গুণটি নেই। সুতরা এটি বাক্য নয়। 

এখানে সম্পূর্ণ বাক্যটি হবে মা আমাকে অনেক আদর করে।

এটি শোনার পর আর কিছু শোনার আগ্রহ বাকি থাকছে না। সুতরাং এটি আকাঙ্ক্ষা গুণ সম্পন্ন একটি সার্থক বাক্য।

২) আসত্তি

বাক্যে অর্থসঙ্গতি রক্ষার জন্য সুশৃঙ্খল পদবিন্যাসই আসত্তি। 

উদাহরণঃ আছে কলম আমার একটি। বাক্যের পদগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো হয়নি। এই পদগুলো সুশৃঙ্খলভাবে সাজালে বাক্যটি হবে— আমার একটি কলম আছে। যা একটি ভাবকে প্রকাশ করছে।

৩)যোগ্যতা

বাক্যে অবস্থিত পদসমূহের অর্থগত এবং ভাবগত মিলবন্ধনের নাম যোগ্যতা। 

উদাহরণঃ চেয়ার আকাশে উড়ে। কিন্তু চেয়ারের আকাশে উড়ার যোগ্যতা নেই। সুতরাং বাক্যটি যোগ্যতাহীন। অতএব সঠিক বাক্যটি হবে পাখি আকাশে উড়ে।

যোগ্যতার সাথে জড়িত বিষয়গুলো হচ্ছে 

১. উপমার ভুল প্রয়োগ

২. দুর্বোধ্যতা

৩. রীতিসিদ্ধ অর্থবাচকতা

৪. বাহুল্য-দোষ

৫. গুরুচণ্ডালী দোষ

৬. বাগধারার শব্দ পরিবর্তন

সবশেষে

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ক্ষেত্রে বাক্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবনের প্রতিটি কার্যক্রমে বাক্য জরুরী।বাক্য আমাদের জীবনে প্রতিটি স্থানে প্রয়োজন বাক্য ছাড়া আমরা কথা সম্পন্ন করতে পারি না। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পর্যন্ত বাক্য প্রয়োজন। এজন্য আমাদের বাক্য সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা রাখা জরুরী। আশা করি উপরে আলোচনা থেকে বাক্য সম্পর্কে আপনি বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন। আশা করি আজকের বাক্য কাকে বলে আর্টিকেলটি থেকে আপনি কিছুটা হলে উপকৃত হয়েছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।

Also Read: নিজের সম্পর্কে ১০ টি বাক্য বাংলায় 

Scroll to Top