ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনার ১৪টি মূলনীতি

ব্যবস্থাপনা কাকে বলে

ব্যবস্থাপনা কাকে বলে? ব্যবস্থাপনা স্তর কয়টি?

ভূমিকা

মানব সভ্যতার ক্রমোন্নতির সাথে সাথে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের উন্নতি শুরু হয়। আর তখন থেকেই ব্যক্তিক নেতৃত্বের প্রসার হতে থাকে। ব্যক্তি নেতৃত্ব থেকেই ব্যবস্থাপনার সৃষ্টি।

 

নানা বিবর্তনের মধ্যদিয়ে ব্যবস্থাপনা আজ একটি স্বত নৈপুণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। অবাধ তথ্য প্রবাহ, মুক্তবাজার অর্থনীতি আর বিশ্বায়নের প্রভাবে আধুনিক ব্যবসায়-বাণিজ্য এক জটিল রূপ ধারণ করেছে। এর সাথে তাল রেখে ব্যবস্থাপনা একটি আধুনিক গতিশীল সর্বজনীন সামাজিক প্রক্রিয়া হিসেবে স্বীকৃতি অর্জন করতে চলেছে। 

 

অপরকে দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার একটি প্রক্রিয়া হচ্ছে ব্যবস্থাপনা। এরূপ সনাতন ধারণা কার্যকারিতার থেকে আজ ব্যৱস্থাপনাকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি প্রক্রিয়া হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে, যুক্ত হয়েছে দক্ষতা ও সঙ্গে ব্যবস্থাপনা।

ব্যবস্থাপনা কাকে বলে?

পূর্ব নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কর্মীদের দ্বারা দক্ষতা ও ফলপ্রসূতার সাথে কাজ করিয়ে নেয়ার সামাজিক প্রক্রিয়াকে ব্যবস্থাপনা বলে। ব্যবস্থাপনা এমন একটি কৌশল যার মাধ্যমে সর্বাধিক দক্ষতা ও মিতব্যয়িতার সাথে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে প্রচেষ্টা চালানো হয়। 

 

ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্ত সম্পদের কাম্য ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। অনেকের মতে, ব্যবস্থাপনার ইংরেজি Management শব্দটি ইটালীয় Maneggiare শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে, যার অর্থ হচ্ছে To train up the horses অর্থাৎ অশ্বকে প্রশিক্ষণ দেয়া।

 

 আবার কেউ কেউ মনে করেন, Managenient শব্দটি ফরাসি Menager এবং Menage শব্দদ্বয় হতে এসেছে। Menager শব্দের অর্থ পরিবার পরিচালনা করা এবং Menage শব্দের অর্থ পথ প্রদর্শন করা ব্যবসায়িক পরিবর্তন ও সময়ের দাবিতে Management এর ইতালীয় ও ফরাসির উৎপত্তিগত শব্দাবলিরও প্রায়োগিক পরিবর্তন ঘটেছে। 

 

রাষ্ট্র তথা প্রতিষ্ঠানের দক্ষ পরিচালনায় Management ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করেছে। ব্যবস্থাপনা কর্মীদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জনে পরিচালিত করার অর্থে আধুনিককালে উপরিউক্ত বিষয়সমূহ ব্যবহার করা হচ্ছে।

ব্যবস্থাপনার জনক কে?

আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক এবং বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক দুইজন ব্যক্তিকে বলা হয়ে থাকে। নিচে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থপনার জনক আলাদা ভাবে ব্যাখ্যা করা হলো। 

আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক

আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয় হেনরি ফেয়ল কে(Henri Fayol)। ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের অগ্রদূত ও প্রখ্যাত গবেষক হেনরি ফেয়ল ফ্রান্সের একজন শিল্পপতি ছিলেন। 

তিনি ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে সাধারণ ব্যবস্থাপনার নীতিমালা ও পদ্ধতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন, পর্যবেক্ষণ করেন। এ গবেষণার ফলস্বরূপ ১৯১৬ সালে ফ্রান্সে Administration Industreille et Generale নামে তাঁর একটি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। জেনেভা ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউট উক্ত গ্রন্থটি প্রকাশ করে।

 

১৯২৯ সাল পর্যন্ত গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয় নি। পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর এ গ্রন্থটি ইংরেজিতে অনুবাদের মাধ্যমে General and Industrial Management নামে প্রকাশিত হয়। Henri Fayol এ গ্রন্থে আধুনিক ব্যবস্থাপনার নীতি ও পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যাপক আলোচনা করেন।

 

ব্যবস্থাপনার নীতিসমূহ নমনীয়, সুনিশ্চিত নয় এবং পরিবর্তিত ও বিশেষ পরিস্থিতিতে আবশ্যিকভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী। তাই ফেয়ল ব্যবস্থাপনা তত্ত্বের সমুদয় কার্যাবলি ফলপ্রসূ করার জন্য ১৪টি মূলনীতির উল্লেখ করেন।

বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থপনার জনক

বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয় ফ্রেডারিক উইন্সলো টেলর কে। তিনি ১৮৫৬ সালে আমেরিকায় ফিলাডেলফিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। নানা প্রতিকূলতায় তিনি শৈশবে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেননি। ফলে ১৮৭৫ সালে একটি ক্ষুদ্র নির্মাণ শিল্পে নকশা প্রণেতা হিসেবে এবং পরবর্তীতে ১৮৭৮ সালে ফিলাডেলফিয়ার মিডলেভ স্টীল কোম্পানিতে মেশিন চালক হিসেবে যোগদান করেন।

চাকরীতে থাকা অবস্থায় নৈশকালীন পড়ালেখা করে তিনি প্রকৌশলী ডিগ্রী অর্জন করেন। নানা পদে পদোন্নতির মাধ্যমে মিডলেভ কোম্পানিতেই তিনি প্রকৌশলীর পদে উন্নীত হোন।

মিডভেল স্টীল কোম্পানিতে থাকাকালীন ও বিভিন্ন পদে কর্মকালীন সময়ে টেলর লক্ষ্য করেন যে, শ্রমিকরা তাদের উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় সামান্যই উৎপাদন করে। এর কারণ অনুসন্ধানের জন্য তিনি বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় লিপ্ত হন তিনি প্রতিটি কাজের মান নির্ণয়ের জন্য সময়, শ্রান্ত ও গতি সমাক্ষা করেন এবং শ্রমিকদের কাজের পরিমাণ অনুসারে পার্থক্যমূলক মজুরি প্রথা প্রবর্তন সর্বোপরি, তিনি ব্যবস্থাপনা ও শ্রমিকের মধ্যে চিরায়ত বিরোধ নিষ্পত্তিকল্পে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনায় মানসিক বিপ্লপের কথা বলেছেন।

১৯১১ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘Principles of Scientific Management (বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার নীতি) প্রকাশ করেন। ব্যবস্থাপনায় বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রবর্তনের মৌলিক অবদানের জন্য ফ্রেডারিক উইন্সলো টেলরকে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার জনক বলা হয়

ব্যবস্থাপনা স্তর কয়টি?

ব্যবস্থাপনার স্তর মূলত তিনটি, যথাক্রমে:

  • উচ্চস্তরের ব্যবস্থাপনা
  • মধ্যমস্তরের ব্যবস্থপনা
  • নিম্নস্তরের ব্যবস্থপনা

১.উচ্চস্তরের ব্যবস্থাপনা: 

উচ্চস্তরের ব্যবস্থাপকের মধ্যে রয়েছে পরিচালকবৃন্দ, সভাপতি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহাব্যবস্থাপক। এই স্তরের কার্যাবলী হলো পরিকল্পনা প্রণয়ন, প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য ও নীতি নির্ধারণ, কর্মসূচি গ্রহণ, নির্দেশনা দান ও নিয়ন্ত্রণ।

২.মধ্যমস্তরের ব্যবস্থাপনা:

মধ্যস্তরের ব্যবস্থাপক হলো, ক্রয় ব্যবস্থাপক, বিক্রয় ব্যবস্থাপক, উৎপাদন ব্যবস্থাপক, অর্থ ও হিসাব ব্যবস্থাপক। এবং এই স্তরের কার্যাবলী গুলো হলো উচ্চ ও নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপকগণের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরি উচ্চস্তরের ব্যবস্থাপকগণের গৃহীত পদক্ষেপের বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।

৩.নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপনা:

নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপক ফোরম্যান, সুপারভাইজার ইত্যাদি। নিম্নস্তরের ব্যবস্থাপকের কার্যাবলি উচ্চ ও মধ্যস্তরের পর্যায়ে গৃহীত পদক্ষেপের বাস্তবায়নের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ।

ব্যবস্থাপনার ১৪টি মূলনীতি

বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ স্ব-স্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যবস্থাপনার মূল নীতি সম্পর্কে আলোকপাত করলেও ১৯১৬ সালে ফরাসি প্রকৌশলী আধুনিক ব্যবস্থাপনার জনক Henri Fayol কর্তৃক প্রদত্ত ১৪টি নীতিকে অদ্যাবধি গ্রহণযোগ্য, সর্বজনীন, কার্যকর নীতি হিসেবে অভিহিত করা হয়।

Henri Fayol প্রদত্ত ব্যবস্থাপনার মূলনীতিসমূহ নিয়ে আলোচিত হলো : 

১. কার্য বিভাগের নীতি: বিশেষজ্ঞতার উপর প্রতিষ্ঠিত এ নীতিতে প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যাবলিকে কাজের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করে এক একজন কর্মীর উপর কার্যভার অর্পণ করা হয়। এর ফলে ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বৃদ্ধি পায় এবং বিশেষজ্ঞ কর্মী গড়ে তুলতে সাহায্য করে। ব্যবস্থাপকায় এবং কারিগরি উভয় ক্ষেত্রে এ নীতি প্রযোজ্য।

২. কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের নীতি: প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সর্বস্তরীয় কর্মীদের উপর কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব সমানভাবে অর্পণ করতে হবে। কেননা, কর্তৃত্ব ও দায়িত্ব পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত। সুতরাং এ নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মীকে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের স্বার্থে দায়িত্ব প্রদানের পাশাপাশি সমানুপাতিক হারে কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা প্রদান করতে হবে। 

৩. নিয়মানুবর্তিতার নীতি : ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সাফল্য অনেকাংশে নিয়মানুবর্তিতার উপর নির্ভরশীল। প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মীদের আনুগত্যও নৈতিকতা সৃষ্টি প্রতিষ্ঠানের রীতি-নীতি মেনে চলা ইত্যাদির মাধ্যমে নিয়মানুবর্তিতা নিশ্চিত করা যায়।

৪. আদেশের ঐক্যনীতি : এ নীতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত প্রত্যেক কর্মীকে শুধু একজন ঊর্ধ্বতন নির্বাহীর আদেশ মেনে চলতে হবে। কারণ একাধিক নির্বাহীর আদেশ কর্মীর কাজে ব্যাঘাত ঘটায় এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে।

৫. নির্দেশের ঐক্যনীতি: প্রতিষ্ঠানের কর্মীবৃন্দের প্রচেষ্টাকে একটি বিশেষ উদ্দেশ্য অর্জনের লক্ষ্যে নিয়োজিত করার জন্য একজন নির্বাহী একটি পরিকল্পনার ভিত্তিতে নির্দেশ প্রদান করবে। এক্ষেত্রে “There should be one head and one plan” নীতি বজায় রাখা বাঞ্ছনীয়। 

৬. সাধারণ স্বার্থের প্রতি ব্যক্তি স্বার্থের নতি স্বীকার নীতি:: প্রতিষ্ঠানে সাধারণ স্বার্থকে যে কোন মূল্যে ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্যার্জনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সকলের স্বার্থ সংরক্ষিত হতে পারে। তাই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ ও ব্যক্তি স্বার্থের সমন্বয় বিধান করতে হবে।

৭. পারিশ্রমিকের নীতি : কর্মীদের প্রদত্ত সেবা ও শ্রমের বিনিময়ে যে আর্থিক সুবিধাদি প্রদান করা হয় তাকে পারিশ্রমিক বলে । ব্যবস্থাপনাকে প্রত্যেক কর্মীর কাজের প্রকৃতি, পরিমাণ, যোগ্যতা, সময় ও পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে ন্যায্য পারিশ্রমিক নির্ধারণ করা উচিত। এতে কাজের মান ও আনুগত্য বৃদ্ধি পায়। পারিশ্রমিক এরূপ হওয়া উচিত যাতে মালিক শ্রমিক উভয়েই সন্তুষ্ট হতে পারে।

৮. কেন্দ্রীকরণ ও বিকেন্দ্রীকরণ নীতি : এ নীতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন ব্যবস্থাপনার হাতে অধিকতর কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত থাকলেও নিম্নস্তরের কার্যাবলির সিদ্ধান্ত গুলো বিকেন্দ্রীভূত থাকবে । এর ফলে ব্যবস্থাপনার সকল পর্যায়ে কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা পদ্ধতিগতভাবে সংরক্ষিত রাখা সম্ভব হয় । 

৯. জোড়া ম‍ই শিকল নীতি : প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ থেকে নিম্ন পর্যায় পর্যন্ত কর্তৃত্বের চেইন বা শৃঙ্খল বজায় রাখা আবশ্যক। কর্তৃত্ব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে ধাপে ধাপে অধস্তনের কাছে নিচে নেমে আসবে। এক্ষেত্রে শৃঙ্খলের দ্বারা ঊর্ধ্বতন অধস্তনের সম্পর্ক অটুট থাকবে। অবশ্য ফেয়ল জরুরি অবস্থায় Gang Plank (অন্তবর্তী সাঁকো)-এর মাধ্যমে সমপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগাযোগের কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে পরে বিষয়টি স্ব-স্ব ঊর্ধ্বতনদের অবহিত করাতে হবে। নিম্নের চিত্রে অন্তবর্তী সাঁকো দেখানো হলো, যেখানে GM অর্থাৎ মহাব্যবস্থাপক এবং DM অর্থাৎ বিভাগীয় ব্যবস্থাপক বুঝানো হয়েছে।

১০. শৃঙ্খলার নীতি : প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মীদের শৃঙ্খলা বজায় রাখা ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি। এ নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মীর কাজ ও কাজের স্থান নির্দিষ্ট থাকবে এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ স্থানে কর্মরত থাকবে। “A place for everything (everyone) and everything (everyone inits (his) place.” প্রতিটি বস্তু সঠিক স্থানে এবং প্রত্যেক ব্যক্তিকে উপযুক্ত স্থানে নিয়োগ করতে হবে। 

১১. ন্যায়পরায়ণতার নীতি : ব্যবস্থাপনার একটি অন্যতম নীতি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত সকল কর্মীর প্রতি সদ্ব্যবহার, সুবিচার ও ন্যায়পরায়ণ হওয়া। ন্যায়পরায়ণতা অধীনস্তদের নিকট থেকে শ্রদ্ধা, সম্মান ও আনুগত্য লাভ এবং কর্মীদের ইতিবাচক মনোভাব গঠনে সহায়ক হয়। 

১২. চাকরির স্থায়িত্বের নীতি: প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শ্রমিক কর্মীদের নিকট চাকরি হলো তাদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন। সঙ্গত কারণেই চাকরির স্থায়িত্ব নিয়ে তারা খুব বেশি চিন্তিত থাকে। তাই ব্যবস্থাপনাকে প্রত্যেক কর্মীর চাকরির স্থায়িত্বের নিশ্চয়তা বিধান করতে হবে। এতে কর্মীদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত হয়। ফলে কর্মীরা অধিক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে কাজে মনোনিবেশ করে: প্রতিষ্ঠানে কাজের মান বা উৎকর্ষতা বৃদ্ধি পায়। 

১৩. উদ্যোগের নীতি: নতুন নতুন পরিকল্পনা ও পদ্ধতি উদ্ভাবন ও বাস্তবায়নের স্বাধীন প্রচেষ্টাকে উদ্যোগ বলে। প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা যাতে নিজ নিজ ক্ষেত্রে উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে সেজন্যে ব্যবস্থাপনাকে উপযুক্ত কার্য পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এতে কর্মীরা কাজের প্রতি অধিক উৎসাহী হয়। 

১৪. একতাই বল : ঐক্যবদ্ধভাবে বা সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে যেকোন জটিল কাজ সহজেই সম্পাদন করা যায়। তাই আধুনিক জটিল ও বৃহদায়তন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় ব্যবস্থাপনাকে মধুর শ্রম- ব্যবস্থাপনা সম্পর্কের উপর অধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। ব্যবস্থাপনাকে শ্রমিকদের মনে সহযোগিতামূলক মনোভাব সৃষ্টি করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। ‘Esprit de corps’ বা ‘In union there is strength’ হচ্ছে এ নীতির মূলকথা।

শেষকথা

ব্যবস্থাপনার গণ্ডি আজ অত্যন্ত ব্যাপক। সকল প্রকার ব্যবসায় তথা প্রাতিষ্ঠানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য ব্যবস্থাপনা জ্ঞান ও দক্ষতার সঠিক ও কার্যকর ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনার নিত্য নতুন কলাকৌশলের সফল প্রয়োগ আজ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। পরিশেষে প্রখ্যাত ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতেই হয়, মানুষের মন যেভাবে ইচ্ছা পূরণের জন্য শরীরকে পরিচালিত করে, ব্যবস্থাপনাও তেমনি কোন সংগঠনকে উদ্দীপনা যোগায়, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

 

Also Read: প্রমিত ভাষা কাকে বলে

 

Scroll to Top