মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন
বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী বাংলাদেশী মহিলারা যারা সরকারি চাকরিতে নিয়োজিত তারা প্রসবকালীন ছয়টি ছুটি পেয়ে থাকেন। সন্তান প্রসবের জন্য মহিলারা যে ছুটি পান তাকে মাত্র করেন ছুটি বলা হয়ে থাকে। সাধারণত গর্ভবতী হওয়ার পর থেকে এই ছুটি মহিলারা যে কোনদিন থেকে শুরু করতে পারেন।
এই ছুটির মেয়াদ সাধারণত ছয় মাস হয়ে থাকে। কোন গর্ভবতী মা চাইলে গর্ভবতী অবস্থায় ছুটি না নিয়ে সন্তান প্রসব বা সন্তান প্রসব পরবর্তী সময়ে এই ছুটি কার্যকর করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আবেদন করার সময় ডাক্তারি সার্টিফিকেট বা যেকোনো প্রমাণ পত্র দাখিল করতে হবে। এবং গর্ভবতী হওয়ার তারিখ এবং সন্তান প্রসব এর তারিখ আবেদনপত্রে উল্লেখ করতে হবে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
মাতৃত্বকালীন ছুটির সময়কাল কি?
২০১৬ সালে সর্বশেষ মাতৃত্বকালীন ছুটির বিষয়গুলো সংশোধন করা হয়েছে। বেনিফিট এক্ট নামে এই আইন পরিচিত। ২০১৬ সালের আগে মাতৃত্বকালীন ছুটি সাধারণত ১২ সপ্তাহের জন্য দেওয়া হতো। অর্থাৎ গর্ভবতী মহিলারা তিন মাসের জন্য এই ছুটি পেতেন।
২০১৬ সালের আইন অনুযায়ী এই ছুটি বাড়িয়ে ১২ সপ্তাহ থেকে ২৬ সপ্তাহ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে তিন মাসের জায়গায় ছুটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় মাসে। তবে একজন মহিলা একটি অথবা দুইটি সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে এই ছয় মাসের ছুটি পাবেন। দুটি সন্তান বা ততোধিক সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে এই ছুটির সময়সীমা আস্তে আস্তে কমতে থাকবে।
দুটি সন্তান প্রসবের পর কোন মহিলা যদি আবার সন্তান জন্ম দেন সে ক্ষেত্রে তিনি তিন মাসের ছুটি অর্থাৎ ১২ সপ্তাহের ছুটি পাবেন। এক্ষেত্রে সন্তান জন্ম দানের পর ছয় সপ্তাহ ছুটি পাবেন এবং সন্তান জন্মের আগে ৬ সপ্তাহ ছুটি পাবেন। তবে এই ছুটি অনেকটা নির্ভর করে ওই মহিলা বছরে অন্তত ৮০ কর্মদিবস অফিসে উপস্থিত রয়েছে কিনা।
কিভাবে মাতৃত্বকালীন ছুটির চিঠি লিখতে হয়
মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য আবেদন করার নির্দিষ্ট একটি নিয়ম রয়েছে। আপনি সরকারি বা বেসরকারি যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করুন না কেন একটা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে এই আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে।
আমরা নিচে একটি মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন পত্র লেখার নমুনা প্রদান করছি। আপনারা যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করুন না কেন এই ধারা বজায় রেখে আবেদন পত্র লিখতে পারবেন।
মাতৃত্বকালীন ছুটি চেয়ে কলেজের অধ্যক্ষের কাছে আবেদন করার নমুনা
বরাবর,
অধ্যক্ষ,
ঢাকা কমার্স কলেজ,
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
বিষয়: মাতৃত্বকালীন ছুটি চেয়ে আবেদন।
মহোদয়,
যথাবিহিত সম্মানপূর্বক আপনাকে নিবেদন করে জানানো যাচ্ছে যে, আমি আপনার কলেজের (নাম)…………., শিক্ষিকা হিসেবে গত পাঁচ বছর ধরে নিয়োজিত রয়েছি। এবং আমি আমার কর্মস্থলে সুনামের শহীদ কর্ম সম্পাদন করার চেষ্টা করি। বর্তমান সময়ে আমি গর্ভবতী হওয়ার কারণে আমাকে ছয় মাসের ছুটি মঞ্জুর করতে আপনার যেন মর্জি হয়। এখানে আমি আমার ডাক্তারি ডকুমেন্ট, এবং সন্তান প্রসবের তারিখ উল্লেখ করছি। (ডাক্তারি ডকুমেন্ট….., সন্তান প্রসবের তারিখ, এবং গর্ভবতী হওয়ার তারিখ উল্লেখ করতে হবে)। আগামীকাল থেকে আমি মোট ছয় মাসের ছুটির জন্য আবেদন করছি।
মহোদয়, আপনার নিকট আমার বিনীত প্রার্থনা শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা চিন্তা করে ছুটি প্রদান করতে আপনার যেন মর্জি হয়। আগামী (…………….) তারিখ থেকে (…………….) তারিখ পর্যন্ত আমি কলেজে উপস্থিত থাকা সম্ভব নয়। আমার ছয় মাসের ছুটি মঞ্জুর করলে আপনার প্রতি আমি চির কৃতজ্ঞ থাকব।
ইতি,
আপনার বিশ্বস্ত,
নাম (…………)
ঢাকা কমার্স কলেজ,
মিরপুর, ঢাকা, বাংলাদেশ।
তারিখ (…………..)
ছুটিকালীন ঠিকানা
নাম: (……..)
ঠিকানা: (…………)
সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটির নীতি
বাংলাদেশ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী যে কোন সরকারি মহিলা শ্রমিক মাতৃত্বকালীন ৬ মাসের ছুটি পাবেন। সব ধরনের পদের জন্যই এই ছুটি প্রযোজ্য। শ্রমিক ঠিক কোন সময় ছুটি নিবেন তা নির্ভর করে তার নিজের উপর।
সরকারি মহিলা কর্মী চাইলে তার মাতৃত্বকালীন ছুটি নিতে পারেন গর্ভধারণের সাথে সাথেই। আবার চাইলে তিনি গর্ভধারণের শেষ পর্যায়ে এই ছুটি নিতে পারেন। মহিলা শ্রমিক যদি চান তিনি সন্তান প্রসবের পরবর্তী ছয় মাস ছুটি নিবেন তাও এক্ষেত্রে প্রদান করা হবে।
কিছু কিছু সময় কর্মীদের ক্ষেত্রে এই ছুটি কিছুটা বাড়ানোর দরকার হতে পারে। এক্ষেত্রে তাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগ গুলোর সাথে কথা বলতে হবে। ছুটি নেওয়ার জন্য তাকে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে একটা আবেদনপত্র জমা দিতে হবে। আবেদনপত্র লেখার নিয়ম সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে আলোচনা করেছি।
আবেদন পত্রটি জমা দেওয়ার সময় অবশ্যই ডাক্তারি সব ডকুমেন্টগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপকের কাছে জমা দিতে হবে। এবং আপনার আবেদনপত্রের উত্তর ১০ দিনের ভেতর দিতে ব্যবস্থাপক বাধ্য থাকবে। এই পর্যায়ে ব্যবস্থাপক জানিয়ে দেবেন আপনি ছুটি পাবেন কিনা। আর এই সময় ছুটি না পেলে আপনি কখন ছুটি পাবেন তাও ব্যবস্থাপক জানিয়ে দেবেন।
মাতৃত্বকালীন ছুটির বেতন কি হারে বেতন প্রাপ্য হবে ?
মাতৃত্ব কালীন ছুটি সময় যে কোন কর্মকর্তা তার পূর্বের বেতন প্রতি মাসে পাবেন। এক্ষেত্রে তিনি পূর্বে যে বেতন ভাতা পেতেন তার কোন পরিবর্তন হবে না। সম্পূর্ণ বেতন এবং ভাতা মাস শেষে তার ব্যাংকে একাউন্টে জমা হবে। রেখেছো কোন প্রতিষ্ঠান যদি অন্যরকম ব্যবহার করে থাকে তাহলে কর্মচারীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার কাছে আবেদন করার সুযোগ রয়েছে।
শেষ কথা
যেকোনো গর্ভবতী মহিলাদের জন্য এই ছুটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সন্তান গর্ভধারণ থেকে প্রসব পরবর্তী সময় পর্যন্ত প্রতিটা মা একটি কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে পার করেন। এ সময় নিয়মিত তার কাজের যোগদান করা রীতিমতো অসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই বাংলাদেশ সরকার গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ছয় মাসের ছুটি বরাদ্দ রেখেছেন।
মাতৃত্বকালীন ছুটির জন্য সরকারি বেসরকারি সব কর্মকর্তাকে আবেদন পত্র লিখতে হয়। কারণ এটি একটি কোম্পানির নিয়মের মধ্যে পড়ে। আজকের আর্টিকেলে আমরা মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন সম্পর্কে বিস্তারিত লেখার চেষ্টা করেছি। যারা মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন আজকের আর্টিকেলটি জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে।
Also read: ২ মাসের গর্ভবতী মায়ের খাবার তালিকা