মেট্রোরেল | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
মেট্রোরেল হলো একটি আধুনিক ব্যবস্থা যা প্রাচীন রেল ব্যবস্থার মতই তবে সাথে আরো বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে। এটি হলো শহর বাসীদের জন্য ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক। কোনো শহরে যখন যানজট এর পরিমান বৃদ্ধি পায় তখন সেই শহরে এটি নির্মান করা হয়। যেমন আমাদের দেশের একটি শহর ঢাকা, এখানে সম্প্রতি মেট্রোরেল নির্মান করা হয়েছে। ঢাকায় তীব্র যানজটের কারনে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে লেগে যায় প্রায় কয়েক ঘন্টা। মুলত যানজট সমস্যার সমাধান স্বরুপ এটি নির্মান করা হয়েছে। এর ব্যবহারের কারনে ঢাকার যানজট সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। মেট্রোরেল সাধারনত তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা: ভূগর্ভস্থ মেট্রো, উড়াল মেট্রো এবং মিশ্র মেট্রো। ভূগর্ভস্থ এটি ভূগর্ভস্থ টানেলের মধ্য দিয়ে চলাচল করে, উড়াল মেট্রো উড়াল পথের মধ্য দিয়ে চলাচল করে এবং মিশ্র মেট্রো ভূগর্ভস্থ এবং উড়াল পথ উভয়ের মধ্য দিয়ে চলাচল করে। ঢাকা শহরে যে মেট্রোরেল নির্মান করা হয়েছে সেটি উড়াল মেট্রোরেল। ঢাকা শহরে অফিস টাইম এবং বিকেলের পরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ঘন্টার পর ঘন্টা নগরবাসীর রাস্তায় কাটাতে হয়। এটি চালু হওয়ার পর থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে পারছে ঢাকাবাসী। এটি বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের ৬২ টি দেশে চলে। ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্পটি ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড এর অধীনে যানজট নিরসনের জন্য কাজ করছে। এটি ঢাকার প্রায় দেড় কোটি মানুষের দুর্ভোগ ও যানবাহনের চাপ সামলাতে সক্ষম। রাজধানীতে নিয়মিত চমৎকার ভাবে এটি চলাচল করছে। উড়াল রোডে বিছানো রেললাইনের উপর দিয়ে যখন অতি আধুনিক এর যাত্রাপথে গমন করে সেই দৃশ্য দেখার জন্য শত শত মানুষের চোখ থমকে যায় কিছু সময়ের জন্য। এটি বিদ্যুতের মাধ্যমে চলাচল করে। তাই মেট্রোরেল দ্বারা পরিবেশ দুষন হওয়ার সম্ভাবনাও নেই, তাই এটিকে পরিবেশবান্ধব যানও বলা চলে।
মেট্রোরেল | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
মেট্রোরেল হলো রেলগাড়ির চেয়ে আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন একটি যান। এটি সাধারনত বিদ্যুতের মাধ্যমে চলাচল করে। যে জায়গা গুলোতে অনেক যানজট সমস্যা হয়, যানজট যে শহরের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যপার সেই শহর গুলোতে যানজট নিরসনের জন্য এটি ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশের ঢাকা শহরে যানজট তেমনি নিত্যদিনের সমস্যা। ঢাকা শহরের যানজট নিরসনের জন্য ঢাকায় এটি চালু করা হয়েছে। ২০২৩ সাল পর্যন্ত ঢাকা মেট্রোরেল হচ্ছে বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম প্রজেক্ট। ঢাকা মেট্রোরেলের নাম দেয়া হয় ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট। সংরক্ষেপে বলা হয় এমারটি। এটি তিন রকমের হয়ে থাকে। ঢাকার মেট্রোরেলটি উড়াল সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে। এটি নির্মান করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২৫% এবং জাইকা ৭৫ শতাংশ অর্থায়ন করেন। এই প্রকল্পটি যার্পিড ট্রানজিট পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের মেট্রোরেলের নির্মান কাজ শুরু হয় ২৬ শে জুন ২০১৬ সালে। ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এর চলাচলের জন্য রেললাইন করা হয়েছে । উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য ২০.১ কিলোমিটার। দীর্ঘ এই রেললাইনে মোট ১৬ টি স্টেশন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর আগারগাও অংশের আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন এবং ২০২৩ সালে ৪ নভেম্বর এবং আগারগাঁও অংশের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্য প্রতিটি ট্রেনে থাকবে ৬ টি করে বগি, সেই সাথে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা থাকবে। মহিলা ও পুরুষদের জন্য থাকবে আলাদা আলাদা বগি থাকবে। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মোট ১৪ টি ট্রেন চলাচল করবে। প্রতি ট্রেনে ৯৪২ জন যাত্রী বসে যেতে পারবে এবং ৫৭৪ জন যাত্রী দাঁড়িয়ে যেতে পারবে। বাংলাদেশ মেট্রোরেল নির্মান করতে মোট ব্যয় হয়েছে মোট ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বাংলাদেশের মেট্রোরেলে রয়েছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন কামরা। প্রতিটি বগি অনেক বেশি প্রশস্ত এবং শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। বাংলাদেশ মেট্রোরেলের প্রথম নারী চালকের নাম ছিম মরিয়ম আফিজা। মেট্রোরেলের দরজা গুলো স্বয়ংক্রিয় ভাবে বন্ধ হয় এবং খুলে যায়। প্রতিটি ষ্টেষনে যাওয়ার আগে ষ্টেষনের নাম ঘোষনা করা হয় সেই সাথে সতর্কতা সমূহ বলে দেয়া হয়। ঢাকা শহরে এটি চালু হওয়ার পর থেকেই মানুষের ভোগান্তি অনেক কমে গেছে। দুই ঘন্টার পথ এখন দশ মিনিটেই মেট্রোরেলের কারনে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে। এটি ঘন্টায় ৩২ কিমি যায় এবং চুড়ান্ত গন্তব্যে যেতে সময় মেয় ৩৮ থেকে চল্লিশ মিনিট। মেট্রোরেল সেবা শহরের যে কোনো প্রান্তে থেকে যেন যাত্রীরা নিতে পারেন সে জন্য সরকার ব্যবস্থা গ্রহন করেছেন। বাংলাদেশ সরকার ২০২৫ সালের মধ্যে পুরো ঢাকা শহরকে মেট্রোরেল দিয়ে চলাচলের উপযোগী করে তুলবেন। যাত্রীরা যেন কোনো ধরনের সমস্যায় না পরেন সে জন্য রয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মেট্রোরেলের সব কিছুই অতি আধুনিক। মেট্রোরেলে যাত্রা করার জন্য রয়েছে ই টিকেট ব্যবস্থা। মেট্রোরেলে যাতায়াত করার জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। যাত্রীদের সুবিধার জন্য মেট্রোরেল প্রতি দশ মিনিট পর পর আসে।
মেট্রোরেল | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
ঢাকা মেট্রোরেল হলো রাজধানী ঢাকার জন্য একটি দ্রুতগতির গণপরিবহন ব্যবস্থা, যা শহরের যানজট নিরসন, পরিবেশ উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি পরিকল্পনা করা হয় ২০০৯ সালে, যখন ঢাকার যানজট সমাধানের জন্য।২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) প্রকল্পটি অনুমোদন লাভ করে। ঢাকা মেট্রোরেল লাইন ৬ বাংলাদেশের প্রথম দ্রুতগামী গণপরিবহন ব্যবস্থা। এটি ২০.১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত বিস্তৃত। এই লাইনটি সম্পূর্ণরূপে উড়াল রেলপথ। প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে জাইকা দেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাকি টাকা বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে আসবে। মেট্রোরেল নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। এই প্রকল্পটি নির্মাণের সময় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছে, যেমন জমির অধিগ্রহণ, ভূগর্ভস্থ অবকাঠামো স্থানান্তর, করোনা কারনে কাজের ব্যাঘাত ইত্যাদি। ঢাকা মেট্রোরেল চালানোর জন্য ঘণ্টায় ১৩.৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ করা হবে। এর জন্য উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁ ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনের পর প্রথমবারের মতো মেট্রোরেল চালান মরিয়ম আফিজা। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মাত্র একটা লাইন চালু থাকলেও ভবিষ্যতে আরও ৫টি লাইন যুক্ত হবে। ঢাকা মেট্রোরেলে যাতায়াত করার জন্য রয়েছে ডিজিটাল টিকিটিং ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় নগদ অর্থ ও স্মার্টকার্ড বা অ্যাপ ব্যবহার করে টিকিট কেনা যায়। স্মার্টকার্ড মেট্রো স্টেশনের টিকিট কাউন্টার, কাউন্টারলেস মেশিন বা অনলাইনে কেনা যায় মেট্রোরেলে যাতায়াত করার জন্য সর্বনিম্ন ভাড়া ২০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ভাড়া ১০০ টাকা। ভাড়ার হার দূরত্বের উপর নির্ভর করে। মেট্রোরেল প্রতি দশ মিনিট পর পর আসে। তাই যাত্রীরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেন। দ্বিতীয় পর্যায়ে গাবতলী থেকে আফতাবনগর পর্যন্ত এমআরটি লাইন-২ নির্মাণ করা হবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২২.৪২ কিলোমিটার। লাইনটির নির্মাণ কাজ ২০২৪ সালে শুরু হবে। তৃতীয় পর্যায়ে পূর্বাচল থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৩ নির্মাণ করা হবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২৩.৯১ কিলোমিটার। লাইনটির নির্মাণ কাজ ২০২৫ সালে শুরু হবে। চতুর্থ পর্যায়ে সাভার থেকে মিরপুর ১১ পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৪ নির্মাণ করা হবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২২.৯৭ কিলোমিটার। লাইনটির নির্মাণ কাজ ২০২৬ সালে শুরু হবে। পঞ্চম পর্যায়ে সাভার থেকে গুলশান ২ পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫ নির্মাণ করা হবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২৫.২৩ কিলোমিটার। লাইনটির নির্মাণ কাজ ২০২৭ সালে শুরু হবে। ষষ্ঠ পর্যায়ে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৬ নির্মাণ করা হবে। এই লাইনের দৈর্ঘ্য হবে ২১.৩৪ কিলোমিটার। লাইনটির নির্মাণ কাজ ২০২৮ সালে শুরু হবে। এই মেট্রোরেল ব্যবস্থা ঢাকা শহরের অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখবে। নির্মাণ কাজ চলাকালীন এবং চালু হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে এর প্রভাব লক্ষ্য করা গেছে। মেট্রোরেল নির্মাণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন টানেল বোরিং মেশিন, অটোমেটিক ট্রেন অপারেশন সিস্টেম ইত্যাদি। মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনে আছে লিফট, এসক্যালেটর, টয়লেট ও আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মোটামুটি, ঢাকা মেট্রোরেল শুধু যাতায়াত ব্যবস্থা নয়, বরং শহরের রুপ পরিবর্তন ও ভবিষ্যৎ আধুনিক নগরী গড়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এই দ্রুতগতির যাতায়াত ব্যবস্থা শুধু যাতায়াতের সময়ই বাঁচাবে না, বরং শহরের সামগ্রিক অর্থনীতির গতি বাড়াবে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বাড়বে এবং সামগ্রিক উন্নয়নের গতি বাড়বে। তাই, ঢাকা মেট্রোরেল শুধু একটি গনপরিবহণ নয়, এটি শহরের ধমনী, ঢাকার ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতীক। ঢাকার অবকাঠামো উন্নয়নে মেট্রোরেল লাইন ৬-এর অবদান অবিস্মরণীয়। প্রযুক্তি, অর্থায়ন ও নির্মাণে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার নিদর্শন হিসেবে এই প্রকল্প ভবিষ্যতের আরও আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ার অনুপ্রেরণা জোগাবে।