মৌলিক পদার্থ কাকে বলে

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে , এই প্রশ্নের উত্তর সবাই জানে আর না জানলেও সমস্যা নেই।  আমাদের আজকের এই আয়োজনটি মৌলিক পদার্থ নিয়েই।  আজকের এই লেখায় আমরা মৌলিক পদার্থের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, গঠন ও পিরিয়ডিক টেবিল সম্পর্কে জন্য। 

মৌলিক পদার্থ কাকে বলে

যে পদার্থকে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত করলেও ওই পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায়না তাদেরকে মৌল বা মৌলিক পদার্থ বলা হয়। এদের একটি অণু একই রকম এক বা একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে তৈরি। যেমন, সোনা একটি মৌলিক পদার্থ কারণ এটি একটি একক পরমাণু গঠিত। সোনা পরমাণুতে প্রোটন, নিউট্রন এবং ইলেকট্রন থাকে। 

মৌলিক পদার্থের সংজ্ঞা

১. মৌলিক পদার্থ হল এমন পদার্থ যাকে ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত করা যায় না। এদের একটি অণু একই রকম এক বা একাধিক পরমাণুর সমন্বয়ে তৈরি।

২. বিজ্ঞানী ডাল্টনের মৌলিক পদার্থের সংজ্ঞা:

 মৌলিক পদার্থ হল এমন পদার্থ যাকে ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত করা যায় না।

৩. নবম শ্রেণীর পদার্থ বিজ্ঞানের বই থেকে:

“যে পদার্থকে ক্ষুদ্রতর অংশে বিভক্ত করলে আরও সেই পদার্থ ছাড়া অন্য কোন পদার্থ পাওয়া যায় না, তাকে মৌলিক পদার্থ বলে।”

মৌলিক পদার্থের উদাহরণ

  • ধাতু: সোনা, রূপা, তামা, লোহা, ইত্যাদি।
  • অধাতু: কার্বন, সালফার, অক্সিজেন, ইত্যাদি।
  • নোবেল গ্যাস: হিলিয়াম, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ইত্যাদি।

মোট মৌলিক পদার্থের সংখ্যা 

এ পর্যন্ত মোট ১১৮টি মৌল আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৮টি প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, বাকী ২০টি কৃত্রিম উপায়ে তৈরী করা হয়।

বিরল মৌলিক পদার্থ

বিশ্বের বিরলতম মৌল হল ওগানেসন। এটি একটি মনোটমিক গ্যাস যা 2002 সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল। ওগানেসন প্রকৃতিতে খুব কমই পাওয়া যায়। এর প্রাকৃতিক উৎস হল পারমাণবিক বিস্ফোরণ এবং তারার বিবর্তন।

ওগ্যানেসনের অর্ধজীবন মাত্র 89 সেকেন্ড। এর মানে হল যে, ওগ্যানেসনের একটি পরমাণু মাত্র 89 সেকেন্ডের জন্য স্থায়ী থাকে, অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় পদার্থ।

পিরিয়ডিক টেবিল 

পিরিয়ডিক টেবিল হল মৌলিক পদার্থ গুলিকে তাদের পারমাণবিক সংখ্যা, ভর সংখ্যা, রাসায়নিক ধর্ম এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্যগুলির উপর ভিত্তি করে সাজানো একটি টেবিল। একটি রসায়নের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি গুলোর মধ্যে একটি।

পিরিয়ডিক টেবিল প্রথম ১৮৬৯ সালে রাশিয়ান রসায়নবিদ দিমিত্রি মেন্ডেলিফ দ্বারা প্রস্তাবিত হয়েছিল। মেন্ডেলিফ মৌলিক পদার্থ গুলিকে তাদের পারমাণবিক সংখ্যার উপর ভিত্তি করে সাজিয়েছিলেন। তিনি দেখতে পেলেন যে, একই কলামে থাকা মৌল গুলির রাসায়নিক ধর্ম একই রকম।

পিরিয়ডিক টেবিলটিতে সাতটি কলাম রয়েছে। প্রতিটি কলামকে একটি পর্যায় বলা হয়। পর্যায়গুলিকে পারমাণবিক সংখ্যার ক্রমে সাজানো হয়েছে।

পিরিয়ডিক টেবিলটিতে ১৮টি সারির রয়েছে। প্রতিটি সারিকে একটি গোষ্ঠী বলা হয়। গোষ্ঠীগুলিকে রাসায়নিক ধর্মের মিলের উপর ভিত্তি করে সাজানো হয়েছে।

পিরিয়ডিক টেবিলের বৈশিষ্ট্য

পিরিয়ডিক টেবিলের কিছু বৈশিষ্ট্য হল:

  • এটি মৌলিক পদার্থের পারমাণবিক সংখ্যা, ভরসংখ্যা, রাসায়নিক ধর্ম এবং অন্যান্য বৈশিষ্ট্য গুলোর উপর ভিত্তি করে সাজানো হয়। 
  • সাতটি কলাম রয়েছে, যা পর্যায় নামে পরিচিত।
  • পিরিয়ডিক টেবিলটিতে ১৮টি সারির রয়েছে, যা গ্রুপ নামে পরিচিত।
  • একই কলামে থাকা মৌল গুলির রাসায়নিক ধর্ম একই রকম।
  • সারিতে থাকা মৌল গুলির রাসায়নিক ধর্ম মধ্যে সাদৃশ্য রয়েছে।

মৌলিক ও যৌগিক পদার্থের মধ্যে পার্থক্য কি?

 

বিষয়মৌলিক পদার্থযৌগিক পদার্থ
উৎপত্তিপ্রকৃতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে পাওয়া যায়রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি হয়
গঠনএকই ধরনের পরমাণু দ্বারা গঠিতদুই বা ততোধিক বিভিন্ন ধরনের পরমাণু দ্বারা গঠিত
রাসায়নিক ধর্মএকই রকমভিন্ন ভিন্ন
উদাহরণহাইড্রোজেন, অক্সিজেন, সোনা, রূপা, লোহাজল, লবণ, চিনি, অ্যাসিড, ক্ষার
বৈশিষ্ট্যমৌলিক পদার্থযৌগিক পদার্থ

পদার্থের চারটি শ্রেণীবিভাগ কি কি

পদার্থের চারটি শ্রেণীবিভাগ হল:

  • মৌলিক পদার্থ
  • যৌগিক পদার্থ
  • মিশ্রণ
  • প্লাজমা

মিশ্রণ পদার্থ যৌগ নাকি মৌল? 

মিশ্রণ পদার্থ যৌগ না মৌল কোনটাই নয়। মিশ্রণ হল দুই বা ততোধিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত পদার্থ। মিশ্রণের উপাদান গুলোর মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন থাকে না। রাসায়নিক বন্ধন থাকলেই কেবল পদার্থ যৌগ হতে পারে।

মিশ্রণের উপাদান গুলো ভৌত পদ্ধতি যেমন ছাঁকন, হিমায়ন, পরিস্রবণ, ইত্যাদি পদ্ধতি ব্যবহার করে পৃথক করা সম্ভব। তবে যৌগের উপাদানগুলিকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পৃথক করা সম্ভব।

উদাহরণস্বরূপ, বায়ু একটি মিশ্রণ। এটি নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্বন ডাই অক্সাইড, আর্গন, এবং অন্যান্য কিছু গ্যাসের সমন্বয়ে গঠিত। বায়ুর উপাদানগুলির মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন নেই। 

অন্যদিকে, পানি একটি যৌগ। এটি হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেন পরমাণু দ্বারা গঠিত। পানির উপাদান গুলির মধ্যে রাসায়নিক বন্ধন রয়েছে।

সুতরাং, মিশ্রণ পদার্থ যৌগ বা মৌল কোনটাই নয়।

পরমাণুর মৌল কি কি

পরমাণুর মৌল হল সেই মৌলিক কণাগুলি যা পরমাণু গঠন করে। পরমাণু তিনটি মৌলিক কণা দ্বারা গঠিত:

  • ইলেকট্রন
  • প্রোটন
  • নিউট্রন

ইলেকট্রন হল পরমাণুর ক্ষুদ্রতম এবং সর্বাধিক ভরহীন কণা। এগুলো পরমাণুর কেন্দ্রের চারপাশে কক্ষপথে ঘোরে। ইলেকট্রনের চার্জ ধনাত্মক। প্রোটন হল পরমাণুর ভরের প্রধান উৎস। এগুলি পরমাণুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াসে অবস্থিত। নিউট্রন হল প্রোটনের মতো ভরযুক্ত, তবে এগুলো কোন বৈদ্যুতিক চার্জ বহন করে না। এগুলিও নিউক্লিয়াসে অবস্থিত। প্রোটনের চার্জ ধনাত্মক।

সকল পদার্থ কি দিয়ে তৈরি? 

সকল পদার্থ পরমাণু দিয়ে তৈরি। পরমাণু হল পদার্থের মৌলিক একক। একটি পরমাণু তিনটি মৌলিক কণা দ্বারা গঠিত: ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রন।

পরমাণু, মৌল ও অণুর মধ্যে পার্থক্য

পরমাণু, মৌল ও অণুর মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ:

বৈশিষ্ট্যপরমাণুমৌলঅণু
সংজ্ঞাপদার্থের মৌলিক এককএকই ধরনের পরমাণু দ্বারা গঠিত পদার্থএক বা একাধিক পরমাণু দ্বারা গঠিত একটি ক্ষুদ্রতম কণা
গঠনতিনটি মৌলিক কণা দ্বারা গঠিত: ইলেকট্রন, প্রোটন এবং নিউট্রনএকই ধরনের পরমাণু দ্বারা গঠিতএক বা একাধিক পরমাণু দ্বারা গঠিত
সংখ্যাঅসংখ্যসীমিতসীমিত
আকারখুবই ক্ষুদ্রবিভিন্ন আকারের হতে পারেবিভিন্ন আকারের হতে পারে
রাসায়নিক ধর্মএকই রকমএকই রকমবিভিন্ন হতে পারে
ভৌত ধর্মএকই রকমএকই রকমবিভিন্ন হতে পারে

পরমাণু, মৌল ও অণু পদার্থের তিনটি ভিন্ন স্তর। পরমাণু হল পদার্থের মৌলিক একক। মৌল হল একই ধরনের পরমাণু দ্বারা গঠিত পদার্থ। অণু হল এক বা একাধিক পরমাণু দ্বারা গঠিত একটি ক্ষুদ্রতম কণা।

মৌলিক পদার্থের ইতিহাস

প্রাচীন গ্রিসের দার্শনিকরাই প্রথম পদার্থের মৌলিক প্রকৃতি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা শুরু করেছিলেন। ডেমোক্রিটাস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৬০-৩৭০) বিশ্বাস করতেন যে পদার্থ অসংখ্য ক্ষুদ্র, অবিভাজ্য কণা দিয়ে তৈরি, যাকে তিনি “অ্যাটোমস” বলেছিলেন।

মধ্যযুগে, পদার্থের মৌলিক প্রকৃতি সম্পর্কে খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। তবে, কিছু দার্শনিক এবং বিজ্ঞানী, যেমন আল-কিন্দি এবং রশিদ উদ্দিন , পরমাণুর অস্তিত্বের ধারণাকে সমর্থন করেছিলেন।

আধুনিক যুগে, বিজ্ঞানীরা পদার্থের মৌলিক প্রকৃতি সম্পর্কে আরও গবেষণা শুরু করেন। ১৭৮৯ সালে, আন্টোইন ল্যাভয়েসিয়ে তার “রসায়নের তত্ত্ব” বইয়ে প্রস্তাব করেছিলেন যে সমস্ত পদার্থ মৌলিক পদার্থের সমন্বয়ে গঠিত।

১৯ শতকে, বিজ্ঞানীরা পদার্থের মৌলিক পদার্থের প্রকৃতি সম্পর্কে আরও জানতে শুরু করেন। ১৮০৩ সালে, জন ডাল্টন এর “পরমাণু তত্ত্ব” প্রকাশ করেন, যা পরমাণুর অস্তিত্ব এবং বৈশিষ্ট্যকে ব্যাখ্যা করে। দিমিত্রি মেন্ডেলিফ পর্যায় সারণি তৈরি করেন।

গত শতাব্দীতে বিজ্ঞানীরা পদার্থের মৌলিক পদার্থের গঠন সম্পর্কে আরও জানতে শুরু করেন। ১৯১১ সালে, রবার্ট মিলিকান (১৮৬৮-১৯৫৩) ইলেকট্রনের চার্জ পরিমাপ করেন। ১৯১৩ সালে, নিলস বোর (১৮৮৫-১৯৬২) হাইড্রোজেন পরমাণুর গঠন ব্যাখ্যা করেন। ১৯৩২ সালে, জেমস চাডউইক (১৮৯১-১৯৭৪) নিউট্রনের অস্তিত্ব আবিষ্কার করেন।

মৌলিক পদার্থের ইতিহাসের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা:

  • 1803: ইংরেজ রসায়নবিদ জন ডাল্টন পরমাণু তত্ত্ব প্রস্তাব করেন।
  • 1897: ইংরেজ পদার্থবিদ জে. জে. থমসন আবিষ্কার করেন যে পরমাণু ইলেকট্রন দ্বারা গঠিত।
  • 1911: নিউজিল্যান্ডীয় পদার্থবিদ ernest rutherford আবিষ্কার করেন যে পরমাণুর কেন্দ্রে একটি নিউক্লিয়াস রয়েছে যা প্রোটন এবং নিউট্রন দ্বারা গঠিত।
  • 1932: ইংরেজ পদার্থবিদ জেমস চার্লস চ্যাডউইক আবিষ্কার করেন যে নিউক্লিয়াসে নিউট্রনও রয়েছে।
  • 1938: জার্মান পদার্থবিদ ওটো হান এবং ফ্রিৎস স্ট্রাসম্যান আবিষ্কার করেন যে নিউক্লিয়ার বিভাজন নামক একটি প্রক্রিয়াতে পরমাণু নিউক্লিয়াস দুটি ভাগে বিভক্ত হতে পারে।

 

শেষ কথা

প্রিয় শিক্ষার্থীরা আজকের এই চমৎকার লেখায় আমরা জানলাম মৌলিক পদার্থ কাকে বলে, এর বৈশিষ্ট সহ আরোও অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য।  আশা করছি লেখাটি তোমাদের অনেক ভালো লাগবে।  এই জাতীয় আরোও লেখা পড়তে নিয়মিত চোখ রাখুন আমাদের ব্লগে।  

Also Read: অর্থনীতি কাকে বলে 

Scroll to Top