শীতের সকাল | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
শীতের সকাল অন্য সময়ের সকালে থেকে কিছুটা ভিন্ন, এসময় হালকা কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকে চারপাশ। গাছের ডালে শিশির জমে মুক্তোর মতো ঝকঝক করতে থাকে। শীতের সকালে গরম বিছানা আর কম্বল ছেড়ে উঠতে অনেক কষ্ট হলেও ঘুম থেকে উঠে বাইরে বের হলে নিমিষেই সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। বাইরে বের হলে শিশির ভেজা ঘাস, মুক্তার মত ঝকঝক করতে থাকা গাছের পাতায় শিশির যেন সকালে ওঠার কষ্ট কে কোথাও উড়িয়ে নিয়ে যায়। প্রকৃতি যেন নতুন রূপে সেজে ওঠে এসময়। সূর্য মামা ধীরে ধীরে কুয়াশা ভেদ করে তার আলো চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়ম সূর্যের আলো কুয়াশা ভেদ করে বেরিয়ে আসলেই সকালের মিষ্টি রোদ গায়ে মাখবার জন্য সবাই বাড়ির বাইরে বের হয়। সবার চোখেই তখন চারপাশের পরিবেশ হয়ে ওঠে অপরূপ। গাছের পাতাগুলো কুয়াশায় ভেজা হয়ে থাকে। মাটিতে শিশিরের ফোঁটাগুলো ঝকঝক করে। এসময় অনেকেই বাইরে বেড়াতে যান। গ্রামের ক্ষেত খামারগুলোতে তখন শীতের সৌন্দর্য পরিপূর্ণভাবে ফুটে ওঠে। ক্ষেতের ফসলগুলো কুয়াশায় ভেজা হয়ে থাকে। মাঠের সবুজ ঘাসগুলো ঠান্ডায় জমে যায়। শীতের সকালে ঘরে ঘরে পিঠাপুলি বানানোর ধুম পরে যায়৷ মা খালারা সবাই মিলে হরেকরকম পিঠা বানাতে ব্যস্ত হয়ে যায়। শীত কালে খেজুর চাষিরা কোমড়ে মাটির হাড়ি বেধে ভোরে উঠে গাছ থেকে খেজুর গুড় পারতে যায়। খেজুর গুড় দিয়ে বানানো হয় হরেক রকম মিষ্টি পিঠা, খেজুর রস দিয়ে বানানো পায়েস সবাই মিলে আনন্দ করে খায়। গ্রামের শিশুরা শীতকালে মুড়ি মুড়কি নিয়ে রোদ পোহাতে পোহাতে খায়। শীতের সকালে প্রকৃতির যে সৌন্দর্য ফুটে ওঠে তা অসাধারণ তখন সবার মন ভাল করার সকাল।
শীতের সকাল | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
ছয় ঋতুর বৈচিত্র্যপূর্ণ দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। শীতকাল আমাদের দেশে আসে হেমন্তের পরে এবং বসন্তের আগে। শীতকালে আমাদের দেশ অন্যরকম রূপে আমাদের চোখে ধরা দেয়। গাছের পাতা যখন ঝড়ে যায় সেই ঝড়া পাতা তখন শীতের আগমনি বার্তা জানিয়ে দেয়। আর যখন গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, সেই নতুন গজানো পাতা শীত কালকে বিদায় জানায়। শীতকালের সবচেয়ে সুন্দর সময় হলো শীতের সকাল। এসময় কুয়াশা দেখে মনে হয় যেন আস্ত সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে আছে। সকালে যখন সূর্যি মামা ধীরে ধীরে উদিত হয় তখন কুয়াশার চাদর ফেলে প্রকৃতি চোখ ধাধানো রুপে দেখা দেয়। ঘর বাড়ি, রাস্তাঘাট,শিশির ভেজা মাঠ সবকিছুই সূর্য মামার আলো পেয়ে ঝলমলিয়ে উঠে। কুয়াশার কারনে সবাই সকালে ঘরে গরম বিছানা ছেড়ে উঠতে চায়না, পাখি তার ছানাদের নিয়ে নীড় ছেড়ে বাইরে না বেড়িয়ে তার ছানাদের তা দেয়। এইসময় চারদিক সরিষা ফুলে হলুদ হয়ে যায়৷ দেখে মনে হয় হলুদের বিশাল সমুদ্র। চারদিক থেকে ভেসে আসে মিষ্টি সরিষা ফুলের গন্ধ। শীতের সকালের উত্তর দিক থেকে হুহু করে বাতাস এসে সবকিছু শীতল করে দেয়। কিন্তু শত শীত অতিক্রম করে সবাই মেতে ওঠে পিঠা উৎসব নিয়ে। শীতকালে শহর গ্রাম সবখানে পিটজা উৎসবের আয়োজন করা হয়। বাড়িতে বাড়িতে পিঠা পুলি খাওয়ার ধুম পরে যায়। তখন গ্রাম গুলো উৎসবে মেতে ওঠে। সকালে উঠে ছোট ছোট বাচ্চা এবং বড়রা সবাই মিলে রাস্তায় বা উঠোনে বসে মিষ্টি রোদ গায়ে মাখে। কেউবা শীত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য আগুন জ্বালিয়ে আগুনের চারদিকে বসে আগুন পোহায়। শীতকালে পিঠা পুলি খেতে সবাই সবার আত্নীয় স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ছেলে বুড়ো সকল বয়সী মানুষ হাসি তামাশায় মেতে ওঠে। কুয়াশা আর হীম বাতাসের জন্য সবাই ঘুম থেকে দেরীতে উঠতে পছন্দ করে। গরম লেপ কাথা ছেড়ে কেউ বিছানা থেকে ছেড়ে উঠতে চায় না। যখন কুয়াশা ভেদ করে ধীরে ধীরে সূর্য উদিত হয় তখন সবাই আনন্দে মেতে ওঠে। কিন্তু এই সময় গরীব অসহায় মানুষদের জন্য নিয়ে আসে কষ্ট আর যন্ত্রনা। শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য গরীব মানুষের পর্যাপ্ত গরম কাপড় থাকেনা। তাই তারা শীতে জড়োসড়ো হয়ে কাপতে থাকে। ভাঙ্গা কুঁড়েঘরের বেড়ার ফাক দিয়ে বাতাস ঢুকে শীত আরো বাড়িয়ে দেয়। তাই তারা রোদ ওঠার অপেক্ষায় থাকে। রোদ উঠলে তারা বাইরে বেড়িয়ে শীত থেকে নিজেকে রক্ষা করে। তবে শহরে আর গ্রামের শীতের সকাল সম্পূর্ণ ভিন্ন। কারন ইট পাথরের শহরে এই আমেজ অবলোকন করা যায় না। শহুরে জীবনে সবাই অনেক ব্যস্ত হওয়ায় এর সৌন্দর্যকেকে কেউ উপভোগ করতে পারেনা। গ্রামে শীতকাল আসে স্বর্গীয় রুপ নিয়ে। চারদিকে বিরাজ করে অপূর্ব স্নিগ্ধতা, প্রকৃতি পবিত্র এক সৌন্দর্য নিয়ে হাজির হয় যা সবার মাঝে ছড়িয়ে পরে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শীতের সকালের সৌন্দর্য ধীরে ধীরে তার রুপ বদল করে। বেলা যত বাড়ে কুয়াশা ধীরে ধীরে ততো মিলিয়ে যায়। মানুষজন তখন নিজেদের কাজে চলে যায়।
শীতের সকাল | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
শীতের সকালের অপরূপ সৌন্দর্য বর্ণনা করা কঠিন। কুয়াশায় ঢাকা আকাশ, ঠান্ডা হাওয়ায় শিহরিত গাছপালা, ঘাসে জমে থাকা শিশিরবিন্দু – সব মিলিয়ে শীতের সকাল যেন এক স্বপ্নপুরী। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে, হেমন্তের শেষে এবং বসন্তের পূর্বে শীতের আগমন ঘটে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে জানালার বাইরে তাকালে দেখা যায়, চারপাশ ঘন কুয়াশায় ঢেকে আছে। আকাশের আলো এতটাই ম্লান যে, কিছুই ভালোভাবে দেখা যায় না। মনে হয় যেন পৃথিবীর সবকিছুকে এক চাদরে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ঘাসে জমে থাকা শিশিরবিন্দুগুলো মুক্তোর মতো ঝলমল করে, গ্রামের প্রান্তর জুরে সরিষা ফুলের হলুদ চাদরে ঢেকে যায় এবং শীতের নানা রকম ফুলে ভরে যায় চারদিক। পাখিরা ঝাঁক বেঁধে উড়ছে আর কিচিরমিচির করছে। পাখিদের কিচিরমিচিরের সাথে ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক মিলেমিশে এক অদ্ভুত সুর তৈরি করে। এই সুর শোনার জন্যই অনেকেই শীতের সকালের অপেক্ষায় থাকে। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলের শীতের সকাল বেশি মনোরম। গ্রামাঞ্চলে চারপাশে খেজুর গাছের সারি। গাছ থেকে খেজুর রস নামানো হচ্ছে। রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। খেজুরের গুড়ের সুগন্ধে চারপাশ মৌ মৌ করে। গ্রামাঞ্চলের মানুষরা শীতের সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে খুব ভোরে কাজে বের হয়। শীতের সকালের অন্যতম আকর্ষণ হলো পিঠা-পুলি। শীতের সকালের পিঠার গন্ধ আর স্বাদ আমাদের পুলকিত করে। মায়ের চুলার চারপাশে ধোঁয়া উঠছে, সেই ধোঁয়া নয়, পিঠা পুলির গন্ধ। আগুনের চারপাশে পরিবারের সবাই মিলে পিঠা পুলির আয়োজন করছে, শীতকালে গ্রামের এই এক সাধারন মনোরম দৃশ্য। গ্রামের শীতের সকালের এই স্বাদ শহরেও পাওয়া যায়, শীতকালে গলির মোড়ে মোড়ে ভাসমান পিঠা পুলির দোকান দেখা যায়। শীতের সকাল, গরম চা আর লেপ-কম্বলের আশ্রয়ে থেকে আমাদের ঘুম ভাঙলেও, সবার জন্য এ সকাল সুখের নয়। ফুটপাতে কাঁপতে থাকা বুড়ো মানুষটি, গলির কোণে কুঁকড়ে থাকা কুকুরটি, বা শহরের আনাচে কানাছে থাকা ভাসমান মানুষগুলি, এদের কাছে শীতের সকাল নির্যাতনের মতোই। তাই এ শীতের সকালে তাদের উষ্ণতা দিতে আমাদেরই হাত বাড়াতে হবে। এক কাপ চা আর কিছু গরম খাবার তাদের পেট ভরিয়ে দিতে পারে। পুরনো জামা বা কম্বল দিয়ে তাদের শরীর ঢেকে দিতে পারি। নিরাপদ শীতের আশ্রয় স্থান খুঁজতে সাহায্য করতে পারি। এটুকুই যথেষ্ট হবে তাদের জন্য শীতের নিষ্ঠুরতা কমাতে, একটু উষ্ণতা আনতে। এ সময় বাংলাদেশের জলভূমিগুলি অতিথি পাখিতে ভরে যায়। সুদুর সাইবেরিয়া থেকে হিমালয় পার হয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়, কিন্তু কিছু মানুষ এ সময় অবাধে অতিথি পাখি শিকার করে। যেটা চরম নিন্দনীয় ও আইনে অপরাধের কাজ। এদেরকেও প্রতিরোধ করতে হবে শীতের সকালে। শীতের সকালের সুন্দর মুহূর্তগুলো মনের মধ্যে গেঁথে রাখতে অনেকেই ক্যামেরা নিয়ে ছবি তোলে। এই ছবিগুলো দেখলে শীতের সকালের স্মৃতি আবার মনে পড়ে যায়। শীতকালে বেড়ানোর জন্য একটি উপযুক্ত সময়, বেশিরভাগ স্কুলের শীতকালীন ছুটি থাকে আর বছরের শেষ বলে অনেকেই দেশের পর্যটন স্পটগুলোতে ভীর করে। শীতের সকাল, এক মোহনীয় সুখ। একদিকে ঠান্ডা হাওয়া শরীরকে কাঁপিয়ে তোলে, অন্যদিকে প্রকৃতির নতুন রূপ মনকে মাতিয়ে দেয়। কুয়াশায় ঢাকা মাঠ, শিশিরে ঝলমল করা ঘাস, আকাশে উড়ন্ত অসংখ্য পাখির ঝাঁক – শীতের সকালের প্রতিটি দৃশ্যই যেন এক একটি মহান চিত্রকর্ম। সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি, প্রকৃতির প্রতি, গরিব দুঃস্থ মানুষের প্রতি আমাদের দায়িত্বও রয়েছে। আসুন, এই দায়িত্ব পালন করে শীতের সকালকে আরও সুন্দর ও মানবিক করে তুলি।