সময়ানুবর্তিতা রচনা | ২০ টি পয়েন্ট

সময়ানুবর্তিতা রচনা

প্রিয় শিক্ষর্থীরা, এসএসসি ও HSC পরিক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুপ্তপূর্ণ একটি প্রবন্ধ রচনা হলো ‘সময়নুবর্তীতা’ যা প্রায় প্রতিবছরই পরীক্ষায় আসে। আজকের এই লেখায় সময়নুবর্তীতা রচনাটি ২০  টি পয়েন্ট সহকারে দেওয়া হলো।  

সময়ানুবর্তিতা 

ভূমিকা

ঠিক সময়ে কাজ করাই হলো সময়ানুবর্তিতা। জীবনে সফলতা আনার জন্য যে সকল গুন থাকা দরকার তার মধ্যে সসময়ানুবর্তিতা একটি। মানব জীবনের সকল অনুষঙ্গই সময় দ্বারা প্রভাবিত ও পরিচালিত। অনন্তের দিকে প্রবাহমান সময় কে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর সময়ানুবর্তিতা বলে। একবার সময়ের ব্যবহার না করলে পুনরায় তা আর ফিরে পাওয়া যায় না। তাইতো কথায় বলে- 

“জীবনে বড় কিছু অর্জনের জন্য সময়ানুবর্তিতা জরুরী।”

তাই সময় গঠনে গুরুত্ব দিয়ে নিজ নিজ জীবনে ঐকান্তিক হতে  হবে। সময়ের কাজ সময়ে করলে জীবন সার্থক ও সুন্দর হয়। 

সময়ানুবর্তিতা কি

মানবজীবনের অর্থ হচ্ছে জীবনে এমন কিছু করা যার মাধ্যেম মৃত্যুর পরেও স্মরনীয় হয়ে থাকা যায়। মানবজীবনে সময় বিভিন্ন কাজ নিয়ে আসে, সময়ের সাথে সেই কাজ না করলে সেই কাজ অসম্পন্ন থেকে যায়। সময়ের আহবান উপেক্ষা না করে সময়ের কাজ সময়ে সম্পাদন করাই  হলো সময়ানুবর্তিতা।  প্রতিটি কাজের জন্য নির্দিষ্ট সময় আছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেযে ব্যক্তি তার কাজ সম্পন্ন করে তাকে সময়ানুবর্তীশীল ব্যক্তি বলে। এই গুনটি মানব জীবনের অন্যতম একটি গুন। জীবনে সফলতার সিড়ি বলতে যদি কিছু থাকে সেটি হচ্ছে সময়ানুবর্তিতা। তাইতো সময়ানুবর্তিতা সম্পর্কে এক্সেলিস কেরল বলেছেন-

যুক্তিসঙ্গত ভাবে জীবন-যাপনের সবচেয়ে সুদক্ষ পদ্ধতি হল একজন মানুষের প্রতি সকালে দিনের পরিকল্পনা তৈরি করা এবং প্রতি রাতে যে ফল গ্রহণ করা হয়েছে তা নিরীক্ষা করা।

সময়ানুবর্তিতার প্রয়জনীয়তা

সময়ানুবর্তিতা আমাদের প্রত্যেকের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ একটি গুন। সময়ানুবর্তিতা ছাড়া কোনো কাজ সম্পন্ন করা যায়না। প্রতিটি কাজ করার আগে সময়ানুবর্তিতার প্রয়োজন রয়েছে। কারন দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়। প্রতিটি কাজের জন্য অল্প কিছু সময় থাকে। যদি সময় সম্পর্কে জ্ঞান না থাকে তাহলে জীবনের প্রতি পদে পদে হোচট খেতে হয়। ষ্টিভ জবস কে আমরা সবাই চিনি। তিনি এক বক্তৃতায় বলেছিলেন- 

জীবনে আমার প্রিয় জিনিষের জন্য কোন টাকা খরচ হয় না। এটা সত্যিকার অর্থে পরিষ্কার যে আমাদের সবার যে মূল্যবান জিনিষটি আছে তা হলো সময়।”

ষ্টিভ জবস মাইক্রোসফট আ্যপল এর প্রতিষ্ঠাতা। খুব অল্প বয়সে তিনি জীবনে সফলতা অর্জন করেছিলেন। এর কারন হচ্ছে তিনি সময়ের ব্যপারে অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করতেন। প্রতি সেকেন্ডের হিসেব রাখতেন। ফলস্বরূপ আজ তিনি বিশ্বের অন্যতম সফল  ও ধনী ব্যক্তি। 

জীবনে যে ব্যক্তি সময় কে গুরুত্ব দিবে সময় তাকে প্রতিদান স্বরুপ না চাইতেই অনেক কিছু দিবে। যা সেই ব্যক্তি হয়তো ভাবেওনি। 

সময়নিষ্ঠ ব্যক্তি ও জাতির উদাহরন

সময়নিষ্ঠ ব্যক্তি ও জাতিরা যুগযুগ ধরে স্মরনীয় হয়ে আছেন আমাদের সবার মাঝে। কারন সময়ের যথাযত ব্যবহার করে আজ তারা সফলতার চুড়ায় পৌছেছে। ঠিক সেরকম একটি জাতি হচ্ছে জাপান। জাপানরা হচ্ছে বিশ্বের প্রথম সময়ানুবর্তীশীল দেশ। তারা প্রতিটি সেকেন্ড হিসেব করে চলে। জাপানের মানুষ সময়ের ব্যপারে এতবেশি শ্রদ্ধাশীল এবং সতর্ক যে, তাদের দেশে অফিসে বা কোনো প্রতিষ্ঠানে যেতে গাড়ির কারনে যদি  এক মিনিট বা কয়েক সেকেন্ড দেরী হয়, তাহলে সেটার জন্য সার্টফিকেট দিতে হয়। তাইতো জাপান আজ বিশ্বের অন্যতম একটি উন্নত দেশ। আমেরিকার অন্যতম প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কে সবাই চিনি। তিমি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হতেপেরেছিলেন। অথচ তিনি আমেরিকায় এসেছিলেন অভিবাসী হয়ে। অভিবাসী ও নিগ্রো হওয়ার পরেও তিনি আজ আমেরিকার  প্রেসিডেন্ট হতে পেরেছেন।  আমেরিকানরা যাদেরকে অপছন্দ করেন তাদের সবগুণই তার মধ্যে ছিল। কিন্তু ওবামা তার নিরলস পরিশ্রম ও সময়ের সদ্ব্যবহার করে তার অসম্ভব স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করেন। সারাবিশ্বে এরকম অনেক অনেক উদাহরণ আছে যারা সময়ানুবর্তিতার কারনে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

সময়ের বৈশিষ্ট্য 

প্রবাহমানতা সময় সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। সময় নদীর স্রোতের মধ্যে প্রবহমান তথা গতিময়। একই প্রবাহমান জলে যেমন দুইবার ডুব দেয়া যায় না ঠিক তেমনি একই সময়কে দুইবার পাওয়া যায় না। পৃথিবীর কোন শক্তি সময়ের গতিশীলতা কে রোধ করতে পারে না। নদীর জল প্রবাহ ভাতের টানে ফিরে গেলেও আবার তা ফিরে আসে। কিন্তু সময় একবার চলে গেলে তাকে আর কখনো ফিরে আনা সম্ভব নয়। 

উপযুক্ত সময়ে উপযুক্ত কাজ না করলে, চেষ্টা করেও সেই কাজটি সার্থকভাবে করা যায় না। কথায় আছে,

” সমযয়ের এক ফোড় অসময়ের দশ ফোড়।” 

মানব জীবনে সময়ের গুরুত্ব 

মহাকালের হিসেবে মানব জীবন অতি ক্ষুদ্র। এই স্বল্পায়ু  জীবনের প্রতিটি সময়ই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মহাকালের বিচারে মানুষ যে সময় পায় তা অতি নগণ্য। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে সর্বোত্তম ব্যবহার করা উচিত। যে ব্যক্তি সময়লে গুরুত্ব দিয়ে সময়ের কাজ সঠিক সময়ে পালন করে, সেই ব্যক্তি কখনো  বিড়ম্বনায় পড়েনা। এক জীবনে মানুষ কতটুকু পরিমাণ কাজ করতে পারে তার একটি সীমা আছে। তাই কোনো  কাজ ফেলে না রেখে যথাযথ সময়ে করা উচিত। 

সময়নিষ্ঠ ব্যক্তি 

একজন সময়নিষ্ঠ ব্যক্তি সময়ের কাজ সময়ে করতে ভালোবাসে। সময়নিষ্ঠ ব্যক্তি সময় সঠিক ব্যবহার করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। সময়ানুবর্তিতা মানুষকে সময়ের গুরুত্ব শেখায়। যে সকল দার্শনিক, বিজ্ঞানী, বড় বড় শিল্পী খ্যাতি লাভ করেছেন,  তারা সবাই সময়ের ব্যাপারে একনিষ্ঠ ছিলেন এবং সমযয়ের সদ্ব্যবহার করেছেন। সময়নিষ্ঠ ব্যক্তিদের জীবনে ব্যর্থতা কখনো আসতে পারেনা৷ কারন সময়ানুবর্তিতা  মানুষকে সফলতার পথ দেখিয়ে দেয়৷ বিখ্যাত এক  দার্শনিক বলেছেন- 

সময়ানুবর্তিতা একজন সফল ব্যক্তির গুণ। জীবনে সেই ব্যক্তি সফলতা পায়, যিনি সময়ানুবর্তিতা এবং শৃঙ্খলাবদ্ধ। তাই আমাদের প্রত্যেকের সময়ানুবর্তিতা হওয়া প্রয়োজন।”

ছাত্র জীবনে সময়ানুবর্তিতা 

একজন ছাত্রের ভবিষ্যৎ কেমন হবে তা নির্ভর করে ছাত্র জীবন সময়ের উপর। ছাত্র জীবনেই ভবিষ্যৎ কালের  বীজ বপনের কাল। একজন ছাত্রের ছাত্র জীবনেই সময়ানুবর্তিতা শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। পড়াশোনা খেলাধুলা অন্যান্য কাজ সময়মতো করার অভ্যাস ছাত্র জীবনের গড়ে তুলতে হয়। সময় ব্যবহার যে সঠিকভাবে করতে পারেনা সে কোন কিছুতেই সফলতা অর্জন করতে পারে না। ব্যর্থতা কিছুতেই তার পিছু ছাড়ে না। লুসি বলেছেন-

“আপনার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই আপনার ভবিষ্যতকে রুপদানে কাজ করে। সুতরাং জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকেই সঠিক ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন।”

যে ছাত্র জীবনে সময়ের মূল্য বোঝেনা,  সময়ের অপচয় করে,  তাহলে বুঝে নিতে হবে সেই ছাত্রকে দিয়ে ভবিষ্যতে কখনোই ভাল কিছু হবেনা। কারন যে ব্যক্তি সময়ের মূল্য দিতে জানেনা সেই ব্যক্তি কখনোই ভাল কিছু করতে পারবেনা। ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর গরীব ঘরে জন্ম নেয়ার পরেও আজ তিনি সারাবিশ্বের মানুষের কাছে বিখ্যাত হয়ে আছেন৷ গরীব হওয়ায় রাতে কেরোসিন পুড়িয়ে পড়তে পারতনা বলে,  রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট এর নিচে বসে বই পড়তেন। তিনি চাইলেই পরের দিনের জন্য পড়া রেখে দিতে পারতেন। কিন্তু করেননি কারন তিনি সময়ানুবর্তিতার মূল্য দিতেন। তাইতো হাজার হাজার বছর ধরে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

ছাত্রজীবনে সময়ের সদ্ব্যবহার 

ছাত্রজীবন হলো মানব জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়ে যে ছাত্র সময়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয় তার জীবনে সাফল্য নিজে এসে ধরা দেয়। ছাত্রজীবন যে হেলায় কাটিয়ে দেয় তার জীবনে সফলতা কখনো ধরা দেয়না। ছাত্রজীবনে প্রতিটি মুহূর্তেই সময়কে হিসেব করে চলতে হয়। শিক্ষকরা যে পড়া দেয় সেটা যদি সময় মতো শেষ না করা হয় তাহলে সেই ছাত্র পরীক্ষাতে ভাল ফলাফল করতে পারেনা। যে ছাত্র পরীক্ষার সময়,  সময় কে ভাগ না করে পরীক্ষা দেয় সেই ছাত্র পরীক্ষায় কখনো সব প্রশ্ন লিখতে পারেনা। অর্থাৎ ছাত্রজীবন থেকে সময়ের ব্যপারে সচেতন এবং মূল্য বোঝাতেই প্রতিটি কাজের জন্য সময় ভাগ করে দেয়া হয়েছে। যে ছাত্র সময় অপচয় করে ব্যর্থ হয়ে ব্যর্থতার দোষ সময়ের উপর চাপিয়ে দেয় তাদের জন্য একজন অজ্ঞাত লেখক বলে গেছেন- 

তুমি বলতে পারবে না যে তোমার হাতে সময় নেই। কারণ তুমি দিনে যতোটা পরিমাণ সময় পাও একজন মহান সফল ছাত্রও ততোটাই সময় পায়।”

মানবজীবনে সময়ের গুরুত্ব 

 

মানবজীবনে সময়ানুবর্তিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানবজীবন খুব ছোট্ট ও ক্ষনস্থায়ী। এই ছোট্ট জীবনে মানুষের অনেক দ্বায়িত্ব পালন করতে হয়। কিন্তু সময়ের অভাবে অনেকে তাদের জীবনে কাজ অসমাপ্ত করেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয়৷ কিন্তু একজন মানুষ যদি জীবনের শুরু থেকে সময় কে কাজে লাগায় তাহলে সেই ব্যক্তি অল্প সময়ে জীবনে অনেক কিছু করতে পারে। যে ব্যক্তি সময়ানুবর্তিতা মেনে চলে সে ব্যক্তি খুব দ্রুত তার লক্ষ্যে পৌছাতে পারে, জীবনে তার কোনো অপূরনীয় কোনো কিছু থাকেনা। কথায় আছে-

“আমি তোমাদের বলেছি যে তোমরা মিনিটের খেয়াল রাখো, তাহলে দেখবে ঘন্টা গুলো আপনা থেকেই নিজেদের খেয়াল রাখছে।”

বিশ্বের বিখ্যাত সব জ্ঞানীগুনী ব্যক্তি খুব কম বয়সে বিখ্যাত হয়েছেন তেমনি বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত একজন লেখক হচ্ছেন সুকান্ত ভট্টাচার্য। যিনি মাত্র একুশ বছর বয়সে মারা যান। কিন্তু এত টুকু সময়ে বাংলা সাহিত্যে আলোড়ন তৈরি করে বিদায় নিয়েছেন৷ পাকিস্থানের এক কিশোরী মালালা যে সর্ব কনিষ্ঠ নোবেল বিজয়ী। সময় কে কাজে লাগিয়ে খুব কম সময়ে মানুষ তার স্বপ্ন পূরন করতে পারে। এটি হচ্ছে তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

জাতীয় জীবনে সময়ের গুরুত্ব 

জাতীয় জীবনে সমানুপাতিতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিবছর জুন মাসে পরবর্তী বছরের বাজেট ঘোষনা করতে হয়। এই বাজেটে  উল্লেখিত কমসূচি ও প্রকল্প সঠিক সময় শেষ করতে না পারলে সরকারকে চাপের মধ্যে পড়তে হয়। আবার যাবতীয় অঙ্গীকার সময়মতো শেষ করতে পারলে সরকারের সুনাম হয়। আসলে একটি দেশের উন্নয়ন নির্ভর করে সে দেশের মানুষ সময়ের প্রতি কতটা সচেতন। এর উপরে নির্ভর করে সে দেশের অগ্রগতি। পৃথিবীতে যে জাতি যতো একনিষ্ঠ সে জাতি তত উন্নত  হয়। আবার পরিশ্রমে হতে হলেও সমনিষ্ঠ হওয়া দরকার। 

বাঙালির সময়জ্ঞান

বাংলায় একটি কথা প্রচলিত আছে “আঠার মাসে এক বছর।” বাঙালি স্বভাবগত  বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সব কাজে দেরি করা। আমরা সময়মতো কাজ করি না। সময়ের কাজ অসময়ে করতে বেশি পছন্দ করি। সব কাজে দেরি করতে করতে এভাবেই আমাদের মানসিকতা তৈরি হয়েছে। কোথাও যদি কোন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা হয় তাহলে কখনোই সে অনুষ্ঠান সময় মত শুরু করতে পারিনা। আর সময় মতো শুরু করলেও অতিথিরা সময় মত আসতে পারে না। এ হচ্ছে আমাদের বাঙ্গালীদের উন্নতি না হওয়ার কারণ। প্রাচীনকাল থেকেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা এভাবে অভ্যস্ত হয়ে এসেছেন। তাই চাইলেও আমরা এটা পরিবর্তন করতে পারি না। 

যখন আমাদের পাশ্চাত্য জ্ঞান বিজ্ঞানের ছোয়া  লাগা শুরু হয় তখন থেকে আমাদের জীবন পরিবর্তন হওয়া  শুরু করে। কিন্তু আমাদের আরো বেশি সচেতন হতে হবে। কারন আমরা বাঙালিরা অনেক বেশি  পিছিয়ে  আছি। 

আধুনিক যুগের সময়ের মূল্য 

সময়কে কাজে লাগিয়ে আধুনিক যুগ তৈরি হয়েছে। আধুনিক যুগ আজ সভ্যতার বেধিমূলে উপনীত হয়েছে। তারা কখনোই সময়ের মূল্য দেয় না, তারা হচ্ছে গতিহীন,স্থবির ও মৃতপ্রায়।  যাদের জীবনে কখনো সফলতা ধরা দেয় ন। বিজ্ঞান  অনেক কিছু আবিষ্কার করেছে যেগুলো আমাদের সময়ের মূল্যকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আজ থেকে কয়েক বছর আগেও মানুষ হেঁটে হেটে থেকে অপরপ্রান্তে যেত। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে আজ এই পৃথিবী অনেক উন্নত। মুহূর্তেই এক প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে যাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে বেঁচে যাচ্ছে হাজার হাজার সময়। তারপর যখন যানবাহন আবিষ্কৃত হলো তখন মানুষ পায়ে হেঁটে যাওয়া বাদ দিয়ে ঘোড়া বা গরুর গাড়িতে করে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেত। বিজ্ঞানের কল্যাণের কারণে  আজ মাত্র কয়েক ঘন্টার মধ্যে শত শত মাইল পাড়ি দেয়া যাচ্ছে। যার কারনে প্রতিদিনের কাজ করার জন্য আরো বেশি সময় পাচ্ছি আমরা। এখন মানুষের হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের কারণে প্রতিটি স্থান এসেছে গতি। তাইতো কবি বলেছেন-

দুর্বার তরঙ্গ এক বয়ে গেল তীব্র বেগে 

বলে গেল : আমি আছি যে মুহূর্তে আমি গতিমান 

যখনই হারাই গতি, সে মুহূর্তে আমি আর নাই। 

 

সময়ানুবর্তিতার অন্তরায়

 

আমরা অনেক ভাবে দৈনন্দিন জীবনে সময় নষ্ট করি, অবহেলায় কাটিয়ে দেই৷ কিন্তু বর্তমান যুগে সময়ের অন্তরায় হিসেবে  অতিরিক্ত আধুনিক সভ্য হওয়াই দায়ী। প্রযুক্তি যেমন আমাদের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনকে জটিল করে দিয়েছে। কারণ বর্তমানে প্রযুক্তির কারণে আমরা সব থেকে বেশি সময় অপচয় করি। ইন্টারনেট, ফেসবুক, ইউটিউব, নেটফ্লিক্স এবং গেইম সহ  এরকম আরো অনেক কিছু রয়েছে যেগুলো আমাদের সময় নষ্ট করে দেয়। যেমন- 

ক. ইন্টারনেট: 

ইন্টারনেট যেমন আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। ঠিক তেমনি আমাদের জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। কারণ ছাত্র-ছাত্রী এবং শিশুরা পর্যন্ত দেই তো ইন্টারনেট ব্যবহার করে সময় নষ্ট করছে। 

খ. ফেসবুক

আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে ফেইসবুক এখন খুব জনপ্রিয় একটি সোশ্যাল মিডিয়া। যেখানে সবাই দৈনন্দিন জীবনের সকল কাজ ছেড়ে আমার অপচয় করে। যা আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। 

গ. ইউটিউব / নেটফ্লিক্স 

বর্তমান যুগের সবাই ইউটিউব এবং নেটফ্লিক্সে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে । পড়াশোনা, দৈনন্দিন যত কাজ আছে, সবকিছু ফেলে ইউটিউবে  এ আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।  আমরা যদি সময় হিসেব করে না চলি তাহলে কিভাবে সফল হব ? 

তাই  জীবনে  যদি  সফল হতে চাই তাহলে সময়কে মূল্য দিয়ে চলতে হবে । তবেই তো বিখ্যাত হতে পাব। 

সময়ানুবর্তিতা না মানার পরিনতি

সময়কে যদি কেউ অবহেলা করে সময়ানুবর্তীশীল না হয়,তাহলে তার জীবনে রয়েছে চরম দুর্ভোগ। সময়কে যারা অবহেলা করে তাদের পরিণতি কখনো ভালো হয় না। সময় সব সময় নিরবে চলে। তার গতি কখনো দেখা যায় না, সে সবার অগোচরে প্রবাহিত হয়। প্রকৃত জ্ঞানী ব্যক্তি কখনোই সময় কা অবহেলা করে না,সব সময় সময়কে  শ্রদ্ধা করে সময় অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করে। বোকারাই মূলত সময়ের মূল্য বোঝে না, সময়ানুবর্তিতা বুঝে না। তাই তারা জীবনে কখনো সফলতার মুখ দেখেনা। বিশ্বের যত জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিগন আছেন তারা সবাই সময়ের ব্যাপারে অনেক সচেতন ছিল। সময়ই তাদের সবাইকে বিখ্যাত কর তুলেছেন। 

সময়কে যারা অবহেলা করে, তারা কখনো তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। সবার কাছে অবহেলার পাত্র হিসেবে পরিচিত হন। সফলতা ছাড়া মানুষের জীবন দুর্বিষহ অভিশপ্ত হয়ে যায়। সারা জীবন সেই ব্যর্থ মানুষকে দুর্বিষহ অভিশপ্ত জীবন বয়ে বেড়াতে হয়। আর যারা সময় কে ব্যবহার করে তারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে খুব সহজে।সবার কাছে প্রশংসনীয় হয়ে ওঠে। সময়ের সঠিক ব্যবহার করার মাধ্যমে তারা সুখী সমৃদ্ধশীল হয়ে উঠে। সময়ের কাজ অসময়ে করলে কখনোই সেই ব্যক্তি সফল হতে পারেনা। প্রতিটি কাজের জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট সময়। প্রতিটি সচেতন মানুষের কাজ হচ্ছে সময় অনুযায়ী কাজ সম্পন্ন কর। যদি কোন কাজে অবহেলা করা হয়  তাহলে গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো কখনো  করা হয় না। 

সময়কে কাজে লাগানোর উপায় 

কয়েকটি বিষয়ের উপর খেয়াল রাখলে সময়কে কাজে লাগানো যায়। প্রথমে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। লক্ষহীন মানুষ সময় অপচয় করে। লক্ষ্যগুলোকে প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনুযায়ী ভাগ করা এবং সে অনুযায়ী কাজ করা। কোন নির্দিষ্ট সময় যে কাজটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেই কাজটি আগে সম্পন্ন করতে হবে। প্রতিটি কাজ শেষ করার সময়সীমা নির্ধারণ করা। এতে সময়ের অপচয় করার প্রবণতা কমে যায়। কি পরিমান সময় হাতে আছে সেই অনুযায়ী কাজ করা। সবশেষে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আলস্য ও উদাসীনতা বর্জন করা। 

সময়ানুবর্তিতা ও সাফল্য 

যে ব্যক্তি সময়ের মূল্য দিতে জানে না সে ব্যক্তি কখনো জীবনে উন্নতি লাভ করতে পারে না। জীবনে লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে সময় কে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। পৃথিবীতে যত সফল মানুষ আছে সেই সাফল্যের গোপন রহস্য হচ্ছে সময়ানুবর্তিতা। সময়ের মূল্য বোঝাতে গোবিন্দচন্দ্র দাস বলেছেন –

আজ করবো না করবো কালি

এইভাবে দিন গেল খালি। 

কেমন করে হিসাব দিব নিকাশ যদি চায় 

দিন ফুরায়ে যায়রে আমার দিন ফুরায়ে যায়। 

কোন মানুষই গুণের আধার হয়ে জন্ম নেয় না। গুনের আধার হয়ে জন্ম নেয়া সম্ভাবনা। ক্রমাগত অধ্যবসায় ও চেষ্টার মাধ্যমে মানুষ বিভিন্ন গুণ অর্জন করে। শৈশব থেকেই সমানুপাতিতা চর্চা করা উচিত।

সময় মূল্যবান হওয়ার কারণ

সময় কখনো কারো জন্য অপেক্ষা করে না। একবার চলে যায় তাকে আর কখনো ফিরে পাওয়া যায় না। সময়কে কোন কিছু দিয়েই মাপা সম্ভব নয়। সময়ের কাজ সময় না করলে জীবনে কখনো সফলতার মুখ দেখা যায় না। আমি আজকের কাজটি যদি কালকের জন্য ফেলে রাখি, তাহলে আগামীকাল গতদিনের কাজ করার জন্য সময় চলে যাবে। কিংবা কোন সমস্যার জন্য সে ফেলে রাখা কাজগুলো সম্পূর্ণ না করার ফলে জমে থাকে। যা পরবর্তীতে করার আর সুযোগ পাওয়া যায় না। সুযোগ পাওয়া গেলেও অনেক সময় সময় মিলে না। এভাবেই দিন দিন কাজের বোঝা গুলো ভারী হয়ে যায়। ফলে সে বিশাল কাজের বোঝা দেখে শরীরে ক্লান্তি নেমে আসে, বিষন্নতা দেখা দেয়। কিন্তু যদি সময়ের কাজ সময় সম্পন্ন করা হয় তাহলে কোন কাজ জমে থাকে না। প্রতিদিন একটু একটু করে কাজ করলেই সব কাজ শেষ করা যায় এবং জীবনের সফলতা অর্জন করা সম্ভব হয়। যদি তুমি তোমার জীবনকে ছন্দময়  করতে চাও, তাহলে সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকো। সময় তোমাকে সফলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেবে। সারাদিন যে যে ধরনের কাজ করো সেগুলো সময় অনুযায়ী ভাগ কর এবং সেই অনিযায়ী  কাজগুলি শেষ কর। আমাদের জীবনে যত কাজ আছে প্রতিটি কাজই পারস্পরিক সম্পর্কের বন্ধনে বাঁধা। সময়কে অবহেলা করে জীবনে কেউ কখনো সফলতা অর্জন করতে পারেনি কেউ পারবেওনা। সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে সফলতা অর্জন করা কখনোই সম্ভব নয়। 

মনীষীদের জীবনের সময় নিষ্ঠা 

পৃথিবীর ইতিহাসে যত সফল ব্যক্তি রয়েছে তারা সকলেই সময়ের মর্যাদা দিয়েছেন। কারণ সময়ের মর্যাদা ছাড়া সময়ের মূল্য না বুঝলে কেউ কখনো সফল ব্যক্তি হতে পারবে না। শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং খেলাধুলা সহ বেশি যত কিছু রয়েছে সেখানকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্বদের জীবনী থেকে জানা যায় যে তারা সময়ের ব্যাপারে অনেক সচেতন ছিলেন। সময়ানুবর্তিতায় তাদের জীবনের সফলতার সফলতার চাবিকাঠি। কাজী নজরুল ইসলাম, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নিউটন, শেক্সপিয়ার তাদের যদি জীবনী পড়ি সেখান থেকে জানতে পারবো তাদের সকলের সফলতার পেছনে রয়েছে সময়ানুবর্তিতা। উদ্ভিদের যে প্রাণ রয়েছে তা প্রমাণ করার জন্য স্যার জগদীশচন্দ্র বসু দীর্ঘদিন গবেষণা করে গেছেন। তিনি কখনো  নিরাশ হননি। সময়ের সাথে সাথে তিনি তার গবেষণা চালিয়ে গেছেন। অবশেষে তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন যে উদ্ভিদের প্রাণ আছে। ধৈর্য ও সমানুবর্তিতার মাধ্যমে যে মানুষ সফল হতে পারে এটি তার উৎকৃষ্ট প্রমাণ। 

আমরা যদি বিশ্ব ইতিহাসের দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে, যখন ভিয়েতনামের সাথে আমেরিকার যুদ্ধ হয় তখন ভিয়েতনাম অর্থনৈতিকভাবে চরম  সংকটে পড়েছিল, কিন্তু তারা মনোবল হারায়নি  হতাশ হয় নি, সময়ের সাথে সাথে তারা  সকল হতাশা দূর করেছিলেন, নতুন করে নিয়ম নীতি নির্ধারণ করে দেশটিকে আবার সে আগের জায়গায় নিয়ে গিয়েছিলেন। জাপানি সে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হয় তখন জাপান জাপান বিধ্বস্ত হয়ে গেছিল। অনেক মানুষ আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু তারা সময়কে কাজে লাগিয়ে আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে গেছে। প্রতিটি মানুষ যদি তাদের জীবনে সময় কে কাজে লাগায় তাহলে সে মানুষ জীবনে কখনো পরাজিত হবে না। সময়ানুবর্তিতায় মানুষকে বিখ্যাত করেছে এবং করবে। 

সময়ের অপব্যবহার ও আমাদের কর্তব্য

কথায় আছে- 

ছোট ছোট বালুকণা বিন্দু বিন্দু জল,,

গড়ে তুললে মহাদেশ সাগরতল। “

সময়ের  অপব্যবহার কখনো আমাদের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে না। তাই আমাদের উচিত সময়কে কাজে লাগানো। আমাদের উচিত প্রতিটি সময়ের হিসাব করা এবং সে অনুযায়ী নিজেকে পরিচালিত করা। সময়ানুবর্তীশিলতা  লাভ করার জন্য বিখ্যাত ব্যক্তিদের বই পড়তে পারি। তাহলে সময় সম্পর্কে আমরা সচেতন হতে পারব। আমাদের উচিত প্রতিটি সেকেন্ডের হিসাব কর।

ধর্মীয় দৃষ্টিতে সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব

 

প্রতিটি ধর্মে সময়ানুবর্তীশিল হওয়ার জন্য আহ্বান করা হয়েছে। সময়কে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম বিদায় হজের ভাষণে বলেছেন,

 ‘হে মানুষ! প্রত্যেককেই শেষ বিচারের দিনে সকল কাজের হিসাব দিতে হবে। অতএব সাবধান হও।’ অর্থাৎ মানুষ কিভাবে তাদের জীবন পরিচালনা করেছে তার হিসাব দিতে হবে।

খ্রিস্টান ধর্মের পবিত্র বাইবেলে বলা হয়েছে যে, 

‘আর একটু ঘুম, আর একটু তন্দ্রা, বিছানায় আর একটু গড়াগড়ি। এসব কিছু দরিদ্র ও অভাব দস্যুর মত তোমার অন্তরে হানা দেবে।’ 

হিন্দুদের ভগবত গীতায় বলা হয়েছে,

 ‘মানুষের অধিকার শুধু কর্মে। ফলে তার অধিকার নাই। কাজ কর। নিজেকে কর্মফলের ধারক মনে করো না। আবার নিজেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে দিও না।’

উপসংহার 

জীবন ছোট কিন্তু কাজের পরিধি ব্যাপক। কম সময়ের মধ্যে সাফল্যের চূড়ান্ত শীর্ষে যেতে হলে সময়কে যথার্থ ভাবে কাজে লাগাতে হবে। যে কৃষক সময়মতো বীজ বপন করে না সে কৃষক কিভাবে পাকা ফসল করে তুলবে?  যে ছাত্র নিয়মিত পড়াশোনা করার না সে কিভাবে কৃতকার্য হবে?  কাজেই এ কথা মানতেই হবে যে সময়কে অবহেলা করা উচিত নয়। বরং উপযুক্ত পরিশ্রম ও সময়ানুবর্তিতা মেনে চললে, চলার পথ শুগম হবে, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। 

 

Scroll to Top