সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রশ্ন উত্তর
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা। তোমাদের বাংলা সহপাঠ থেকে আজকে সিরাজউদ্দৌলা নাটক থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক ও অনুধাবন মূলক প্রশ্ন এবং উত্তর আলোচনা করা হলো। আশাকরি উপকৃত হবে।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের জ্ঞানমূলক প্রশ্ন
১. সিরাজউদ্দৌলা নাটকের শেষ সংলাপটি কার?
মোহাম্মাদি বেগের।
২. কোম্পানির ঘুসখোর ডাক্তার কে?
কোম্পানির ঘুসখোর ডাক্তার হলওয়েল।
৩. সিরাজইদ্দৌলা নাটকে মীরজাফর এর আসল নাম কি?
মোহাম্মাদ জাফর আলী খান।
৪. ইনি কি নবাব না ফকির? উক্তিটি কার?
উক্তিটি ক্লাইভের।
৫. সিরাজউদ্দৌলার গুপ্তচরের প্রকৃত নাম কী?
নারায়ন সিংহ।
৬. নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা দুর্গ দখল করে তার কী নাম রাখেন?
নবাব সিরাজউদ্দৌলা কলকাতা দুর্গ দখল করে তার নাম রাখেন আলিবর্দিপুর।
৭. ক্লাইভের আসল দলিলে কার রেফারেন্স থাকবে না?
ক্লাইভের আসল দলিলে উমিচাদের কোনো রেফারেন্স থাকবে না। উমিচাঁদ ছিলেন একজন বিশ্বাসঘাতক। তিনি ক্লাইভের সাথে ষড়যন্ত্র করে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করেন।
৮সিরাজউদ্দৌলা নাটকের প্রথম সংলাপ কার?
ক্লেটনের।
৯. পলাশিতে দেশপ্রেমিক সৈনিকরা যুদ্ধ করার সুযোগ পায়নি কেন?
পলাশিতে দেশপ্রেমিক সৈনিকরা যুদ্ধ করার সুযোগ পায়নি কারণ তারা ষড়যন্ত্রের কথা জানত না। উমিচাঁদের ষড়যন্ত্রের ফলে নবাব সিরাজউদ্দৌলার সেনাবাহিনী বিভক্ত হয়ে যায়। দেশপ্রেমিক সৈনিকরা ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরেও নবাবের সাথে যুদ্ধ করতে রাজি হয়নি।
১০. সিরাজউদ্দৌলার হত্যাকারীর নাম কি?
মোহাম্মাদী বেগ।
১১. উমিচাঁদ এ যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক’ কেন?
উমিচাঁদ এ যুগের সেরা বিশ্বাসঘাতক কারণ তিনি নবাবে সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। তিনি নবাবের সাথে বন্ধুত্ব করে তার বিশ্বাস অর্জন করেন। তারপর তিনি ক্লাইভের সাথে ষড়যন্ত্র করে নবাবকে পরাজিত করেন।
১২. কাকে আলিনগরের দেওয়ান নিযুক্ত করা হয়েছে?
আলিনগরের দেওয়ান নিযুক্ত করা হয় রাজা মানিকচাঁদ।
১৩. নবাব সিরাজউদ্দৌলার জননী কে?
আমিনা বেগম।
উমিচাঁদ কোথায় থেকে বাংলাদেশ এসেছেন?
উমিচাঁদ লাহোর থেকে বাংলাদেশ এসেছেন।
১৪. ঘসেটি বেগম কোন প্রাসাদে বাস করতেন?
মতিঝিল প্রাসাদ।
১৫.ক্লাইভের আসল দলিলে কার রেফারেন্স থাকবে না?
উমিচাঁদ এর কোনো রেফারেন্স থাকবেনা।
১৬. চারদিকে শুধু অবিশ্বাস আর সন্দেহ উক্তিটি কার?
এই উক্তিটি রায়দূর্লভের।
১৭. কতসালে আলিনগরের সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হয়?
১৭৫৭ সালের ৯ই ফ্রেব্রুয়ারী আলীনগর এর সন্ধিচুক্তি সম্পাদিত হয়।
১৮. কোথায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা বন্দি হন?
ভগবান গোলায়।
১৯. মীরজাফরের গুপ্তচর কে?
উমর বেগ।
২০. সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রীর নাম কি?
লুৎফুন্নেসা।
২১. সিরাজউদ্দৌলা নাটকের মোট কতটি চরিত্র রয়েছে?
মোট ৪০ টি চরিত্র রয়েছে।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকের অনুধাবনমুলক প্রশ্ন
১. “আমার নালিশ আমার নিজের বিরুদ্ধে” বুঝিয়ে লেখ।
আমার নালিশ আমার নিজের বিরুদ্ধে” এই উক্তিটি নবাব সিরাজউদ্দৌলা নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি। এই উক্তিটিতে নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার নিজের ভুল এবং ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন তার নিজের ভুলের কারণেই তিনি পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়েছেন।
নবাব সিরাজউদ্দৌলা একজন উচ্চাভিলাষী এবং দেশপ্রেমিক শাসক ছিলেন। তিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হন। তার ব্যর্থতার কারণ ছিল তার নিজের ভুল। নবাব সিরাজউদ্দৌলা তার সেনাবাহিনীকে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারেননি। তিনি তার সামরিক নীতিতেও অনেক ভুল করেছিলেন। তিনি তার মন্ত্রীদের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে পারেননি। তিনি তার প্রজাদের সাথে ভালো যোগাযোগ রাখতে পারেননি।
তাই তিনি উপরোক্ত উক্তিটি করেছিলেন।
২. ইনি কি নবাব না ফকির’ – উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
এই উক্তিটি ক্লাইভের। ইনি কি নবাব না ফকির’ উক্তিটি নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রতি ক্লাইভের অবজ্ঞার প্রকাশ।
ক্লাইভ একজন ইংরেজ অফিসার ছিলেন যিনি পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করেছিলেন। পরাজিত হওয়ার পর, নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্লাইভের সামনে হাজির করা হয়। ক্লাইভ নবাব সিরাজউদ্দৌলার পোশাক দেখে অবাক হয়ে যায় কারন নবাব সিরাজউদ্দৌলা সব সময় সাধারন পোশাকে চলাফেরা করতেন।তার পোশাকে অভিজাত্যের কোনো ছোয়া ছিলনা।
৩. ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষ থেকে সবই সম্ভব। উক্তিটি কার? কেন করেছে বিশ্লেষণ কর।
“ঘরের লোক অবিশ্বাসী হলে বাইরের লোকের পক্ষ থেকে সবই সম্ভব” সিরাজউদ্দৌলা নাটকের লুৎফুন্নেসার।
লুৎফুন্নেসা ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার স্ত্রী। তিনি একজন বুদ্ধিমতী এবং সাহসী নারী ছিলেন। তিনি তার স্বামীর পক্ষে ছিলেন এবং বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য তার সংগ্রামে তাকে সমর্থন করেছিলেন। উক্তিটিটি নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের কারণ নিয়ে তার হতাশার প্রকাশ করে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে তার আত্মীয়-স্বজন এবং বন্ধুরা নবাবের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। এই বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তিনি পরাজিত হন এবং বাংলা ইংরেজদের হাতে পড়ে যায়।
৪. সিরাজউদ্দৌলা নাটকে সিরাজউদ্দৌলার শেষ পরিনতি ব্যাখ্যা কর।
সিরাজউদ্দৌলা নাটকে সিরাজউদ্দৌলার শেষ পরিণতি ছিল একটি দুঃখজনক পরিণতি। তিনি একজন উচ্চাভিলাষী এবং দেশপ্রেমিক শাসক ছিলেন। যিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তার উদ্দেশ্য অর্জনে ব্যর্থ হন এবং পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হন। পরাজয়ের পর নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ক্লাইভের কাছে বন্দী করা হয়। ক্লাইভ তাকে ব্রিটিশদের কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলা আত্মসমর্পণ করেন, কিন্তু তিনি তার বন্ধু,দেশ এবং সমর্থকদের জন্য চিন্তিত ছিলেন। নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে বন্দী করে রাখা হয় এবং সেখানেই তাকে হত্যা করা হয়।
৫. ‘তার নবাব হওয়াটাই আমার মস্থ ক্ষতি’ উক্তিটির তাৎপর্য লেখ।
সিকান্দার আবু জাফরের রচিত “সিরাজউদ্দৌলা” নাটকের তৃতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যে ঘসেটি বেগম এই উক্তিটি করেন। এই উক্তিটি ঘসেটি বেগমের নবাব সিরাজউদ্দৌলার প্রতি তার তীব্র বিদ্বেষ এবং হিংসার প্রকাশ।
ঘসেটি বেগম ছিলেন বাংলার নবাব আলীবর্দী খানের বড় মেয়ে এবং সিরাজউদ্দৌলার খালা। তিনি একজন প্রভাবশালী নারী ছিলেন যিনি বাংলার রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি তার ভাই আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পর সিরাজউদ্দৌলার অভিভাবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু ঘসেটি বেগম সিরাজউদ্দৌলার শাসনকে কখনই সমর্থন করেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সিরাজউদ্দৌলা একজন অযোগ্য শাসক যিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারবেন না। তিনি সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন এবং পলাশীর যুদ্ধে তার পরাজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। “তার নবাব হওয়াটাই আমার মস্ত ক্ষতি” উক্তিটি ঘসেটি বেগমের এই বিদ্বেষ এবং হিংসার প্রকাশ। তিনি বিশ্বাস করেন যে সিরাজউদ্দৌলার নবাব হওয়া তার জন্য একটি বড় ক্ষতি।
৬.সাঁফ্রে সিরাজের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন কেন ব্যাখ্যা কর।
সাঁফ্রে সিরাজের পক্ষে যুদ্ধ করেছেন কারণ তিনি একজন দেশপ্রেমিক ছিলেন। যিনি বাংলার স্বাধীনতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ইংরেজরা বাংলাকে দখল করার অপচেষ্টা করছে এবং তিনি এই অপচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করতে চেয়েছিলেন।
সাঁফ্রে ছিলেন একজন ফরাসি বংশোদ্ভূত ব্যক্তি যিনি বাংলায় বসবাস করতেন। তিনি বাংলার সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বাংলা একটি স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ এবং এটি ইংরেজদের দ্বারা শাসিত হওয়া উচিত নয়। সাঁফ্রে সিরাজের পক্ষে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সিরাজের সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এবং যুদ্ধের কৌশল নিয়ে তাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। পলাশীর যুদ্ধে সাঁফ্রে সিরাজের পক্ষে লড়াই করেছিলেন এবং তিনি যুদ্ধে বীরোত্বের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন।
৭. শুভকাজে অযথা বিলম্ব করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’ উক্তিটি কার? কোন কাজের কথা বলা হয়েছে? বুঝিয়ে লিখ।
উক্তিটি সিকান্দার আবু জাফরের রচিত “সিরাজউদ্দৌলা” নাটকের চতুর্থ অঙ্কের দ্বিতীয় দৃশ্যে মীরজাফর বলেন। এখানে “শুভকাজ” বলতে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে।
মীরজাফর ছিলেন একজন বিশ্বাসঘাতক। তিনি ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করে পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের জন্য দায়ী ছিলেন। তিনি এই ষড়যন্ত্রে জড়িত হওয়ার কারণ হিসেবে বলেছিলেন যে “শুভকাজে অযথা বিলম্ব করা বুদ্ধিমানের কাজ নয়।”
Also read: কোণ কাকে বলে ? কত প্রকার ও কি কি