বিপ্রতীপ কোন কাকে বলে?

বিপ্রতীপ কোণ কাকে বলে

বিপ্রতীপ কোন কাকে বলে

জ্যামিতি শাখায় ভালো করার জন্য বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কোণ সম্পর্কে সঠিকভাবে জানতে হলে এর প্রকারভেদ সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই কোণ রয়েছে। পরিমাপ পদ্ধতিতে বা জ্যামিতিতে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। উপপাদ্যে ও সম্পাদ্যে বিপ্রতীপ কোণের ভূমিকা রয়েছে ব্যাপক। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করব বিপ্রতিপ কোণ কাকে বলে এবং বিপ্রতীপ কোণ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয়াবলি।

বিপ্রতীপ কোণের উৎপত্তি 

‘বিপ্রতীপ’ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে বিপরীত শব্দ থেকে। ইংরেজি ‘Opposite’ শব্দ যার বাংলা আভিধানিক অর্থ হলো বিপরীত। সহজ ভাবে আমরা বলতে পারি যে বিপরীত বলতে  উল্টো দিক বা উল্টা বুঝানো হয়। যেমন পূর্বের  বিপরীত হলো পশ্চিম আবার দক্ষিনের  বিপরীত হলো উত্তর, ঠিক যেভাবে কালোর বিপরীত সাদা, ডানের বিপরীত বাম, ভালোর বিপরীত মন্দ। সুতরাং বিপরীত বলতে উল্টো দিকে বুঝানো হয় এবং এই বিপরীত কোণ থেকে উৎপন্ন হয়েছে বিপ্রতীপ কোণ। 

বিপ্রতীপ কোন কাকে বলে?

বিপ্রতীপ কোণ এর সংজ্ঞা বা কাকে বলে জানার আগে আগে জানতে হবে বিপরীত কোণ সম্পর্কে। একটি কোণের উল্টোদিকে যে কোণটি থাকে তাকেই বিপরীত কোণ বলে। অপরদিকে একটি সরল রশ্মির প্রান্ত বিন্দুতে আরেকটি রশ্মির প্রান্ত বিন্দু মিলিয়ে গেলে একটি কোণের উৎপত্তি হয়। সুতরাং বিপ্রতীপ থেকে দুটি রশ্মি বা দুইটি সরলরেখার প্রয়োজন হয়। একটি সরলরেখাকে একটি সরলরেখা ছেদ করার জন্য  ছেদ বিন্দুতে চারটি কোণের উৎপন্ন হয়। ফলে একটি বিপরীত দিকে থাকা কোণটিকে অপর একটির বিপ্রতীপ কোণ বলা হয়।  

বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য 

বিপ্রতীপ কোণ পরস্পর কেমন জানতে হলে বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে হবে। নিচে বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করা হলো-

  • দুইটি সরলরেখায় একটি অপরটিকে ছেদ করলে উৎপন্ন হয় বিপ্রতীপ কোণ। 
  • বিপ্রদীপ কোনগুলি পরস্পর সমান হয় ও এদের পরিমাপ সবসময় সমান থাকে।  
  • বিপ্রতীপ কোন দুইটির শীর্ষ বিন্দু একরকম বা সাধারণ থাকে। 
  • বিপরীত কোণের একটি কে যত পরিমাণ বড় বা ছোট করা হবে অপরটি তত পরিমাণ বড় বা ছোট হবে। 
  • ৩০ ডিগ্রি কোণ এর বিপ্রতীপ কোণ হয় ৩০ ডিগ্রি কিন্তু ৪৫ ডিগ্রি কোণ এর বিপ্রতীপ কোণ হয় ৪৬ ডিগ্রি। ৬০ডিগ্রি কোণ এর বিপ্রতীপ কোণ হয় ৬০ ডিগ্রি এবং ৯০ ডিগ্রি কোণ এর বিপ্রতীপ কোণ হয় ৯০ ডিগ্রি অর্থাৎ সর্বদা পরিমাপ সমান থাকে। 
  • বিপ্রতীপ কোণ জোড়ার প্রতিটি ছেদক এর উভয় পার্শ্বে অবস্থান করে। 
  • যদি বিপ্রতীপ কোণের জোড়ার যেকোনো একটি সমকোণ বা ৯০° হয় তাহলে অপরটিও সমকোণ হবে বা ৯০ ডিগ্রি হয়। যে দুইটি সরলরেখার মাধ্যমে বিপ্রতীপ কোণের সৃষ্টি হয় সেই দুইটি সরলরেখার একটির অপরটিকে খাড়া বা লম্বভাবে ছেদ করে।  এই ছেদের মাধ্যমে উৎপন্ন কোণের প্রতিটিকে উলম্ব বিপ্রতীপ কোণ বা Vertical Opposite Angel বলে।
  • দুইটি সরলরেখা পরস্পরকে ছেদ করার মাধ্যমে ছেদ বিন্দুতে দুই জোড়া বিপ্রতীপ কোণ এর উৎপন্ন হয় এবং এক জোড়ার যোগফল ১৮০ ডিগ্রি  হতে ছোট হলে অপর জোড়াটির ১৮০ ডিগ্রি হতে বড় হয়। 
  • বিপ্রতীপ কোণ জোড়ার একটি কোণের সমদদ্বিখন্ডক রেখা অপরটিকে সমদিখন্ডিত করে। 

বিপ্রতীপ কোণ ও বিপরীত কোণের পার্থক্য

  • দুইটি কোণ অবিচ্ছিন্ন বা বিচ্ছিন্ন যেকোনো ভাবে সামনাসামনি বা বিপরীত বসলে কোণ দুইটিকে বিপরীত কোণ বলা হয়। কিন্তু বিপ্রতীপ কোন বিচ্ছিন্ন হয়না যদিও একটির উল্টো দিকে অপর কুন্তী অবস্থান করে তাহলে কোন দুইটির শীর্ষবিন্দু এক থাকে এবং কোণ দুইটি উৎপন্ন হয় দুইটি সরলরেখার সাহায্যে। 
  • দুইটি বিপরীত কোণের প্রত্যেকটিতে দুইটি করে মোট চারটি রশ্মি লাগবে এবং রশ্মিগুলোর প্রান্তবিন্দু মিলিত হওয়ার পর কোন সরলরেখার সৃষ্টি হয় না। কিন্তু দুইটি বিপ্রতীপ কোণে দুইটি করে আয় আয় টুটু সর্বমোট চারটি রশ্মি থাকে। রশি গুলোর প্রান্ত বিন্দুগুলি মিলিত হয়ে দুইটি সরলরেখার সৃষ্টি করে। 
  • বিপরীত কোন যেকোন ভাবে যেকোনো ক্ষেত্রে চতুর্ভুজ,  বহুভুজ, ত্রিভুজ এর অভ্যন্তরে তৈরি হতে পারে  কিন্তু বিপ্রতীপণ উৎপন্ন হয় শুধু ক্ষেত্রে দুইটি সরলরেখার বা দুইটি বাহুর সাহায্যে এবং বিপ্রতীপ কোণের একটির ক্ষেত্রের ভেতরে সৃষ্টি হওয়ার ফলে অন্য একটি ক্ষেত্রটির বাইরে সৃষ্টি হয়।

উপসংহার

সহজ ভাবে আমরা বলতে পারি, একটি সরলরেখাকে অপর একটি সরলরেখা দিয়ে ছেদ করলে যে চারটি কোণের  উৎপত্তি হয় তাদের একটির বিপ্রতীপ কোণ হলো অপরটি। বিপ্রদীপ কোনগুলি পরস্পর সমান হয় ও এদের পরিমাপ সবসময় সমান থাকে। বিপ্রতীপ কোণের দুইটির শীর্ষ বিন্দু একরকম বা সাধারণ থাকে। আজকের এই আলোচনা থেকে আমরা বিপ্রতীপ কোণ সম্পর্কে মোটামোটি ধারনা পেতে পারি।

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন 

১. বিপ্রতীপ কোণ কি? 

উত্তর: আরো বলা যায় যে, দুইটি সরলরেখা যেকোনো এক বিন্দুতে ছেদ করার ফলে যে চারটি কোণের উৎপন্ন হয় তাদের একটিকে অপরটির বিপ্রতীপ কোণ বলে।

২. বিপ্রতীপ কোণের বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি?

উত্তর: দুইটি সরলরেখায় একটি অপরটিকে ছেদ করলে উৎপন্ন হয় বিপ্রতীপ কোণ। বৈশিষ্ট্য গুলি হলো:

  • বিপ্রদীপ কোনগুলি পরস্পর সমান হয় ও এদের পরিমাপ সবসময় সমান থাকে।  
  • বিপ্রতীপ কোন দুইটির শীর্ষ বিন্দু একরকম বা সাধারণ থাকে। 
  • বিপরীত কোণের একটি কে যত পরিমাণ বড় বা ছোট করা হবে অপরটি তত পরিমাণ বড় বা ছোট হবে ইত্যাদি। 

Also Read: সন্নিহিত কোণ কাকে বলে?

Scroll to Top