প্রমিত ভাষা কাকে বলে
যে ভাষা সকল জনগোষ্ঠীর জন্য সার্বজনীন সে ভাষাকেই আমরা প্রমিত ভাষা বলে থাকি। যেকোনো জনগোষ্ঠী তাদের মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য প্রমিত ভাষা ব্যবহার করে থাকে। প্রমিত ভাষার অপর একটি নাম রয়েছে অনেকেই জানেন না। এর অপর নাম হল চলিত ভাষা। তবে অনেক সময় এই প্রমিত ভাষাকে মান্য ভাষা বা সার্বজনীন ভাষাও বলা হয়। আর ইংরেজিতে প্রমিত ভাষাকে স্টান্ডার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ বলা হয়।
প্রমিত ভাষা কাকে বলে?
প্রমিত ভাষা বলতে আমরা সে সকল ভাষাকে বুঝে থাকি যে ভাষার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোন জনগোষ্ঠী তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে। এ কারণে প্রমিত ভাষাকে সার্বজনীন ভাষা বা মান্য ভাষাও বলা হয়। একটি ভাষার নির্দিষ্ট রূপ হল প্রমিত ভাষা। প্রমিত ভাষা একটি নির্দিষ্ট দেশে বা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত একটি ভাষার লিখিত রূপ এর উপর নির্ভর করে প্রমিত ভাষা গড়ে ওঠে। এটি পৃথক হয় অন্যান্য ভাষার রূপগুলি থেকে।
প্রমিত ভাষার বৈশিষ্ট্যসমূহ
বাংলা ভাষার প্রমিত করণের প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। তবে এই প্রক্রিয়ায় রয়েছে বিভিন্ন উপভাষার সমন্বয় সাধন এই ভাষাটির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। উপরের আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম প্রমিত ভাষা কাকে বলে এবং প্রমিত ভাষার অপর নাম গুলি কি কি। প্রমিত ভাষার বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলি নিচে উল্লেখ করা হলো:
- এটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে বা নির্দিষ্ট কোন অঞ্চল সমূহে ব্যবহৃত হয়।
- লিখিত রূপের উপর নির্ভর করে প্রমিত ভাষা গড়ে ওঠে
- প্রমিত ভাষা পৃথক হয় একটি ভাষার অন্যান্য রূপগুলি থেকে ।
- প্রমিত ভাষায় সাধারণত নির্দিষ্ট একটি জনগোষ্ঠীর সার্বজনীন ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
- প্রমিত ভাষা ব্যবহারের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক বৃহৎ আকারের হয়ে থাকে।
- প্রমিত ভাষা এমন সহজ বোধ্য এক ভাষা যার মাধ্যমে সাহিত্য রচনা করা যায়।
- কথা বলার কাজে, লেখার কাজে যেমন চিঠি লিখার ক্ষেত্রে প্রমিত ভাষার ব্যবহার সর্বোচ্চ হয়ে থাকে এবং সবচেয়ে সহজ।
প্রমিত ভাষার কিছু উদাহরণ নিচে আলোচনা করা হলো –
- ব্রিটিশ ইংরেজি এবং আমেরিকান ইংরেজি ইংরেজি ভাষার প্রমিত রূপ
- ঢাকার উপভাষা হলো বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ।
- দিল্লির উপভাষা হলো হিন্দি ভাষার প্রমিত রূপ।
সুবিধা
প্রমিত ভাষার বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে। নিচে এসে সব সুবিধা গুলি আলোচনা করা হলো –
শিক্ষার সুবিধা
শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রমিত ভাষার ব্যাপক প্রয়োজনীতা রয়েছে। শিক্ষার মান বৃদ্ধি করা যায় প্রমিত ভাষার মাধ্যমে।
যোগাযোগের সুবিধা
বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ প্রমিত ভাষা ব্যবহার করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করতে পারে।
সরকারি কাজের সুবিধা
সরকারি কাজের দক্ষতা প্রমিত ভাষার মাধ্যমে বৃদ্ধি করা যায়। বাংলাদেশে ঢাকার উপভাষাই হলো বাংলা ভাষার প্রমিত রূপ। বাংলা ভাষার আদর্শ রূপে বিবেচনা করা হয় প্রমিত রূপটিকে। এটি সরকারি কাজ, মিডিয়া এবং শিক্ষার কাজে ব্যবহৃত হয়।
প্রমিত ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে পার্থক্য
আঞ্চলিক ভাষা হল এমন ভাষা যে এক অঞ্চলের মানুষের কথা আরোক অঞ্চলের মানুষ সহজে বুঝতে পারে না। কেননা তাদের ভাষা অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হয়। অঞ্চল বেদে ভাষার বৈচিত্র্য ও উচ্চারণে ভিন্নতা থাকে। আর আঞ্চলিক ভাষায় এইরকম সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করার জন্যই ব্যবহার করা হয় প্রমিত ভাষা বা চলিত ভাষা। ভাষার আদর্শ রূপ হল প্রমিত ভাষা।
প্রমিত ভাষা ও উপভাষার মধ্যে পার্থক্য
প্রমিত ভাষাগুলোর ব্যবহার ভাষাভাষী অঞ্চলে সর্বজনীনভাবে হয়ে থাকে। অঞ্চলভেতে এর কোন পরিবর্তন হয় না। আর উপভাষা গুলি ক্ষুদ্রতম অঞ্চলে ব্যবহার হয়।
উপসংহার
পরিশেষে বলা যায় যে প্রমিত ভাষার নাম শুনে প্রথমে আমাদের অচেনা মনে হয় কিন্তু এর অপর নাম গুলি শুনলে আমরা বুঝতে পারি। প্রমিত ভাষার অপর নাম গুলি হল মান্য ভাষা বা সার্বজনীন ভাষা আর সহজ ভাবে বলতে গেলে চলিত ভাষা। প্রমিত ভাষা আপনার অজানা হয়ে থাকলে আজ এ আর্টিকেলটি পড়লে আর অজানা থাকবে না এবং আপনি এই ভাষা সম্পর্কে সুন্দর ধারণা পাবেন।
বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
১. প্রমিত বাংলা ভাষা কি?
উত্তর: আঞ্চলিক ভাষার সীমাবদ্ধতাতে অতিক্রম করার জন্য প্রমিত ভাষা ব্যবহৃত হয়।
২. প্রমিত ভাষা ও আঞ্চলিক ভাষার পার্থক্য কি?
উত্তর: ভাষার ভিন্ন ভিন্ন কিছু রূপকে বা অঞ্চলভেতে যে ভাষায় কথা বলে সেটি আঞ্চলিক ভাষা। আর হাসার আদর্শ রূপ হল প্রমিত ভাষা।
৩. প্রমিত ভাষার ব্যবহার?
উত্তর: সকল ভাষা গোষ্ঠীর মধ্যে ভাব বিনিময়ের জন্য যে একই ভাষা এক রকমের ভাষা ব্যবহার হয় তাই প্রমিত ভাষা। একটি অভিন্ন ভাষা প্রমিত রূপে বা মান্য রূপে ও ব্যবহার হয়।
Also Read: বাক্য কাকে বলে