বৈশাখি মেলা | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
বৈশাখী মেলা বাঙ্গালীদের কাছে অন্যতম একটি আনন্দের দিন। বৈশাখী মেলা বাংলা বছরের প্রথম দিন পালন করা হয়। বিভিন্ন এলাকা বৈশাখী মেলা এক থেকে সাত দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। গ্রাম এবং শহরের স্থানীয় লোকেরাই এ মেলার আয়োজন করে থাকে। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অনেক মেলার আয়োজন করা হয়। কোথাও কোথাও আবার বৈশাখী মেলায় সারা মাস জুড়েই চলে। বৈশাখী মেলাগুলোকে সর্বসাধারণের উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় । মেলাতে না, গান, নাগরদোলা, যাত্রাপালা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক উৎসবের আয়োজন করা হয়। মেলারডিনে ছেলে বুড়ো ছোট বড় সবাই মিলে অনেক আনন্দ উপভোগ করে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা সবাই দলবেঁধে মেলায় যায়। মেয়েরাও সবাই মিলে মেলাতে যায়। মেলায় বিভিন্ন ধরনের হাড়ি পাতিল, খেলনা,ঘর সাজানোর সৌখিন জিনিস কিনতে পাওয়া যায়। মেলায় হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতির অনেক কিছুই কিনতে পাওয়া যায়। মেলার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষণীয় খাবার হচ্ছে বিভিন্ন আকৃতির সন্দেশ এবং হাওয়াই মিঠাই। মেলার দিন সকাল থেকেই পুরো গ্রাম সাজ সাজ রবে মেতে ওঠে। গ্রামে বৈশাখী মেলায় সাধারণত নদীর ধারে বটগাছের নিচে আয়োজন করা হয়। শহরের বৈশাখী মেলা গ্রামের বৈশাখী মেলা থেকে অনেকটাই ভিন্ন। ঢাকায় রমনার বটমূলে অনেক বড় আকারের বৈশাখী মেলার শোভাযাত্রা দেখা যায়। সারাদিনব্যাপী না, গান, কবিতার আয়োজন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ধরনের আলপনা দিয়ে পুরো শহর সাজিয়ে তোলে। ঢাকা শহরে ছোট বড় খাবারের অনেক স্টল দেখা যায। সকাল বেলায় বাঙালির ঐতিহ্যের পান্তা ভাতের সাথে ইলিশ মাছ এবং হরেক রকম ভর্তা খায়। বৈশাখী মেলা বাঙ্গালীদের প্রাণের উৎসব। এই উৎসবে সকল ভেদাভেদ ঘুচে যায়। সকল ধর্মের সকল শ্রেণীর মানুষ এক হয়ে আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে। বৈশাখী মেলা প্রানী এনে দেয় খুশির বন্যা, ধুয়ে মুছে দেয় সারা বছরের যত ক্লান্তি ও মানসিক অশান্তি।
বৈশাখি মেলা | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
নববর্ষ বাঙালিদের প্রাণের উৎসব। আর নববর্ষের প্রান হচ্ছে বৈশাখী মেলা। নববর্ষ কে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। বৈশাখী মেলার প্রথম দিন শহরের ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে অনেক মেলা বসে। বাঙালিরা নতুন বছরের আনন্দ ও উৎসব উদযাপন করে বৈশাখী মেলা পালনের মাধ্যমে। বৈশাখী মেলা পালন করা বাঙ্গালীদের হাজার বছরের ঐতিহ্য। আবহমান কাল থেকে এই বৈশাখী মেলা বাঙালিরা পালন করে আসছে। বৈশাখী মেলা কে কেন্দ্র করে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। এর মধ্যে বেশ কিছু ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলো ঘোর দৌড়, নৌকা বাইচ, বলি খেল, মহিলাদের বালিশ পাচার ইত্যাদি। বৈশাখী মেলা বসে খোলা আকাশের নিচে, গ্রামের হাটবাজারে, স্কুল কলেজের মাঠ, এবং নদীর তীরে। বৈশাখী মেলা বিশাল বট বৃক্ষের নিচে বসে। মেলা কে কেন্দ্র করে হরেক রকমের দোকানপাট বসে। সারাদিন মেলায় হরেক রকমের জিনিস কেনাবেচা হয়। গৃহিণীদের নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য, নানা জাতের কুটির শিল্প, মৃৎশিল্প, হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প এবং হরেক রকমের পন্যের সমাহার ঘটে বৈশাখী মেলায়। বৈশাখী মেলায় যাত্রা, পুতুল নাচ, নাগরদোলা, সার্কাস সহ বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মেলায় বিভিন্ন ধরনের পিঠাপুলি, মিষ্টি জাতীয় খবার, সন্দেশ, হাওয়াই মিঠাই, বাতাসা, চিড়া, মুড়ি, জলপান, সহ মজার মজার খাবার পাওয়া যায়। বৈশাখী মেলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া। তাই সকল ধর্মের মানুষ, ধনী গরিব নির্বিশেষে বৈশাখী মেলা উদযাপন করে। বৈশাখী মেলায় সবাই একই সুরে গেয়ে ওঠে “এসো হে বৈশাখ এসো এসো।” বৈশাখি মেলায় বিভিন্ন ধরনের গানের আসর বসে৷ বাউল গান, জারি গান বৈশাখি মেলার অন্যতম পুরনো সংস্কৃতি। বৈশাখি মেলার আয়োজন বাংলাদেশের ছোট বড় সব জায়গাতেই আয়োজন করা হয়। সব শহরে বৈশাখী মেলা শুধু যে আনন্দ নিয়ে আসে তা নয়, মেলা আসে ধনী-গরী, হিন্দু-মুসলিম সকল ভেদাভেদ দূর করতে। বৈশাখী মেলা আসে মানুষের মনের কষ্ট, গ্লানি দূর করে দিতে। তাই সব দিক থেকেই বৈশাখী মেলার গুরুত্ব অপরিসীম। বৈশাখী মেলা আসে বাঙালিকে নতুন করে অনুপ্রাণিত করার জন্য। বৈশাখী মেলা বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ মেলায় বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক, খাবার, গান, নৃত্য, নাটক, খেলাধুলা ইত্যাদির প্রদর্শনী ও পরিবেশনা করা হয়। এতে নতুন প্রজন্ম বাঙালি সংস্কৃতির সাথে পরিচিতি লাভ করে। বৈশাখী মেলা বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এ মেলা বাঙালিদের জীবনে আনন্দ, উৎসাহ ও উদ্দীপনা সঞ্চার করে।
বৈশাখি মেলা | অনুচ্ছেদ -৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
বাংলা নববর্ষের আনন্দধ্বনি বয়ে আনে পহেলা বৈশাখের উৎসব, আর এই উৎসবের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র বৈশাখী মেলা। গ্রাম-বাংলার মাটি থেকে শহরের অলিতে গলিতে পর্যন্ত সারা বাংলাদেশ জুড়ে এই মেলার আয়োজন করা হয়। হালখাতায় নতুন হিসাবের খাতা খোলার শুভকামনা থেকে পান্তা ইলিশের গন্ধমাখা সকাল পর্যন্ত, মেলা সাজে নানা রকমের রীতি আর ঐতিহ্যে। কাপড়চোপড়ের দোকান থেকে মৃৎশিল্প ও হস্তশিল্পের পসার, খাবারের গন্ধে মাতোয়ারা – সবকিছুই মিলে মেলা জুরে উৎসবের আমেজ। গ্রামের মাঠে নাগরদোলা আর পুতুল নাচের ঢোলের তালে মেতে ওঠে ছোট্ট শিশুরা, মেলায় রাতের যাত্রাপালার গানে বুকে জাগে প্রাচীন বাংলার সুর। শহরের মেলার মঞ্চে আধুনিক গানের ঝংকার আর নাচের তালে মিশে নাটকের সংলাপ, ছড়িয়ে পড়ে নববর্ষের আনন্দধ্বনি। এই বৈচিত্র্যই বৈশাখী মেলার প্রাণ, এই সমাহারই বাঙালি সংস্কৃতির শক্তি। পুরনো আর নতুনের মেলবন্ধনে, আনন্দ আর ঐতিহ্যের সমাপতনে তৈরি হয় বৈশাখী মেলার অপূর্ব সুর। আর সেই সুরেই মুখরোচিত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের উৎসবের মহিমা। সব মিলিয়ে, পহেলা বৈশাখের আগমনী বাতাসে উৎফুল্ল হয়ে ওঠে বাঙালি মন। গ্রামেগঞ্জে, শহরের প্রান্ত ছেড়ে এমনকি বিদেশের মাটিতেও বৈশাখী মেলার রঙিন উৎসব আয়োজন করা হয়। মৃৎশিল্পের চাকা ঘুরে ওঠে ছন্দে, হস্তশিল্পের সুঁইয়ের নাচে জন্ম নেয় নতুন নকশা। পাতে পাতে গন্ধে মাতোয়ারা পান্তা-ইলিশ, মিষ্টির স্বাদ, চাটপটে ঝালমুড়ি, সবই মিলে এক অপূর্ব স্বাদের সমাহার। নাগরদোলায় ঝুলেন স্বপ্নের রাজকুমারী, পুতুল নাচে ফুটে ওঠে গল্পের রাজ্য। যাত্রাপালার মঞ্চে হাসি-কান্না, তবলা-খোলের তালে মেতে ওঠে দর্শক। ধর্মের বেড়াজাল ভেঙে সবাই এক মিলে আনন্দে ঝুলে। হালখাতা খুলে ব্যবসায়ীরা নতুন শুরু, পুরনো ঋণের হিসাব মিটে যায় । ঐতিহ্যের সুতোয় বোনা এই মেলায় বাঙালি সংস্কৃতি লালন হয়, অর্থনীতির চাকা ঘুরে, উৎসাহের বাতাসে ফুলে ফুলে ফোটে আশা। খেলার মাঠে লাঠি খেলা, গরুর গাড়ির দৌর, কাবাডি, আর কত কী! ছেলেবেলা ফিরে আসে হাসি-কৌতুকের ঝিলমিল আলোয়। মেলায় মুখে মুখে গান, হাতে হাত ধরে নাচ, গল্পের আদানপ্রদান, সবাই মিলে এক মহান সংগীতে। বিকেলে মেলা সাজে নতুন রূপে। কবিদের কবিতা আবৃত্তিতে মুগ্ধ হয় মন, শিল্পীদের চিত্রকলায় ফুটে ওঠে বৈশাখের রঙ। সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রা ঘুরে বেড়ায় রাজপথে, ঘোড়ায় চড়ে যুবরাজ, হাতে ঢাল-তরবারি, ঢাকের গগনে বাজে জয়ধ্বনি। এই মেলা শুধু পণ্য কেনাবেচা নয়, এটি বাঙালির প্রাণের উৎসব, সংস্কৃতির মহাপ্রকাশ।