শিষ্টাচার | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
সমাজে একজন আদর্শ মানুষ হয়ে ওঠা কেবল নিজের জন্যই মঙ্গলময় নয়, বরং পুরো সমাজের উন্নতির চাবিকাঠি। শিষ্টাচার সেই সোপান, যা আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনে সহায়তা করে। নিখুঁত আচার-ব্যবহার, শিষ্ট ভাষা, সম্মান ও বিনয়শীল আচরণই শিষ্টাচার গঠন করে। একজন শিষ্ট ব্যক্তি শিক্ষা জগতে উজ্জ্বল ছাত্র হয়ে ওঠে। নিয়ম মান্য, শিক্ষক ও সহপাঠীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ তাকে সহজেই শিক্ষার আলোকপথে এগিয়ে নেয়। একজন আদর্শ নাগরিক আইন-কানুন মান্য করে, দায়িত্ব পালন করে এবং সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। এমন ব্যক্তিই সমাজের শক্তি, উন্নয়নের নিশ্চয়তা প্রদান করে। পারিবারিক জীবনে শিষ্টাচারের গুরুত্ব আরও বেশি। পারস্পরিক সম্মান, ভালোবাসা ও বোঝাপড়া দিয়ে একটা সুখী পরিবার গড়ে ওঠে। শিষ্টাচার সম্পন্ন ব্যক্তিই পরিবারের কেন্দ্র, সকলের আস্থাভাজন। সফলতা অনেক রূপে আসে। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই, একজন শিষ্ট ব্যক্তি সহজেই গ্রহণযোগ্য হয়। তার নৈতিকতা, আন্তরিকতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা মানুষকে তার প্রতি আকৃষ্ট করে। চাকরিজীবনেও শিষ্টতা এগিয়ে নেয়। সহকর্মীদের সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ, দায়িত্বশীল কাজের ধরণই পদোন্নতির সোপান হয়ে ওঠে। সুতরাং, শিষ্টাচারকে শুধু নিয়ম বা আচার-ব্যবহার মনে করা ভুল। এটি জীবনের দর্শন, আত্মমর্যাদার প্রকাশ। জীবনের চলাপথে প্রত্যেক পা-এ এগিয়ে নিতে শিষ্টাচারই সহায়ক। আসুন, সবাই মিলে শিষ্টাচারের আলো ছড়িয়ে, নিজেদের সাথে পুরো সমাজকেই উজ্জ্বল করে তুলি।
শিষ্টাচার | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
শিষ্টাচার হল মানুষের দুর্লভ সম্পদ সৌন্দর্য ও সবচেয়ে দামি অলংকার। একজন মানুষের দীর্ঘ জীবন সাজানোর পরিণত ফল হলো শিষ্টাচার। একজন মানুষ তখনই ভদ্র ও বিনয়ী হতে পারে যখন সে মানুষটির মধ্যে শিষ্টাচার থাকে। সেই সমাজে বেশি সভ্য যে সমাজে শিষ্টাচারী হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়। শিষ্টাচার কোন অর্থ বা সম্পদ দিয়ে কেনা যায় না। শিষ্টাচার হলো চর্চার বিষয়। একজন মানুষ যদি শিষ্টাচারী হতে চায় তাকে অনেক বেশি ধৈর্যশীল হতে হয়, অনেক কিছু ত্যাগের বিনিময়ে তবেই শিষ্টাচারী হওয়া যায়। নিজের ব্যক্তি জীবনে পরিবারে এবং সর্বোপরি সমাজে শান্তি এবং শৃঙ্খলা আনার পূর্ব শর্ত হলো শিষ্টাচার। যখন সমাজের প্রতিটি পেশার মানুষ তার নিজ নিজ কর্মে শিষ্টতা বজায় রেখে চলে, সমাজে তখন সুশৃংখল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। যার ফলে পরিবার এবং সমাজ থেকে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা দূর হয়। ব্যক্তি সাথে পরিবার ও সমাজের সাথে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইলে শিষ্টাচারের কোনো বিকল্প নেই। কথায় বলে এই যে জাতি যত বেশি সভ্য সে জাতি তত বেশি শিষ্টাচার। শিষ্টাচারি জাতি সবার কাছে সম্মানের এবং সবার কাছে অনুকরণীয়। শিষ্টাচারহীন সমাজ ও জাতি ধীরে ধীরে অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। পৃথিবীর মধ্যে অনেক শিষ্টাচারি জাতি রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শিষ্টাচার লক্ষ্য করা যায় জাপান ও ইংরেজদের মধ্যে। তাদের শিষ্টাচারির গুনাবলের জন্য তারা সমাজের সবখানে সমাদৃত ও অনুকরণীয়। শিষ্টাচার মানুষের মানবীয় গুণ ও মানব চরিত্রের উন্নতি ঘটায়। একজন মানুষ যদি শিষ্টাচারি হয় অর্থাৎ তার আচরণ সুন্দর ও মার্জিত হয় , ভদ্র বা বিনয়ী হয় তাহলে সেই ব্যক্তিটি সবার কাছে অধিকতর প্রিয় হয়। আদব-কায়দাহীন ব্যক্তি কারো কাছেই সম্মান ও ভালোবাসা পায় না। মানব চরিত্রের প্রধান অলংকার হল শিষ্টাচার। সুন্দর আদব-কায়দা ও আচরণ সম্পন্ন মানুষ বরাবরই সবার কাছে সম্মানের। সবাই এদের নিয়ে প্রশংসা করে, এরা প্রকৃতপক্ষে প্রশংসার দাবিদার বটে। জীবনের সকল কল্যাণ নিহিত শিষ্টাচারের মধ্যে। শিষ্টাচারের মাধ্যমে খুব সহজেই মানুষের মন জয় করে নেয়া যায়,হয়ে ওঠা যায় অধিক প্রিয়। শিষ্টাচারী মানুষের সাথে সবার সম্পর্ক অধিক ঘনিষ্ঠ হয়। তাই প্রতিটি মানুষের উচিত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি ব্যক্তির কাছে শিষ্টাচারী হওয়া।
শিষ্টাচার | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
সুন্দরজীবন ও ব্যবহারকে শিষ্ঠাচার বলা হয়। শিষ্ঠাচার মানুষের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য একটি গুন। সাধারন ভাষায় শিষ্টাচার বলতে সুন্দর আচরন, নিয়ম কানুন, আদব কায়দা মেনে চলা, ও অন্যকে সম্মান শ্রদ্ধা করে ভদ্র ভাষায় কথা বলাকে শিষ্টাচার বলে। একজন মানুষ কত ভালো ও সুন্দর হতে পারে তা শিষ্টাচারের মাধ্যমে বোঝা যায়। শিষ্টাচার হলো একজন মানুষের বাহ্যিক গুন। এটি হলো মানুষের মনের সৌন্দর্যের বাহ্যিক উপস্থাপনা। প্রকৃতপক্ষে, একজন সুন্দর মানুষের পরিচয় পাওয়া যায় তার সুন্দর আচরন ও চলাফেরার মাধ্যমে। একজন মানুষ যতবেশি বিনয়ী হবে, সংযত হবে সেই ব্যক্তি মানুষের কাছে ততপ্রিয় হয়ে ওঠে। আভিধানিক অর্থে একজন মানুষের রুচিপূর্ন ভদ্র ব্যবহার কে শিষ্টাচার বলে। শিষ্টাচার শব্দের মধ্যেই সেই তাৎপর্য নিহিত রয়েছে। শিষ্টাচার শব্দটিকে যদি ভাঙ্গা হয় তাহলে পাওয়া যায়- শিষ্ট+ আচার। যার অর্থ হলো বিনীত, সংযত, শোভন আচরন। শিষ্টাচার হলো ভদ্রতা ও সুরুচিবোধের যৌক্তিক মিলন। ধনী- গরীব, আত্নীয়- অনাত্নীয়, পরিচিত- অপরিচিত সবার সাথে সুন্দর ব্যবহারই হলো শিষ্টাচার। একজন মানুষ তখনই প্রকৃত ভালো মানুষ হবেন যখন সেই মানুষ শিষ্টাচার মেনে চলবেন। দেহে অলংকার পরলেই সুন্দর হওয়া যায় কিন্তু মনকে সুন্দর করতে প্রয়োজন শিষ্টাচারের। অলংকার হলো বাইরের সামগ্রী আর শিষ্টাচার হলো অন্তরের। মানুষ যতদিন অরণ্যে বাস করতো ততদিন তারা শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করতে পারেনি, কিন্তু ধীরে ধীরে সভ্য হওয়ার পাশাপাশি মানুষ শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পেরেছে। মানুষ সমাজবদ্ধ ভাবে বাস করার পরেই বুঝতে পেরেছিল শিষ্টাচারের প্রয়োজনীয়তা। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হলে প্রথম যে জিনিস প্রয়োজন তা হলো শিষ্টাচার। শিষ্টাচার গুন থাকলেই মানুষের সাথে সম্পর্ক আজীবন থেকে যায়। শিষ্টাচার যে শুধ্য ব্যক্তিগত জীবনের জন্য প্রয়োজন তা নয়, শিষ্টাচার আমাদের সমাজ জীবনে জন্যেও গৌরবজনক একটি আবরন। যে জাতির মধ্যে শিষ্টাচার যত বেশি থাকে সেই জাতি অন্য জাতির কাছে ততবেশি সমাদৃত হয়। একজন মানুষের মধ্যে তখনই মানবিক গুন ফুটে ওঠে যখন একজন মানুষ বড়দের সম্মান করে, শ্রদ্ধা করে, ধনী গরীব নির্বিশেষে সকলকে আচরনে তুষ্ট করে, সবার সাথে প্রিতীময় সম্পর্ক গড়ে তোলে তারাই হচ্ছে প্রকৃত মানবীয় গুনের অধিকারী। অন্যের সামনে নিজেকে মার্জিত রুচি সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরতে চাইলে কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে হতে হবে নম্র ও বিনয়ী। কথাবার্তা আচরণের নম্র বিনয়ী মানুষরা সকলের কাছেই অনেক প্রিয় হয়ে ওঠে। শিষ্টাচার হলো দুর্লভ সম্পদ। সবার মাঝে শিষ্টাচার পাওয়া যায় না। নিজের মধ্যে শিষ্টাচার গুন আনতে চাইলে প্রয়োজন ধৈর্য ও তপস্যা। যে মানুষ শিষ্টাচার আয়ত্ত করতে পারে সে মানুষই প্রকৃতপক্ষে গর্ব করতে পারে। কারণ একজন মানুষের কাছে শিষ্টাচার হলো অহংকার ও গৌরবের বিষয়।