বই পড়া | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ গুন হলো বই পড়া। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে জ্ঞান যেমন বাড়ে তেমনই আচরনেরও পরিবর্তন ঘটে। কারন বই হলো জ্ঞানের আধার। বইকে বলা হয় মানূষের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও পরীক্ষিত বন্ধু। বইয়ের প্রতিটি পাতা হলো একজন জ্ঞানীর শতশত সাধনার ফল। বইকে বলা হয় অতীত ও বর্তমানের সংযোগ সেতু। কারন বইয়ে অতীত ও বর্তমান লেখা থাকে। বই পড়ে যেমন মানুষ জ্ঞান অর্জন করে সেই সাথে বই থেকে বিনোদনও পাওয়া যায়। বইকে এ জন্য বলা হয় নির্মল আনন্দের উৎস। যারা প্রকৃত বই প্রেমী শুধুমাত্র তারাই বই পড়তে ভালোবাসে এবং বই থেকে পড়ে আনন্দিত হতে পারে। বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে সমৃদ্ধ করতে পারে এবং নিজের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে চারদিকে বিস্তৃত করে দিতে পারে। কেউ যদি মন কে প্রসারিত করতে চায় তাহলে বই পড়ার বিকল্প কিছু হতে পারেনা। মানুষের জীবনে যখন দুঃখ নেমে আসে, জীবন হতাশায় ছেয়ে যায়, শত শত ক্লান্তি এসে ভর করে তখন মানুষ যদি বই পড়ে তাহলে সেই ব্যক্তিটি লাভ করতে পারে অপার্থিব আনন্দ। পৃথিবীতে যত মনীষী ও জ্ঞানী লোক আছে তাদের জীবনী থেকে জানা যায় তারা সবাই বই পড়ত। নিজের জ্ঞান কে যদি কেউ সমৃদ্ধ করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই বড় পড়ার অভ্যাস করতে হবে। বিপুলা এই পৃথিবীকে যদি কেউ ভালোভাবে জানতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই বই পড়তে হবে। যদি কেউ সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে চায়, জ্ঞান বিজ্ঞানের জগতে হারিয়ে যেতে চায়,ইতিহাস দর্শন কিংবা অন্য যেকোনো বিষয়ে জানতে চায় তাহলে বই পড়া হচ্ছে একমাত্র উপায়। বই পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার নিজের স্বভাব চরিত্রে পরিবর্তন আনতে পারে। বই পড়ার ক্ষেত্রে সবার কিছু সতর্কতাও অবলম্বন করা উচিত। নশ্বর পৃথিবীতে যদি কেউ অপার্থিব আনন্দ পেতে চায় তাহলে সে অপার্থিব আনন্দ কেবল বই পড়েই পাওয়া সম্ভব।
বই পড়া | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
সুন্দর ও কল্যানকর জীবন গঠন করার জন্য বই পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। বই হলো প্রতিটি মানুষের প্রকৃত বন্ধু। বই পড়ে মানুষ নিজের মেধাকে বিকশিত করতে পারে। মানুষের যত বদ অভ্যাস থাকে বই পড়ার মাধ্যমে সেগুলো ধীরে ধীরে চলে যায়। বই সব সময় মানুষকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। কারন যারা বই লিখে তারা হলেন জ্ঞানী ব্যক্তি। একটি বই পড়া মানে জ্ঞানী একজন ব্যক্তির সাথে কথা বলার সামিল। একটি ভালো বই থেকে মানুষ নিজের জীবনকে সঠিক পথে পরিচালনা করার উপায় জানতে পারে। যাদের বই পড়ার অভ্যাস রয়েছে তারা কখনো একাকিত্বে ভোগে না। যখন বই পড়ুয়া ব্যক্তি একাকিত্বে ভোগে তখন যদি সে তার পছন্দের কোনো গল্প বা কবিতার বই পড়ে তখন তার একাকিত্ব কেটে যায়। মন খারাপ থাকলেও নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। বই পড়ে একজন মানুষ বিশ্বের অতীত ও বর্তমান ইতিহাস জানতে পারে। যার ফলে নিজের মধ্যে ভুল করার প্রবনতাও কমে যায়। বই পড়ার অভ্যাস মানুষকে বিচক্ষন করতে সাহায্য করে। পৃথীবীতে বড় বড় যত মনীষী, জ্ঞানী ব্যক্তি রয়েছে তাদের সবার বই পড়ার অভ্যাস ছিল। বই পড়ে তারা নিজেদের জ্ঞান কে বিকশিত করতে পেরেছেন। যার ফলে তাদের নাম আজ ইতিহাসের পাতায় ঠাই পেয়েছে। প্রতিটি জিনিসের ভালো ও মন্দ উভয় দিক রয়েছে। বই সব সময় মানুষকে সঠিক তথ্য দিতে পারেনা। কারন বই যারা লেখেন তারা সব সময় যে সঠিক তথ্য দেন বা সবকিছু জানেন এমনটা ভাবা ভুল। তাই বই পড়ার সময় নিজের জ্ঞানকে কাজে লাগাতে হবে। কখনো বইকে অন্ধ ভাবে বিশ্বাস করা যাবেনা। বই পড়ার সময় নিজের জ্ঞান কে কাজে লাগাতে হবে। কারন বইয়ের লেখকরা যে সময় বই লিখেন সেই সময়ের তথ্য অন্য সময়ে সেটি ভুল বা পরিবর্তিত হতে পারে। বা সেই কথা সময় উপযোগী নাও হতে পারে। তাই বই পড়ার সময় ভালো ভাবে বুঝতে হবে বইয়ের তথ্য কতটা সময় উপযোগী। বই থেকে জ্ঞান নিয়ে সেই জ্ঞান নিজের মত করে ব্যবহার করতে হবে। বই পড়ে মানুষ যেমন নিজের জীবনে আলো নিয়ে আসতে পারে তেমনিভাবে বই পড়ে মানুষ নিজের জীবনকে অন্ধকারেও ঠেলে দিতে পারে। কারন বই কখনোই সব সময় ভালো উদ্দ্যেশ্যে লেখা হয় না। একটি বাজে বই পাঠকের মনে বিরুপ প্রভাব ফেলতে পারে। তাই বই পড়ার ক্ষেত্রে পাঠক কে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। ভালো বই পড়ে একজন ভালো লেখক বা মনিষির সাথে সময় কাটানোর সমান। ভালো বই পড়ে মানুষ যেমন আনন্দ লাভ করে তেমনি নিজের জীবনকে সুন্দর ভাবে গঠন করতে পারে। বই পড়লে মানুষের জীবন আধুনিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক করে। যারা বই পড়ে তারা সব সময় অন্যদের কাছ থেকে প্রশংসা ও সম্মান লাভ করে। বই পড়া মানুষকে মানুষ আদর্শ হিসেবে গ্রহন করে। বই পড়ার মাধ্যমে একটি জাতির পরিবর্তন ঘটে। যখন বই পড়া একটি জাতি তৈরি হয় তখন সেই দেশ কোনো ধরনের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সমস্যায় পরেনা। বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ জ্ঞানী হয়, আর একটি দেশকে ভালো ভাবে পরিচালিত করতে জ্ঞানী মানুষের পরামর্শ প্রয়োজন হয়।
বই পড়া | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
বই হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার। এটি আমাদেরকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা অতীতের ইতিহাস, বর্তমান প্রেক্ষাপট ঘটনা, ভবিষ্যতের সম্ভাবনা সম্পর্কে জানতে পারি। বই পড়া আমাদের জ্ঞান ও চিন্তাশক্তি আরও সমৃদ্ধ করে। এটি আমাদের একজন ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি হতে সাহায্য করে। ছোটবেলায় গল্পের বই নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ার সেই অপূর্ব অনুভূতি কি ভোলা যায়? শব্দে শব্দে গড়িয়ে চলা কাহিনীতে নিজেকে হারিয়ে ফেলা, রাজপুত্রের সঙ্গে জয়গান, আর দুষ্ট লোকের পরাজয়ে উল্লসিত হওয়া—বই পড়ার সেই জাদুকরী খন কখনো ভোলা যায় না। কিন্তু বই কি শুধুই শৈশবের সঙ্গী, নাকি জীবনের পথ প্রদর্শনের এক দীপ শিখা? অবশ্যই। বই শুধু মনোরঞ্জন নয়, আত্মার খোরাক এবং জীবনে উৎসবের উৎস। একটি বইয়ের পাতায় আমরা ছুঁতে পারি ইতিহাসের দিনগুলি, প্রেমের উষ্ণতা ও বিজ্ঞানের অলৌকিকতা কে। বই পড়লে কোন বিষয়ই আর অজানা থাকে না, চিকিৎসা থেকে দর্শন, অর্থনীতি থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞান—সবকিছুর রহস্য খুলে যায় চোখের সামনে। শুধু জ্ঞানই নয়, বই চর্চা করে জীবনকে সঠিকভাবে উপভোগ করতে পারি। এটি আমাদের চিন্তা শক্তি বাড়িয়ে দেয় ফলে আমাদের কঠিন সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা বাড়ে, সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয় । ভালো লেখক বা কথক হতে চাইলেও বই পড়া অপরিহার্য। বাক্য গঠন, শব্দ চয়ন, ছন্দের শৈলী— বই সবকিছুতেই আমাদের পারদর্শী করে তোলে। তবে ইন্টারনেটের এই যুগে কাগজের বই হাতে নেওয়া যেন কমে গেছে। সেইসাথে বইয়ের রূপ বদলেছে, হাতে চলে এসেছে ই-বুক, অডিও বুক, পিডিএফ ফাইল। তাই যেকোনো পরিবেশে, যে কোনো সময়ে ডুব দিতে পারি সাহিত্যের সাগরে। একটু আবসার সময় পেলেই, বাসে যাত্রার পথে, টিফিনের ফাঁকে, ঘুমোতে যাওয়ার আগে, খুলে ফেলা যায় বইয়ের জগৎ। বই পড়া আমাদের মানবিকতাকেও প্রসারিত করে। বইয়ের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সংস্কৃতি, জাতি-ধর্মের মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারি। তাদের জীবন যাপনের ধরন, দৃষ্টিভঙ্গি, মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে পারি। এতে আমাদের মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়, আমরা হয়ে উঠি আরও সহনশীল ও উদার। বই পড়া আমাদেরকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। বইয়ের মাধ্যমে আমরা নৈতিকতা, মূল্যবোধ, সততা, ন্যায়বিচার, সহানুভূতি, সহমর্মিতা—এসব গুণের শিক্ষা পাই। এসব গুণ আমাদেরকে একটি সুন্দর ও সুস্থ সমাজ গঠন করতে সাহায্য করে। সেই সাথে এটি আমাদের একজন ভালো ছাত্র হতেও সহায়তা করে। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে পারি। এতে আমাদের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধি পায়, আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোঝা সহজ হয়। বই পড়ার মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কৌশল শিখতে পারি, যা আমাদের পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জনে সাহায্য করে। সুতরাং, বই পড়া শুধুমাত্র একটি শখ নয়, এটি আমাদের জীবনের জন্য অক্সিজেনের মত প্রয়োজনীয় বস্তু। তাই নতুন প্রজন্মের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে, যা তাদের একজন জ্ঞানী, মানবিক, সুন্দর ও সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।