জাতীয় পতাকা | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
জাতীয় পতাকা হলো একটি দেশের জাতীয়তা, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির প্রতীক। এটি একটি দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীকও বটে। জাতীয় পতাকা একটি দেশের জনগণের জন্য গৌরব ও অহংকারের প্রতীক। এটির সাধারণত রঙ, আকার, নকশা এবং ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম ও বিধি অনুসরণ করে তৈরি করা হয়। প্রতিটি দেশের জাতীয় পতাকা তার নিজস্ব অনন্য অর্থ ও তাৎপর্য বহন করে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হল একটি সবুজ রঙের পতাকা যার কেন্দ্রে লাল বৃত্ত রয়েছে। বাংলাদেশের পতাকাটির আকার হল ১০:৬ অনুপাতের। সবুজ রঙের পতাকার দৈর্ঘ্য ১০ ফুট এবং প্রস্থ ৬ ফুট। লাল বৃত্তের ব্যাস পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা ১৯৭১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি প্রথমবারের মতো উত্তোলন করা হয়। তখনকার মুজিবনগর সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এই পতাকাটি উত্তোলন করেন। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ। আমাদের সবার উচিৎ জাতীয় পতাকা সম্মানের সাথে ব্যবহার করা। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল, মুজিবনগর সরকার গঠিত হয়। এই সরকার বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে সবুজ রঙের পতাকা যাতে লাল বৃত্ত ছিল তা গ্রহণ করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭২ সালের ১৭ মার্চ, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই পতাকাটিকে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। সবুজ রঙটি বাংলাদেশের সবুজ শ্যামল প্রকৃতির প্রতীক। লাল বৃত্তটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রক্তের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। এই পতাকাটি বাংলাদেশের জনগণের জন্য গৌরব ও অহংকারের প্রতীক।
জাতীয় পতাকা | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
লাল-সবুজ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, শুধুমাত্র কাপড়ের টুকরো নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক। গাঢ় সবুজ আয়তক্ষেত্রের মাঝখানে এক উজ্জ্বল লাল বৃত্ত, এই দুই রঙই বুঝিয়ে দেয় আমাদের গল্প। সবুজ, আমাদের সবুজ প্রকৃতির সজীবতা ও সমৃদ্ধির নিদর্শন। আর লাল, অগণিত শহীদের রক্তের স্মৃতি, স্বাধীনতার সংগ্রামের বীরত্বের প্রতীক।এই পতাকা আকারে আয়তক্ষেত্র, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। লাল বৃত্তের ব্যাস পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ, কেন্দ্রবিন্দু অবস্থিত পতাকার মাঝখানে। জাতীয় পতাকা কে প্রতিটি দেশের নাগরিক সম্মানের সাথে ব্যবহার করে। এটিকে কখনও অবমাননা করা কখনো উচিত নয়। এটির মাধ্যমে একটি দেশের জনগণের জন্য গৌরব ও অহংকার প্রকাশ করে। এটি একটি দেশের জনগণের জাতীয়তাবোধ, ঐতিহ্যবোধ এবং সংস্কৃতিবোধকে জাগ্রত করে। পতাকা একটি দেশের জনগণের জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে। এটি তাদেরকে মনে করিয়ে দেয় যে তারা একটি দেশের নাগরিক এবং তারা সেই দেশের সাথে গভীরভাবে জড়িত। যার ফলে সেই দেশের নাগরিকের তার দেশের প্রতি ভালবাসা এবং সম্মান বেড়ে যায়। জাতীয় পতাকা মানুষের মধ্যে ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটায়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করে। এই যুদ্ধে লাখ লাখ বাঙালি শহীদ হয়। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিরা যে পতাকাকে সামনে রেখে যুদ্ধ করেছিল, সেই পতাকাটিই আজ বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা। এই পতাকাটি বাঙালিদের জন্য গৌরব ও অহংকারের প্রতীক। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা অর্জনের জন্য বাঙালিরা যে ত্যাগ স্বীকার করেছে, তা আমাদের অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে। আমরা এই পতাকাকে সর্বদা সম্মানের সাথে ব্যবহার করব এবং আমাদের দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সর্বদা সচেষ্ট থাকব। জাতীয় পতাকা বাংলাদেশের সব জায়গায় ব্যবহার করা হয়। যেমন বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি ভবন ও স্থাপনায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়, এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের সরকারি অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। যখন কেউ কোনো জনসভা ও সমাবেশের আয়োজন করে সেই সময়ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। যে কোনো ধরনের জাতীয় দিবস যথা: স্বাধীনতা দিবস,বিজয় দিবস, একুশে ফেব্রুয়ারীতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় পতাকা প্রতিটি নাগরিকের কাছে গর্বের প্রতিক।
জাতীয় পতাকা | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা, লাল-সবুজ পতাকা, শুধুমাত্র কাপড়ের টুকরো নয়, এটি আমাদের জাতীয় আত্মপরিচয়ের প্রতীক। এটি আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের নিরব প্রকাশ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়, বাঙালি জাতি পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে। এই সংগ্রামের প্রতীক হিসেবে একটি পতাকার প্রয়োজন ছিল। ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এই পতাকা প্রথম উত্তোলন করা হয়। এটি ছিল সবুজ কাপড়ের উপর একটি লাল বৃত্ত। তাই, প্রতি বছর ২ মার্চ পালিত হয় জাতীয় পতাকা দিবস।বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার রূপকার চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান। তবে মানচিত্র খচিত বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার প্রথম ডিজাইনার হলেন শিবনারায়ণ দাশ। তার পতাকার বৃত্ত অংশে সোনালী রঙের বাংলাদেশের মানচিত্র অঙ্কিত ছিল। এই পতাকা আকারে আয়তক্ষেত্র, দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের অনুপাত ১০:৬। লাল বৃত্তের ব্যাস পতাকার দৈর্ঘ্যের এক-পঞ্চমাংশ, কেন্দ্রবিন্দু অবস্থিত পতাকার মাঝখানে। পতাকার বৃত্তের কেন্দ্রবিন্দুর অবস্থান হবে পতাকার দৈর্ঘ্যরে ৯/২০ অংশ থেকে টানা লম্বের এবং প্রস্থের মাঝখান দিয়ে টানা আনুভূমিক রেখার ছেদবিন্দুতে। পতাকার সবুজ অংশ হবে গাঢ় সবুজ এবং উজ্জ্বল লাল। এই নির্দিষ্ট আকার ও নিয়মকানুনকে বলা হয় পতাকা বিধি। ২৩ মার্চ, ১৯৭১ সালে রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিবনারায়ণ দাশের ডিজাইন করা পতাকা উত্তোলন করেন। বাংলাদেশের বাইরে সর্বপ্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ১৮ এপ্রিল, ১৯৭১ সালে কলকাতায় অবস্থিত পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনে। সেদিনই কলকাতায় আগত মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। লাল-সবুজ পতাকা আমাদের জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীক। এটি আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা বীর শহীদদের স্মৃতি বহন করে। প্রতিবার যখন আমরা এই পতাকা উত্তোলন করি, তখন আমরা আমাদের অতীতকে স্মরণ করি এবং ভবিষ্যতের প্রতি দায়বদ্ধ বোধ করি। লাল-সবুজ পতাকা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দেয়। এটি আমাদের গর্ব ও অহংকারের বিষয়। প্রতিটি ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, আন্তর্জাতিক মঞ্চে, আমাদের জাতীয় পতাকা আমাদের উপস্থিতি জানান দেয়। জাপানের জাতীয় পতাকাকে বলা হয় “হিনোমারু” এর সাথে আমাদের জাতীয় পতাকার মিল আছে। এই পতাকায় একটি সাদা পটভূমির মাঝখানে একটি লাল বৃত্ত রয়েছে। জাপান ছাড়াও দ্বীপরাষ্ট্র পালাউ এর পতাকার সাথে আমাদের পতাকার মিল আছে। এই দেশের জাতীয় পতাকায় নীল পটভূমির মাঝখানে একটি হলুদ বৃত্ত রয়েছে। বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা আমাদের দেশের গর্ব ও ঐতিহ্যের প্রতীক। এই পতাকাকে সর্বদা সম্মানের সাথে ব্যবহার করা আমাদের দায়িত্ব। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবসসহ সরকার ঘোষিত অন্যান্য দিবসে আমাদের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা বাধ্যতামূলক। এই দিবসগুলোতে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে আমরা আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করি।