স্বাধীনতা দিবস | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
প্রতি বছর ২৬ মার্চ বাঙালি জাতির জন্য একটি বিশেষ দিন। এদিনই ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তান এর বিপক্ষে স্বাধীনতা লাভ করে। স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের জাতীয় দিবস এবং এদিন সকল শিক্ষা ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সরকারি ছুটি থাকে। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। এর ফলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী বাঙালিদের উপর গণহত্যা চালায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। স্বাধীনতা দিবস বাংলাদেশের জন্য একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ দিন। এদিন বাঙালি জাতি তাদের দীর্ঘদিনের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। স্বাধীনতা দিবসের মাধ্যমে বাঙালি জাতি তাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণ করে। স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সকল সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতা দিবসের শিক্ষা হলো শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা। এদিন বাঙালি জাতি তাদের দীর্ঘদিনের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করে। স্বাধীনতা দিবসের শিক্ষা আমাদেরকে শেখায় যে, শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করলেই আমরা আমাদের অধিকার অর্জন করতে পারি। স্বাধীনতা দিবসে আমাদের সকলের শপথ করা উচিৎ। আমরা যেন আমাদের দেশকে একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। আমরা যেন আমাদের স্বাধীনতা সবকিছুর বিনিময়ে স্বাধীনতা রক্ষা করতে পারি। স্বাধীনতা দিবস আমাদের সকলের জন্য একটি আনন্দের দিন। এদিন আমরা আমাদের স্বাধীনতার জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।
স্বাধীনতা দিবস | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
স্বাধীনতা পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। প্রতিটি মানুষ স্বপ্ন দেখে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের। স্বাধীন একটি রাষ্ট্রই মানুষকে নিজের মত করে চলার সুযোগ দেয়। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ সময় পরাধীন ছিল। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। প্রতিটি বাঙালীর জীবনে স্বাধীনতা দিবস অত্যন্ত গৌরবময় ও তাৎপর্যপূর্ণ একটি দিন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পিছনে রয়েছে বিশাল দুঃখ ভরা ইতিহাস। পাকিস্তান বাংলাদেশকে ২৩ বছর অপশাসন করেছিল। অপশাসনের প্রতিবাদ স্বরূপ বাঙালিরা ঝাপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বিরুদ্ধে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপ্রেরণা ও সাহসি বানীর জন্য সবাই যুদ্ধের মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করে। পাকিস্তানি বাহিনীরা ভীত হয়ে ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে বাংলাদেশের সাধারন অসহায় জনগনের উপর ঝাপিয়ে পরে নির্মমভাবে হত্যা শুরু করে। পাকিস্তানি বর্বর শাসকরা হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ অগ্নি সংযোগসহ অনেক নির্যাতন করে অসহায় মানুষদের উপর। স্বাধীনতা অর্জন না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যায়। অবশেষে ৩০ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। স্বাধীনতা দিবস আমাদের জন্য গৌরবের দিন কারণ এদিন আমরা আমাদের দীর্ঘদিনের শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিজয় অর্জন করি। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তি লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বাঙালিদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করতে থাকে। এর ফলে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি স্বাধীনতার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে। স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশের সকল সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসব অনুষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ, পতাকা উত্তোলন, বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির আয়োজন করা হয়। এছাড়াও, অনেক বাঙালি এই দিনটিতে তাদের পরিবার ও বন্ধুদের সাথে একসাথে সময় কাটায়। তারা পার্কে যায়, ঘুরতে যায়, বাড়িতে আড্ডা দেয় ইত্যাদি। স্বাধীনতা দিবস পালন আমাদের নতুন ও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্যেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারন স্বাধীনতা দিবস পালনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জানতে পারে যে তারা একটি স্বাধীন দেশে বসবাস করছে। এদেশে তাদের স্বাধীনভাবে কথা বলা, চিন্তা করা, ধর্ম পালন করা এবং নিজের মত প্রকাশ করার অধিকার রয়েছে। তারা জানতে পারবে যে, এই স্বাধীনতা অর্জনের জন্য অনেক মানুষ তাদের জীবন দিয়েছেন। স্বাধীনতা দিবস পালনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে দেশপ্রেম ও ঐক্যবদ্ধতা চেতনা জাগ্রত হয়। তারা জানতে পারে যে, দেশকে রক্ষা করা তাদের সকলের দায়িত্ব। স্বাধীনতা দিবস পালনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের মধ্যে ইতিবাচক ও আশাবাদী মনোভাব গড়ে ওঠে। তারা জানতে পারে যে, সবকিছুই অসম্ভব নয়। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করলেই মানুষ নিজ অধিকার অর্জন করতে পারে।
স্বাধীনতা দিবস | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ, ইতিহাসের পাতায় খচিত এক কালজয়ী দিন, বাংলাদেশের মুক্তির মহাসংকেত, স্বাধীনতা দিবস। পাকিস্তানি বাহিনীর হিংস্র গর্জনে জেগে ওঠা এই রাত তৈরি করেছে অসংখ্য বীরত্বগাঁথা, রচনা করেছে শহীদদের অমর কাহিনী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকা অসামান্য, গ্রেফতার হবার পূর্বে ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তার অদম্য নেতৃত্বে লাখ লাখ বাঙালি রক্তের ঝর্ণাধারায় মাতৃভূমিকে স্বাধীন করে এনেছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পথচলার এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়। এটি শুধু ভাষার দাবী নয়, বরং বাঙালি জাতীয়তাবাদের জাগরণ এবং পাকিস্তানি শাসনের অবিচারের বিরুদ্ধে প্রথম সুস্পষ্ট প্রতিবাদ। এই আন্দোলন বাংলাদেশের মানুষকে সংগঠিত করে, নেতৃত্ব গড়ে তোলে এবং স্বাধীনতা অর্জনের চিন্তাধারাকে চাঙা করে। ভাষা আন্দোলনের আত্মবিশ্বাস ও সংগ্রামী চেতনা পরবর্তী সময়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদের মূল চালিকাশক্তি হয়ে কাজ করে। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন এই আত্মবিশ্বাসকে আরও সুস্পষ্ট করে। বাঙালিদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবী এই আন্দোলনে উঠে আসে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুথান তো এক ঝড়ো হাওয়ার মতো আঘাত করে পাকিস্তানি শাসনে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে তাদের অধিকার আদায়ের দাবী জানায়। এই ক্রমবিকাশে ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচন হয়ে দাঁড়ায় এক মোচন পর্ব। আওয়ামী লীগের তুমুল বিজয়ে বাঙালি জাতি পাকিস্তানের কাছে তাদের দাবী নিরীক্ষভাবে উপস্থাপন করে। কিন্তু নির্বাচনের ফল অস্বীকার করে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী গণহত্যা চালায়। বাংলাদেশের মানুষ এবার আর পিছুপা হওয়ার পাত্র নয়। ১৯৭১ সালের ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর আসে সেই বহুল কাঙ্খিত অনেক রক্তে কেনা বিজয়। এই ২৬ মার্চ আমাদের জন্য অবিস্মরণীয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যে মুক্তির আলো দেখেছি, সেই অনুভূতি প্রকাশ করার ভাষা পাওয়া দুষ্কর। দেশজুড়ে উৎসবের রঙে ছেয়ে যায় এইদিনে। প্রতিটি বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শিশুদের আনন্দঘন হৈ-চৈ, মুক্তিযুদ্ধের গানে গানে ছেয়ে যায় গ্রাম থেকে শহর। সরকারি অনুষ্ঠান থেকে গ্রামের মাঠ পর্যন্ত সবখানেই মুখরিত হয় মুক্তির আনন্দ। রাঙা সকালে সূর্যোদয়ের সাথে সাথে জেগে ওঠে বাংলাদেশ পালন হয় আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ভোরবেলা থেকেই শুরু হয়ে যায় উৎসবের আমেজ। প্রতিটি বাড়িতে, গলি-পথে, রাস্তায়-ঘাটে একই ছবি। দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এক লাল-সবুজের রঙিন সমুদ্র। এই পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক, শহীদদের রক্তের সাক্ষী, আমাদের গর্বের নিশান। আগের দিন, জাতির উদ্দেশে বাণী প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি এবং তারা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তিন বাহিনীর আয়োজনে বিশেষ কুচকাওয়াজে অংশ নেন। সকালে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানানো হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের বীরদের। শিশুদের আনন্দঘন হৈ-চৈ মিশে যায় মুক্তিযুদ্ধের গানে গানে। দেশজুড়ে প্যারেড, পথনাটক, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মিছিল – সবকিছুতেই উৎসবের রঙ লাগে। সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি গ্রামের প্রতিটি মাঠেও মুখরিত হয় মুক্তির আনন্দ। ২৬ মার্চ শুধু উৎসবের দিন নয়, এটি আত্মমননেরও দিন। আমাদের স্বাধীনতা কতটা মূল্যবান, তা উপলব্ধি করে আমরা দায়িত্ববোধের সাথে এটি ধরে রাখার প্রতিজ্ঞা করতে পারি। স্বাধীনতার ফলকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া এবং দেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ করা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব।