ডিজিটাল বাংলাদেশ | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
একদিনের স্বপ্ন, আজ বাস্তব। মাত্র কয়েক বছর আগেই যে ডিজিটাল বাংলাদেশ ছিল দূরের স্বপ্ন, সেই স্বপ্ন আজ হাতের নাগালে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি মানুষের জীবনে ঢুকে পড়েছে ডিজিটাল প্রযুক্তির ছোঁয়া। লেখাপড়া থেকে কেনাকাটা, যোগাযোগ ও বিনোদন সবকিছুই হয়ে উঠেছে আরো সহজ, আরো দ্রুত, আরো সুন্দর। সরকারি সেবা কেন্দ্রগুলো আর কাগজের ফাইলের হারিয়ে যায় না, এখন অনলাইনেই চলছে নানা কাজ, জন্ম নিবন্ধন থেকে জমিজমা পর্যন্ত, সবকিছুই কয়েক ক্লিকের দূরত্বে। ঘরে বসে, মোবাইল হাতে কাজ সারতে পারছেন মানুষ, বাঁচছে সময়, বাঁচছে অর্থ। শুধু সেবা কেন্দ্রই নয়, বদলে গেছে কেনাকাটার রীতিও। অনলাইন শপিংয়ে মাতোয়ারা মানুষ, দেশি পণ্য থেকে বিদেশি ব্র্যান্ড, সবকিছুই কয়েক দিনের মধ্যে পৌঁছে যাচ্ছে বাড়িতে। ই-কমার্সের ঢেউয়ে ভাসছে ছোট ব্যবসা থেকে বড় কোম্পানি, সৃষ্টি হচ্ছে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ। শিক্ষাক্ষেত্রেও হয়েছে ডিজিটাল বিপ্লব। ফোন হয়েছে নতুন ক্লাসরুম, অনলাইন কোর্সে জ্ঞান আহরণ করছে শিক্ষার্থীরা। দুর্গম গ্রামের ছেলেমেয়েদেরও এখন বিশ্বমানের শিক্ষার দুয়ার খুলে দিয়েছে এই প্রযুক্তি। এমনকি কৃষিতেও দেখা যাচ্ছে ডিজিটালের ছোঁয়া। আবহাওয়া পূর্বাভাস থেকে ফসল রোগ নিরাময়, সবকিছুই এখন কৃষকদের হাতের মুঠোয়। ডিজিটাল কৃষি যন্ত্র, সার-কীটনাশক, বাজার তথ্য – সবকিছুই এসেছে তাদের আঙিনায়। ফলন বাড়ছে, খরচ কমছে, লাভের মুখ দেখছে বাংলার কৃষক। বাংলাদেশের এই মহাপথ চলা এখনও শেষ হয়নি। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এ দেশ এগিয়েছে অনেক, কিন্তু এখনো বাকি রয়েছে অনেক দূর। বাংলাদেশের পরবর্তী পরিকল্পনা হলো ২০৪০ সালের মধ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়া – এটি হবে একটি এমন দেশ, যেখানে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও টেকসই উন্নয়ন হাত ধরে এগিয়ে নেবে দেশের প্রতিটি নাগরিককে। এই পথ সহজ নয়, চ্যালেঞ্জও আছে। ইন্টারনেট সংযোগ, প্রযুক্তিগত দক্ষতা, সামাজিক সচেতনতা ও তরুণদের আকাঙ্ক্ষা– ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ করবে। তাইতো, সরকারের দৃঢ় সংকল্প আর মানুষের উৎসাহে এগিয়ে চলছে ডিজিটাল বাংলাদেশ। আমরা সবাই মিলে হাতে হাতে রেখে গড়ে তুলবো এক উন্নত, সমৃদ্ধ, ডিজিটাল বাংলাদেশ, যেখানে প্রযুক্তি আর মানুষের মিলনে সৃষ্টি হবে এক সুন্দর ভবিষ্যতের।
ডিজিটাল বাংলাদেশ | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
ডিজিটাল বাংলাদেশ হলো একটি ধারণা যেখানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে একটি দেশের অর্থনীতি, সমাজ ও সরকারকে আধুনিকায়ন করা হয়। এই ধারণার মূল লক্ষ্য হলো দেশের সকল নাগরিককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত না করা এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। যেমন বাংলাদেশ সরকারের লক্ষ্য হলো দেশের সকল নাগরিককে আইসিটি শিক্ষা প্রদান করা। এজন্য সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত আইসিটি শিক্ষার ব্যবস্থা করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য সরকার দেশের আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। এজন্য সরকার দেশের সকল উপজেলায় ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল স্থাপন করেছে এবং ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওতা বৃদ্ধি করছে। সরকার আইসিটি উদ্যোগের প্রচার ও প্রসারেও কাজ করছে। এজন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ, সেমিনার ও কর্মশালার আয়োজন করছে। এই পদক্ষেপগুলোর ফলে বাংলাদেশে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ২৭ কোটি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। যেমন: আইসিটি অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে অবদান রাখছে। এর মধ্যে রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি খাত, আর্থিক খাত, শিক্ষা খাত, স্বাস্থ্য খাত ইত্যাদি। আইসিটি সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রেও অবদান রাখছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষার উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ইত্যাদি। আইসিটি সরকারের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর ও স্বচ্ছ করে তুলছে। এর মধ্যে রয়েছে জনসেবা প্রদান, সরকারি তথ্য ও পরিষেবা প্রদান, দুর্নীতি প্রতিরোধ ইত্যাদি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার মধ্যে মধ্যে কিছু চ্যালনঞ্জ ও রয়েছে। দেশের অনেক মানুষ এখনও আইসিটি দক্ষতার অভাবে ভুগছে। এটি ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারকে বাধাগ্রস্ত করছে। অবকাঠামো সমানভাবে বিকাশ লাভ করেনি। এতে করে গ্রামাঞ্চলের মানুষ ডিজিটাল প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। আইসিটি নিরাপত্তা এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সাইবার অপরাধের ঝুঁকি বেড়েছে। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কিছু প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ডিজিটাল বিভাজন, সাইবার বৈষম্য, সাইবার অপব্যবহার ইত্যাদি। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। এছাড়াও, ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা জরুরি।
ডিজিটাল বাংলাদেশ | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
বাংলাদেশ সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে পুরোপুরিভাবে ডিজিটাল বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিজ্ঞা করেছেন। ২০২১ সালের ২৫ জুন বাংলাদেশ সরকারের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রতিজ্ঞা করেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন। এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। এই চ্যালেঞ্জ গুলো মোকাবেলা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আইসিটি শিক্ষার প্রসার, আইসিটি অবকাঠামো উন্নয়ন, আইসিটি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং অর্থনৈতিক ও কৌশলগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য অর্জনের জন্য গ্রহণ করা পদক্ষেপগুলো ইতিবাচক। তবে, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করার জন্য সরকারকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, সমাজ ও সরকারের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলে বাংলাদেশের আইসিটি খাতের ব্যাপক বিকাশ ঘটেছে। ২০২১ সালের হিসাবে, বাংলাদেশের আইটি খাতের আকার দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭.৫%। শুধু তাই নয় ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। শিক্ষা খাতেও সরকার ডিজিটাল শিক্ষার মাধ্যমে দেশের সকল শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯৮% শিক্ষার্থীর কাছে মোবাইল ফোন রয়েছে। ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে দেশের সকল মানুষের কাছে দক্ষ ও সাশ্রয়ী স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। সামাজিক ক্ষেত্রেও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ফলে বাংলাদেশ সামাজিক ভাবেও উন্নতি লাভ করছে। ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা হয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশের দারিদ্র্য হার দাঁড়িয়েছে ২১.০%। ডিজিটাল সরকারের মাধ্যমে সরকারি কার্যক্রম আরও স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতাপূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল সরকারি সেবা অনলাইনে পাওয়া যায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে সরকারি ব্যবস্থাপনার দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল সরকারি দপ্তরে ইন্টারনেট সংযোগ রয়েছে। তাই বলা যেতে পারে বাংলাদেশ ইতিমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিনত হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিনত হওয়ার কারনে বাংলাদেশ এখন শিক্ষা, চিকিৎসা, অর্থনীতি সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।