একুশের চেতনা রচনা | ২০ টি পয়েন্ট | উক্তি সহকারে ২৫০০+ শব্দ | pdf download

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুর আজকে আমরা হাজির হয়েছি খুবই একটি  গুরুপ্তপূর্ণ “একুশের চেতনা” রচনা  নিয়ে। রচনাটি ২০ টি পয়েন্টে ২৫০০+ শব্দে , প্রয়োজনীয় উক্তি ও কবিতা সহকারে লেখা। যা এসএসসি , এচইএসসি সহ যেকোনো চাকরির এবং প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য তোমাদের অনেক সাহায্য করবে।   

  একুশের চেতনা

বা, একুশে ফেব্রুয়ারি ও একুশের চেতনা

বা, একুশ আমার অহংকার

বা, একুশে ফেব্রুয়ারির তাৎপর্য

বা, জাতী গঠনে একুশে ফেব্রুয়ারির গুরুত্ব 

ভূমিকা

একুশের চেতনা বাঙালি জাতির অহংকার ও গর্ব। একুশের চেতনা শুধুমাত্র মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার চেতনাই নয়, এটি স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবতা ও অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা।

একুশের চেতনা বাঙালির অহংকার, গৌরব ও মর্যাদার প্রতীক। ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্বর্ণাক্ষরে লেখা দিন। এই দিনে বাংলা ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিলেন সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার ও শফিক। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করে। তাদের নাম লেখা থাকবে ইতিহাসের পাতায়, কবিতার ভাষায় লেখা আছে সে কথা, 

আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি

আমি কি ভুলিতে পারি

 একুশের চেতনা শুধুমাত্র বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার সংগ্রাম নয়। এটি ছিল বাঙালি জাতির সার্বিক মুক্তির সংগ্রাম। বাংলা ভাষার মাধ্যমে বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম ছিল একুশের চেতনার মূল লক্ষ্য। একুশের চেতনা বাঙালি জাতির মধ্যে স্বাধিকার, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের চেতনাকে জাগ্রত করে। এই চেতনার প্রভাবেই ১৯৭১ সালে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছি। একুশের চেতনা বাঙালি জাতির জন্য একটি অনুপ্রেরণা।

একুশের চেতনার স্বরূপ 

একুশের চেতনার মূল বিষয়বস্তু হলো মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। একুশের চেতনা বাঙালি জাতির জাতীয়তাবাদী চেতনারও প্রকাশ। বাহান্ন সালে ভাষা আন্দোলনের ব্যানারে চলেছিল মূলত বাঙালির আত্মরক্ষার সংগ্রাম আর স্বাধীনতার লাভের পর তা প্রতিভাত হয় আত্মবুদ্ধি ও চেতনা প্রসারের। আবেগের তীব্রতায় একুশের চেতনা স্বাধীনতা-পূর্ব বাংলাদেশে যেভাবে উদ্দীপ্ত ও উজ্জীবিত করেছিল সবাইকে সেখানে মৃত্যুও তুচ্ছ ছিল।  ভাষাসৈনিক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর কবিতায়, 

কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি

স্বাধীনতা-উত্তরকালে আজ সেই চেতনা আমাদের তা সম্মানসহকারে বেঁচে থাকার প্রেরণা জোগায় এবং যার জন্য এখন নিছক আবেগ নয়, সার্বিক উন্নয়ন অভীপ্সায় আজ সুষ্ঠু গাণিতিক পরিকল্পনা প্রয়োজন। এই চেতনার আলোকে বাঙালি জাতি একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে সক্ষম হবে।

একুশের চেতনার সূচনা  

১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক আবুল কাসেমের সম্পাদনায় তমুদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে পাকিস্তানের ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা না উর্দু’ শিরোনামে একটি পুস্তিকা বের হয়। তখন তমুদ্দুন মজলিসের উদ্যোগে প্রথম ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ও গঠিত হয়। এ পরিষদ নানা সভা-সমাবেশের মাধ্যমে বাংলা ভাষার দাবি তুলে ধরার চেষ্টা করে। পূর্ব পাকিস্তানের মুসলিম ছাত্রলীগ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। শেখ মুজিব, শামসুল হক, অলি আহাদসহ ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে ৭ দফা চুক্তিতে আবদ্ধ হন।  চুক্তিতে উর্দুর সঙ্গে সঙ্গে বাংলা ভাষাকেও সমান মর্যাদা প্রদান এবং পূর্ববাংলার সরকারি ভাষা হিসেবে বাংলাকে চালু করার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কিন্তু গভর্নর জেনারেল কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কার্জন হলে আয়োজিত বক্তৃতায় ঘোষণা করলেন,

 ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দু, অপর কোনো ভাষা নয়।’। 

তাই এ ঘোষণার বিরুদ্ধে গর্জে উঠল দেশ। ফের শুরু হলো ভাষার আন্দোলন। 

 ৫২’র ভাষা আন্দোলন

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশনকে সামনে রেখে ছাত্র-জনতার মধ্যে বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে আন্দোলন আরও জোরদার হয়। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটি মিছিল বের করে। মিছিলটি যখন ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আসে তখন পুলিশ মিছিলে গুলিবর্ষণ করে। এতে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারসহ অসংখ্য মানুষ শহীদ হন। আল মাহমুদের কবিতায়,

 ফেব্রুয়ারির একুশ তারিখ

 দুপুর বেলার অক্ত 

বৃষ্টি নামে, বৃষ্টি কোথায় ? 

বরকতের রক্ত।

এই হত্যাযজ্ঞের প্রতিবাদে সারাদেশে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। ছাত্র-জনতা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয় এবং ধর্মঘট শুরু করে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনাসহ সারাদেশে। ২২ তারিখ নিহতদের গায়েবানা জানাজা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর লক্ষাধিক মানুষের এক বিশাল শোভাযাত্রা ঢাকা শহর প্রদক্ষিণ করে। এ ঘটনার পর ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষমতার ভিত নড়ে উঠে। 

 রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি

শহীদদের রক্তের বিনিময়ে বাংলা ভাষার দাবিতে আন্দোলন আরো জোরদার হয়। দেশবাসী ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। অবশেষে, ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের সংবিধানে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এ বছরই বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা ভাষার স্বীকৃতি একন বিশ্বজুড়ে। 

বিশ্বে বাংলাভাষা জনগণের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। বাংলাদেশ ও ভারতের বাইরে পাকিস্তন, ব্রিটেন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় বিপুল সংখ্যক বাঙালির বসবাস। মধ্যপ্রাচ্যের সবকটি দেশ মালয়েশিয়া, কোরিয়া এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের জন্য বিপুল সংখ্যক বাংলাভাষী বসবাস করছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে বাংলাদেশের বাংলাভাষী সৈনিকদের কর্মকা-ে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আফ্রিকান দেশ সিয়েরালিয়ন বাংলা ভাষাকে সে দেশের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করেছে।  

একুশের চেতনার তাৎপর্য 

একুশের চেতনা বাঙালি জাতির জাতীয় চেতনার অন্যতম স্তম্ভ। একুশের চেতনা শুধুমাত্র বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা বা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নয়, এটি বাঙালির জাতীয়তাবোধ, ঐক্যবদ্ধতা, স্বাধিকার ও স্বাধীনতার চেতনার প্রতীক।

একুশের চেতনার তাৎপর্য নিম্নরূপ:

  • ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা: একুশের চেতনার মাধ্যমে বাংলা ভাষা তার মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়।  
  • জাতীয়তাবোধের বিকাশ: একুশের চেতনা বাঙালি জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটায়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বুঝতে পারে যে তারা একটি স্বতন্ত্র জাতি এবং তাদের নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস রয়েছে।
  • ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক: একুশের চেতনা বাঙালি জাতির ঐক্যবদ্ধতার প্রতীক। এ আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি একত্রিত হয়ে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করে।
  • স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি: একুশের চেতনা পরবর্তীতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভিত্তি প্রস্তুত করে।  

একুশের চেতনা শুধুমাত্র বাঙালি জাতির জন্য নয়, বিশ্বের সকল ভাষাভাষী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণা। এ চেতনা আমাদের শিক্ষা দেয় যে, ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হবে।

ভাষা শহীদদের একুশের চেতনা 

ভাষা শহীদদের একুশের চেতনা হলো বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মত্যাগ করার মানসিকতা। ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য আত্মত্যাগ করার মানসিকতা বাঙালি সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।  ভাষা শহীদদের একুশের চেতনা আমাদেরকে পরবর্তীতে যেকোনো অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করে। এটি আমাদের গণতন্ত্র ও মুক্তির জন্য সংগ্রাম করতে শেখায়। ভাষা শহীদদের একুশের চেতনা আমাদের হৃদয়ে ধারণ করে আমরা একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।

একুশের চেতনায় স্বাধীনতার বীজমন্ত্র 

একুশের চেতনার মাধ্যমে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়। ১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে একুশের চেতনাই ছিল প্রাণশক্তি। ১৯৫২-র একুশে ফেব্রুয়ারির আত্মত্যাগ ১৯৫৪, ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৬৬ ও ১৯৬৯ এর গণ-অভ্যুত্থানে এক নতুন প্রত্যয় ও প্রতীতি দান করে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তারা বুঝতে পারে যে, তারা একসাথে থাকলে তারা যেকোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। এই ঐক্যবদ্ধতা পরবর্তীতে স্বাধীনতা সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিটি গণ-আন্দোলনের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ভাষা আন্দোলন। ৭০-এর নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। রাজনৈতিক ও গবেষকদের বিশ্লেষণের সূত্র ধরেই বলা যায়, ভাষা আন্দোলন কেবলমাত্র নিছক একটি আন্দোলন অথবা ভাষারই আন্দোলন ছিল না বরং চেতনা সঞ্চারী এই আন্দোলন ভেতরগত অবিনাশী চেতনার স্মারক হয়ে রয়েছে। এই চেতনা স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বটে। ভাষা আন্দোলন প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রযন্ত্রের সব প্রতারণার বিরুদ্ধে বিজয়ের নির্দেশক।

সাংস্কৃতিক বিকাশের একুশের চেতনা 

বাঙালি সংস্কৃতিতে ভাষা আন্দোলনের প্রভাব অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। আন্দোলনটি শুধুমাত্র বাংলা ভাষার রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনের জন্য সংঘটিত হয়নি, বরং এটি ছিল বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আন্দোলনের ফলে বাঙালি জাতির মধ্যে একটি জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটে এবং বাঙালি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি একটি গভীর আবেগ ও শ্রদ্ধাবোধ গড়ে ওঠে।

ভাষা আন্দোলনের সাংস্কৃতিক প্রভাবসমূহ নিম্নরূপ:

সাহিত্য: ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা সাহিত্যে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। আন্দোলনের চেতনা ও মূল্যবোধকে ধারণ করে অনেক সাহিত্যকর্ম রচিত হয়। যেমন,  শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরী রচিত নাটক কবর; কবি শামসুর রাহমান রচিত কবিতা বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা এবং ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯; জহির রায়হান রচিত উপন্যাস একুশে ফেব্রুয়ারি; বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক শওকত ওসমান রচিত আর্তনাদ উল্লেখযোগ্য। এসব সাহিত্যকর্মে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা, ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দেশপ্রেম ফুটে ওঠে। 

সংগীত: ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অনেক দেশাত্মবোধক গান রচিত হয়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত ও আলতাফ মাহমুদ সুরারোপিত ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…’ এসব গানে আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও তাদের আত্মত্যাগের কথা উঠে আসে। 

শিল্প: ভাষা আন্দোলনের প্রভাবে বাংলা শিল্পে নতুন ধারার সূচনা হয়। আন্দোলনের চেতনা ও মূল্যবোধকে ধারণ করে অনেক শিল্পকর্ম রচিত হয়। এসব শিল্পকর্মে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা, ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দেশপ্রেম ফুটে ওঠে।

এ আন্দোলনের ফলে, বাংলা ভাষার বিকাশ ও প্রসার ঘটে। ভাষা আন্দোলনের সাংস্কৃতিক প্রভাবে বাংলা সাহিত্য, সংগীত ও শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়।

বঙ্গবন্ধু ও একুশের চেতনা

একুশের চেতনা ধারন করে যে একটি জাতিকে স্বাধীনতা দেওয়া যায়, তার উদাহরন হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলনের শুরু থেকে তিনি সক্রিয় ছিলেন। এর জন্য তাকে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। এছাড়াও ‘রাষ্ট্রভাষা ২১ দফা ইশতেহার’ পুস্তিকাটি ১৯৪৭ সালে ডিসেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল। এই ইশতেহার প্রণয়নে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বঙ্গবন্ধু ছিলেন ঐ ইশতেহারে অন্যতম স্বাক্ষরদাতা।   ‘অসমাপ্ত আ ত্মজীবনী’ গ্রন্থে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, “আমরা দেখলাম, বিরাট ষড়যন্ত্র চলছে বাংলাকে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রভাষা উর্দু করার। পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ এর প্রতিবাদ করল এবং দাবি করল, বাংলা ও উর্দু দুই ভাষাকেই রাষ্ট্রভাষা করতে হবে। আমরা সভা করে প্রতিবাদ শুরু করলাম। এ সময় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং তমদ্দুন মজলিশ যুক্তভাবে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে একটা ‘রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ’ গঠন করল। সভায় ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চকে ‘বাংলা ভাষা দাবি’ দিবস ঘোষণা করা হল। জেলায় জেলায় আমরা বের হয়ে পড়লাম।” 

পরবর্তীতে তিনি, ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে প্রথম বাংলা ভাষায় ভাষণ প্রদান করেন। এই ভাষণের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু বিশ্ব নেতাদের নিকট বাঙালি জাতীয়তাবাদ তুলে ধরেন। 

একুশের চেতনা ও বাংলা সাহিত্য 

একুশের চেতনা বাঙালি সাহিত্যে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। ভাষা আন্দোলনের চেতনা ও মূল্যবোধকে ধারণ করে অনেক সাহিত্যকর্ম রচিত হয়। এসব সাহিত্যকর্মে বাঙালির জাতীয়তাবাদী চেতনা, ভাষার প্রতি ভালোবাসা ও দেশপ্রেম ফুটে ওঠে। আমাদের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশে একুশে ফেব্রুয়ারি যেন হাজার তারের এক বীণা। তাতে সৃষ্টি হয়েছে অনেক সুর, অনেক ঝঙ্কার! একুশের বীণায় ঝঙ্কৃত হয়েছে আমাদের ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির বিচিত্র সুর। যে সুর-গান, কবিতা আমাদের নিয়ে যায় শিকড় থেকে শিখরে। 

ক) কবিতাঃ একুশের প্রেরণার প্রথম সাহিত্য প্রসূন একটি কবিতা। চট্টগ্রামের সর্বদলীয় ভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক এবং সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদক মাহবুল উল আলম চৌধুরী। একুশের ঘটনার কথা শুনে সে দিনই লিখেছিলেন সেই কবিতাটি  ‘কাঁদতে আসিনি ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’। এরপর অনেকেই রাষ্ট্রভাষা এবং একুশের ওপর অনেক কবিতা লিখেছেন। এর মধ্যে কবি আলাউদ্দিন আল আজাদের ‘স্মৃতিস্তম্ভ’, শামসুর রাহমানের ‘বর্ণমালা আমার দুঃখিনী বর্ণমালা’, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরের ‘একুশের কবিতা’, আনিস চৌধুরীর ‘একুশের কবিতা’, এবং ফজলে লোহানী, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, সৈয়দ শামসুল হক, হাসান হাফিজুর রহমান অনেক কালজয়ী একুশের কবিতা লেখেন। 

খ) প্রবন্ধঃ কবিতার পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন বিষয়ে লেখা হয়েছে ব্যাপক সংখ্যক প্রবন্ধ। এর মধ্যে মোজাফফর আহমদের ‘উর্দু ভাষা এবং বঙ্গীয় মুসলমান’, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর ‘আমাদের ভাষা সমস্যা’, কাজী মোতাহার হোসেনের ‘রাষ্ট্রভাষা ও পূর্ব পাকিস্তান ভাষা সমস্যা’, অলি আহাদের ‘নাজিমুদ্দিনের বিশ্বাসঘাতকতা’, মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞার ‘ভাষা নিয়ে কথা’, আবুল হাশেম ফজলুল হকের ‘একুশে ফেব্রুয়ারি আন্দোলনের মর্মকথা’ উল্লেখযোগ্য। 

গ) উপন্নাস ও নাটকঃ অমর একুশের ওপর লেখা প্রথম উপন্যাস জহির রায়হানের ‘আরেক ফাল্গুন’।  নাট্য ও থিয়েটারের ক্ষেত্রে আমাদের যে বর্তমান অগ্রগতি তার পেছনেও একুশের চেতনা ফেলেছে অসামান্য প্রভাব। একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম বার্ষিকীতে মুনীর চৌধুরীর বিখ্যাত ‘কবর’ নাটক লেখা হয়।  আসকার ইবনে শাইখ ভাষা আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের নিয়ে লিখেছেন আরেকটি নাটক। নাটকটির নাম ‘যাত্রী’।

একুশের চেতনা ও বাংলা একাডেমি 

একুশের চেতনা বাংলা একাডেমির প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভাষা আন্দোলনের পর বাংলা ভাষার বিকাশ ও সংরক্ষণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই প্রয়োজনীয়তা পূরণে ১৯৫৫ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান সরকারের অধীনে বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির চর্চা ও বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। একাডেমি কর্তৃক প্রকাশিত গ্রন্থ, পত্রিকা, সাময়িকী, অনুবাদ, গবেষণা প্রভৃতি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। এর উদ্যোগে পালিত হয়, একুশে বইমেলা বা অমর একুশে বইমেলা । প্রতি বছর পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এই মেলা বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলা একাডেমি কর্তৃক আয়োজিত অনুষ্ঠান, কর্মশালা, সেমিনার, সম্মেলন প্রভৃতি বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। অর্থাৎ, বাংলা একাডেমি একুশের চেতনাকে ধারণ করে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

একুশের চেতনা ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য 

একুশের চেতনা বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। ১৯৫৩ সালের শহীদ দিবস উদযাপনের মাধ্যমে একুশের চেতনা বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। কালো পতাকা উত্তোলন হলো একুশের শহীদদের স্মরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি হিসাবে মর্যাদা পায়। এই পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে একুশের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক জানানো হয়।  নগ্নপায়ে প্রভাতফেরি হলো একুশের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার আরেকটি অনন্য প্রকাশ। এরপর, সমবেত কণ্ঠে একুশের গান হলো একুশের চেতনার মূর্ত প্রতীক। এই গানগুলো একুশের শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ করে। এগুলো একই সাথে বাঙালি জাতির জাতীয় চেতনার উন্মেষ ঘটায়। একুশের  সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আরেকটি রীতি হল, শহীদদের কবর ও শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করা। 

একুশের চেতনা বাঙালি জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই চেতনা বাঙালি জাতির মধ্যে একটি গভীর সাংস্কৃতিক চেতনার বিকাশ ঘটায়।  

একুশের চেতনা চর্চা 

একুশের চেতনা বাংলা ভাষার প্রতি প্রাণের ঋণ, জীবনের স্বাক্ষর। সেই ঋণ শোধ করার একমাত্র উপায়, ভাষাকে সঠিকভাবে ব্যবহার করা, জেনে-বুঝে আয়ত্ত করা এবং সর্বত্র প্রচলন করা। আমাদের প্রতিটি কথায়, প্রতিটি লেখায় ভাষার মর্যাদা বজায় রাখা, শুদ্ধতা বজায় রাখা জাতীয় দায়িত্ব।

কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, আমরা এখনও ইংরেজির আবরণে আটকে আছি। সরকারি কাজকর্ম, আদালত-পুলিশ, এমনকি শিক্ষা-গবেষণা – সর্বত্রই ইংরেজি লেপ্টে রয়েছে। আদালতের ভাষা ইংরেজি হওয়ায় সাধারণ মানুষের ন্যায়ের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। একুশের চেতনার সাথে এই বৈপরীত্য মানা যায় না। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যিক আব্দুল হাকিম এর প্রয়জনিতার তাগিদে অনেক কঠিন ভাষায় লিখেছিলেন, 

যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।

সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।

দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।

নিজ দেশ ত্যাগী কেন বিদেশ ন যায়।।

অতএব, একুশের চেতনা চর্চা করতে হলে আমাদের ভাষাগত বৈষম্য দূর করতে হবে। বাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে প্রচলনের ব্যবস্থা করতে হবে। কিভাবে আমরা এটা করতে পারি?

  • ব্যক্তিগত পর্যায়ে: নিজেদের কথায়, লেখায় বাংলা ভাষার শুদ্ধতা বজায় রাখা। নতুন শব্দ আয়ত্ত করা, বাংলা অভিধান ব্যবহার করা।
  • সামাজিক পর্যায়ে: বাংলা ভাষা ব্যবহার করে বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সঙ্গে আলাপচারিতা করা। বাংলা ভাষাগত অনুষ্ঠান, প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করা।
  • রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে: সরকারি কাজকর্ম, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষা বাধ্যতামূলক করা। বাংলা ভাষা গবেষণা ও প্রচারের জন্য বেশি বাজেট বরাদ্দ করা।

একুশের চেতনা কেবল স্মৃতিতে লালন করলেই চলবে না, জীবনে ঢেলে দিতে হবে। ভাষা নেই, অস্তিত্ব নেই। বাংলা ভাষায় কথা বলে, বাংলা ভাষায় লিখে, বাংলা ভাষায় বিচার পেয়ে আমরা প্রকৃত অর্থে একুশের চেতনাকে জাগিয়ে রাখতে পারব। আসুন, হাতে হাত ধরে, কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বাংলা ভাষাকে তার প্রকৃত মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করি। 

জাতীয় জীবনে একুশের চেতনার গুরুত্ব 

একুশের চেতনার গুরুত্ব জাতীয় জীবনে অপরিসীম। এটি ব্যক্তিজীবনে ভালো মানুষ হতে সাহায্য করে। আমাদেরকে ন্যায়বিচার, সত্য ও স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করার প্রেরণা দেয় এবং অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শেখায়। আরও শেখায় সহিষ্ণুতা, সহানুভূতি ও সহমর্মিতার শিক্ষা দেয়। এটি আমাদেরকে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে শেখায় এবং জাতীয় জীবনে ভালো নাগরিক হতে সাহায্য করে। আমাদের দেশের প্রতি ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধ জাগিয়ে তোলে। যা দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা করে। এটি আমাদের দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণের জন্য অনুপ্রাণিত করে।

সর্বোপরি, একুশের চেতনা আমাদেরকে মানবতার প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি জাগিয়ে তোলে। অন্য মানুষের প্রতি সহায়তা করার জন্য অনুপ্রাণিত করে এবং বিশ্ব শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য কাজ করতে সাহায্য করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস 

একুশের চেতনা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করে। এই প্রস্তাবে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানালে ইউনেস্কোর সাধারণ অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এই দিবসটি পালনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন ভাষাভাষী জাতিগোষ্ঠী তাদের মাতৃভাষার অধিকার ও মর্যাদা রক্ষার জন্য সংগ্রাম করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়।

নতুন প্রজন্ম ও একুশের চেতনা 

একুশের চেতনা, মাতৃভাষার মর্যাদার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস, এক গর্বিত অতীত যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অটুটভাবে জড়িয়ে আছে। কিন্তু আজকের আধুনিক যুগ, গ্লোবালাইজেশনের ঢেউয়ে সাঁতার কাটছে নতুন প্রজন্ম। প্রযুক্তির আলো ছায়ায় বেড়ে ওঠা এই প্রজন্মের একটা অংশের কাছে, ইতিহাসের পাতায় খুলে দেখার সময় নেই। কিংবা ভাষার সূক্ষ্ম ব্যবহারে মনোযোগী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারছে না। সোশ্যাল মিডিয়ার দুনিয়ায় বাংলা লেখার ক্ষেত্রে অসংলগ্ন ব্যবহার, ভুল বানান – এসব দৃশ্য দিনে দিনে বেড়েই চলছে। বিশেষজ্ঞরা এর কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, 

  • ইতিহাসের সাথে সংযোগের অভাব: অনেক নতুন প্রজন্মের তরুণেরই ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের গভীরতা, শহীদদের ত্যাগ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নেই। এটি একুশের চেতনার সাথে তাদের বিছিন্ন করে দিয়েছে।
  • ভাষার প্রতি উদাসীনতা: ইংরেজির প্রাধান্যতা আর দৈনন্দিন জীবনে মিশ্র ভাষার ব্যবহারের ফলে বাংলা ভাষার প্রতি মনোযোগ কমে যাচ্ছে। ভাষার সঠিক ব্যবহার, শুদ্ধ উচ্চারণে আগ্রহ কমে যাওয়া একুশের ভাষা-চেতনার সাথে দূরত্ব তৈরি করে।
  • সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব: সোশ্যাল মিডিয়ায় তাৎক্ষণিক যোগাযোগের চাপে দ্রুত টাইপের প্রবণতা বেড়েছে, বাংলা লেখায় অসংলগ্নতা, ভুল বানান, ইংরেজি শব্দ মেশানোর প্রবণতা দেখা যায়। এটি ভাষার নিজস্ব রূপকে ক্ষুন্ন করে।

এই দূরত্ব কমানোর চেষ্টা দরকার। কেননা, একুশের চেতনা বাঙালি জাতির জন্য এক অমূল্য সম্পদ। একে লালন করে নতুন প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া, আমাদের মহান দায়িত্ব। 

উপসংহার 

একুশের চেতনা বাঙালি জাতির অহংকার। এই চেতনা আমাদের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, ভাষার অধিকার, মানবতাবাদের জন্য লড়াই করার প্রেরণা যোগায়। একুশের চেতনা হারিয়ে গেলে, বাঙালির অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই চেতনা ছাড়া বাঙালি জাতি কখনোই প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জন করতে পারবে না। নতুন প্রজন্মের কাছে একুশের চেতনা তুলে ধরতে হলে, তাদেরকে ইতিহাসের সাথে সংযুক্ত করতে হবে। একুশের গল্প শোনাতে হবে, শহীদদের জীবন তুলে ধরতে হবে। ভাষার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়াতে হবে। সঠিক বাংলা ব্যবহারের প্রচারণা চালাতে হবে। সরকার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সামাজিক সংগঠন, মিডিয়াসহ সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। তাহলেই নতুন প্রজন্ম একুশের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে গড়ে তুলতে পারবে একটি সুন্দর ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ।

Pdf ডাউনলোড 

শিক্ষার্থী বন্ধুরা তোমাদের সুবিধার্থে রচনাটি পিডিএফ আকারে দেওয়া হল।  এটি ডাউনলোড করে তোমাদের মোবাইল / ল্যাপটপ / কম্পিউটারে রেখে দিতে পারো।  এই জাতীয় শিক্ষামূলক আরো লেখা পেতে নিয়মিত চোখ রাখো আমাদের ব্লগে।  ধন্যবাদ।   

 

Scroll to Top