বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী কোনটি?
বাংলাদেশ একটি নদী-মাতৃক দেশ। এই দেশের বুকে ছোট-বড় রয়েছে অসংখ্য নদ নদীর সমাহার। তবে আমাদের অনেকের মাথায় একটা প্রশ্ন সবসময় আঁকুপাঁকু করে যে, বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী কোনটি? উত্তরটি অনেকেই কাছে অজানা। উত্তরটি হচ্ছে পদ্মা। যদিও বাংলাদেশের পদ্মা, মেঘনা, যমুনাকেই সবচেয়ে বড় নদী বলা হয়। তারমধ্যের সবচেয়ে বড় নদী হচ্ছে পদ্মা। এই পদ্মা নদীকে কেন্দ্র করে আজকের আয়োজন।
প্রিয় দর্শক এতোক্ষণে নিশ্চই বুঝে! গেছেন আজকের বিষয়বস্তুটি সম্পর্কে? বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী সম্পর্কে,বিস্তারিত তথ্য জেনে নিতে নিচের তথ্যগুলো আপনার উপকারে আসতে পারে।
পদ্মার পরিচয়
পদ্মা নদী বাংলাদেশের একটি প্রধান “নদী”। শত-শত নদীর মাঝে এটি বাংলাদেশের বুকে দীর্ঘতম নদীর দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে আমাদের পদ্মা নদী। হিমালয়ের থেকে উৎপন্ন, গঙ্গা নদীর প্রধান শাখা হচ্ছে পদ্মা নদী। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে রাজশাহীর বুকে পদ্মা নদী অবস্থিত। জানা যায় পদ্মার সর্বোচ্চ গভীরতা ৩৪৫ কিলোমিটার অর্থাৎ ২২১ মাইল এবং গড় প্রস্থ হচ্ছে ১০ কিলোমিটার।
জানা যায়, এক-সময় রাজা রাজবল্লভের কীর্তি পদ্মা নদী ভাঙ্গনের সময় এর শিকার হয়ে ধ্বংস হয়,বলেই পদ্মাকে বলা হয় “কীর্তিনাশা”। তাই অনেকে’ই পদ্মাকে কীর্তিনাশা বলেই ডাকে। পদ্মার শান্ত পরিবেশ যেমন সবার মন শীতল করে তেমনি এর ভয়াবহতা এবং রাক্ষসী রূপ শরীরে এক অন্যরকম অনুভুতি সৃষ্টি করে।
পদ্মাসেতু
বাংলাদেশে দীর্ঘতম সেতুর নাম কি জানেন আপনারা? পদ্মা যেমন বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। তেমনি বাংলাদেশের দীর্ঘতম সেতু পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতু আমাদের গৌরবের আরেকটি নাম পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুর অফিশিয়াল নাম হচ্ছে পদ্মা বহুমুখী সেতু। এটি চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেডের,দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। ডিসেম্বরের ৭ তারিখের ২০১৪ সালে এর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। পদ্মা সেতুর মোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬.১৫ কি:মি: এবং প্রস্থ হচ্ছে ১৮.১০ মি।
৪২ টি পিলার এবং ৪ টি লেনের দ্বারা পদ্মা সেতু। ২৫ শে জুন ২০২২ সালে পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়।
পদ্মা নদীর জীবন
সর্পিলাকার নদী পদ্মা। আমাদের দেশের মাঝবরাবর উত্তর পশ্চিম থেকে দক্ষিণ পূর্বে বয়ে চলেছে পদ্মা নামক এই বিশাল নদী। ১২টি জেলার বুক চিরে অবিরাম ভেসে চলেছে এই নদী। দেশের প্রধান এই নৌপথের বুকে প্রতিনিয়ত ঘুরে বেড়ায় অসংখ্য নৌযান। পদ্মার নামকরা ফেরি ঘাটের মধ্যে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ফেরিঘাট অন্যতম। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের কয়েক হাজার যানবহন এই পাটুরিয়া ফেরিঘাটের মাধ্যমে চলাচল করে দেশের নানা প্রান্তরে।
ফেরিঘাটের ফেরিতে চড়ে পার হলে পদ্মার কারণে আলাদা হয়ে থাকা প্রায় ২১ টি জেলার জনপদে যাওয়া যায়। পদ্মা বেশ প্রশস্ত এবং খরস্রোতা নদী হওয়ায় অনেক সময় পদ্মার পেটে গেছে অনেক লঞ্চ স্টিমার সহ বিভিন্ন যানবাহন। পদ্মার রূপ লাবণ্য উপভোগ আর ঝালমুড়িসহ নানা খাবারের সাথে সময়টা ভালোই কাটে ফেরিতে চলাচল করা যাত্রীদের।
পদ্মার গভীরতা শীতে প্রায় ১০০ ফুট আর বর্ষায় তার দিগুন। বর্ষার সময় এই নদীর স্রোত বয় প্রতি সেকেন্ডে ১৫ লাখ ঘন মিটার পানি এবং শীতে সাড়ে ৪ লাখ ঘনমিটার পানি। পদ্মায় নৌযান দেখে বোঝা যায় নদীজীবী মানুষের কার কি পেশা। এ নদীর যেখানে সেখানে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে জেলেদের ছোট ছোট নৌকা। এ যেন জয়নুল আবেদীনের আঁকা জীবন্ত চিত্রের সেই কথা মনে করিয়ে দেয়। পদ্মার আশেপাশের মানুষের কর্ম বেশিভাগ জেলেই হয়ে থাকে, কারন পদ্মার টাটকা টাটকা মাছ ধরেই তাদের সংসার চলে।
জেলেরা সারাদিনের ক্লান্তি শেষে কেউ সুখ খোঁজে চায়ের কাপে কেউবা পান সুপারির রসনা বিলাসে। পদ্মার জীবন দশা এবং জেলেদের উদ্দেশ্যে পরম মমতাই মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন তার কালজয়ী উপন্যাস পদ্মা নদীর মাঝি। পদ্মার মাছ ধরতে, বিশেষ করে ইলিশ মাছ ধরতে গেলে লাগে যেমন জাল তার ওজন তেমনি ভারী টানতে গেলে লাগে বাহন।
পদ্মার মাছ
মাছে ভাতে বাঙালি আমরা। তাই ঠিক মাছ নাহলে আমাদের জমে না। বিশেষ করে প্রতিটি বাঙালির পছন্দের মাছ ইলিশ। আজও বাঙালি পহেলা বৈশাখে পান্তা ইলিশ খাওয়া বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে বহন করে আসছে। বর্তমানে পদ্মায় আগের মত মাছ না থাকলেও এটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র। ফেসবুক স্ট্যাটাস ক্যাপশন
বাঙালির এই ইলিশের প্রতি চাহিদার কথা মাথায় রেখে পদ্মা নদীর পাশে গড়ে উঠেছে অনেক রেস্তোরাঁ যেখানে প্রতিনিয়ত পদ্মার টাটকা ইলিশের বিভিন্ন লোভনীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। সেখান থেকে বাঙালি তৃপ্তি করে খায় অনেক রকম খাদ্য। ইলিশের লেজ ভর্তা থেকে ইলিশের সব রকম আইটেম আপনার সামনেই রান্না করে দেবে। তবে শুধু ইলিশ মাছ নয় বোয়াল ও পাঙ্গাসে অতুলনীয় স্বাদ আজও বয়জষ্ঠদের মুখে সুনাম শোনা যায়।
নানা মাছের উৎপাদন, বিপণন, আহরণ এবং পরিবহন সব ক্ষেত্রেই পদ্মা পাড়ের মৎস্যজীবীরা পদ্মার কাছে ঋণী হয়ে থাকে।
পরিশেষে,
প্রিয় দর্শক দেখতে দেখতে আজকের আয়োজনের শেষ প্রান্তে এসে পড়েছি। আজকের টপিক ছিল বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী কোনটি? এই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করার চেষ্টা করেছি। আমার আর্টিকেল দ্বারা যদি আপনি উপকৃত হন তবে আমাদের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করে আসতে পারেন।