কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী
বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম! যার গান কবিতা গল্পে বার বার উঠে এসেছে পরাধীন মানুষের কণ্ঠস্বর এবং মেহনতি মানুষের আর্তনাত। প্রিয় পাঠক আজকের আমাদের আয়োজনে আমরা হাজির হয়েছি , আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনী নিয়ে।
নজরুলের ছেলেবেলা
কাজী নজরুল ইসলাম ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে ২৪ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
কাজী নজরুল ইসলামের ছেলেবেলা কেটেছে দারিদ্র্যের মধ্যে। তার বাবা ফকির আহমদ ছিলেন একজন দরিদ্র মসজিদের ইমাম। নজরুলের মা জাহেদা খাতুন ছিলেন একজন গৃহিণী। নজরুলের তিন ভাইয়ের মধ্যে কনিষ্ঠ কাজী আলী হোসেন এবং দুই বোনের মধ্যে সবার বড় কাজী সাহেবজান ও কনিষ্ঠ উম্মে কুলসুম।
নজরুলের ডাক নাম ছিল “দুখু মিয়া”।
শিক্ষা জীবন
নজরুল খুব ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন। তিনি গ্রামের মক্তবে প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। তারপর তিনি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু দারিদ্র্যের কারণে তিনি স্কুলে বেশিদিন পড়াশুনা করতে পারেননি।
নজরুল ছোটবেলা থেকেই কবিতার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। নজরুল মাত্র সাত বছর বয়সে মাকে হারিয়ে ফেলেন। তার মায়ের মৃত্যুর পর তার জীবনে অনেক পরিবর্তন আসে। তিনি আরও বেশি দুঃখী হয়ে পড়েন। তিনি তার মায়ের স্মৃতি নিয়ে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তিনি ছড়া, কবিতা, গান লিখতেন। তিনি গ্রামের লোকদের কাছে তার লেখা কবিতা ও গান শুনাতেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ
নজরুল ১৯১২ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি সেনাবাহিনীতে কাজ করার সময়ও তার লেখালিখি চালিয়ে যান। তিনি সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন “বিদ্রোহী” কবিতা রচনা করেন। এই কবিতাটি তার সাহিত্য জীবনের এক যুগান্তকারী ঘটনা।
সাহিত্য চর্চা
নজরুল মক্তব, মসজিদ ও মাজারের কাজে বেশি দিন ছিলেন না। বাল্য বয়সেই লোকশিল্পের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি একটি লেটো দলে যোগ দেন। নজরুল তার চাচা কাজী বজলে করিমের কাছে লেটো গান ও কবিতা শেখেন। কাজী বজলে করিম চুরুলিয়া অঞ্চলের লেটো দলের বিশিষ্ট উস্তাদ ছিলেন এবং আরবি, ফার্সি ও উর্দূ ভাষায় তার দখল ছিল।
লেটো দলগুলো বাংলার রাঢ় অঞ্চলের কবিতা, গান ও নৃত্যের মিশ্র আঙ্গিক চর্চার ভ্রাম্যমাণ নাট্যদল। এই দলগুলো সাধারণত গ্রামে গ্রামে ঘুরে ঘুরে তাদের অনুষ্ঠান পরিবেশন করত। নজরুল লেটো দলে যোগদানের মাধ্যমে বাংলা লোকশিল্পের সাথে পরিচিত হন। তিনি লেটো গান ও কবিতা রচনায় তার প্রতিভা প্রদর্শন করেন।
কাব্যগ্রন্থ
১) সর্বহারা
২) অগ্নিবীণা ( সেপ্টেম্বর, ১৯২২ খ্রি. : কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ )
৩) মরুভাস্কর ( হযরত মুহাম্মদ ( সা: ) এর জীবন ভিত্তিক ।
৪) দোলনচাপা ( ১৯২৩ খ্রি. প্রেমের কাব্য )
৫) ঝিঙেফুল
৬) ফনি-মনসা
৭) ছায়ানট
৮) বিষের বাঁশি
৯) ভাঙ্গার গান
১০) চক্রবাক
১১) সঞ্চিতা ( রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কে উৎসর্গ করেন )
১২) চিত্রনামা ( দেশবন্ধু মিত্তরঞ্জন দাশের জীবনভিত্তিক )
১৩) সন্ধ্যা ( এই কাব্য গ্রন্থের উল্লেখযোগ্য কবিতা গাহি তাহাদের গান, চল্ চল্ চল্, জীবন-বন্দনা )
১৪) নতুন চাঁদ ( শেষ কাব্য )
১৫) চন্দ্রবিন্দু ( হাসি ও ব্যঙ্গের কাব্য )
১৬) সিন্ধু – হিন্দোল ( একটি প্রেমের কাব্য )
১৭) পুবের হাওয়া
১৮) জিঞ্জির
১৯) সাম্যবাদী
২০) প্রলয় – শিখা
উপন্যাস :
১) বাঁধনহারা ( তার প্রথম উপন্যাস; বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রোপন্যাস । পত্রসংখ্যা – ১৮ টি )
২) মৃত্যুক্ষুধা
৩) কুহেলিকা
বিদ্রোহী নজরুল
কাজী নজরুল ইসলামকে “বিদ্রোহী কবি” বলা হয়। কারণ তার কবিতায় বিদ্রোহের চেতনা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি অন্যায়, অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। তিনি মানুষের মুক্তির জন্য সংগ্রাম করেছেন।
মওলানা হসরত মোহানি ছিলেন একজন বিপ্লবী সাংবাদিক ও লেখক। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। তিনি ভারতের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি করেছেন। তেনার পর প্রথম বাঙ্গালী হিসাবে নজরুল ১৯২২ সালে তার সম্পাদিত “ধূমকেতু” পত্রিকার ১৩শ সংখ্যায় “স্বরাজ-টরাজ বুঝি না” শিরোনামে একটি প্রবন্ধে পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানান।
নজরুলের বিদ্রোহের চেতনা তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা “বিদ্রোহী” থেকেই স্পষ্ট। এই কবিতায় তিনি বলেছেন:
‘আমি দুর্বার,
আমি ভেঙে করি সব চুরমার!
আমি অনিয়ম উচ্ছৃঙ্খল,
আমি দলে যাই যত বন্ধন, যত নিয়ম কানুন শৃঙ্খল!’
আরও বলেছেন,
‘কারার ঐ লৌহ-কপাট
ভেঙে ফেল, কর রে লোপাট
রক্ত-জমাট
শিকল পূজোর পাষাণ-বেদী।’
নজরুলের বিদ্রোহের চেতনা শুধুমাত্র সাহিত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি তার জীবনেও বিদ্রোহের চেতনায় অনুপ্রাণিত ছিলেন। তিনি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। তিনি সামাজিক অবিচার ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করেছেন।
নজরুল একজন সত্যিকারের বিদ্রোহী কবি। তার বিদ্রোহের চেতনা বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে চিরকাল অমর হয়ে থাকবে।
নজরুলের ব্রিটিশ বিরোধী বই ও কবিতার মধ্যে রয়েছে:
বই
- ধূমকেতু (১৯২২)
- যুগবাণী (১৯২২)
- বিষের বাঁশি (১৯২২)
- প্রলয়োল্লাস (১৯২২)
- সাম্যবাদী (১৯২৪)
- ইসলামের দাবি (১৯২৬)
কবিতা
- বিদ্রোহী
- ফণীমনসা
- সাম্যবাদী
- বিষাদ সিন্ধু
- ঝড়
- ধুলো
- তুফান
- আনন্দময়ীর আগমনে
- স্বরাজ
ধূমকেতু বইটিতে প্রকাশিত “আনন্দময়ীর আগমনে” কবিতাটি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক তীব্র আঘাত ছিল।
সংগীত চর্চা
নজরুল ইসলামের গানের সংখ্যা চার হাজারের অধিক। তার রচিত গানগুলির মধ্যে রয়েছে বিদ্রোহী গান, প্রেম গান, সামাজিক গান, ধর্মীয় গান, দেশাত্মবোধক গান, শিশুতোষ গান ইত্যাদি। তার গানগুলি বাংলা গানে এক নতুন দিগন্তের সূচনা করে। তার গানগুলি আজও জনপ্রিয় এবং মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছে।
১৯৩৮ সালে কাজী নজরুল ইসলাম কলকাতা বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হন। সেখানে তিনি “হারামণি”, “নবরাগমালিকা” ও “গীতিবিচিত্রা” নামে তিনটি অনুষ্ঠানের জন্য গান লিখেন। এই অনুষ্ঠানগুলিতে তিনি নতুন নতুন রাগ ও তাল ব্যবহার করেন। তার গানগুলির মাধ্যমে বাংলা সঙ্গীতে তিনি এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন।
নজরুলের প্রেমের গানগুলো অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই গানে তিনি প্রেমের বিভিন্ন রূপ ও ভাব প্রকাশ করেছেন। তিনি প্রেমের আনন্দ, বেদনা, দুঃখ, আশা, ভালোবাসা ইত্যাদির কথা বলেছেন।নজরুল ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ মানুষ। তিনি ইসলাম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তার ধর্মীয় গানে তিনি বিভিন্ন ধর্মের মূল্যবোধ ও শিক্ষার কথা তুলে ধরেছেন।নজরুল সঙ্গীতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল এর বিদ্রোহী চেতনা। নজরুল অন্যায়, অবিচার, শোষণ, বঞ্চনা ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। তার গানগুলিতে এই বিদ্রোহী চেতনা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।
কাজী নজরুল ইসলামের স্ত্রী ও সন্তান
কাজী নজরুল ইসলামের দুইটি বিয়ে হয়েছিল। প্রথম বিয়ে হয়েছিল নার্গিস আসার খানমের সাথে। এই বিয়েটি ছিলো বাল্যবিবাহ। এই বিয়েটি বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। নজরুল এই বিয়েতে ঘরজামাই থাকতে অস্বীকার করেন এবং পরে প্রমীলা দেবীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
প্রমীলা দেবী
কাজী নজরুল ইসলামের দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন প্রমীলা দেবী। প্রমীলা দেবীর আসল নাম ছিলো আশালতা সেনগুপ্ত। তিনি কুমিল্লার বিরজাসুন্দরী দেবীর মেয়ে ছিলেন। প্রমীলা দেবীর সাথে নজরুলের পরিচয় হয়েছিলো কুমিল্লায়। প্রমীলা দেবী ছিলেন নজরুলের সঙ্গীতের একনিষ্ঠ ভক্ত। নজরুলের কবিতা ও গান তাকে মুগ্ধ করেছিলো। নজরুলও প্রমীলা দেবীর প্রেমে পড়েছিলেন।
প্রমীলা দেবীর সাথে নজরুলের বিয়ে হয়েছিলো ১৯২৬ সালে। এই বিয়েটি নজরুলের জীবনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। প্রমীলা দেবী নজরুলের জীবনে একজন আদর্শ সঙ্গিনী ছিলেন। তিনি নজরুলের সাহিত্যকর্মে উৎসাহ যুগিয়েছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলাম ও প্রমীলা দেবীর চার জন সন্তান ছিলো। তাদের নাম হলো:
- কৃষ্ণ মুহাম্মদ (১৯২৭-১৯২৮)
- অরিন্দম খালেদ (বুলবুল) (১৯২৯-১৯৩৪)
- কাজী সব্যসাচী (১৯৩১-১৯৯৭)
- কাজী অনিরুদ্ধ (১৯৩৩-১৯৮২)
কৃষ্ণ মুহাম্মদ ও অরিন্দম খালেদ (বুলবুল) খুব অল্প বয়সেই মারা যান। কাজী সব্যসাচী ও কাজী অনিরুদ্ধ জীবিত ছিলেন। কাজী সব্যসাচী ছিলেন একজন বিখ্যাত আবৃত্তিকার। কাজী অনিরুদ্ধ ছিলেন একজন শিল্পী।
কাজী নজরুল ইসলামের শেষ জীবন
কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৪২ সালের ৯ জুলাই হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেন এবং তার মানসিক ভারসাম্যও নষ্ট হয়ে যায়। প্রথমে তাকে হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু এতে তার অবস্থার উন্নতি হয় না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তাকে ইউরোপে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি।
১৯৫২ সালে নজরুলকে রাঁচির একটি মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৯৫৩ সালে তাদের লন্ডনে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সেখানেও তার অবস্থার উন্নতি হয় না।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর নজরুলকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১৯৭৬ সালে তাকে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করা হয়।
১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট নজরুল মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ঢাকার পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
কাজী নজরুল ইসলামের সমাধি
নজরুল তার একটি গানে লিখেছেন,
“মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিয়ো ভাই
যেন গোরের থেকে মুয়াজ্জিনের আযান শুনতে পাই”।
এই ইচ্ছার বিষয়টি বিবেচনা করে, কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাধিস্থ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পুরস্কার ও সম্মাননা
কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রধান বাঙালি কবি ও সঙ্গীতকার। তার সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- জগত্তারিণী স্বর্ণপদক: ১৯৪৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি এই পুরস্কার লাভ করেন। এই পুরস্কারটি বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য দেওয়া হয়।
- পদ্মভূষণ: ১৯৬০ সালে ভারত সরকার তাকে এই সম্মাননায় ভূষিত করে। এই সম্মাননাটি ভারতের তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।
- ডিলিট উপাধি: ১৯৭০ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে এই উপাধিতে ভূষিত করে। এই উপাধিটি একাডেমিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য দেওয়া হয়।
- একুশে পদক: ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তার সাহিত্যকর্মের জন্য তাকে এই পদক প্রদান করা হয়। এই পদকটি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা।
এছাড়াও, তিনি বিভিন্ন সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠন থেকে বিভিন্ন পুরস্কার ও সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত পুরস্কার ও সম্মাননাগুলি তার সাহিত্যকর্মের প্রতি সমাজের স্বীকৃতির প্রতীক।
এক নজরে কাজী নজরুল ইসলাম
বিষয় | বিবরণ |
নাম | কাজী নজরুল ইসলাম |
জন্ম | ২৪ মে, ১৮৯৯ |
জন্মস্থান | চুরুলিয়া, পশ্চিম বর্ধমান জেলা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত |
মৃত্যু | ২৯ আগস্ট, ১৯৭৬ |
মৃত্যুস্থান | ঢাকা, বাংলাদেশ |
মৃত্যুর কারণ | পিক্স ডিজিজ |
সমাধিসৌধ | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে |
জাতীয়তা | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯-১৯৪৭), ভারতীয় (১৯৪৭-১৯৭২), বাংলাদেশী (১৯৭২-১৯৭৬) |
নাগরিকত্ব | ব্রিটিশ ভারতীয় (১৮৯৯–১৯৪৭), ভারতীয় (১৯৪৭–১৯৭৬), বাংলাদেশী (১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৭২-২৯ অগাস্ট ১৯৭৬) |
পেশা | কবি, ঔপন্যাসিক, গীতিকার, সুরকার, নাট্যকার, সম্পাদক |
উল্লেখযোগ্য কর্ম | চল্ চল্ চল্, বিদ্রোহী, নজরুলগীতি, অগ্নিবীণা, বাঁধন হারা, ধূমকেতু, বিষের বাঁশি, গজল |
আন্দোলন | বাংলার নবজাগরণ |
দাম্পত্য সঙ্গী | আশালতা সেনগুপ্ত (প্রমিলা), নার্গিস আসার খানম |
সন্তান | কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দম খালেদ (বুলবুল), কাজী সব্যসাচী, কাজী অনিরুদ্ধ |
পিতা-মাতা | কাজী ফকির আহমদ (পিতা), জাহেদা খাতুন (মাতা) |
পুরস্কার | জগত্তারিণী স্বর্ণপদক (১৯৪৫), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৭৭), একুশে পদক (১৯৭৬), পদ্মভূষণ |
প্রশ্ন উত্তর কাজী নজরুল ইসলাম – FAQ
প্রশ্ন ১: কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ও মৃত্যু কবে?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের জন্ম ১৮৯৯ সালের ২৪ মে, ব্রিটিশ ভারতের ফরিদপুর জেলার অন্তর্গত ত্রিশাল গ্রামে। তার মৃত্যু ১৯৭৬ সালের ২৯ আগস্ট, বাংলাদেশের তৎকালীন রাজধানী ঢাকায়।
প্রশ্ন ২: কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম কী ছিল?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের ডাকনাম ছিল “দুখু মিয়া”।
প্রশ্ন ৩: কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম কী ছিল?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের পিতার নাম ছিল কাজী ফকির আহমদ।
প্রশ্ন ৪: কাজী নজরুল ইসলামের মাতার নাম কী ছিল?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের মাতার নাম ছিল মোহর আফরোজ।
প্রশ্ন ৫: কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষাজীবন কেমন ছিল?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের শিক্ষাজীবন খুব একটা সুখকর ছিল না।
প্রশ্ন ৬: কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের প্রধান বিষয়বস্তু কী ছিল?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যকর্মের প্রধান বিষয়বস্তু ছিল বিদ্রোহ, প্রেম, সাম্য, মানবতা, দেশপ্রেম ইত্যাদি। তিনি বাংলা সাহিত্যে “বিদ্রোহী কবি” হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন।
প্রশ্ন ৭: কাজী নজরুল ইসলামের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের নাম গুলো কি?
উত্তর: কাজী নজরুল ইসলামের উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মের মধ্যে রয়েছে:
- কাব্যগ্রন্থ: অগ্নিবীণা (১৯২২), ফণীমনসা (১৯২৭), ভাঙার গান (১৯২৮), ধূমকেতু (১৯২৮), চক্রবাক (১৯৩০), বিষের বাঁশি (১৯৩২), সাম্যবাদী (১৯৩৫), মৃত্যুক্ষুধা (১৯৩৮), ঝিলিমিলি (১৯৪০), সঞ্চিতা (১৯৪৬), গগনতারা (১৯৫৩), সৈনিক (১৯৬০), ধুমকেতু (প্রথম সংস্করণ) (১৯৬০), রুদ্রমঙ্গল (১৯৬৮)
- গল্পগ্রন্থ: বিদ্রোহী (১৯২৫), বিষের বাঁশি (১৯৩২), ফণীমনসা (১৯৩৩), চক্রবাক (১৯৩৪), নির্মম (১৯৩৫), ধূমকেতু (১৯৩৬), ঝিলিমিলি (১৯৪০), সঞ্চিতা (১৯৪৬)
- নাটক: ধূমকেতু (১৯২৫), বিষের বাঁশি (১৯৩২), চক্রবাক (১৯৩৪), নির্মম (১৯৩৫), ধূমকেতু (১৯৩৬), ঝিলিমিলি (১৯৪০), সঞ্চিতা (১৯৪৬)
- সঙ্গীত: গান ও কবিতা মিলে প্রায় ২ হাজার গান রচনা করেছেন।
শেষ কথা
কাজী নজরুল ইসলাম তার কর্মে লেখায় ও চিন্তায় আমাদের বাংলা সাহিত্যে যে অবদান রেখে গেছেন বাঙালি জাতি চিরদিন তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবেন। আমাদের ব্লগে নিয়মিত আমরা সাহিত্য, বিজ্ঞান , প্রযুক্তি বিষয়ের উপর বিখ্যাত ব্যাক্তিদের জীবনী প্রকাশ করে থাকি। আমাদের ব্লগটি নিয়মিত পড়ুন বিখ্যাত মানুষের জীবনী পরে অনুপ্রেণীত হোন। ধন্যবাদ।
Also Read: প্রেমের কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর