কাঠবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
আমাদের দেশের কাঠবাদাম খুবই পরিচিত একটি খাদ্য দ্রব্য। কাঠবাদাম পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি বাদাম। এটি পুষ্টিকর খাবার হিসাবে সকলের কাছে পরিচিত। বিভিন্ন চিকিৎসকরা বলে থাকেন প্রতিদিন রাতে ভিজিয়ে রাখা কাঠবাদাম সকালবেলা খেলে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও সুস্থ থাকা যায়। কাঠবাদামে আছে ভিটামিন ই, এ ও পটাশিয়ামের মত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কাঠ বাদামের সবচাইতে বড় উপকার হচ্ছে এটি মস্তিষ্ক সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
এছাড়াও এটি বিভিন্ন ভিটামিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। কাঠবাদাম ক্যান্সার কোষ কে ধ্বংস করতে সাহায্য করে। এছাড়াও কাঠবাদাম চুলের জন্য বেশ উপকারী। আমাদের শ্বাসতন্ত্রের জন্য কাঠবাদাম বেশ উপকারী। কাঠবাদাম রক্তস্বল্পতা দূর করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় শ্বাসতন্ত্র ঠিক রাখে।
এইরকম হাজারো গুন রয়েছে কাঠবাদাম এর মধ্যে যা বলে শেষ করা যাবেনা। আমাদের মধ্যে এমন অনেকেই আছে যারা কাঠবাদাম খেয়ে থাকেন তবে কাঠবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানেনা। আজকের এই আর্টিকেলে কাঠবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব। তাই দেরি না করে এখনি আর্টিকেলটি করা শুরু করুন:
কাঠবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা
কাঠবাদামের উপকারিতা
১)মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি
কাঠবাদামে থাকা পুষ্টিগুণ গুলো আমাদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে বেশ সাহায্য করে।কাঠবাদামে আছে মস্তিষ্কের জন্য প্রয়োজনীয় দুটি পুষ্টিগুণ রিবোফ্লাভিন ও এল ক্যারনিটিন। এই উপাদান দুটি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে। এছাড়াও কাঠবাদাম স্মৃতিভ্রম রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। নিয়মিত ৪-৪ টি কাঠ বাদাম ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়। এছাড়াও কাঠবাদাম আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকারী ফ্যাট উৎস হিসেবে বিশেষ ভূমিকা রাখে। অল্প বয়সী শিশুদের বুদ্ধি বিকাশের জন্য কাঠবাদাম অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার।
২)ক্যান্সার প্রতিরোধ
কাঠ বাদামে আছে বিশেষ ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে বেশ সাহায্য করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, চীনা বাদাম, আখরোট এবং কাঠ বাদাম স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩)হার্টের সুস্থতায়
নিয়মিত ভেজানো কাঠবাদাম খেলে হার্ট ভালো থাকে। কারণ কাঠবাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ,ম্যাগনেসিয়াম,পটাশিয়াম ইত্যাদি উপকারী উপাদান থাকে। যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এছাড়াও কাঠবাদামে আছে ভিটামিন-ই যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে সাহায্য করে। এটি অ্যার্টারিকে ক্ষতিকর প্রদাহের হাত থেকে আমাদের শরীরকে সুরক্ষা দেয়। প্রতিদিন নিয়ম করে কাঠবাদাম খেলে হৃদযন্ত্র ভালো থাকে এবং ৫০% হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে যায়।
৪)ভিটামিন ই এর ভালো উৎস
কাঠবাদাম ভিটামিন ই এর একটি ভালো উৎস। কাঠবাদামে থাকা প্রোটিন এবং পর্যাপ্ত ভিটামিন ই আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ভিটামিন ই ফ্যাট-দ্রবণীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের একটি পরিবার। আমাদের শরীরের কোষের ঝিল্লিতে এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি তৈরি হতে থাকে।এবং আপনার কোষগুলিকে অক্সিডেটিভ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে।
৫)ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে
কাঠবাদাম ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।একটি গবেষণায় দেখা গেছে, খাবারের পর কাঠবাদাম খাওয়া ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।কাঠবাদাম শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয়।
৬)ওজন নিয়ন্ত্রণের সহায়ক
কাঠবাদাম খেলে খিদে কমে যায়। যার ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। এই কারণে শরীরে প্রয়োজন অতিরিক্ত ক্যালরি জমে না যার ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনাও কমে যায়। কাঠবাদাম বিপাকের হার বাড়িয়ে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে।
৭)চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে আমাদের চুল পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃদ্ধি হতে পারে না। তবে কাঠ বাদামে আছে প্রচুর পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ডি যা আমাদের চুলকে দ্রুত বাড়তে ও মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়াও চুলের রুক্ষতা, চুল পড়া, মাথার ত্বকের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কাঠবাদামের তেল খুবই উপকারী যা চুলকে মসৃন ও মজবুত করে।
৮)কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে
কাঠবাদাম শরীরে বাজে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় কাঠবাদাম অন্তর্ভুক্ত করলে হার্টের স্বাস্থ্য নিয়ে আর চিন্তায় থাকতে হবে না। কাঠবাদামের থাকা বেশ কিছু উপকারী উপাদান শরীরে ভালো কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে খারাপ কোলেস্টরলের মাত্রা কমতে শুরু করে। এছাড়া বাদামে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড, মনো-স্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাক । কিন্তু কাঠবাদামে কোন প্রকার ট্রান্স ফ্যাট থাকে না। এর ফলে হার্ট অ্যাটাক কিংবা স্ট্রোকেরও আশঙ্কা অনেকাংশে কমে যায়।
৯)ত্বকের সমস্যা
কাঠবাদামে থাকা পুষ্টি উপাদান গুলো ত্বকের পুষ্ঠি যোগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ময়শ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে যা ব্রণ, ব্ল্যাকহেডস ইত্যাদি দূর করতে বেশ সাহায্য করে। কাঠবাদামের তেলে আছে ভিটামিন-ই যা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও রোদে পোড়ে ত্বকের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এছাড়াও কাঠ বাদামে আছে একটি অ্যান্টি এজিং উপাদান যা ত্বকের তারুন্য বজায় রাখে এবং ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধিতে বেশ সাহায্য করে।
১০)হাড় ও দাঁত ভালো রাখে
কাঠবাদামে আছে মিনারেল,ফসফরাস, ও ভিটামিন যা হাড় ও দাঁতকে সুরক্ষা দেয়। ফসফরাস শুধুমাত্র হাড় ও দাঁত কে মজবুত করে না পাশাপাশি অস্টিওপরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় রোগ প্রতিরোধও সাহায্য করে। হাড় ও দাঁত ভালো রাখতে ফসফরাস এর প্রভাব রয়েছে অনেকখানি। বয়স জনিত হাড় ও দাঁতের সমস্যার তৈরি হওয়ার হাত থেকে রক্ষা নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
১১)পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
কাঠবাদামে রয়েছে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৩.৫ গ্রাম ফাইবার, ১৪ গ্রাম ফ্যাট সহ ভিটামিন ই, ভিটামিন বি২, ফসফরাস, ম্যাঙ্গানিজ এবং ম্যাগনেসিয়াম। এই সবকটি উপাদানই শরীরকে সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
১২)কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়
কাঠবাদামের ফাইবার আমাদের শরীরের জন্য বেশ উপকারী। আর্জিনিন এবং হেলদি ফ্যাটের সঙ্গে এই ফাইবারের উপস্থিতি কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি। ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
১৩)ওজন নিয়ন্ত্রণ
কাঠ বাদাম স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখার জন্য উপকারী। প্রোটিন, ফাইবার এবং ফ্যাট সমৃদ্ধ এই খাবারটি আপনার খিদে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম। বাদামে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, যা রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
১৪)কোষের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়
কাঠবাদামে থাকা প্রচুর মাত্রায় ভিটামিন ই ও পুষ্টি গুনাগুন গুলো শরীরের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে থাকা কোষের কর্মক্ষমতার বৃদ্ধি ঘটাতে সাহায্য করে। সেই সাথে শরীরে যাতে কোনও ক্ষতের সৃষ্টি না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখে। যার ফলে বয়স বাড়লেও শরীরের উপর কোন প্রভাব পড়ে না।
১৫)শক্তি বাড়ায়
নিয়মিত একমুঠো কাঠবাদাম খেলে শরীরে শক্তি বৃদ্ধি হয়। কাঠগোদামে আছেকপার,ম্যাঙ্গানিজ,রিবোফ্লাবিন শরীরে শক্তি জোগায়। এছাড়াও এটি বিপাক প্রক্রিয়া ভালোভাবে হতেও সাহায্য করে।
১৬)রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঠবাদাম অ্যালকেলাইন সমৃদ্ধ একটি খাবার। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন-ই রয়েছে অনেক শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এগুলো বিভিন্ন ধরনের রোগের হাত থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়।
কাঠ বাদামের অপকারিতা
কাঠবাদামের এত এত উপকারী গুণের পাশাপাশি এর কিছু ক্ষতিকর দিকও আছে চলুন সেগুলো সম্পর্কে জেনে নিই:
১)আলার্জির উপাদান
কিছু মানুষের জন্য কাঠ বাদাম আলার্জির উপাদান হতে পারে। এসব মানুষদের জন্য কাঠ বাদাম খাওয়া উচিত নয়। কাঠ বাদাম খেলে তাদের এলার্জি সমস্যা দ্বিগুণ বেড়ে যেতে পারে। এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা বা অসুবিধার উৎপাদন করতে পারে।
২)গ্যাস হতে পারে
নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়ার ফলে আপনার শরীরের মধ্যে কখনো কখনো গ্যাস হতে পারে। তাছাড়া অ্যাসিডিটির সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৩)ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা
অতিরিক্ত কাঠ বাদাম খাবেন না অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাওয়ার পরে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে
৪)টক্সিকের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে
বেশি বেশি কাঠবাদাম খাওয়ার ফলে মাঝে মাঝে শরীরের টক্সিকের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে।
৫)এন্জাইম সংক্রান্ত সমস্যা
কিছু মানুষের জন্য কাঠ বাদামে এনজাইম সমস্যা হতে পারে। এর পরিণামে তাদের পাচনা সমস্যা বা সমস্যাগ্রস্থ পাচনাতন্ত্র উত্পন্ন হতে পারে।
সবশেষে
কাঠবাদাম বহু উপকারী গুণাগুণ সম্পন্ন একটি ফল। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে মুক্তি পেতে নিয়মিত ১টি করে কাঠবাদাম খান। আমাদের শরীরে এমনও কঠিন রোগ বালাই আছে যা ওষুধের মাধ্যমে দূর করা অনেক কষ্টকর তবে কাঠ বাদাম খেলে তা সহজেই দূর হয়ে যায় এবং এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
তবে এত এত উপকারী গুণ থাকা সত্ত্বেও এর কিছু অপকারী গুণ রয়েছে এজন্য অতিরিক্ত কাঠবাদাম খাবেন না অতিরিক্ত কোন কিছুই ভালো না। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলটি থেকে আপনি কাঠবাদামের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে পেরেছেন। আমাদের সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।
Also Read: মেয়েদের দ্রুত ওজন কমানোর উপায়
.