খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান
জমির খতিয়ান বা পর্চা খুবই গুরুপ্তপূর্ণ জিনিস, জমি ক্রয়-বিক্রয়, দান , উত্তরিধিকার নির্ণয় এবং জমির প্রকৃতি , পরিমান , মালিক ও অংশীদারের ইত্যাদি তথ্য জানতে খতিয়ান বা পর্চার দরকার হয়।
এই আর্টিকেল পড়ে খুব সহজে ঘরে বসে আপনিও আপনার জমির খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান করতে পারবেন।
খতিয়ান কি?
খতিয়ান হলো একটি সরকারি নথিপত্র যাতে একটি নির্দিষ্ট মৌজায় অবস্থিত জমির মালিকানা, দখল, পরিমাণ, শ্রেণি, খাজনা ইত্যাদি বিবরণ লিপিবদ্ধ থাকে। খতিয়ান হলো ভূমি রেকর্ড জমির মালিকানা ও অন্যান্য তথ্যের একটি সংক্ষিপ্তসার।
পর্চা কি?
পর্চা হলো খতিয়ানের একটি অনুলিপি বা অংশ। একটি খতিয়ানে একাধিক পর্চা থাকতে পারে। পর্চাতে একটি নির্দিষ্ট দাগ নম্বরের জমির মালিকানা, দখল, পরিমাণ, শ্রেণি, খাজনা ইত্যাদি বিবরণ থাকে।
তাই খতিয়ান ও পর্চা আদতে একই জিনিস।
খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান প্রক্রিয়া
আপনার জমির খতিয়ান বা পর্চা অনুসন্ধানের বিস্তারিত ধারাবাহিক প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে বর্ণনা করা হলঃ
জমির খতিয়ান পর্চা বের করার, প্রয়োজনীয় তথ্য
আপনি যদি আপনার জমির খতিয়ান পর্চা যাচাই করতে চান? তাহলে আপনার, অবশ্যই কিছু প্রয়োজনীয় তথ্যের প্রয়োজন হবে। এই তথ্যগুলো ছাড়া আপনি অনলাইনে জমির খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান করতে পারবেন না।
অনলাইনে জমির খতিয়ান পর্চা বের করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যের তালিকা:
- জমির দাগ নম্বর।
- জমির মালিকের নাম।
- জমির স্থান।
- খতিয়ানের ধরণ।
- জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ও জন্ম তারিখ।
প্রথম ধাপ: ই-পর্চা ওয়বসাইটে প্রবেশ
প্রথমে যে কোন ব্রাউজার থেকে ডিজিটাল ভূমিসবার ই পর্চা ওয়েবসাইট এ প্রবেশ করুন। লিংক: https://www.eporcha.gov.bd
দ্বিতীয় ধাপ: সার্ভে খতিয়ান এ প্রবেশ
উপরের লিংকে প্রবেশের পর নিচে দেওয়া চিত্রের মতো একটি ওয়েবসাইট পাবেন। এখানে থেকে “সার্ভে খতিয়ান” এ ক্লিক করুন।
তৃতীয় ধাপ: খতিয়ান অনুসন্ধান
এই পেজে “সার্ভে খতিয়ান অনুসন্ধান” নামে একটি ফর্ম দেখতে পারবেন , যেখানে আপনাকে কিছু তথ্য দিতে হবে।
- বিভাগ এর ঘর থেকে , আপনার বিভাগ বাছাই করবেন , তাহলে জেলার ঘরে আপনার বিভাগের জেলা গুলো দেখাবে।
- আপনার জেলা < উপজেলা ক্রমন্বয়ে বাছাই করবেন।
- আপনি কি জাতীয় খতিয়ান খুজতেছেন সেটা দিতে হবে।
- মৌজা দিতে হবে , মৌজা নম্বর জানা থাকে নম্বর দিয়ে সার্চ দিতে পারেন বা সেখান থেকেও বাছাই করতে পারেন।
- “খতিয়ান নম্বর” দিয়ে খুজুন বাটনে ক্লিক করুন অথবা সেখানে দেওয়া লিস্ট থেকে খতিয়ানটি খুঁজে নিন।
তারপর সেই খতিয়ানের উপর দুবার ক্লিক করলে নিচের চিত্রের মতো একটি পিকচার দেখতে পারবেন। যেখানে খতিয়ান নম্বর , ধরণ ও সম্পর্কিত দাগ নম্বরগুলি দেখতে পারবেন। এখানে থেকে নিচে , “বিস্তারিত” বাটনে ক্লিক করলে , ওই খতিয়ানের সকল দাগ ও মালিক বা দখলদারের নাম দেখতে পারবেন।
এর মাধ্যমেই আপনার খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান হয়েছে কিন্তু এটার কোন অফিসিয়াল মূল্য নেই। তাই আপনাকে অনুমোদিত কপি সংগ্রহ করতে হবে। যা আর্টিকেলের পরবর্তী অংশে আলোচনা করা হল।
চতুর্থ ধাপ: খতিয়ান-পর্চা আবেদন ফরম
আপনার খতিয়ানের মূল কপি পেতে সর্বশেষ পাওয়া পেজটির , “ আবেদন করুন” বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে আপনাকে ” খতিয়ান আবেদন ফর্ম ” নামের একটি অনলাইন ফর্ম এ নিয়ে যাবে।
পঞ্চম ধাপ: খতিয়ান আবেদন ফরম পূরণ
এই ফর্মে আপনার “জাতীয় পরিচয়পত্র নং” জন্মতারিখ ও মোবাইল নম্বর দিয়ে যাচাই করুন বাটনে ক্লিক করতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে, ফর্মের বাকি অংশ নাম ইংরেজিতে ও ঠিকানা নিজে থেকেই পুরন হয়ে যাবে।
তারপর , আবেদনের ধরন থেকে আপনি কি ধরনের কপি চান অনলাইন/ সার্টিফাইড কপি কিনা সেটা নির্বাচন করতে হবে। সার্টিফাইড কপি নির্বাচন করলে কিভাবে নিতে চান সেটা উল্লেখ করতে হবে।
ষষ্ঠ ধাপ: খতিয়ান আবেদন ফি প্রদান
এই ধাপে খতিয়ান ফি ১০০ টাকা পেইমেন্ট করতে হবে। এখানে আপনি কোন মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতে চান সেটা নির্বাচন করুন। এখানে বিকাশ, রকেট নগদ ও উপায় এর মাধ্যমে পেমেন্ট করতে পারবেন।
নিরাপত্তার জন্য, দেওয়া সংখ্যা দুইটির যোগফল দিয়ে , নিচের পরবর্তী ধাপ সবুজ বাটনে ক্লিক করুন।
ধরি আমরা, বিকাশ এ পেমেন্ট নির্বাচন করেছি, তাহলে বিকাশের এই পেমেন্ট গেটওয়ে স্কিন আসবে। এখানে, যে নম্বর থেকে পে করতে চাই, সেই নম্বর দিয়ে Conform করতে হবে, পরের ধাপে বিকাশ আপনার পিন নম্বর চাইবে। পিন দিয়ে Confirm করলে আপনার বিকাশ হতে ১০০টাকা কেটে নিবে, তারপর একটা ডায়ালগ বক্স পাবেন।
জমির খতিয়ান পর্চা ডাউনলোড
টাকা দেবার পর পাওয়া ডায়ালগ বক্সে, খতিয়ান সরাসরি ডাউনলোড করার একটি অপশন পাবেন , সেখান থেকে “QR Code” যুক্ত একটি অনলাইন খতিয়ানের পিডিএফ পাবেন। ফরম পুরনের সময়, মেইল দিলে, আপনার মেইলেও একটি খতিয়ান Download এর লিঙ্ক পাবেন। আর আপনি যদি , সার্টিফাইড কপি অপশন নির্বাচন করেন তাহলে , আপনার কপি ডাকযোগে বা অফিস থেকে নির্দিষ্ট তারিখে সংগ্রহ করতে পারবেন।
খতিয়ান অনুসন্ধান করে অনেকেই বুঝতে পারেন না, তার খতিয়ানটি কোন প্রকারের। যেহেতু, বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রেকর্ড এর কারনে ভিন্ন ভিন্ন খতিয়ান তৈরি হয়েছে। আপনাদের সুবিধার্থে চেনার উপায় দেওয়া হলঃ
কিভাবে সিএস, এসএ, আরএস , বিএস, পর্চা/খতিয়ান চিনবো?
একাধিক পর্চা বা খতিয়ান থাকার কারণে অনেকেই অনেকেই এগুলি চিনতে পারেন না। তাদের জন্য চেনার বিস্তারিত উপায় দেওয়া হলো
সিএস পর্চা/খতিয়ান চেনায় উপায়ঃ যেহেতু ৪০ সালে জমিদারি প্রথা ছিল, তাই এটিতে মালিকের তথ্য দুইটি ভাগে থাকে, প্রথমে জমিদারের তথ্য ও নিচের অংশে দখলদার বা প্রজার তথ্য।
উপরের দিকে জেলার পর পরগণার নাম দেওয়া থাকে এবং এই পর্চার পিছন দেকেও জমির বিবরণ সহ যাবতীয় তথ্য থাকে, এগুলি দেখে বুঝতে পারবেন এটি একটি সিএস পর্চা।
এসএ পর্চা/খতিয়ান চেনায় উপায়ঃ প্রথমত, উপরে বাম দিকে সাবেক (সিএস ) ও হাল (এসএ) পর্চা নম্বর থাকবে।
দ্বিতীয়ত, সব তথ্য উপরের পেজেই থাকবে, পেজের পিছনের দিকে কোন তথ্য থাকবে না।
তৃতীয়ত, ৫৬ সালে জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হয় বলে তাই, জমিদারের কোন তথ্য থাকবে না।
আরএস পর্চা/খতিয়ান চেনায় উপায়ঃ প্রধান উপায় হল এর ডান দিকের সর্বশেষ ঘরের উপরে, রেসার্ভে নম্বর লেখা থাকবে। এবং এটিতেও সি এস এর মত একই পৃষ্ঠার দুইদিকে তথ্য থাকে।
সিটি জরিপ /বিএস পর্চা/খতিয়ান চেনায় উপায়ঃ সিটি জরিপ পর্চায় সিল দিয়ে লেখা থাকে, ঢাকা সিটি জরিপ। এবং এটা সম্পূর্ণ প্রিন্ট হয়, হাতে লেখা কোন তথ্য থাকে না।
আর, বিএস পর্চাও সম্পূর্ণ প্রিন্ট হয় এবং এখানে উল্লেখিত তারিখ টি অবশ্যই ২০০০ সালের পর হবে।
খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান | ধারাবাহিক প্রশ্ন – FAQ
অনলাইনে খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান বিষয়ক সর্বাধিক জিজ্ঞেসিত প্রশ্ন সমূহের উত্তর পাঠকের সুবিধার্থে দেওয়া হলো:
প্রশ্ন: জমির খতিয়ানের প্রকারভেদগুলি কি কি?
উত্তর: জমি খতিয়ানের বিভিন্ন প্রকারভেদ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
- সি এস খতিয়ান: ১৮৮০ হতে ১৯২৩ পর্যন্ত পরিচালিত একটি জরিপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।
- আর এস খতিয়ান: ১৯৫৬ হতে ১৯৬২ পর্যন্ত পরিচালিত একটি সংক্ষিপ্ত জরিপ ও রেকর্ড সংশোধনী কার্যক্রমের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।
- বি এস খতিয়ান: ১৯৬৯ হতে ১৯৯০ পর্যন্ত পরিচালিত একটি জরিপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।
- আরডিএস খতিয়ান: ১৯৯৬ হতে ২০০০ পর্যন্ত পরিচালিত একটি জরিপের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছিল।
প্রশ্ন: জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় অনুসন্ধান করার ওয়েবসাইট গুলি কী?
বাংলাদেশের ভূমি সংশ্লিষ্ট সরকারি ওয়েবসাইটগুলি:
- ভূমি মন্ত্রণালয়: www.minland.gov.bd
- ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর: www.eporcha.gov.bd
- বাংলার ভূমি: www.banglarbhumi.gov.bd
- সরকারি তথ্য অধিদপ্তর: www.bdlaws.minlaw.gov.bd
- সরকারি গেজেটের ওয়েবসাইট: www.bdlaws.minlaw.gov.bd/index.php/en/
- ই-নথি ওয়েবসাইট: www.e-notunbhumi.gov.bd
এই ওয়েবসাইট গুলো থেকে জমি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় যাচাই করা যেতে পারে।
খতিয়ান পর্চা আবেদন এর জন্য কি টাকা দিতে হয়?
সরকারের ই-পর্চা ওয়েবসাইট এর বিজ্ঞপ্তি “এখন থেকে খতিয়ানের কিউ আর কোড সম্বলিত অনলাইন/তাৎক্ষনিক কপি ১০০ টাকার বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে। এছাড়াও সার্টিফাইড/সত্যায়িত খতিয়ান কপির মূল্য পুন:নির্ধারণ করে ১০০ টাকা করা হয়েছে।”
অর্থাৎ, কিউআর কোড সম্বলিত সত্যায়িত পর্চা বা খতিয়ানের জন্য ১০০ টাকা ফি দিতে হবে। যা বিকাশ অন্য সব মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পরিশোধ করা যায়।
মাঠ পর্চা কি?
ভূমি জরিপ কালীন সময়ে মালিক কে যে অনুলিপি প্রদান করা হয় তাকেই মাঠ পর্চা বলে। অনেকে একে পচা পর্চা বলে।
খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান | শেষ কথা
জমির মালিকানা প্রমাণ করার জন্য জমির খতিয়ান বা পর্চা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি। তাই জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোনো সমস্যা এড়াতে হলে অবশ্যই জমির খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান করে সংগ্রহ করে রাখা উচিৎ।
এই পোস্টে, অনলাইনে জমির খতিয়ান পর্চা অনুসন্ধান করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করি এই তথ্যগুলো আপনার জন্য সহায়ক হবে।
Read more : জন্ম তারিখ দিয়ে জন্ম নিবন্ধন যাচাই