Dreamy Media BD

গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা!

গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা

গাজর খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা!

গাজর পুষ্টিকর সুস্বাদু এবং সবার কাছে জনপ্রিয় একটি সবজি। গাজর সালাদ হিসেবে বেশি জনপ্রিয় হলেও পোলাও এবং খিচুড়ির সাথে মিশেও রান্না করা হয়। অনেকে আবার গাজরের আচার গাজরের হালুয়া খেতেও ভালবাসেন। 

 

গাজরের পুষ্টি উপাদান

গাজর এমন একটি সবজি যাতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, খনিজ এবং ফাইবার আছে। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে পুষ্টি উপাদান রয়েছে – 

  • ক্যালোরি: ৪১ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট: ৯.৮ গ্রাম
  • প্রোটিন: ০.৯ গ্রাম
  • ফ্যাট: ০.২ গ্রাম
  • ফাইবার: ২.৮ গ্রাম
  • ভিটামিন এ: ১০০%
  • ভিটামিন সি: ৮%
  • ভিটামিন কে: ৪%
  • পটাসিয়াম: ১৬৯ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে : ২২ মিলিগ্রাম
  • ফসফরাস: ৩১মিলিগ্রাম
  • ক্যালসিয়াম: ৩৬ মিলিগ্রাম
  • আয়রন: ০.৩মিলিগ্রাম
  • এবং জিংক রয়েছে : ০.২ মিলিগ্রাম। 

গাজরের নানান গুনাগুন / উপকারিতা

গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম

গাজরের বিভিন্ন গবেষনার ফলাফল থেকে জানা গেছে যে গাজরের মধ্যে ক্যান্সার প্রতিরোধ করার উপাদান রয়েছে। গাজর নিয়মিত খেলে ফুসফুস ক্যান্সার, কলোরেক্টাল ক্যান্সার, এবং প্রোষ্টেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। আমরা যখন কোনো খাবার খাই তখন খাবারের উচ্ছিষ্ট কিছু অংশ হজমের পরেও শরীরে থেকে যায়। এই উচ্ছিষ্ট বা থেকে যাওয়া অংশ গুলোকে ফ্রি র‍্যাডিকাল বলা হয়। ফ্রি র‍্যাডিকাল গুলো শরীরের কোষ কে ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করে। যার ফলে শরীরে ক্যান্সার প্রবেশ করে। কিন্তু যখন গাজর খাওয়া হয় তখন শরীরের মধ্যে থাকা সেই ফ্রি র‍্যাডিকাল গুলো গাজরের মধুএ থাকা উপাদান নষ্ট করে দেয়। এভাবেই গাজর ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে থাকে। 

গাজর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে

একদল গবেষক গাজর নিয়ে গবেষনা করার অর ফলাফল হিসেবে দেখেছেন যে, “গাজরের রস ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে, ভাইরাসের বৃদ্ধি প্রতিহত করতে সাহায্য করে, এবং ছত্রাকের বৃদ্ধি প্রতিহত করতে সাহায্য করে।” গাজর নিয়ে গাজর চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে বিটা ক্যারোটিন।  গাজর খেলে গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন শরীরে প্রবেশের পরে ভিটামিন এ তে রুপান্তরিত হয়। আপনারা নিশ্চই জানেন যে ভিটামিন এ চোখের জন্য কত উপকারি একটি জিনিস। ভিটামিন এ রেটিনার রঙিন আলো শোষনকারী কোষগুলোর জন্য অত্যন্ত উপকারি একটি উপাদান। বহু পরিচিত রোগ রাতকানা ভিটামিন এ এর অভাবে হয়ে থাকে। গাজরে থাকা ভিটামিন এ রাতকানা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। 

 

গাজর চোখের ছানি পরারও সমাধান করতে পারে। চোখে ছানি পরলে মানুষ পরিষ্কার ভাবে কিছু  দেখতে পায়না। দৃষ্টি গোলাটে হয়ে যায়। চোখে ছানি পরার এই সমাধান গাজর খেলে হতে পারে। 

গাজরের মধ্যে থাকা লুটিন এবং বিটা ক্যারোটিন চোখের স্বাস্থের জন্য অনেক উপকারি। লুটিন ও ক্যারোটিন চোখের মধ্যে থাকা ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও ফ্ল্যাভোনয়েডস ভাইরাস বিরোধী হিসেবে কাজ করে। 

 

গাজর লিভারের সমস্যা সমাধান করে

গাজরে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন, আয়রন, ক্যালসিয়াম থাকায় লিভারের সমস্যা সমাধান করতে পারে। গাজরে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ফাইবার যা কোষ্ঠকাঠিন্য বা মলত্যাগের উদ্দীপনা সৃষ্টি করে। টয়লেট ক্লিয়ার হলে লিভার ও কোলন কে পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। যদি কেউ প্রতিদিন একটি করে গাজর খায় তাহলে তার লিভারের সংক্রমন কমে যায়। গাজর খেলে শরীরে হেপাটাইটিস,  সিরোসিস, কোলেষ্টেসিস এর মত রোগ বাসা বাধতে পারেনা। গাজর নিয়মিত খেলে লিভারের পিত্তথলির ফ্যাট কমায়। গাজর এভাবে ফ্যাট কমিয়ে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে দেয়। 

 

ত্বকের বয়স বাড়া রোধ করে

গাজর এন্টিএজিং হিসেবে বহুল পরিচিত একটি সবজির নাম। বড় বড় তারকা এবং রূপবিশেষজ্ঞদের মতে ” গাজর ত্বকে বয়সের ছাপ পরতে দেয়না।”  গাজর নিয়মিত খেলে ত্বকে পুষ্টি যোগায়। গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। গাজরে থাকা মেটাবলিজম শরীরের ক্ষয়প্রাপ্ত সেল গুলোকে ক্ষয় হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। ফলে ত্বক সুন্দর থাকে। 

 

গাজর ত্বকের জন্য উপকারি

গাজর ত্বকের জন্য অনেক উপকারি। নিয়মিত গাজর খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হয়। মুখে ছোপছোপ দাগ থাকলে গাজর খেলে সেই দাগ দূর হয়। বয়সের কারনে যাদের ত্বক শুকিয়ে যাওয়া সমস্যা রয়েছে গাজর খেলে সেই সমস্যা দূর হয়। গাজর  ত্বককে কোমল ও সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 

 

গাজর আ্যন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে

গাজর অনেক ভাল আ্যন্টিসেপটিক উপাদান। গাজরের মধ্যে রয়েছে আলফা ক্যারোটিন, লুটিন, বিটা ক্যারোটিন, এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস নামক উপাদান। মুলত এই উপাদান গুলো আ্যন্টিসেপটিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ কেটে যাওয়া যায়গা, পুড়ে যাওয়া ক্ষত স্থান যখন সহজে সেরে ওঠেনা তখন ক্ষতস্থানে ইনফেকশন দেখা দেয়। এই ইনফেকশন দূর করার জন্য বা ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতে গাজরের মধ্যে থাকা উপাদান গুলো শুকিয়ে দেয়। ঘায়ের মধ্যে যে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া এবং ছত্রাক থাকে গাজর সেখানে পেষ্ট করে লাগালে ক্ষতিকর ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ছত্রাক দূর হয়। 

আলফা ক্যারোটিন কে বলা হয় প্রো ভিটামিন এ, শরীরে প্রবেশের পর ভিটামিন এ তে পরিনত হয়। ভিটামিন এ  শক্তিশালী আ্যন্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে৷ 

 

গাজর দাতের মাড়ি শক্ত করে

গাজর দাতের মাড়ি শক্ত ও মজবুত করে। দাতের মাড়ি শক্ত করার জন্য নিয়মিত দাতের কিছু ব্যয়াম আছে সেগুলো করতে হয়। গাজর শক্ত হওয়ায় গাজর খাওয়ার সময় দাতের মাড়ির ব্যয়াম হয়। গাজর শক্ত খাবার হওয়ায় দাতের মাড়িকে উত্তেজিত করে ফলে দাতের মাড়ির রক্ত চলাচল বেড়ে যায় এবং দাতের মাড়ির কোষ শক্তিশালী হয় ফলে দাতের মাড়ি শক্ত হয়। দাতের মাড়ি শক্ত ও মজবুত করার জন্য বয়স্ক এবং শিশুদের নিয়মিত গাজর খাওয়া উচিৎ। 

 

গাজরের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন সি এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস দাতের মাড়ির জন্য অনেক উপকারি। ভিটামিন সি দাতের মাড়ির গঠনকে শক্তিশালী করে এবং ফ্ল্যাভোনয়েডস দাতের মাড়িকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। দন্ত চিকিৎসকেরা বলে থাকেন যে,  “একজন ব্যক্তি যদি নিয়মিত গাজর খায় তাহলে সেই ব্যক্তির মাড়ির প্রবাহ ও রক্তপাত কমে, নিয়মিত গাজর খেলে দাতের মাড়ির হাড় শক্ত হয়, এবং নিয়মিত গাজর খেলে দাতের মাড়ির ক্ষয় হয়ে যাওয়া রোধ করে।”

 

গাজর মুখের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল

নিয়মিত গাজর খেলে মুখের স্বাস্থ্য ভাল থাকে। গাজর খাওয়ার সময় সিলভা নামক একটি পদার্থ উৎপন্ন হয়। এই পদার্থটি মুখের এসিডের ভারসাম্য রক্ষা করে। মুলত যখন মুখে ব্যাকটেরিয়া বাসা বাধে তখন এই ব্যাকটেরিয়া গুলো দাতের ক্ষয় করে। কিন্তু সিলভা নামক পদার্থটি মুখের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই কোনো ব্যক্তি যদি নিয়মিত গাজর খায় তাহলে তার মুখের স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং সেই সাথে দাতের ক্ষয়রোধ করে।

 

গাজর কানের ব্যথা কমায়

কানের ব্যথা অসহনীয় একটি ব্যথা। অন্যান্য ব্যথা গুলো সহনীয় হলেও কানের ব্যথা সহ্য করার মত মানুষ খুজে পাওয়া যাবেনা। ছোট থেকে বড় প্রায় সবারই কানের ব্যথা হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। মুলত জ্বর সর্দি ঠান্ডার কারনে কানে  ব্যথা হয়ে থাকে। কানের ব্যথা রোধে গাজর ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যায়। কারো কানে ব্যথা হলে গাজর, কলা, আদা, এবং রসুন পানিতে সেদ্ধ করে সেই পানি যদি ড্রপারের মাধ্যমে এক থেকে দুই ফোটা কানে দেয়া যায় তাহলে কানের ব্যথা দূর হবে ইনশা আল্লাহ। 

 

গাজর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

আপনি যদি নিয়মিত গাজর খান তাহলে আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা  ব্যপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। কারন নিয়মিত গাজর খাওয়ার কারনে বিটা ক্যারোটিন,  ভিটামিন এবং ক্যালসিয়াম সহ অন্যান্য উপাদান গুলো আপনার শরীরে ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া প্রবেশে বাধা প্রদান করবে৷ ফলে আপনার শরীরে কোনো রোগ জীবানু বাসা বাধতে পারবেনা। তাই আপনার এবং আপনার শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত গাজর খেতে পারেন। 

 

গাজর রক্ত পরিষ্কার করে

সুস্থ থাকার জন্য পরিষ্কার রক্তের বিকল্প কোনোকিছু হতে পারেনা। যখন শরীরের রক্ত অপরিষ্কার বা দূষিত  হয়ে যায় তখন রক্তের কোষে পর্যাপ্ত অক্সজেন প্রদান করতে পারেনা, পুষ্টি সরবরাহ করতে পারেনা। যার কারনে শরীর অনেক দূর্বল এবং অসুস্থ হয়ে যায়। তাই রক্ত পরিষ্কার করার জন্য নিয়মিত গাজর খেলে উপকার পাওয়া যায়। রক্ত পরিষ্কার করার জন্য গাজর হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। কারন গাজরে থাকা ভিটামিন সি, বিটা ক্যারোটিন, এবং আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের দূষিত পদার্থ দূর করে দেয়। গাজরের মধ্যে থাকা আ্যন্টিওক্সিডেন্ট রক্তের কোষকে ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া থেকে আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে। তাই রক্ত পরিষ্কার করার জন্য প্রতিদিন কাচা গাজর খেতে পারেন অথবা সবজি বা জুস বানিয়েও খেতে পারেন। 

গাজর ডাইরিয়া প্রতিরোধ করে

গাজর খুব হাক্কা একটি খাবার তাই  খুব সহজে গাজর হজম হয়৷ ডাইরিয়া হলে রুগির শরীর থেকে প্রচুর পানি বেড়িয়ে যায়। গাজর খেলে এটি শরীরের পাচন তন্ত্রকে উত্তেজিত করে৷ ডাইরিয়ার কারনে শরীর থেকে বের হওয়া পানি এবং ইলেকট্রোলাইড এর ঘাটতি পূরন করে। 

ডাইরিয়া হলে শরীর অত্যন্ত দূর্বল হয়ে পরে। গাজর খেলে শরীরের দূর্বলতা দূর হয়। অনেক সময় ওষুদের প্রভাবে ডাইরিয়া হওয়ার পর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করার জন্য গাজর খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়৷ গাজরে থাকা আ্যন্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান ডাইরিয়ার কারনে হওয়া শরীরের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। 

ডাইরিয়া হলে যেভাবে গাজরের স্যুপ বানাবেন

প্রয়োজনীয় উপকরন:

 

গাজরের স্যুপ বানাতে প্রয়োজন বড় বা মাঝারি সাইজের ২ টি গাজর। গাজর গুলো কুচি করতে হবে। 

১  কাপ মাঝারি সাইজের পেঁয়াজ কুচি

২ টি রসুন কুচি 

১ টেবিল চামচ ময়দা

১/২ কাপ পানি

১/২ কাপ দুধ

লবণ এবং গোলমরিচ স্বাদমতো।

 

যেভাবে গাজরের স্যুপ বানাবেন

১. একটি বড় পাত্রে তেল নিয়ে মাঝারি আঁচে তেল গরম করে নিন। 

২. তেলে পেয়াজ এবং রসুন দিয়ে কিছুক্ষন ভেজে নিন।

৩. ময়দা যোগ করুন এবং ১ মিনিট এর মত নেড়ে  নিন। 

৪. এবার পানি এবং দুধ যোগ করে ফুটতে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। 

৫. গাজর কুচি যোগ করে নাড়তে থাকুন। 

৬. গাজর সিদ্ধ  না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।

৭. সবশেষে স্বাদমতো লবণ এবং গোলমরিচ দিয়ে নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।

 

গাজর কৃমি দূর করে

কৃমি কমবেশি সবারই হয়ে থাকে। কৃমি হওয়ার কারনে টয়লেটের রাস্তায় বা পেটে অসহ্য যন্ত্রনা হয়৷ আপনি যদি কৃমি সমস্যায় ভুগে থাকেন তাহলে গাজর দিয়ে ঘরোয়া উপায়ে কৃমি দমন করতে পারেন। কারন গাজর কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। গাজরে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকায় এটি অন্ত্রের নড়াচড়াকে উন্নত করে। অন্ত্রের নড়াচড়ার কারনে কৃমি থাকলে কৃমি বেড়িয়ে আসে। গাজরের মধ্যে রয়েছে আ্যন্টিব্যাকটেরয়াল এবং আ্যন্টি ভাইরাল বৈশিষ্ট্য। এই দুই বৈশিষ্ট্যের কারনে গাজর কৃমি রোধ করতে পারে।  কৃমি দূর করার জন্য গাজর বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। গাজরের জুস বানিয়ে, ট্যাবলেট বানিয়ে বা সবজি হিসেবে৷ 

 

কৃমি দূর করার জন্য যেভাবে গাজরের ট্যাবলেট বানাবেন

 

গাজরের ওষুধ বানাতে প্রয়োজনীয় উপকরন

টি বড় গাজর কুচি করা

১/২ কাপ পানি 

১ টেবিল চামচ মধু

এবং ১/২ চা চামচ লবণ।

 

১.একটি বড় পাত্রের মধ্যে গাজর কুচি নিয়ে সাথে পানি যোগ করুন।

২. গাজর সিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত রান্না করুন। 

৩. এবার গাজর থেকে রস বের করে নিতে হবে৷ 

৪. রস বের করা হলে রসের সাথে মধু এবং লবণ যোগ করুন।

৫. এবার মিশ্রণটি একটি ছোট পাত্রে ঢেলে নিয়ে  ফ্রিজের ডিপে  রেখে দিন।

৬.মিশ্রনটি ঠান্ডা হয়ে গেলে  ছোট ছোট টুকরো করে কেটে নিন। এবার এই টুকরোগুলো কৃমির ট্যাবলেট বা ওষুধ হিসাবে সেবন করতে পারবেন। 

ব্যবহার বিধি

কৃমির এই ট্যাবলেট প্রতিদিন সকালে খালিপেটে দুই বা তিনটুকরো ওষুধ হিসেবে সেবন করতে হবে৷ নিয়মিত এক সপ্তাহ খেলে কৃমি দূর হবে  ইনশা আল্লাহ। 

তবে মনে রাখবেন গাজরের ওষুধ ঘরোয়া একটি উপাদান। যদি গাজর খেয়েও কোনো কাজ না হয় তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। 

উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে গাজর

গাজর উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে৷ যাদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তারা নিয়মিত গাজর এবং রসুন খেতে পারেন। কারন গাজর ও রসুন উচ্চরক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। গাজরে থাকা ভিটামিন এ রক্তনালীকে শিথিল করতে সাহায্য করে এবং গাজরে থাকা আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট রক্তনালীকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। রসুনে আ্যলিসিনিন নামক একটি উপাদান রয়েছে।  এই উপাদানটি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।

  •  উচ্চরক্তচাপ কমাতে গাজর এবং রসুন কোয়া  চিবিয়ে খেলে উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে আসে৷ 
  • গাজরের সাথে রসুন সালাদ বানিয়ে খেতে পারেন।

তবে যদি কারো এলার্জির সমস্যা থাকে তাহলে তাদের গাজরের সাথে রসুন না খাওয়াই ভাল। 

 

হার্টের সুরক্ষায় গাজর

গাজর ডায়েটরি ফাইবারে সমৃদ্ধ একটি সবজি। ডায়েটরি উপাদান গুলো ধমনীর উপরে কোনো আস্তরন পরতে দেয়না। যার কারনে রক্ত চলাচলে কোনো সমস্যা হয় না। গাজরে থাকা আলফা ক্যারোটিন এবং লুটিন নামক উপাদান হৃদরোগের ঝুকি কমায়। 

 

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে গাজর

গাজর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ গাজর চমৎকার ভাবে কোলেস্টেরল এবং সুগার নিয়ন্ত্রন করে। দেহে চর্বির পরিমান বেড়ে গেলে গাজরের রস খেলে অতিরিক্ত চর্বি গলে যায়। গাজরে থাকা  ফাইবার  কোলন পরিষ্কার করে। রক্তের মধ্যে আরবিসি নামক একটি উপাদান থাকে। এটি রক্তের প্রধান একটি উপাদান। গাজর নিয়মিত খেলে আরবিসি দীর্ঘ দিন থাকে। যার কারনে রক্তে হিমোগ্লোবিন এর মাত্রা বেড়ে যায়। আবার গাজর ত্বকের মধ্যে উপকারি কোলেস্টেরল এবং লাইপোপ্রোটিন এর মাত্রা বাডিয়ে ক্ষতিকর কোলেস্টেরল শরীর থেকে বের করে দেয়। যার কারনে এথারোস্কেলোরেসিস এবং ষ্ট্রোকের ঝুকি থাকলে কমে যায়৷ 

মস্তিষ্কের সুরক্ষায়

মস্তিষ্কের সুরক্ষায় গাজর গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য শিশুকে নিয়মিত গাজর খাওয়াতে পারেন। আপনার শিশুর মস্তিষ্ক বিকাশে গাজর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। নিয়মিত গাজর অথবা গাজরের জুস খেলে মস্তিষ্কের নার্ভাস সিষ্টেমকে উন্নত করে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কে বাড়িয়ে দেয়। 

শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা দমন করে

অনেকেই স্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভুগে থাকেন। গাজর শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা রোধ করতে সহায়তা করে। গাজরে থাকা ভিটামিন এ, বিটা ক্যারোটিন এবং আ্যন্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়াতে সহায়তা করে। শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গাজরে থাকা ভিটামিন এ ফুসফুসের শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। শ্লেষ্মা ঝিল্লিকে জীবানু আক্রান্ত হওয়া থেকে রক্ষা করে গাজর। গাজরে থাকা বিটা ক্যারোটিন ফুসফুসের কোষ গুলোকে নিরাপদে রাখে। 

তবে যদি আপনি কোনো ওষুধ খান তাহলে গাজর খাওয়ার আগে চিকিৎসক এর পরামর্শ নেয়া উচিৎ। 

গর্ভাবস্থায় গাজর

গর্ভবতী নারীদের জন্য গাজর উপকারি৷ এই সময় পেশিতে ব্যথা ও রক্তাস্বল্পতা দেখা দেয়৷ নিয়মিত গাজর খেলে এই সমস্যা গুলোর সমাধান হতে পারে। গাজরে থাকা ফোলিক এসিড অনাগত শিশুর মস্তিষ্ক গঠনে সহায়তা করে। 

গাজরের অপকারিতা

  • প্রচুর পরিমান গাজর খেলে ত্বক হলুদ হতে পারে। 
  • অতিরিক্ত গাজর খেলে দাত ক্ষয় হতে পারে।
  • গরমে বেশি গাজর খেলে উচ্চরক্তচাপ এবং কম ঘুম হয়।
  • বেশি গাজর খেলে গাজরে থাকা ক্যারোটিন ক্যান্সারের কারন হতে পারে।
  • বেশি গাজর খেলে পেটের সমস্যা যেমন গ্যাস, ডাইরিয়া হয়।
  • স্তন্যদানকারী মহিলারা বেশি গাজর খেলে দুধের স্বাদ পরিবর্তন হতে পারে।

শেষ কথা 

 

গাজর অনেক উপকারি একটি সবজি। মোটামুটি দামে সস্তা এবং সবখানেই পাওয়া যায়। গাজর নিয়মিত খেলে স্বাস্থ্যের জন্য যেমন অনেক উপকারি তেমনি আবার অতিরিক্ত খেলে এর বিপরীত হতে পারে৷ তাই গাজরের উপকার পেতে চাইলে নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমানে গাজর খেতে পারেন। তাহলেই এতে থাকা ভিটামিন, ক্যালসিয়াম শরীরে উপকার সাধন করতে পারবে। গাজর বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যায়। তবে যদি যদি বেশি উপকার পেতে চান তাহলে গাজর রান্না না করে কাচা খাওয়াই ভাল। যদি কাচা খেতে না পারেন আধা সিদ্ধ করে খেতে পারবেন। তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন কখনোই বেশি উপকার পাওয়ার লোভে অতিরিক্ত গাজর খাবেন না।

Also Read: কাঁচা মরিচের উপকারিতা ও অপকারিতা!

 

.

 

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents