জলবায়ু পরিবর্তন | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
জলবায়ু পরিবর্তন এখন বিশ্বের অন্যতম বড় হুমকি। গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণের কারণে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে হিমবাহ গলে যাচ্ছে, সমুদ্রের পানি বেড়ে যাচ্ছে, আবহাওয়া ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ বহু দেশ সমুদ্রের তলায় ডুবে যেতে পারে, এরই মধ্যে বাংলাদেশের মতো নিম্নভূমি দেশগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে। অথচ আধুনিক বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী জিনিসগুলির বস্তুগুলির ব্যবহার রুখতে তেমন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। এই বিপর্যয় রোধে আমাদের জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে। পরিবেশবান্ধব জীবনব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি। ইলেকট্রিক গাড়ি ব্যবহার, পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তি উৎপাদন, সৌর, বায়ু ও জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের মতো উদ্যোগ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য এসব পদক্ষেপ নেওয়া সহজ নয়। অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা ও প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর অভাব এর প্রধান কারন। তবুও নিরুৎসাহ হওয়া যাবে না। উন্নত দেশগুলোর সহযোগিতা ও টেকসই উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লড়াইতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব। একসঙ্গে চেষ্টা করলেই আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবী রক্ষা করতে পারি। জলবায়ু পরিবর্তন শুধুমাত্র পরিবেশগত সমস্যা নয়, এটি সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটও। এই বিপর্যয় মোকাবেলায় সমবেত প্রচেষ্টা ছাড়া আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। চলুন, আজই শুরু করি, পরিবেশবান্ধব জীবনব্যবস্থা গড়ে তুলি, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করি।
জলবায়ু পরিবর্তন | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
জলবায়ু পরিবর্তন হলো মানব কার্যকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট একটি বিরূপ পরিবেশগত ঘটনা। বর্তমান শতাব্দীর সবচেয়ে জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো জলবায়ু পরিবর্তন। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন মানব সভ্যতা এবং প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত হুমকি স্বরূপ। প্রকৃতির যে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রয়েছে তা দিন দিন হুমকির মুখে পরছে পরিবেশ দূষিত ও বিষাক্ত হওয়ার কারণে। জলবায়ুর স্বাভাবিক স্থিতিশীলতা ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য যে কারনে ঘটছে সেগুলো জানতে হবে। পৃথীবিকে ক্রমশই ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়ার জন্য মানুষরাই দায়ী। কারন আমরা নিজের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নির্বিচারে প্রকৃতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছি। আমাদের সুন্দর পৃথিবীকে উষ্ণ করার জন্য আমাদের কর্মকান্ড দায়ী। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য ও পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের সবাইকে রুখে দাড়াতে হবে। জলবায়ু যেভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে অতিশিঘ্রই আমরা সবাই ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হতে চলেছি। যদি আমরা এখন থেকেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন না করি। প্রকৃতিতে দিন দিন গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমান বাড়ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীদের গবেষনা থেকে জানা যায়, আশির দশক থেকে গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রভাবে পৃথিবীর মাত্রা ০.৭৪ ডিগ্রি করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে শতাব্দীর শেষের দিকে মেরু অঞ্চলের বরফ গলা শুরু হয়ে যাবে। কয়েক বছর থেকে হিমালয় পর্বতের ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যে সমুদ্রের উচ্চতা ১৫৩ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে। ফলে পৃথিবীর অনেকগুলো দেশ সমুদ্রের নিচে ডুবে যাবে। দ্রুত থেকে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলেছে জলবায়ু পরিবর্তন। এর ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে জলজ, সামুদ্রিক ও উপকূলীয়, কৃষি বন, দ্বিপাঞ্চল, এবং মেরু পরিবেশের উপর। ধারণা করা হয় এরকম পরিবর্তনের কারণে প্রাণী ও উদ্ভিদ জগতের ২৫ ভাগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, প্লাবিত হবে অনেক নির্মাঞ্চল। তাই জলবায়ু সমস্যা দূরীকরণের জন্য আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তন | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান কারণ হলো মানব কার্যকলাপের ফলে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধি। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি সূর্য থেকে আসা তাপকে পৃথিবীতে আটকে রাখে, যার ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তনের জন্য মানব কার্যকলাপকেই দায়ী করা যেতে পারে। কারন আমরা প্রকৃতিকে প্রকৃতির মতো থাকতে দিচ্ছিনা যার ফলে প্রকৃতিও আমাদের প্রতি বিরুপ প্রতিক্রিয়া করছে। জলবায়ু কখনোই নিজে নিজে পরিবর্তিত হতে পারেনা। আমরাই জলবায়ুকে পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছি। তার প্রধান কিছু কারন হলো: বেশি বেশি গাছ না লাগিয়ে গাছ কেটে ফেলা। অতিরিক্ত গাছ কাটার কারনে বায়ুতে কার্বনডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন বেড়ে যাওয়ার কারনে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কয়লা, তেল এবং গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদ যা শক্তি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। এই জ্বালানিগুলির দহন প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। যেগুলো আমাদের পরিবেশের জন্য অনেক ক্ষতিকর।
কৃষি কার্যকলাপ যেমন জমিতে বেশি বেশি সার এবং কীটনাশক ব্যবহারের কারনে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমান বেড়ে যাচ্ছে। এছাড়াও বন উজাড় করা হলো জলবায়ু পরিবর্তন এর অন্যতম প্রধান কারন। বন উজার করলে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বৃদ্ধিতে অবদান রাখে। বনগুলি গ্রিনহাউস গ্যাস শোষণ করে, তাই বনের পরিমাণ হ্রাস পেলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। গ্রিন হাউজ গ্যাস বৃদ্ধির কারনে পৃথীবির তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.৭৪ করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এভাবে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে সমূদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১৫৩ সেন্টিমিটার বেড়ে যাবে। যার ফলে নিম্নাঞ্চল গুলো সমূদ্রের নিচে চলে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বাংলাদেশের ২০ শতাংশ এলাকা পানির নিচে চলে যাবে ২০৫০ সালের মধ্যে। ধারনা করা হয় ১.৪ মিলিয়ন জায়গা লোনা পানিতে ভরে যাবে, বন্যার হার বেড়ে যাবে, ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে। জাতসংঘের একটি রিপোর্ট তজেকে জানা যায়, বাংলাদেশের সমূদ্র তীরের বেশ কয়েকটি অঞ্চলে তীব্র সুপেয় পানির অভাব দেখা দিবে। ২০২৫ সাল নাগাদ এই অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারন করবে। ইতিমধ্যেই লক্ষন গুলো প্রকাশ পেয়েছে। অনেক এলাকায় তীব্র সুপেয় পানির অভাব দেখা দিয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষন গুলো দিন দিন প্রকাশ বেড়ে যাচ্ছে। তাই সময় এসেছে আমাদের সবার সচেতন হওয়ার। আমরা যদি সচেতন হই গাছকাটা বন্ধ করি, পরিবেশকে বাচানোর জন্য বেশি বেশি গাছ লাগাই তাহলে হয়তো আমরা ক্ষতির হাত থেকে পৃথিবীকে কিছুটা রক্ষা করতে পারব। পৃথীবিকে ক্রমশ ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য সরকার এবং জন সাধারন আমাদের সবাইকে এক সাথে কাজ করতে হবে।