Dreamy Media BD

তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ রচনা | ২০ টি পয়েন্ট | উক্তি সহকারে ২৫০০+ শব্দ | pdf download

তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ

প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আমরা আজকে হাজির হয়েছি “তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ” রচনা নিয়ে।  রচনাটি পরীক্ষা SSC, HSC সহ যে কোন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্যেও উপযোগী করে লেখা হয়েছে।  ২০ টি গুরুপ্তপূর্ণ পয়েন্ট সহকারে ২৫০০+ শব্দে সহজ ভাষায় লেখা হয়েছে।  যা শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তিতে সাহায্য করবে।  

তথ্য প্রযুক্তি ও বাংলাদেশ 

সূচনা 

তথ্য-প্রযুক্তি আজকের বিশ্বে অপরিহার্য একটি হাতিয়ার। এটি আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। তথ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রশাসন, যোগাযোগ, পরিবহন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১০ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। আইটি ব্যবহার করে বাংলাদেশ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং ভবিষ্যতেও আরও বেশি অগ্রগতি অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য প্রযুক্তি কি? 

তথ্য প্রযুক্তি (Information Technology) হল তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ, যোগাযোগ এবং বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহৃত প্রযুক্তি। তথ্য প্রযুক্তির অগ্রগতি বিশ্বকে একত্রিত করেছে এবং আমাদের জীবনকে সহজতর করেছে।

তথ্য প্রযুক্তিকে বিভিন্ন উপায়ে শ্রেণীবদ্ধ করা যায়। এর মধ্যে কিছু প্রচলিত শ্রেণীবিভাগ হল:

ক) কম্পিউটার প্রযুক্তি: কম্পিউটার, কম্পিউটার হার্ডওয়্যার, কম্পিউটার সফটওয়্যার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির কম্পিউটার প্রযুক্তি শাখার অন্তর্ভুক্ত।

খ) যোগাযোগ প্রযুক্তি: ইন্টারনেট, টেলিফোন, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির যোগাযোগ প্রযুক্তি শাখার অন্তর্ভুক্ত।

গ) সফটওয়্যার প্রযুক্তি: সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং, সফটওয়্যার টেস্টিং ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির সফটওয়্যার প্রযুক্তি শাখার অন্তর্ভুক্ত।

ঘ) ডেটাবেজ প্রযুক্তি: ডাটাবেজ ডেভেলপমেন্ট, ডেটাবেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ডেটাবেস অ্যানালিটিক্স ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির ডেটাবেস প্রযুক্তি শাখার অন্তর্ভুক্ত।

ঙ) ইন্টারনেট প্রযুক্তি: ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপমেন্ট, ওয়েবমাস্টারিং ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির ইন্টারনেট প্রযুক্তি শাখার অন্তর্ভুক্ত।

চ)  কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মেশিন লার্নিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শাখার অন্তর্ভুক্ত।

ছ) ভার্চুয়াল রিয়েলিটি: ভার্চুয়াল রিয়েলিটি, এক্সটেন্ডেড রিয়েলিটি, মিক্সড রিয়ালিটি ইত্যাদি তথ্য প্রযুক্তির ভার্চুয়াল রিয়েলিটি শাখার অন্তর্ভুক্ত।

তথ্য প্রযুক্তির বৈশিষ্ট্য

তথ্য প্রযুক্তির কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল:

  • তথ্য প্রযুক্তি হল একটি গতিশীল প্রযুক্তি, নতুন নতুন আবিষ্কার ও উদ্ভাবন সবসময়ই হচ্ছে।
  • তথ্য প্রযুক্তি হল একটি সর্বজনীন প্রযুক্তি, এর ব্যবহার বিশ্বের সকল দেশের সব মানুষেই করে থাকে।
  • তথ্য প্রযুক্তি হল একটি বহুমুখী প্রযুক্তি, বিভিন্ন ক্ষেত্রে এটি ব্যবহার করা হয়।
  • তথ্য প্রযুক্তি হল একটি দ্রুত বিস্তার লাভকারী প্রযুক্তি যার ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • তথ্য প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে। 

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির অতীত পটভূমি

তথ্য প্রযুক্তির উন্নায়নের সাথে সাথে বিশ্বব্যাপী এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশও এই প্রবাহে পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ইতিহাস খুব বেশি পুরনো নয়। ১৯৬০ সালে পারমাণবিক গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে তথ্যপ্রযুক্তির সূচনা হয়। পরবর্তী কয়েক দশকে, বৃহৎ বাংলাদেশী সংস্থাসমূহে কম্পিউটারের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়, যেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আইবিএম মেইনফ্রেম কম্পিউটার ব্যবহৃত হত।  নব্বইয়ের দশকের শুরুতে বাংলাদেশে কম্পিউটারের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে শুরু হয়। নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে মোবাইল ফোনের ব্যবহার শুরু হলে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে কিছুটা গতি আসে।

২০০৮ সালের দিকে বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ লাখের মতো। ২০২৩ সালের হিসাবে এই সংখ্যা প্রায় ৯ কোটিতে দাঁড়িয়েছে। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যাও বেড়েছে বহুগুণ।

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সব ক্ষেত্রেই ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, যোগাযোগ, সরকারী সেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার জনজীবনকে সহজতর ও গতিশীল করেছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে। স্বাস্থ্য সেবায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে রোগীরা দূরবর্তী স্থান থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ব্যবসায়ীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে ব্যবসা করতে পারছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে মানুষ একে অপরের সাথে সহজে এবং দ্রুত যোগাযোগ করতে পারছে। সরকারী সেবায় তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে জনগণ ঘরে বসেই সরকারী সেবা গ্রহণ করতে পারছে।

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির প্রভাব

তথ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ সরকার তথ্যপ্রযুক্তি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়েছে এবং এ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

তথ্য প্রযুক্তির আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। এর মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য প্রভাব হল:

  • শিক্ষা: তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষার্থীরা এখন ঘরে বসেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
  • স্বাস্থ্যসেবা: তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য হয়েছে। রোগীরা এখন দূরবর্তী স্থান থেকে চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে।
  • ব্যবসা-বাণিজ্য: তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারিত হয়েছে। ব্যবসায়ীরা এখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে ব্যবসা করতে পারে। ই-কমার্স ও ফেসবুক কমার্স অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। 
  • যোগাযোগ: তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। মানুষ এখন একে অপরের সাথে সহজে এবং দ্রুত যোগাযোগ করতে পারে।
  • সরকারী সেবা: তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারী সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেছে। জনগণ এখন ঘরে বসেই সরকারী সেবা গ্রহণ করতে পারে।

তথ্য প্রযুক্তির উন্নায়ন আমাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

জাতীয় জীবনে তথ্য প্রযুক্তির গুরুত্ব

আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তি জাতীয় জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নায়নের ফলে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তথ্যপ্রযুক্তির গুরুত্ব নিম্নরূপ:

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মান উন্নায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে। এছাড়াও, তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণ যেমন কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, স্মার্টবোর্ড ইত্যাদি শিক্ষাদানকে আরও মজার ও কার্যকর করে তুলেছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নায়নের ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা, কৃষি, পরিবহন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্র সৃষ্টি হচ্ছে।

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারী সেবা প্রদানের কার্যক্রম আরও দ্রুত, সহজ ও স্বচ্ছ করা সম্ভব হয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক সরকারী সেবা প্রদানের ফলে জনগণের সময় ও অর্থের সাশ্রয় হচ্ছে। ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে দ্রুত ও সহজে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে।এছাড়াও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী স্থান থেকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। তাই বলা যায়, তথ্যপ্রযুক্তি জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নায়নের ফলে জাতীয় জীবনের সকল ক্ষেত্রে উন্নতি সাধিত হচ্ছে।

জনশক্তি উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তি

তথ্যপ্রযুক্তি জনশক্তি উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার। একটি দেশের জনগণ হল দেশের সম্পদ কিন্তু জনশক্তি দক্ষ না হলে, বোঝায় রুপান্ত্র হয়। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জনশক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি করা সম্ভব।

তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করা সম্ভব। এতে করে জনশক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে করে বেকারত্ব হ্রাস পাচ্ছে। এর ব্যবহারের ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত হচ্ছে। সর্বোপরি তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে জনশক্তির দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি পাওয়ায় জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে।

জনশক্তি উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের উপায়:

  • ভার্চুয়াল ক্লাসরুম: ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের শিক্ষার্থীরা একই ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে করে গ্রাম অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • অনলাইন কোর্স: ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন কোর্স গ্রহণ করা সম্ভব। এতে করে শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
  • মোবাইল অ্যাপ: মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক সামগ্রী যেমন ক্লাস নোট, প্রশ্নপত্র, পরীক্ষার ফলাফল ইত্যাদি সহজেই পাওয়া যায়। এতে করে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণ সহজতর হচ্ছে।
  • ই-লার্নিং: ই-লার্নিং হলো একটি আধুনিক শিক্ষা প্রযুক্তি যেখানে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে। ই-লার্নিং এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব গতিতে ও সুবিধামতো শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।

জনশক্তি উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের জন্য, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। জনশক্তি উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।

ব্যবসায়-বাণিজ্যে তথ্য প্রযুক্তি

ব্যবসায়-বাণিজ্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যবসার সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ব্যবসার দক্ষতা, কার্যকারিতা ও মুনাফা বৃদ্ধি পেয়েছে। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়া দ্রুত ও সহজতর হয়। এতে করে উৎপাদ বৃদ্ধি পায়। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ব্যবসার ব্যয় হ্রাস পায় এবং এর মাধ্যমে ব্যবসার বাজার সম্প্রসারণ করা সম্ভব। কেননা, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে পণ্য ও সেবা প্রদান করা যায়।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে পণ্য ও সেবা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রদান করে,বিক্রয় বৃদ্ধি করা সম্ভব।। ব্যবসায়-বাণিজ্যে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে ব্যবসার কার্যক্রম আরও দ্রুত, সহজ ও কার্যকর হয়েছে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ

শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ শিক্ষার মান উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদানকে আরও আকর্ষণীয় ও কার্যকর করা সম্ভব। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের মাল্টিমিডিয়া উপকরণ ব্যবহার করা যায়। এতে করে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি পায় এবং তারা সহজেই বিষয়বস্তু আয়ত্ত করতে পারে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে দূরবর্তী গ্রামীণ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের শিক্ষার্থীরা একই ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারে।পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষকরা নতুন ধরনের শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারে এবং সেগুলো ব্যবহার করতে পারে।

শিক্ষা ক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তি যেভাবে সাহায্য করছে:

  • কম্পিউটার: কম্পিউটার শিক্ষাদানের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। যেমন, পাঠ্যপুস্তক, বিভিন্ন শিক্ষা উপকরণ তৈরি, পরীক্ষা গ্রহণ, ফলাফল প্রদান ইত্যাদি।
  • মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর: মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে আরও আকর্ষণীয় উপায়ে উপস্থাপন করা যায়।
  • স্মার্টবোর্ড: স্মার্টবোর্ড ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে সরাসরি লেখার ও আঁকার মাধ্যমে উপস্থাপন করা যায়।
  • অনলাইন কোর্স: অনলাইন কোর্স ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা স্বল্প খরচে ও স্বল্প সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে।
  • ই-লার্নিং: ই-লার্নিং হলো একটি আধুনিক শিক্ষা প্রযুক্তি যেখানে শিক্ষার্থীরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করে।
  • মোবাইল ফোনঃ এর মাধ্যমে ইউটিউব বা শিক্ষামূলক ওয়েবসাইট থেকে যে কোন সময় যেকোনো কঠিন বিষয়ে শেখা যায়। 

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও দ্রুত শেখার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনা সৃষ্টি

তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করা সম্ভব। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন উপকরণ যেমন কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সফটওয়্যার ইত্যাদি রপ্তানি বাণিজ্যকে সহজতর ও কার্যকর করে তুলছে। তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে ব্যবসায়িক যোগাযোগ করা সম্ভব। এতে করে রপ্তানিকারীদের জন্য নতুন বাজার সম্প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এর মাধ্যমে পণ্য ও সেবার বিপণন কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করার ফলে বিক্রয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করা সম্ভব। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানিকারকরা তাদের ব্যবসার কার্যক্রম আরও দ্রুত, সহজ ও কার্যকর করতে পারে।

ই-গভর্ন্যান্স ও আধুনিক বাংলাদেশ

ই-গভর্ন্যান্স হল একটি ধারণা যেখানে সরকারী তথ্য, পরিষেবা এবং ইত্যাদি  বিষয়গুলিকে ইন্টারনেট এবং অন্যান্য ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে প্রদান করা হয়। ই-গভর্ন্যান্স আধুনিক বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। মানুষ ঘরে বসেই ভোগান্তি ছাড়া সেবা গ্রহন করতে পারছে। 

বাংলাদেশ সরকার ২০১৬ সালে একটি ই-গভর্ন্যান্স নীতি ও কৌশল প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ সরকার ই-গভর্ন্যান্স অবকাঠামো উন্নয়নে ইন্টারনেট সংযোগ, ডেটা সেন্টার, এবং সরকারি ওয়েবসাইট ও অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি কাজ সম্পন্ন করেছে।এবং ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন ই-গভর্ন্যান্স কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু করছে যেমন, অনলাইনে দলিল রেজিস্ট্রেশন, অনলাইনে কর প্রদান, এবং অনলাইনে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রদান।

বাংলাদেশ সরকার ই-গভর্ন্যান্সের উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করলে ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গরে তোলা সম্ভব।

তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে করণীয়

তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ, সরকারী প্রশাসন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নতি সাধিত করা সম্ভব কিন্তু এর জন্যন নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি গ্রহণ করতে হবে:

তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা: দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তথ্য প্রযুক্তি শিক্ষার উপর গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। শিক্ষার্থীদেরকে তথ্য প্রযুক্তির মৌলিক বিষয়গুলি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া উচিত।

তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন করা: দেশের তথ্য প্রযুক্তি অবকাঠামো উন্নয়ন করা উচিত। ইন্টারনেট সংযোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করা, তথ্যপ্রযুক্তি কেন্দ্র গুলির সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা উচিত।

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা: জনসাধারণের মধ্যে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিত। তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিত করা উচিত।

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।  তবে, তথ্য প্রযুক্তির প্রসারে আরও অনেক কিছু করার আছে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতকেও এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। তথ্য প্রযুক্তির প্রসারের মাধ্যমে বাংলাদেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশের স্যাটেলাইট – বঙ্গবন্ধু-১

বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ ২০১৮ সালের ১২ ডিসেম্বর উৎক্ষেপণ করা হয়। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে বাংলাদেশ সরকার ই-গভর্ন্যান্স, ডিজিটাল সরকার, এবং ওয়ান স্টপ সার্ভিস ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রমগুলি বাংলাদেশের প্রশাসনকে আরও দক্ষ ও কার্যকর করে তুলছে।

বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটটি থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে বাংলাদেশ শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনলাইন শিক্ষা, ই-লার্নিং, এবং ডিজিটাল শিক্ষা ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই কার্যক্রমগুলি বাংলাদেশের শিক্ষার মান উন্নায়নে ভুমিকা পালন করছে।

বাংলাদেশের স্যাটেলাইট , তথ্য প্রযুক্তিতে বাংলাদেশের উন্নয়নে সহয়তা করছে। 

ডিজিটাল এবং স্মার্ট বাংলাদেশ

২০২৩ সালের হিসাবে, বাংলাদেশ ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে তথ্য প্রযুক্তির অবকাঠামো, প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, সরকারি সেবা প্রদান, এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে।

ডিজিটাল বাংলাদেশের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন:

  • মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৩০ মিলিয়নেরও বেশি
  • ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ মিলিয়নেরও বেশি
  • ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে
  • তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি পার্ক (আইসিটি পার্ক) প্রতিষ্ঠা
  • প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) শিক্ষা বাধ্যতামূলক
  • সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে জনগণকে বিভিন্ন সরকারি সেবা প্রদান
  • ই-সেবা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা
  • ই-কমার্সের উন্নায়নে সহায়তা
  • তথ্য প্রযুক্তি ভিত্তিক শিল্পের উন্নায়নে সহায়তা

স্মার্ট বাংলাদেশ

ডিজিটাল বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য হল স্মার্ট বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ বলতে এমন একটি দেশ হবে, যেখানে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সমস্থ যাবতীয় কাজ করা সম্ভব হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছেছে বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আরও উন্নত উন্নয়ন সাধিত হবে।

বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের প্রসার

বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য, দেশের গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের প্রসার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ বিশ্বের সাথে সংযুক্ত হতে পারে, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারী সেবা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুবিধা পেতে পারে। বাংলাদেশে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের প্রসার বেশ ভালোভাবে হচ্ছে। টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত গ্রামাঞ্চলে মোট ৪৮.৪৮% পরিবার ইন্টারনেট ব্যবহার করে। ২০১৮ সালে এই হার ছিল ৩৩.১৬%।

সরকার গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের প্রসার বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তার জন্য স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল সেন্টার।  এই কেন্দ্রগুলির মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণকে তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে এবং ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও টেলিযোগাযোগ খাতের উন্নতিসাধনের ফলে গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগের দাম কমেছে। এছাড়াও, গ্রামাঞ্চলে মোবাইল ফোন ব্যবহারের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে গ্রামীণ জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে।

জাতীয় জীবনে তথ্য-প্রযুক্তি

জাতীয় জীবনে তথ্য-প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি মানুষের ও দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তথ্য প্রযুক্তির বিভিন্ন উপাদান মোবাইল , কম্পিউটার, স্মার্ট ওয়াচ ইত্যাদি ছাড়া আমারা এক মুহূর্ত চলতে পারি না। আমাদের কাজ, শিক্ষা, সেবা সবই এখন তথ্য ও প্রযুক্তি কেন্দ্রিক। ব্যক্তির পাশাপাশি দেশের জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। 

তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য এখন বিশ্বব্যাপী হয়ে উঠেছে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়। মেশিন লার্নিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), রোবোটিক্স ইত্যাদি তথ্য-প্রযুক্তি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত হয়। স্মার্ট যানবাহন, যানবাহন ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা ইত্যাদি তথ্য-প্রযুক্তি পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করতে সহায়তা করে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হয়। অনলাইন পর্যটন ব্যবস্থাপনা, পর্যটন শিল্পে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার ইত্যাদি তথ্য-প্রযুক্তি পর্যটন শিল্পের বিকাশে সহায়তা করে।

তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায় এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত হয়। ভার্চুয়াল স্বাস্থ্যসেবা, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি তথ্য-প্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করতে সহায়তা করে।জাতীয় জীবনে তথ্য-প্রযুক্তির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। তথ্য-প্রযুক্তির বিকাশের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে।

তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা

তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনা অনেক। বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠী, ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা, সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিকাশে ক্রমবর্ধমান মনোযোগ ইত্যাদি বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনাকে আরও উন্নত করেছে।

বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনাসমূহ নিম্নরূপ:

  • তরুণ জনগোষ্ঠী: বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ৬০%ই তরুণ। এই তরুণরা তথ্য-প্রযুক্তিতে দক্ষ এবং উদ্ভাবনী। তারা তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
  • ক্রমবর্ধমান ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা: বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালের হিসাবে, বাংলাদেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় শত মিলিয়নে পৌঁছে গেছে। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার বৃদ্ধি তথ্য-প্রযুক্তি খাতের বিকাশকে ত্বরান্বিত করবে।
  • সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি উন্নায়নে মনোযোগ: বাংলাদেশ সরকার তথ্য-প্রযুক্তি বিকাশে ক্রমবর্ধমান মনোযোগ দিচ্ছে। সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নায়নকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে।

বাংলাদেশের সফ্টওয়্যার শিল্প দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২৩ সালে, বাংলাদেশের সফ্টওয়্যার শিল্পের আয় প্রায় ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের আইটি সেবা শিল্প দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি  বাংলাদেশের ই-কমার্স বাজার দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের উন্নায়নকে ত্বরান্বিত করা হচ্ছে। এছাড়াও, দেশের তরুণ জনগোষ্ঠী তথ্য-প্রযুক্তিতে অনেক দক্ষ হয়ে উঠতেছে। তাই, বাংলাদেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ একটি তথ্য-প্রযুক্তি রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে। ভবিষ্যতে এই ধারা আরও গতি লাভ করবে। 

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল। তথ্য প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প, এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। আইটি খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এবং এর মাধ্যমে দেশের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে, রপ্তানি আয় বাড়ছে, এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। 

বাংলাদেশ সরকার আইটির উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করলে এটি বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, প্রশাসন, যোগাযোগ, পরিবহন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ভাল-মন্দ

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনের সকল ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। এর অনেক সুবিধা রয়েছে, তবে কিছু অসুবিধাও রয়েছে।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি আমাদেরকে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সাথে যেকোনো সময় যোগাযোগ করতে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে সহায়তা করেছে। এটি আমাদেরকে অনলাইনে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ গ্রহণের সুযোগ করে দিয়েছে এবং অনলাইনে ব্যবসা ও বাণিজ্য পরিচালনার সুযোগ করে দিয়েছে। আমাদের কাজ অনেক সহজ করে দিয়েছে এবং অথের অনেক সাশ্রয় হয়েছে। এছাড়াও আমাদের প্রায় প্রতিটি কাজের সাথে তথ্য ও প্রযুক্তি জরিয়ে গেছে। 

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির কিছু অসুবিধা:

বেশিরভাগ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি গুলি আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ এবং ব্যবহার করে। এতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন হয়। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ইন্টারনেট আসক্তির এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার কারণ হতে পারে। বর্তমানে এটি অপরাধের কাজে ব্যবহার করা হয়।

আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনে অনেক সুবিধা এনেছে। তবে, এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণের পাশাপাশি আমাদের এর অসুবিধাগুলি থেকে সতর্ক থাকাও জরুরি।

উপসংহার

তথ্য প্রযুক্তি বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবসা-বাণিজ্য, উৎপাদন, বিপণন, পরিবহন, পর্যটন ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নয়নে সহায়তা করছে। এর ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হচ্ছে। তবে, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার ও অপরাধ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সচেতন হতে হবে।

Related Post

মৃত্যু নিয়ে উক্তি

150+মৃত্যু নিয়ে উক্তি, বাণী, ক্যাপশন 2024

মৃত্যু নিয়ে উক্তি জন্মিলে মরিতে হবে আর এটাই সত্যি। মৃত্যু হচ্ছে সবচেয়ে চিরন্তন সত্যি। পৃথিবীতে প্রতিটি প্রাণীর মৃত্যুর স্বাদ অনুভব করতে হবে। সবসময় মৃত্যুর জন্য

Read More »
খুশির স্ট্যাটাস

200+ স্টাইলিশ খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন

খুশির স্ট্যাটাস | হাসি নিয়ে ক্যাপশন জীবনের সুন্দর খুশির মুহূর্ত আমরা সবাই বাঁধাই করে রাখতে চাই। আর এই খুশির মুহূর্তকে ধরে রাখার সবচেয়ে সহজ উপায়

Read More »

স্টাইলিশ ভালোবাসার ছন্দ | রোমান্টিক ছন্দ | Love Status Bangla

❤❤ভালোবাসার ছন্দ | ভালোবাসার ছন্দ রোমান্টিক | ভালোবাসার ছন্দ স্ট্যাটাস❤❤ ভালোবাসা হলো এক অন্যরকম অনুভূতির নাম, যা শুধুমাত্র কাউকে ভালবাসলেই অনুভব করা যায়। আমরা বিভিন্নভাবে

Read More »
মন খারাপের স্ট্যাটাস

মন খারাপের স্ট্যাটাস, উক্তি, ছন্দ, ক্যাপশন, কিছু কথা ও লেখা

মন খারাপের স্ট্যাটাস মন খারাপ – এই কষ্টের অনুভূতি কার না হয়? সবারই কখনো না কখনো সবারই মন খারাপ হয়। জীবনের ছোটোখাটো অঘটন থেকে শুরু

Read More »

Leave a Comment

Table of Contents