বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ | আমাদের গর্ব

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ (BD-1), বাংলাদেশের প্রথম জিওস্টেশনারি কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট, বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (BTRC) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। ২০১৮ সালের

১২ই মে স্যাটেলাইটটি জিওস্টেশনারি আর্থ অরবিটে (GEO) উৎক্ষেপণ করা হয়। ফলশ্রুতিতে ৫৭ তম দেশ হিসাবে মহাকাশের এলিট ক্লাবে নাম লেখায় বাংলাদেশ। আজকের এই লেখায় আমারা জানব আমাদের দেশের গর্ব, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ সম্পর্কে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

বঙ্গবন্ধু ১, বাংলাদেশের স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ প্রতি বছর প্রায় $১৪  মিলিয়ন ডলার বাঁচাতে সক্ষম। ভবিষ্যতে বিটিআরসি পর্যায়ক্রমে বিডি-২ এবং বিডি-৩ স্যাটেলাইটের ফলো-অন সিরিজ উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা করছে। 119.1°E দ্রাঘিমাংশের অরবিটাল অবস্থিত, বঙ্গবন্ধু ১ এর প্রধান উদেশ্য বাংলাদেশের গ্রামীণ এলাকায় সম্প্রচার সুবিধা ও টেলিযোগাযোগ পরিষেবা প্রদান করা। বঙ্গবন্ধু ১ বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন এবং ইন্দোনেশিয়াতে কু-ব্যান্ড এবং সি-ব্যান্ড পরিষেবা প্রদান করতে সক্ষম।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ প্রজেক্ট সময়সূচী

থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস দ্বারা তৈরি স্পেসবাস 4000B2 প্ল্যাটফর্মের উপর ভিত্তি করে এটি তৈরী করা হয়েছে।  স্যাটেলাইট সিস্টেম কিনতে থ্যালাস অ্যালেনিয়া স্পেসের সঙ্গে এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকার রফা হয়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মেয়াদকাল  ১৫ বছর কিন্তু ভবিষ্যতে আরো ৩ বছর বাড়ানো যাবে। আমাদের এই গর্বের প্রজেক্ট এর সাথে থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস বেলজিয়াম, থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস ইতালিয়া এবং থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস এস্পানাও ও বিভিন্ন ভাবে জড়িত ছিল।

  •  ২০১২ সালের মার্চে প্রকল্পের মূল পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’কে।
  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ স্যাটেলাইটের জন্য ডিজাইন, উৎপাদন এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করার জন্য থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেসকে ২০১৫ সালের নভেম্বরে প্রধান ঠিকাদার হিসাবে নিয়োগ করা হয়। বিডি-১ স্যাটেলাইটের কমিউনিকেশন মডিউল ইন্টিগ্রেশনের কাজটি ফ্রান্সের টুলুসে অবস্থিত থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস-এর প্ল্যান্টে করা হয়েছিল।
  •  রাশিয়ার কোম্পানি ইন্টারস্পুিনকের কাছ থেকে অরবিটাল স্লট কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি  ২০১৫ সালে সম্পন্ন করে বিটিআরসি ।
  • BD-1 স্যাটেলাইটের নকশা পর্যালোচনা (সিডিআর) জানুয়ারি ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয়েছিল।
  • ২০১৭ সালে পাঁচ হাজার কোটি টাকা মূলধনে BD-1 স্যাটেলাইটের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কম্পানি লিমিটেড’ গঠন করা হয়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও সুবিধা

  • বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে ২৬টি কু-ব্যান্ড এবং ১৪ টি সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার লাগানো হয়েছে।
  •  ট্রান্সপন্ডারের মোট ফ্রিকোয়েন্সি ক্ষমতা হলো ১ হাজার ৬০০ মেগাহার্টজ।
  • DTH প্রযুক্তির সুবিধা।
  • অ্যাপারচার টার্মিনাল (VSAT) যোগাযোগ
  • ব্যাকহল এবং ট্রাঙ্কিং সুবিধা
  • নেটওয়ার্ক পুনরুদ্ধার সুবিধা
  • স্যাটেলাইটের প্রাইমারি সার্ভিস এরিয়া (PSA) হল বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী দেশ এবং সেকেন্ডারি সার্ভিস এরিয়া (SSA) এর মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ, মধ্য প্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকা (MENA), পাশাপাশি পূর্ব আফ্রিকা।
  •  এর ব্যান্ডউইডথ ও ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে ইন্টারনেট বঞ্চিত এলাকায় উচ্চগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা দেয়া সম্ভব।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১: উৎক্ষেপণ যান

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-কে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ইলন মাস্কের স্পেসএক্স কোম্পানির ফ্যালকন ৯ মহাকাশ যানের সাহায্য। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১, ফ্যালকন ৯ রকেটের নতুন ব্লক ৫ মডেল ব্যবহার করে প্রথম পেলোড উৎক্ষেপণ ছিল।

প্রথমে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-কে ফ্যালকন ৯- রকেটের প্রথম স্তরে থাকা ৯টি মার্ক ১ রকেট ইঞ্জিন দিয়ে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল, তারপর দ্বিতীয় স্তরে থাকা একক মার্ক 1D ইঞ্জিন দিয়ে কক্ষপথে পৌঁছে দেওয়া হয়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১: গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর জন্য দুটি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন রয়েছে: একটি গাজীপুরে এবং অন্যটি রাঙামাটিতে।

  • গাজীপুর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন টি গাজীপুরের জয়দেবপুরে অবস্থিত। এই স্টেশনটি থেকে স্যাটেলাইটের অবস্থান, কক্ষপথ এবং কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ এবং নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • রাঙামাটি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন টি রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় অবস্থিত। এই স্টেশনটি প্রধান গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনের ব্যাকআপ হিসাবে ব্যবহৃত হয়।

দুটি গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশনই স্যাটেলাইটের সাথে যোগাযোগ করতে এবং নিয়ন্ত্রণ করতে টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং এবং কমান্ড (TT&C) সিস্টেম ব্যবহার করে। TT&C সিস্টেমটি স্যাটেলাইট থেকে আসা সংকেত গুলো গ্রহণ করে এবং স্যাটেলাইট নির্দেশাবলী প্রেরণ করে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১: ব্যবহারকারী দেশসমূহ

বর্তমানে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ ৩৮টি টিভি চ্যানেল এই স্যাটেলাইটের সেবা নিচ্ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি বর্তমানে বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহ থেকে ভাড়া নেয়া ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করছে এমন দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

  • হন্ডুরাসের দুইটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, Canal 11 এবং Canal 22 বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার দেশব্যাপী প্রসারিত করেছে।
  • তুরস্কের বেসরকারি টিভি চ্যানেল, TRT World, বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় তাদের সম্প্রচার প্রসারিত করেছে।
  • ফিলিপাইনের বেসরকারি টিভি চ্যানেল, TV5, বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রসারিত করতে চায়।
  • ঘানার দুইটি টিভি চ্যানেল, GHOne এবং TV3, বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার দেশব্যাপী প্রসারিত করেছে।
  • ক্যামেরুনের একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, Vision 4, বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার দেশব্যাপী প্রসারিত করেছে।
  • দক্ষিণ আফ্রিকার দুটি অনলাইন ভিত্তিক টিভি চ্যানেল, eNCA এবং ENCA News, বঙ্গবন্ধু-১ উপগ্রহের মাধ্যমে তাদের সম্প্রচার দক্ষিণ আফ্রিকা এবং আফ্রিকার অন্যান্য দেশে প্রসারিত করেছে।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১: আয় কত?

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর মোট আয় ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০২৩ সালের জুলাই পর্যন্ত, এই স্যাটেলাইটটি থেকে প্রতি মাসে প্রায় ১০ কোটি টাকা আয় হচ্ছে। এর মধ্যে দেশীয় বাজার থেকে আয় হচ্ছে প্রায় ৮ কোটি টাকা এবং বিদেশী বাজার থেকে আয় হচ্ছে প্রায় ২ কোটি টাকা।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর আয়ের প্রধান উৎস হলো ট্রান্সপন্ডার ভাড়া। স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার গুলি টেলিভিশন সম্প্রচার, ইন্টারনেট সংযোগ, এবং অন্যান্য যোগাযোগ পরিষেবাগুলির জন্য ব্যবহৃত হয়। বিএসসিএল স্যাটেলাইটের ট্রান্সপন্ডার গুলি বিভিন্ন সময়সীমার জন্য ভাড়া দেয়।

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ সম্পর্কে তথ্য বাংলা

 

বিষয় তথ্য 
মিশনের ধরণযোগাযোগ ও সম্প্রচার উপগ্রহ 
অপারেটর বাংলাদেশ যোগাযোগ উপগ্রহ কোম্পানি লিমিটেড
মিশনের সময়কাল১৫ বছর (+৩ বছর)
স্পেসক্র্যাফটের বৈশিষ্ট্যস্পেসবাস-৪০০০বি২
নির্মাতা থেলেস অ্যালেনিয়া স্পেস
ওজন ৩,৭০৯ কেজি (৮,১৭৭ পাউন্ড) 
উৎক্ষেপণের তারিখ১২ মে, ২০১৮, ২০:১৪ UTC
উৎক্ষেপণ স্থানKSC LC-39A যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল
কন্ট্রাক্টর স্পেসএক্স 
কক্ষপথের পরামিতিভূস্থির 
কক্ষপথের দ্রাঘিমা ১১৯.১° পূর্ব 
বেগ ৩.০৭ কিমি/সেকেন্ড
ব্যান্ড ১৪ সি ব্যান্ড, ২৬ কু ব্যান্ড 
ব্যান্ডউইথ ৩৬ মেগাহার্জ 
বাজেট এক হাজার ৯৫১ কোটি ৭৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা

 

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১ সাধারণ জ্ঞান

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর উৎক্ষেপণ কারা করেন?

উত্তর: ফরাসি মহাকাশ সংস্থা আরিয়ানে স্পেস।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর উৎক্ষেপণ কত তারিখে হয়েছিল?

উত্তর: ২০১৮ সালের ১২ মে

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর উৎক্ষেপণ স্থান কোথায় ছিল?

উত্তর:  যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেপ ক্যানাভেরাল মহাকাশ কেন্দ্র।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর উদ্দেশ্য কী?

উত্তর:  দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোতে টেলিযোগাযোগ স্থাপন, নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রচার সেবা নিশ্চিত করা।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কি ধরনের উপগ্রহ? 

উত্তর: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ হলো কৃত্রিম উপগ্রহ।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কোথায় নিয়ন্ত্রণ করা হয়? 

উত্তর: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নিয়ন্ত্রণ করতে গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়া

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ কত টি কে-ইউ এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করে? 

উত্তর: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ টি ৪০টি কে-ইউ এবং সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার বহন করে।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মেয়াদকাল কত ধরা হয়েছে? 

উত্তর: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর চালনা সময় প্রায় ১৫ বছরের মতো ধরা হয়েছে। প্রয়োজনে, তিন বছর বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উপগ্রহের আওতায় কোন অঞ্চল পরে? 

উত্তর: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর উপগ্রহের আওতায় বাংলাদেশ, বঙ্গোপসাগর, ভারত, নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ও ইন্দোনেশিয়া অঞ্চলে সুবিধা প্রদান করে।

প্রশ্ন: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর বাইরের অংশে কি লেখা আছে? 

উত্তর: বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ টির বাইরের অংশে লাল-সবুজ পতাকার রঙের নকশার ওপর ইংরেজিতে “বাংলাদেশ” এবং বাংলাদেশ সরকারের মনোগ্রাম রয়েছে।

প্রস্নঃ  বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে  ট্রান্সপন্ডার ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছে কোন কোন দেশ? 

উত্তরঃ  হন্ডুরাস, তুরস্ক, ফিলিপাইন, ক্যামেরুন ও দক্ষিণ আফ্রিকা ।

প্রস্নঃ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর  কোন মহাকাশ যানে উৎক্ষেপণ করা হয়?  

উত্তরঃ  স্পেসএক্স এর ফ্যালকন ৯ যানে উৎক্ষেপণ করা হয়।

Scroll to Top