বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প রচনা ২০ পয়েন্ট

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প

 ‘বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প’ রচনা, এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের সিলেবাসভুক্ত রচনাটি যথাপযুক্ত ২০+ টি পয়েন্ট সহকারে দেওয়া হল।  রচনাটিতে প্রসঙ্গিক কবিতা ও উক্তি যুক্ত করা হয়েছে যা শিক্ষার্থীদের  সর্বাধিক নম্বরের নিশ্চয়তা প্রদান করে। 

ভূমিকা

নদীবিধৌত ও পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ, সৃষ্টিকর্তার অপরূপ শিল্পের সেরা প্রদর্শনী আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশ।  হিমালয়ের পাদদেশ থেকে শুরে হয়ে সবুজের গালিচায় আঁকা বাংলাদেশ নামের চিত্রকর্মটি শেষ হয়েছে বঙ্গোপসাগরে।  তাইতো কবি  সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছেন,  

 হিমালয় থেকে সুন্দরবন, 

হঠাৎ বাংলাদেশ 

কেঁপে কেঁপে ওঠে পদ্মার উচ্ছ্বাসে…

দিগন্তজুড়ে সবুজের পটভূমি, বাংলার ভূখণ্ডের বুক চিড়ে ছুটে চলা অসংখ ছোটবড় নদী, পূর্ব সীমান্তের পাহাড়ের সৌন্দর্য, দক্ষিণের ম্যানগ্রোভ বন ও সমুদ্র সৈকত, দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলার ইতিহাসের প্রসিদ্ধ স্থাপনা ও হাজার বছরের ইতিহাসের বাহক পুরাকৃর্তি দেশি বিদেশী পর্যটকদের বিষ্মিত ও বিহোমিত করে।  

পর্যটন ও পর্যটন শিল্পের ধারণা

পর্যটন হলো এক ধরনের বিনোদন। অবসর যাপন অথবা ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে এক স্থান থেকে অন্য স্থান কিংবা এক দেশ থেকে অন্য দেশে ভ্রমণ করাকে পর্যটন  বলে।  ভ্রমণের সময় প্রয়োজন হয় পরিবহন ব্যাবস্থার, থাকার জন্য আবাসন, খাবার জন্য রেস্তোরা, কেনাকাটার জন্য দোকান আর এই সকলের সময়ন্বয়ে যে শিল্প গড়ে উঠে তাকে বলা হয় পর্যটন শিল্প। সভ্যতার শুরু থেকেই পর্যটনের ধারণা চলে আসতেছে, মানুষ দেশ বিদেশ দেখার তাড়নায় ছুটে চলেছেন মাইলের পর মাইল, পাড়ি দিয়েছেন অতল সমুদ্র। তাদেরই একজন কলম্বাস আবিষ্কার করেন আমেরিকা। আমাদের বাংলা প্রাচীন কাল থেকেই তার সৌন্দর্য ও শিল্পের জন্য বিশ্বে পরিচিত ছিল। তাইতো বাংলার রূপের টানে মধ্যযুগে ইবনে বতুতা, হিউয়েন সাং এর মত বিখ্যাত পরিব্রাজক গন এ দেশে পর্যটনে এসেছিলেন।

পর্যটন শিল্পের মূল উপাদানগুলো

পর্যটক শিল্পের অন্যতম উপাদানগুলি হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ঐতিহাসিক স্থাপনা, ধর্মীয় স্থান, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, পৌরাণিক ইতিকথা ইত্যাদি যার পর্যটকদের আকর্ষণ করার ক্ষমতা আছে। এছাড়াও উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা , আবাসন, চিত্তবিনোদনের ন্যূনতম উপকরণ এর সমষ্টি এবং ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণেও অনেক মানুষ তীর্থস্থানে ভ্রমণ করেন। এইসকল ভ্রমণকে কেন্দ্র করেও পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠে।

ভ্রমন সম্পর্কে জেমি লিন বলেছেন, 

 “চাকরি আপনার পকেট ভরে কিন্তু ভ্রমণ আপনার আত্মা পূর্ণ করে”

 বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের রূপ

কবির কলমে বাংলার রুপ,

এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি 

সকল দেশের রানী সেজে আমার জন্মভূমি! 

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশ নানা সময়ে নানান রূপের দেখা মিলে। দেশি বিদেশী ভ্রমণপ্রিয় মানুষদের আকর্ষিত করার জন্য যেসকল পর্যটন আকর্ষণ রয়েছে: 

ক) প্রাকৃতিক পর্যটন: পর্যটকদের প্রকৃতির মায়ার জালে অবোধ করতে বাংলার ভূমিজুড়ে রয়েছে শতশত রূপের ফাঁদ।  সমুদ্রের বুকে সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয় দেখার জন্য কুয়াকাটা, সমুদ্রের বিশালতায় হারিয়ে যেতে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, সিলেটের পাহাড়ের ভাগে সবুজ চায়ের বাগান কিংবা জলাবন রাতারগুল, পার্বত্য চট্টগ্রামের রাঙামাটি জুলন্ত ব্রিজ, কাপ্তান হ্রদ, সাজেক ভ্যালি, সীতাকুণ্ডের পাহাড় ও জংলা, এবং মধুপুরের চিরহরিৎ বন। 

খ) রোমাঞ্চকর পর্যটন: এর জন্য সেরাদের তালিকায় অন্যতম পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঝর্ণা সমূহের ট্রেকিং ও হাইকিং, সুন্দরবনের রোমাঞ্চ, প্রবল দ্বীপ সেনমার্টিং, কাপ্তান হ্রদে মাছ শিকার ও সমুদ্রতীরে ঝাউবনে তাঁবুবাস পর্যটকের রোমাঞ্চিত ও ভ্রমণের অভিজ্ঞতাকে বাড়িয়ে তুলে।  

গ) সাংকৃতিক পর্যটন: বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের পর্যটন কেন্দ্রগুলি মধ্যে অন্যতম ঢাকার লাগবাগ দুর্গ, কুমিল্লার ময়নামতি, পাহাড়পুর বিহার, সোনারগাঁয়ের পানাম নগর, মহাস্থান গড়, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, কেন্দ্রীয় শহীদমিন, জাতীয় জাদুঘর, মেহেরপুর, পুঠিয়া রাজবাড়ী এবং বাঙালি জাতির রূপকার বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার প্রজতকের আনাগোনায় সারাবছর মুখরিত থাকে।  

ঘ) তীর্থ ভ্রমণ: বাংলাদেশে সনাতন ধর্মালম্বী ও বৌদ্ধ ধর্মাবলী মানুষের অনেক তীর্থ রয়েছে যাদের মধ্যে অন্যতম ভ্রমণ গন্তব্য কান্তজীর মসজিদ, চন্দ্রনাথ পাহাড়, দুবলারচরের মহাস্নান, কিংবা রামু বিহার ও বৌদ্ধ বিহার সমূহ।  মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের  অনেক সুফী সাধকের মাজার ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে গোটা বাংলাদেশ জুড়ে যেমন, শাহজালাল মাজার, ষাট গম্বুজ মসজিদ ও বিভিন্ন ওরস শরীফ সমূহ।  প্রতিবছর বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে এইসব স্থানে লক্ষ লক্ষ ধর্মপ্রাণ তীর্থযাত্রীর আগমন ঘটে।  

ঙ) নৌ বিহার: বর্ষাকালে দেশের হাওর বাওয়ার গুলিতে নৌবিহারের জন্য দেশ বিদেশের পর্যটকেরা ভিড় জমান।  হাকালুকি হাওর, নিকলী হাওর ও ছোট বড় অনেক যদি ও বিলে পালতোলা বড় ভাসমান নৌকার দেখা মিলে। 

পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব

সারা পৃথিবীব্যাপী পর্যটন শিল্প এখন একটি সেরা উদীয়মান খাত। ইন্টারনেটের কল্যাণে মুহূর্তে যে কোন পর্যটন কেন্দ্রের ছবি পৃথিবী ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে, এবং উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে, ভ্রমণপ্রিয় মানুষ জন ছুটে চলছেন দেশ বিদেশের নানা প্রান্তে। তাদের সাথে ছুটে চলছে সেসব দেশের অর্থনীতির চাকা। বিশ্ব পর্যটন সংস্থা (UNWTO) এর মতে, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি পর্যটকের দেখা মিলে জারা নিজ দেশ ও অন্যান্য দেশে ভ্রমন করেছেন, এইসময় বিশ্ব পর্যটন শিল্প ১.৭ ট্রিলিয়ন ডলার আয় করেছে যা পৃথিবীর সর্বমোট জিডিপির প্রায় ১০%। নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, গায়ানা সহ অনেক দেশের প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন খাত শিল্প। 

পর্যটন শিল্পের গুরুত্ব সমূহঃ

  • ১. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও টাকার হাতবদলের সুবিধা তৈরী করে, পর্যটন শিল্প একটি দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সরাসরি ভূমিকা পালন করে।
  • ২. কর্মসংস্থান: পর্যটন পরিবহন, আবাসন, খাদ্য, পানীয়, এবং খুচরা কুটির শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
  • ৩. অবকাঠামো উন্নয়ন: পর্যটন বিনিয়োগ ফলে নতুন অবকাঠামো, যেমন রাস্তা, বিমানবন্দর এবং হোটেল ইত্যাদি স্থায়ী ও টেকসই অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়।
  • ৪. সাংস্কৃতিক বিনিময়: পর্যটক এবং স্থানীয়দের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় হয়, যা বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে মেলবন্ধনের দুয়ার খুলে।
  • ৫. দারিদ্র্য বিমোচন: পর্যটন শিল্প গ্রামীণ এবং অনুন্নত অঞ্চলের মানুষের জন্য চাকরি এবং আয়ের সুযোগ প্রদান করে দারিদ্র্য বিমোচনে সহায়তা করে।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের অবদান 

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  পর্যটন শিল্প দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। পর্যটকদের ভ্রমণ-সংক্রান্ত ব্যয় স্থানীয় অর্থনীতিতে অর্থের লেনদেন বাড়িয়ে দে ফলে দেশের জিডিপি বৃদ্ধি পায়। ২০২২ সালে বাংলাদেশের জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান ছিল ৩.০২ শতাংশ। পর্যটন শিল্প ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। পর্যটন খাতে সরাসরি ও পরোক্ষভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। 

বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে পর্যটন শিল্পের অবদান 

বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমণ-সংক্রান্ত কর ও বিভিন্ন ব্যয় থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়। এটি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়তা করছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে পর্যটন খাত থেকে মোট ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হয়।

আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়নে পর্যটন শিল্পের অবদান

পর্যটন শিল্প দেশের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নয়নে সহায়তা করে। পর্যটকদের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তুলে ধরা সম্ভব। এতে দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। ফলে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগের পরিমান বাড়ছে। 

স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার প্রচারণায় অবদান

পর্যটন শিল্প বাংলাদেশের স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। পর্যটকদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরা সম্ভব হয়েছে। এতে করে আমাদের বাঙ্গালি জাতির প্রাচীন ইতিহাস বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে যাচ্ছে। দেশি পর্যটক ও বিশেষত শিশুরা তাদের দেশের ইতিহাস জেনে ঐতিহ্যে দেখে গর্বিত হচ্ছে। 

বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা 

পৃথিবীর অন্যতম সুন্দর সবুজ শ্যামলা বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য দেশি বিদেশী ভ্রমণ প্রিয় মানুষের কাছে অনেক জনপ্রিয় গন্তব্য।  

তাই, তো কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, 

 এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে সবচেয়ে সুন্দর করুণ:

সেখানে সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল

আমাদের আছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, বৃহত্তমন ম্যানগ্রোভ বন, বিস্তীর্ণ সবুজ দিগন্ত, পাহাড় – নদী – ঝর্ণা, দেশের আনাচে কানাচে প্রাচীন পুরাকৃতি ও অতিজ্জবাহী স্থাপনা এবং এর সাথে যুক্ত হয়েছে অনেগুলি মেগা প্রকল্প পদ্দা সেতু, মেট্রোরেল, ও বঙ্গবন্ধু টানেল।  এইসবের সমন্বয়ে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।  এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতিবছর প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট লক্ষাধিক মানুষ দেশের পর্যটন কেন্দ্র গুলোতে ভ্রমণ করেন। এই সকল পর্যটকদের বেশিরভাগ মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সচ্ছলতা কারণে মানুষের মাঝে ভ্রমণ প্রবণতা বেড়েই যাচ্ছে। জা আমাদের অর্থনীতিকে আরও সচল করছে।  পর্যটন শিল্পের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে পরিবহন, আবাসন, হোটেল, রেস্তোরা, পোশাক ও হাতে তৈরি বিভিন্ন শখের জিনিসের শিল্প।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে করণীয় 

বিশ্বব্যাপী পর্যটন শিল্প দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, পর্যটনে অপার সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা তার কিয়দংশ সুবিধা ভোগ করতে পারছি। পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য সর্বপ্রথম আমাদের 

প্রথমত, 

দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করতে হবে। কারণ, ভ্রমণে বেশিরভাগ সময় রাস্তায় জ্যাম জটে কাটালে পর্যটকরা পরবর্তীতে ভ্রমণে নিরুৎসাহিত হন। এছাড়াও দেশের অনেক দুর্গম ও দূরবর্তী অঞ্চলে অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে। ভালো যাতায়াত ব্যাবস্থা না থাকায় পর্যটকেরা বঞ্চিত হন সৌন্দর্য থেকে আর স্থানীয় লোকজন আয় থেকে। 

দ্বিতীয়ত

ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা গুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে হোটেল মোটেল নেই সেখানে সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে করতে হবে। ভ্রমনকালীন সময় পর্যটকরা যেন সুবিধাভোগী মানুষের পাল্লায় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। 

তৃতীয়ত,

 বিদেশী পর্যটকদের ভ্রমন কর কমাতে হবে। এবং বিভিন্ন দেশের এম্বসির মাধ্যমে, বিজ্ঞাপন দিয়ে বা কান্ট্রি ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর নিয়োগ দিয়ে দেশের সৌন্দর্য প্রচার করতে হবে। 

চতুর্থত,

বিভিন্ন বৈশ্বিক খেলাধুলার ইভেন্ট যেমন, বিশ্বকাপ ক্রিকেট, বিশ্বকাপ ফুটবল, অলিম্পিক, সার্ক গেম বা এশিয়ান গেম আয়োজন করে বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে হবে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশে আমাদের করণীয়

কবি দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের কবিতায় এদেশের প্রকৃতির আপন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে, 

ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, 

তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা

এই সুন্দর দেশকে সুন্দর রাখা আমাদের দায়িত্ব, সরকারের পাশাপাশি নাগরিক হিসেবে আমারও দেশের পর্যটন শিল্পের বিকাশে কাজ করতে পারি। আমরা যখন কোন পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে যাব তখন যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ ও সৌন্দর্য নষ্ট করব না।   আর আমাদের বাসার আশেপাশে কোন পর্যটন কেন্দ্রে থাকলে তার প্রতি যত্নবান হব, যেমন পাহাড় কাটব না, বন উজাড় করব না, নদী দখল ও দূষণ করবো না। পর্যটক হিসাবে ঘুরতে গেলে স্থানীয় মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে আর আমাদের এলাকায় পর্যটক এলে তাদের অতিথির মত খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে আমাদের সোনার বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প আরও সমৃদ্ধ হবে।

পর্যটন শিল্পের বিকাশের অন্তরায় 

ওপর সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যে সকল কারণগুলির জন্য আমাদের পর্যটন শিল্পের বিকাশ হচ্ছে না, তাদের মধ্যে অন্যতম হল: 

১. দুর্বল অবকাঠামো: ভ্রমনের সুবিধা নিশ্চিতের জন্য পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে যোগাযোগ, আবাসন ও অন্নান্য অবকাঠামোর অভাব রয়েছে।  

২. অনভিজ্ঞ সেবাকর্মী: ভ্রমণের সহযোগিতাকারী গাইড, বেয়ারা, সেবাকর্মী রা এই খাতের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত ও দক্ষ নয়।  

৩. প্রচারের অভাব: দেশে ও বিদেশের পর্যটকদের কাছে বেশিরভাগ পর্যটন কেন্দ্রগুলির খবর পৌঁছানো হয়নি বা হলেও ভালোভাবে জানানো হয়নি।  

৪. নিরাপত্তা: পর্যটকদের ভ্রমণের নিরাপত্তা যথেষ্ট প্রশ্নবিদ্ধ ও টুরিস্ট পুলিশের পেশাগত দক্ষতা ও লোকবলের অভাব রয়েছে।  

৫. অপর্যাপ্ত বিনিয়োগ: আধুনিক বিষের মতো আমাদের পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করা হয়নি, তাই দেশি বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে পারে না। 

৬. রাজনৈতিক অস্থিরতাঃ হরতাল অবরোধে যোগাযোগ বন্ধ থাকে, মানুষ বাইরে যেতে ভয় পায়, এবং বিদেশী পর্যটকগণ ভ্রমনে নিরুৎসাহিত হন। 

পর্যটন শিল্পের ভবিষ্যৎ 

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বাংলাদেশে বিদেশী পর্যটকে আগমন ২০১৭ সালে ২.৫৯ লাখ থেকে ২০১৯ সালে ৬.২১ লাখে পৌঁছে। তারপর করোনার সময় কিছুটা নিম্নগামী হলেও আবার বিদেশী পর্যটকদের আগমনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।  পর্যটন খাত নতুন নতুন কর্মসংস্থানও তৈরি করছে, সরকার আশা করছে ২০৩০ সালের মধ্যে পর্যটন খাত ১০% নতুন কর্মসংস্থান তৈরী করবে। ২০২১ সালে সরকার পাঁচ বছরের পর্যটন মাস্টার প্ল্যান চালু করেছে, যার লক্ষ্য ২০২৫ সালে বিদেশি পর্যটক আগমনের সংখ্যা ১০ লাখে এবং ২০৩০ সালে ২০ লাখে উন্নীত করা।

বাংলাদেশের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রসমূহ 

আমাদের দেশের জনপ্রিয় সম্ভাবনাময় পর্যটন কেন্দ্রসমূহের দিকে তাকানো যাক, কেননা এই দেশের রুপে বারেবারেই বিহমিত হয়েছেন কবি সাহিত্যিকেরা। তাইতো বিখ্যাত কবি, জীবনানন্দ দাশ লিখেছেন, 

বাংলার মুখ দেখিয়াছি, 

তাই আমি পৃথিবীর রূপ

 খুঁজিতে যাই না আর! 

এই বাংলার রুপের লিলাভুমিতে যেসকল পর্যটন কেন্দ্রে সারাবছর ভ্রমনপ্রিয়সি দেশি বেদেশি পর্যটকদের আনাগোনা থাকেঃ 

সুন্দরবনঃ 

বাংলাদেশের উপকুলীয় অঞ্চলে ৬ হাজার বর্গকিলোমিটারে অধিক জায়গা জুড়ে সুন্দরবন অবস্থিত। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। সুন্দরবনে ২৮ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ গাছ রয়েছে, যার মধ্যে সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া, কেওড়া, লবণ, মহানিম, হিজল, ঝাউ, গোলপাতা, বেত ইত্যাদি। এই গাছগুলি জোয়ার-ভাটার পানির মধ্যে বেঁচে থাকতে সক্ষম। সুন্দরবন একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্যপ্রাণী আবাসস্থল। এটি বিশ্বের বৃহত্তম বাঘের আবাসস্থল এবং এখানে ১০০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩০০ প্রজাতির পাখি, ১০০ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ২৫০ প্রজাতির মাছ রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, চিতাবাঘ, কুমির, কিং কোবরা, হাঙর, বানর, কচ্ছপ, সাপ, পাখি ইত্যাদি। সুন্দরবন বাংলাদেশের পরিবেশ এবং অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করে। রোমাঞ্চপ্রিয় পর্যটকগণ নৌযানে করে সুন্দরবনের ছোটোবড়ো খালে ভ্রমণ করেন।  ২০২২ সালে, সুন্দরবন ভ্রমণ করেছেন প্রায় ১০ লাখ পর্যটক যার  ১০% পর্যটক ছিলেন বিদেশী।

সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রসমূহ

১৯১৯ সালে সিলেট ভ্রমন করেন কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর, সিলেটের রুপে বিহমিত হয়ে তিনি লিখেনঃ 

 মমতাবিহীন কালস্রোতে

বাঙলার রাষ্ট্রসীমা হতে

নির্বাসিতা তুমি

সুন্দরী শ্রীভূমি।

চায়ের দেশ সিলেট অপুরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি। রাতারগুল ছাড়াও এখানে অনেগুলি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র আছে।

রাতারগুলঃ  

সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত রাতারগুল একটি বিশাল জলাবন। বনটি প্রায় ১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এটি বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। বর্ষাকালে বনের প্রায় পুরোটা পানিতে নিমজ্জিত হয়, তখন পর্যটকেরা নৌকায় করে বনের মাঝে ঘুরে আসতে পারেন। এই বনে আছে কদম, হিজল, অর্জুন, ছাতিম প্রভিতি গাছ এবং বনের মাঝে ভ্রমণের সময় বানর, বেজি, গুইসাপ, সাদাবক, মাছরাঙ্গা, বনবিড়াল সহ প্রভিতি প্রাণীর দেখা মিলে। পানিতে নিমজ্জিত গাছের মাঝে নৌকাভ্রমণের রোমাঞ্চএর  টানে প্রতিবছর এখানে প্রচুর দেশি-বিদেশী পর্যটক আসেন।  

সিলেটের অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে রয়েছে:

 

ক) বিছনাকান্দি: বিছানাকান্দি একটি ছোট গ্রাম যা তার নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত। মেঘালয়ের পাহাড় থেকে ছোট বড় পাথরের উপর দিয়ে ছুটে আসা স্বচ্ছ পানির স্রোতধারা এর সৌন্দর্যেকে আরও অতুনীয় করে তোলে।

খ) জাফলং: সিলেট বিভাগের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। এটি পিয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত পাহাড়, পাথর এবং ঝর্ণা দ্বারা বেষ্টিত। জাফলং জিরো পয়েন্ট থেকে পর্যটকেরা ওপারের ভারতের ডাউকি সেতু দেখতে পারেন। পাশেই রয়েছে  একটি ছোট কিন্তু মনোরম ঝর্ণা জাফলং ঝর্ণা। জাফলংয়ের চা বাগানেও অনেকে প্রকৃতি প্রেমী পর্যটকের দেখা মিলে।  

গ) মালনীছড়া চা বাগান: সিলেট জেলায় অবস্থিত এটি উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন চা বাগান। মালনীছড়া চা বাগান ১৮৫৪ সালে লর্ড হার্ডসন ১৫০০ একর জায়গার উপর এটি প্রতিষ্ঠা করেন। মালনীছড়া চা বাগান ভ্রমণের জন্য সেরা সময় হল শুষ্ক মৌসুম (অক্টোবর থেকে মার্চ)। এই সময়ে আবহাওয়া হালকা এবং মনোরম থাকে। তবে, বর্ষাকালও মালনীছড়া চা বাগান ভ্রমণের জন্য ভালো সময়, থখন চা গাছের সবুজ রঙ আরও ঘন এবং উজ্জ্বল হয়।

ঘ) ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর: পাহাড়ি নদী, সাদা পাথর আর ভারতের মেঘলায় রাজ্যের সীমান্ত পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখতে শত শত দেশি বিদেশি পর্যটকে ছুতে আসেন এখানে।  এখানে বর্ষাকালে নৌকায় করে পাহাড়ি স্বচ্ছ ধলাই নদীতে ভ্রমণ করা যায়। 

বাংলাদেশের সমুদ্র সৈকতঃ

কক্সবাজার বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন স্থান । এটি লম্বায় ১২০ কিলোমিটার যা পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত তার সাদা বালি, নীল জল এবং সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য জনপ্রিয়। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে প্রতি বছর হাজার হাজার দেশি বিদেশী পর্যটক ভ্রমনে আসেন। এছাড়াও পর্যটকেরা চট্রগ্রামের পতেজ্ঞা, কক্সবাজারের ইনানী, পটুয়াখালীর কুয়াকাটা, সুন্দরবনের কটকা সমুদ্রসৈকতে ভ্রমণে যান। তাই তো জাতীয় কবি বলেছেন, 

সাগর আমায় ডাক দিয়েছে মন-নদী তাই ছুটছে ওই। 

পাহাড় ভেঙে মাঠ ভাসিয়ে বন ডুবিয়ে তাই তো বই॥

প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনঃ 

সেন্ট মার্টিন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত একমাত্র প্রবাল দ্বীপ, যা দেশের সর্ব দক্ষিণ সীমারেখা। এই দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটি একটি প্রবাল প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত।  সেন্ট মার্টিন মনোরম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন স্থানে পরিণত হয়েছে। 

পার্বত্য অঞ্চল

বিখ্যাত দার্শনিক জন লুব্বক বলেছেন, 

আকাশ, পৃথিবী, গাছ, পাহাড় হলো সবচেয়ে বড় শিক্ষক, তারা বইয়ের বাইরেও জীবন সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দিয়ে থাকে।  

জ্ঞান অর্জনের জন্য ভ্রমন করতে পারেন, রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। পযটকেরা পাহাড়ের চূড়ায় মেঘের ছোয়ার আনন্দ ও প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারার কলতানে বিষ্মিত ও বিহমিত হন।  রাঙামাটির কাপ্তাই লেকে নৌকা ভ্রমণ, ঝুলন্ত সেতু, নিবিড় পাহাড়ের বোনরাজির মায়া ও পাহাড়ি জনজাতির সরল আদিম জীবন পর্যটকদের ভ্রমণ অভিজ্ঞতাকে পরিপূর্ণ করে।  এছাড়া খাগড়াছড়ি জেলার আলুটিলা পাহাড়, রিসাং ঝর্ণা, সাজেক ভ্যালি, মায়াবিনী লেক প্রভিতি পর্যটন কেন্দ্রের রূপের টানে ছুতে আসেন দেশি বিদেশি ভ্রমণপ্রিয় মানুষেরা।    

নিকলী হাওর 

নজরুলের গানে আমরা গ্রাম বাংলার আরেক রূপ দেখতে পাই :

একি অপরূপ রূপে মা তোমায় হেরিনু পল্লীজননী

ফুলে ও ফসলে কাদা-মাটি-জলে ঝলমল করে লাবণী 

নিকলী হাওর কিশোরগঞ্জ জেলার একটি বিশাল জলাভূমি। এটি কিশোরগঞ্জ সদর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢল নেমে আসলে নিকলী হাওরের শত শত বিল ঝিল যদি একসাথে মিলিত হয়।  তখন নৌকায় করে হাওর ভ্রমণ করতে দারাদেশের মানুষেরা ছুতে আসেন। নৌকা ভ্রমণের পাশাপাশি মানুষ হাওরের নতুন পানির দেশি মাছের স্বাদ নেয়, বর্ষায় ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে থাকলেও, পযটক আসার কারণে কৃষকেরা বাড়তি যায় করতে পারেন।  

বাংলাদেশের পুরাকীর্তিক পর্যটন স্থান 

মাঠের সবুজ থেকে সূর্যের লাল 

বাংলাদেশের বুক এতোই বিশাল 

বাংলাদেশের বিশালতার যেন শেষ নেই, আমাদের এই দেশের ইতিহাস ঐতিহ্য অনেক সমৃদ্ধ, তাইতো দেশের আনাচে কানাচে দেখা মিলে অনেক পুরাকৃতির।  এদের মধ্যে অন্যতম,  বৌদ্ধবিহার সমুহ। পুণ্ড্রবর্ধন বৌদ্ধবিহারটি বগুড়ার মহাস্থানগড়ে অবস্থিত। এটি ৭ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল। আরেক বিখ্যাত বিহার হল,  সোমপুর মহাবিহার এটি নওগাঁ জেলার পাহাড়পুরে অবস্থিত। এটি ৮ম শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছিল।  প্রাচীন কালের দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির, পুরান ঢাকার লালবাগের কেল্লা, বুড়িগংগার তীরবর্তী আহসান মঞ্জিল, সোনারগাঁয়ের পানাম নগর, বাগেরহাটের ষাটগম্বুয মসজিদ এগুলি দেশের অন্যতম প্রাচীর পুরাকৃতিক নির্দর্শন এবং প্রাণপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।  

ঐতিহাসিক স্থাপনা পর্যটন স্থান  

বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে জড়িয়ে আছে আরেক শ্রেণীর স্থাপত্য যেগুলির ফলকে ফলকে লেখা আছে আমাদের মহান সংগ্রামের ইতিহাস।  এদের মধ্যে অন্যতম হলো ঢাকা মেডিকেল প্রঙ্গনে ৫২’র ভাষা আন্দোলনের শহীদের উদ্দেশ্য নির্মিত কেন্দ্রীয় শাহিদ মিনার, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্দ্বে লাখো শহীদের স্মৃতির স্মরণে সাভারে নির্মিত স্মৃতিসৌধ।  আবার ঢাকার শাহবাগে আছে জাতীয় জাদুঘর, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বাঙালি জাতির রূপকার বঙ্গ বন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধি সৌধ, মিরপুরে মহান মুক্তিযুদ্ধের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি ও তাদের দোসরদের  নিহত  বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, এবং ঢাকার সোয়ার্দী উদ্দানে স্থাপিত স্বাধীনতা জাদুঘর ইতিহাসপ্রেমী পর্যটকদের আকৃষ্ট করে।  

মেগা প্রকল্প পর্যটন স্থান  

 সাবাস, বাংলাদেশ, 

এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়ঃ 

জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার

 তবু মাথা নোয়াবার নয়।

সুকান্ত ভট্টাচার্যের এই কবিতারই বাস্তব প্রতিফলন আমাদের এই মেগা প্রকল্পগুলো। পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে অবকাঠামোগত ভাবেও বাংলাদেশ অনেক  মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে।  যেগুলি যোগাযোগের পাশাপাশি পর্যটন গন্তব্যে পরিনিত হয়েছে।  এদের মধ্যে অন্যতম পদ্মা সেতু। এটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সাথে দেশের অন্যান্য অংশের সংযোগ স্থাপন করেছে। ২০২২ সালের ২৫ জুন সেতুটি উদ্বোধন করা হয়। মাওয়ার ইলিশ ও পদ্দা সেতু দেখার জন্য অনেকে ছুটির দিনে এখানে ভিড় জমায়। ঢাকা নগরবাসীর যাতায়তের জন্য আরেক মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল চালু হয়েছে।  গণপরিবহন হলেও নগরের মানুষের উপর থেকে শহর দেখার নতুন মাত্রা দিয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প।  এছাড়াও মাওয়া এক্সপ্রেস ওয়ে, মেরিন ড্রাইভ রোড,  রুপুর পারমাণবিক কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল এর মতো মেগা প্রকল্পগুলি পর্যটকদের আকর্ষিত করছে। 

উপসংহার 

বাংলাদেশে প্রবেশের হাজার দুয়ার খোলা রয়েছে কিন্তু বেরুবার একটিও নেই।

কেননা, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি চিরসবুজ বাংলার রূপের বিশালতা ও ব্যাপকতা, পুরাকীর্তি, ঐতিহাসিক স্থাপনা, সমৃদ্ধ ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি দেশী বিদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করার জন্যে যথেষ্ঠ। তবে পর্যটনের সম্ভাবনাকে সত্যি করতে হলে আমাদের পর্যটন বান্ধব নীতিমালা ও এর সঠিক প্রয়োগ দরকার। সরকার পর্যটকদের ভ্রমণের সুবিধা বৃদ্ধিসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে অপরদিকে পর্যটন কেন্দ্রের আশেপাশের অধিবাসীরা পর্যটকদের সহযোগিতা করবে। ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশের অতিথি পরায়ণতা, মানবিক সংস্কৃতি, রূপের বর্ণনা, ইতিহাস ঐতিহ্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এবং দেশের অর্থনীতির চাকা গতিশীল হবে।

 

Scroll to Top