ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কি ?
ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে আমরা বলতে পারি কম্পিউটার তৈরিকৃত এমন একটি কৃত্রিম পরিবেশ যেখানে ব্যবহারকারীর আশেপাশের পরিবেশকে বাস্তবে মতোই লাগে। আমরা অনেকেই বিভিন্ন অ্যানিমেশন মুভি বা থ্রিডিমের গেম এর সংস্পর্শে গেলে নিজেকে নিয়ে সেখানে ভাবতে পছন্দ করি এবং বাস্তবে কখনোই বন্যপ্রাণী বা মহাকাশে উড়ে বেড়ানো হয়তো সম্ভব না। কিন্তু এই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির জন্য আপনার অনুভুতি বাস্তবের মতই হবে। প্রযুক্তিবিদরা এই প্রযুক্তির আরো বেশি উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কাকে বলে ?
Virtual অর্থ অপার্থিব আর Reality হলো বাস্তবতা। Virtual Reality মানে হল কম্পিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়ার দিয়ে তৈরি কৃত্রিম পরিবে। যার কোন অস্তিত্ব বাস্তবে নেই। অর্থাৎ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হল কৃত্রিম পরিবেশ। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ১৯৮০ দশকের মধ্যভাগে সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয়। এর আগে টুইন মিরর হিসেবে কাজ করা হতো।
একসময় Jaron lainer একে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি নামকরণ করে এবং পরে আরো অনেকের হাত ধরে এটি বিকাশিত হয়। একজন মানুষ যেভাবে চিন্তা-ভাবনা করে কৃত্রিম উপায়ে কোন যন্ত্র বা কম্পিউটার সেরূপ বুদ্ধিমত্তা অর্জনের রূপদান করাকে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বলে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জনক হলেন অ্যালান টুরিং। ১৯৫০ সালে তার উদ্ভাবিত টুরিং টেস্ট এর মাধ্যমে কোন যন্ত্রের চিন্তা করার ক্ষমতা আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির উপাদান সমূহ ?
Effector
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাথেই সংযোগ সাধনে ইফেক্টর হিসেবে হাতের ডেটা গ্লোভ, বডি স্যুট ও মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়।
Reality Simulation
রিয়েলিটি সিম্যুলেটর হলো ইফেক্টরলে সংবেদনশীল তথ্য দেয়া। বিভিন্ন সেন্সর গুলো রিয়েলিটি সিম্যুলেটর হিসেবে কাজ করে।
Application
সিম্যুলেশন সফটওয়্যার গুলো অ্যাপ্লিকেশন হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
Geometry
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে তথ্য দিয়ে থাকে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ডিভাইস সমূহ
- হাতের ডেটা গ্লোভ
- বডি স্যুট
- মাথায় হেড মাউন্টেড ডিসপ্লে
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি কত ধরনের
সাধারণত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি পাঁচ ধরনে। যেমন –
Fully – Immersive
প্রকৃতি ও পরিবেশের অকল্পনীয় জগতের এই অনুভূতি পেতে Artificial environment তৈরি করা হয়। ফলে আপনি আপনার ইচ্ছাকৃত স্বপ্ন পূরণ করতে পারবেন। যেমন – সমুদ্রের তলদেশে তিমি মাছের দেখা পাওয়া ও জলঙ্গে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় টারজানের মতো উড়ে বেড়ানো সবই পরিপূর্ণভাবে অনুভব করতে পারবেন।
Semi – Immersive
Fully immersive ও semi immersive এর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে Semi immersive। কম্পিউটারের মাধ্যমে ও মাউসের সাহায্যে Character এর বৈশিষ্ট্য আপনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন ।
Non – Immersive
সফটওয়্যার এর মাধ্যমে কৃত্রিম পরিবেশ তৈরি করা হয়।আপনারা অ্যানিমেশন বা গেমস খেলার মাধ্যমে হিসেবে নন ইমার্সিভ ব্যবহার করা যেতে পারে ।
Augmented Reality
আপনারা হয়তো দেখতে পারেন কোন সিরিজে কিছু কার্টুন ক্যারেক্টার থাকে যারা আপনাকে সেই বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারে। বর্তমানে টিভিতে এর ব্যবহার বেশি দেখা যায় অথবা আপনি কিছু প্রোডাক্ট কিনতে চাচ্ছেন কিন্তু তা আগেই সেটার ভিউ নিতে চাচ্ছেন সেই সময়ে Augmented reality এর ব্যবহার করা যেতে পারে।
Collaborative VR
উন্নত মানের প্রযুক্তি দিয়ে এই পরিবেশ তৈরি করা হয়ে থাকে। সাধারণত কয়েকজন মিলে এই ভার্চুয়াল প্রজেক্টে আসতে পারেন pubg গেম এখন প্রচলিত গেমের মধ্যে একটি যা coaboratuve VR এর সাহায্যে চালিত হচ্ছে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ব্যবহার
- মেডিকেল শাখায় জটিল সার্জারি বা রোগ নির্ণয়ে বর্তমানে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এক বিশাল জায়গা দখল করে আছে।
- বিমান বাহিনীর যুদ্ধ প্রশিক্ষণ, নৌ-বাহিনী ডুবোজাহাজ পরিচালনা করা ও তাদের নিজে প্রস্তুত করার উপায় এই ভার্চুয়াল পরিবেশের মাধ্যমে করা হচ্ছে।
- খেলাধুলা ও বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
- শিক্ষকরা তাদের পাঠদান ভার্চুয়াল শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করেন প্রজেক্টর এর সাহায্যে। এতে তারা প্র্যাকটিকেল উপায়ে সব শিখতে পারছে।
- প্রকৌশল ও গবেষণার কাজে শিমুলেশন এর মাধ্যমে কম্পিউটারে থ্রিডি ইমেজ ব্যবহার করে কাজ করা হচ্ছে।
- গ্রাফিক্স তৈরিতে বা বিভিন্ন গেম সফটওয়্যার এর ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যাপক ব্যবহার হয। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অবাস্তব পরিবেশে এক প্রকার ডাইমেনশন এনে দিতে পারে।
- প্রোডাকশনের গুণগত মান যাচাই-বাছাই করার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয়।
- সামরিক বাহিনীতে যুদ্ধ পরিচালনা অস্ত্র চালনা, আধুনিক যুদ্ধাস্ত্রের ব্যবহার, যুদ্ধজাহাজ পরিচালনা, বিভিন্ন যুদ্ধ সামগ্রী ব্যবহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে উন্নত প্রশিক্ষণ প্রদান।
- সিনেমার ঝুঁকিপূর্ণ দৃশ্য ধারণে কিংবা বিভিন্ন ত্রিমাত্রিক অ্যানিমেশন সিনেমা তৈরি।
- স্থাপত্য ও নগর পরিকল্পনায় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির প্রয়োগে নকশা প্রণয়ন কিংবা বিভিন্ন নগর উন্নয়নের রূপরেখার কাল্পনিক রূপদান।
- কোন পণ্য উৎপাদনের পূর্বে পণ্যের মান ও গুণাগুণ পরীক্ষার জন্য ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে তা জনসম্মুখে উপস্থাপন।
- ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা এবং মোটর ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ।
- ফ্লাইট সিমুলেশন এর মাধ্যমে বিমান পরিচালনা প্রশিক্ষণ।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির ক্ষতিকারক প্রভাব
ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সাহায্যে প্রযুক্তিতে অনেক উন্নতি হয়েছে তেমনি শিশুদের উপর বাজে প্রভাব ও পড়েছে।
- বাচ্চারা গেমসের উপর দিন দিন আসক্ত হয়ে পড়ছে তাদের চোখের সমস্যা দেখা দিচ্ছে এবং চোখের কর্নিয়াও নষ্ট হয়ে যেতে। Blue whale নামে এক ধরনের গেম সফটওয়্যার মানুষের মাঝে ভয়েস সৃষ্টি করেছিল। অনেক ছেলেমেয়ে এই গেমসের নেশায় পড়ে জীবনও দিয়েছে পর্যন্ত।
- কল্পনা জগতের প্রতি মানুষ বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে।
- সমাজে মনুষত্বহীনতার মত ব্যাপারগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক Interaction এর অভাবে সামাজিক অনিশ্চয়তা বিরাজ করবে।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি আপনাদের মাঝে যে উদ্বেগ তৈরি করেছে তা প্রযুক্তিতে ডিজিটাল বৈষম্য তৈরি করেছে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি অনেক ব্যয়বহুল বিধায় এর চাহিদা অনুযায়ী ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না।ডিজিটাল এই জগতে আরো অনেক ইনভেনশনস প্রযুক্তির চাহিদা বাড়িয়ে তুলছে। কিন্তু আপনাদের ভুলের গেলে চলবে না এটা নিতান্তই কাল্পনিক অস্তিত্। তাই ভার্চুয়াল রিয়েলিটির পরিমিত ব্যবহার করুন।
প্রাত্যহিক জীবনে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এর প্রভাব
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি একজন ব্যক্তিকে কোনরকম শারীরিক ঝুঁকি বা বিপদ ছাড়াই বাস্তব অভিজ্ঞতা প্রদান করে থাকে। যার ফলে কেউ কোনো ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না গিয়েও সে স্থানের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পার। যার মাধ্যমে বিভিন্ন পেশাগত ক্ষেত্রে দক্ষতা অর্জনের জন্য পেশাজীবীদের বাস্তবসম্মত ও নিরাপদ প্রশিক্ষণে এ প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে চিকিৎসা গাড়ি বা বিমান চালনা, সামরিক যুদ্ধ, প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রগুলোতে বিভিন্ন শারীরিক কোন ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে। এসব ক্ষেত্রগুলোতে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে সেটি সম্পূর্ণ নিরাপদ করে তোলা সম্ভব। যেমন বাস্তবে বিমান চালনা বা গাড়ি চালনায় দুর্ঘটনার শঙ্কা থাকে। তবে যদি এসব ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ব্যবহার করা হয় তাহলে এ পরিবেশে কোন দুর্ঘটনা হওয়ার আশঙ্কাই নেই কেননা এখানে সম্পূর্ণ কৃত্রিম পরিবেশ ব্যবহার করে বাস্তবের ন্যায় অবিকল দৃশ্য এবং মডেল তৈরি করা হয়েছে।
একজন পাইলট বাস্তবের মতো সেখানে বিমান উড়ানো প্রশিক্ষণ নিতে পারে। এছাড়া একজন গাড়িচালক এখনে কোন দুর্ঘটনা ছাড়াই সম্পূর্ণভাবে গাড়ি চালানো শিখতে পারে।
মহাশূন্য অভিযানের প্রতিটি পর্ব রয়েছে নানা ধরনের ঝুঁকি। একজন নভোচারীর মহাকাশে যাবার পূর্বে নব যান পরিচালনা সম্পর্কিত যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে প্রশিক্ষণের বাস্তব জ্ঞান সম্পর্কে জানা দরকার।
আর এই নব যান পরিচালনার প্রশিক্ষণের জন্য যাবতীয় খুঁটিনাটি বিষয়গুলো শেখানো হয় ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে। যার মাধ্যমে একজন নতুন নোভোচারী পৃথিবীতে বসেই নভোযান পরিচালনার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারেন। পৃথিবীতে বসে কাল্পনিক পরিবেশে মহাকাশে গবেষণার পরিচালনার বিষয়গুলো এবং মহাশূন্যে খাপ খাওয়ানোর মতো বিষয়গুলো পূর্বে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন নোভোচারীরা।
উপসংহার
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার। ভার্চুয়াল রিয়েলিটির সঙ্গে আমরা কমবেশি প্রায় অনেকেই জড়িত। ভার্চুয়াল রিয়েলিটি হচ্ছে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বাস্তবসম্মত পরিবেশে যেখানে ব্যবহারকারী ও কাল্পনিক জগতকে সিমুলেশন এর মাধ্যমে বাস্তবায়নের শ্রবনুভুতি এবং দৈহিক মানসিক ভাবাবেগ,উত্তেজনা, অনুভূতি ইত্যাদি অর্জন করতে সাহায্য করে।