সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ!
সিলেট জেলা বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর একটি জেলা। এই জেলার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয় ভ্রমন পিপাসু মানুষজন। এই জেলাটি দ্বিতীয় লন্ডন শহর হিসেবে সারা বাংলাদেশে পরিচিত৷ বনজ, খনিজ, মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং এর অপরুপ সৌন্দর্যের জন্য হাজার হাজার পর্যটক ছুটে যান মায়াবী এই শহরে। সাড়ি সাড়ি পাহাড় আর চা বাগানে ঘেরা এই মায়াবী শহর দেখে যে কেউ হয়ে যেতে পারে মনভোলা। এই মায়াবী শহরের অপরুপ দৃশ্যে দিশেহারা পর্যটক বারবার ছুটে আসেন।
সিলেট জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ
সিলেটে অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। তারমধ্যে রাতারগুল জলাবন, জাফলং, ভোলাগঞ্জ, বিছানাকান্দি, হাকালুকি হাওর, লালাখাল, এবং তামাবিল উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও রয়েছে ছোট বড় অসংখ্য চা বাগান এবং হযরত শাহজালাল (র.) এর মাজার।
রাতারগুল জলাবন | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
রাতারগুল জলাবন সিলেটের প্রিয় একটি দর্শনীয় স্থান। এটি রাতারগুল সোয়াম্প ফরেষ্ট (Ratergul Swamp Forest) হিসেবেও পরিচিত। এই ফরেষ্টটি বাংলাদেশের একমাত্র মিঠাপানির বন যার অবস্থান সিলেটের গোয়াইনঘাট নামক স্থানে।
চারিদিকে ঘন সবুজ গাছ, পাখির কলকাকলীতে মুখরিত এই বনে আসলে মনে হবে আফ্রিকার আমাজনে বোধ হয় চলে এসেছি। মুহূর্তের জন্য ভুলে যাবেন বাংলাদেশের কোনো বনে আপনি অবস্থান করবেন। আফ্রিকার আমাজনের মত কিছুটা দেখতে হওয়ার কারনে রাতারগুল বাংলার আমাজন নামে পরিচিত। চিরসবুজ বাংলার এই আ্যমাজন গোয়াইন নদীর তীরে অবস্থিত যেটি আবার চেংগির খালের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এই বন বর্ষা কালে নিজের রুপ পরিবর্তন করে। কারন সারা বছর দশ ফুটের মত পানি থাকলেও ভরা বর্ষায় বিশ থেকে ত্রিশ ফুটের মত পানির উচ্চতা হয়। এরকম বৈচিত্রপূর্ন বৈশিষ্ট্যের কারনে ঘুরতে আসা পর্যটকরা সারাদিন নৌকা ভাড়া করে বনে ঘুরে বেড়ায়৷ গহীন অরন্যের ভেতরে নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে নানা ধরনের পশু পাখির সাক্ষাত করার সৌভাগ্য হয়।
রাতারগুলের পাখিদের মিলনমেলার জন্য বনের ভিতরে ৩.৬ বর্গ কিলোমিটার এর একটি লেক খনন করা হয়। শীতে জলাশয়ের পাখিদের মিলনমেলা দেখার জন্য হাজার পর্যটক ভীর করে আর ফিরে যায় একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে।
রাতারগুল বন প্রাকৃতিক ভাবে অনেক সমৃদ্ধ একটি বন। দেশি বিদেশী প্রায় ত্রিধ প্রজাতির গাছ পাওয়া যায় এই বনে। আরো বেশি সৌন্দর্যমন্ডিত করার জন্য বন বিভাগ দৃষ্টিনন্দন হিজল, বরুন, করচ সহ কিছু পানি বান্ধব গাছ লাগিয়ে দেন। এই বনে প্রাকৃতিক ভাবে কদম, জালিবেত, অর্জুন সহ পানি সহিষ্ণু প্রায় পচিশ প্রজাতির গাছ দেখা যায়।
নামকরন
রাতারগুল নামকরণ হয় মুলত এই বনের বিখ্যাত গাছ মূর্তা বা পটি গাছ থেকে। এই গাছের নামানুসারে রাতারগুল ফরেষ্ট নামকরণ করা হয়।
অবস্থান
রাতারগুল সিলেট শহর থেকে ২৬ কিমি দূরে অবস্থিত গোয়াইনঘাটের ফতেহপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। বনবিভাগের তথ্যানুযায়ী এই বনের আয়তন তিন হাজার ৩২৫ দশমিক ৬১ একর।
রাতারগুল ফরেষ্ট ভ্রমনের উপযুক্ত সময়
রাতারগুল বর্ষাকালে ঘুরতে যাওয়ার উপযুক্ত সময়। বর্ষার পরে সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ঘুরতে যাওয়া যায়। আর যদি আপনি পাখির কলকাকলীতে হারিয়ে যেতে ভালবাসেন তাহলে শীতকালে বেড়িয়ে আসতে পারেন নয়নাভিরাম রাতারগুল ফরেষ্ট থেকে।
জাফলং | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
পাথর শব্দটি আমরা দৈনন্দিন জীবনে নেগেটিভ শব্দ হিসেবে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু সিলেটের জাফলং এমন একটি স্থান যেখানে পাথরের মত শক্ত হৃদয়ের মানুষ গেলেও রঙ বেরঙের পাথর দেখে নিমেষেই গলে যাবে পাথরের মত শক্ত হৃদয়৷ জাফলং এর নজর কারা সৌন্দর্যের জন্য প্রকৃতি কন্যা হিসেবে পরিচিত। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরুপ এই লীলাভূমি খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। কি নেই এখানে। আপনাকে মুগ্ধ করতে বাধ্য করবে পিয়াইন নদীর স্তরে স্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পাথর গুলো।
এখানে আসলে চোখে পরবে সীমান্তের ওপারের ইন্ডিয়ান পাহাড়টিলা, অন্য দিকে চোখ ফেরাতেই আপনাকে মুগ্ধ করবে ডাউকি পাহাড় থেকে প্রবাহমান জলপ্রপাত । ঝুলন্ত ডাউকি ব্রিজ, পিয়াইন নদীর আয়নার মত স্বচ্ছ পানি, পাহাড়ের উচুতে গহীন অরণ্য আলো ছায়ার খেলায় মত্ত হওয়া গহীন অরণ্যে নিমিষেই হারিয়ে ফেলবেন আপনার মন। আপনি যদি প্রকৃতি ভালবাসেন৷ প্রকৃতির প্রেমিক/ প্রেমিকা হয়ে থাকেন তাহলে জাফলং এ বেড়াতে না আসলে জীবনই বৃথা!
জাফলং এর সৌন্দর্য নিতে চাইলে শীত ও বর্ষা দুই মৌসুমে বেড়াতে আসতে পারেন। বর্ষাকালে অনন্য হয়ে ওঠে যখন ঝর্নার পানি গুলো নেমে আসে পাহাড়ের বুক থেকে। বর্ষার পানিতে ধুলোয় ধুসরিত পরিবেশ বৃষ্টিবিলাশ করে হয়ে ওঠে স্বচ্ছ। খাসিয়া পাহাড়ের অঝোর ধারার বৃষ্টির পানিতে পথ হয়ে ওঠে ভয়ংকর সুন্দর। বিপদ সংকুল অথচ অনিন্দনীয় সুন্দর পথ আপনাকে দিবে অন্য রকম এক শিহরন।
অবস্থান
সিলেট শহর থেকে ৬২ কিমি উত্তর পূর্ব দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলায় জাফলং এর অবস্থান। ইতিহাস থেকে জানা যায় যে ১৯৫৪ সালে যখন জমিদারি প্রথা বিলুপ্তি হয় তখন কয়েক বছর জাফলং বিস্তীর্ন অঞ্চল হিসেবে পতিত ছিল। কিছু পাথর ব্যবসায়ী পাথরের সন্ধানে যাওয়া আসা শুরু করলে জাফলং এর সৌন্দর্যে বিমোহিত হয়ে পরেন মানুষ। তারপর থেকেই ধীরে ধীরে পর্যটকদের যাওয়া আসায় পরিচিত হয়ে ওঠে প্রকৃতি কন্যা জাফলং।
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
আচ্ছা আমরা তো কত কিছুই কল্পনা করি৷ আমরা সবাই নিজের অজান্তেই মানসপটে স্বপ্নের একটা জায়গা বানিয়ে নিরালায় বাস করি৷ সেই স্বপ্নের জায়গা একেকজনের একেকরকম হয়৷ কিন্তু আমি যদি সত্যি সত্যি এমন একটা স্বপ্নপূরির সন্ধান দেই যেখানে যতদূর চোখ যায় সাদা সাদা পাথর, পাথরের ফাকে নীল জল, চারিপাশে সবুজে ঘেরা পাহাড়ের আলিংগন আর উপরে নীলাকাশ! এটা মিথ্যে বা কল্পনায় আকা কোনো স্বপ্নপুরী নয়৷ অপরুপ এই স্বর্গ রাজ্যের নাম ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর। এই স্বপ্নপূরী যখন যাবেন আপনার মনে হবে এটা শিল্পীর তুলিতে নিপুন ভাবে আকা একটি ক্যানভাস মাত্র।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরে গেলে চোখে পরবে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সেখান থেকে উচু উচু পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে আসছে ঝর্ণার পানি৷ মুলত এই পানির সাথে নেমে আসে সাদা সাদা পাথর। তারপরে সেই পাথর গুলো ভোলাগঞ্জের জিরো পয়েন্টের বিশাল এলাকা দখল করে তাদের সৌন্দর্য ছড়াতে থাকে।
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরের অবস্থান
ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর সিলেট শহর থেকে ৩৩ কিমি দূরে অবস্থিত। এটি কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ নামক গ্রামে অবস্থিত।
ভোলাগঞ্জ সাদাপাথর কখন যাবেন
ভ্রমন পিয়াসুরা ভোলাগঞ্জ সারা বছর যেতে পারেন। তবে বর্ষা মৌসুমে গেলে এর সৌন্দর্য যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে যায়। নীল পানির মধ্যে সাদা সাদা পাথর গুলো হৃদয় হরনকারী রুপ ধারন করে৷ তবে ভরা বর্ষায় না যাওয়াই ভাল। কারন ওই সময় বেশি পানি থাকার কারনে পাথর ডুবে যায়। তাই বর্ষার একটু আগে বা পরে যাবেন।
বিছানাকান্দি | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
বিছানাকান্দি হচ্ছে একটি পাথরের খনি। ভারতের খাসিয়া প্রবাহ থেকে পানির প্রবাহের সাথে প্রচুর পাথর বয়ে নিয়ে আসে। আর এই পাথরগুলো পিয়াইন নদীর বুকে এসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে। এত এত পাথরের কারনে যখন প্রথম বিছানাকান্দি যাবেন প্রথম দেখায় পাথরের বিছানা ভেবে ভুল করে বসবেন। নদীর আয়নার মত স্বচ্ছ পানি, ছোট বড় নানা আকৃতির রঙ বেরঙের পাথর আর পাহাড় আপনার চোখের সৌন্দর্যের ক্ষুধা মিটিয়ে দিবে।
বিছানাকান্দির অবস্থান
বিছানাকান্দি সিলেট শহর থেকে ২৫ কিমি দূরে গোয়াইনঘাট উপজেলার রুস্তম ইউনিয়নে অবস্থিত।
বিছানাকান্দি কখন যাবেন
বিছানাকান্দির প্রধান আকর্ষণ হলো পানি আর পাথরের মিলনমেলা। তাই বর্ষাকাল হচ্ছে বিছানাকান্দি ঘোরার উপযুক্ত সময়। কিন্তু চেষ্টা করবেন ঘন বর্ষায় না যাওয়ার। কারন এই সময় আশেপাশের সব কিছু পানির নিচে তলিয়ে যায়। তাই বর্ষা শুরু হওয়ার কিছু আগে অথবা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরে বিছানাকান্দি থেকে ঘুরে আসতে পারেন।
হাকালুকি হাওর | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
হাকালুকি হাওর এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তর মিঠা পানির জলাভূমি। এই হাওরটি মোট পাচটি উপজেলা ও এগারটি ইউনিয়ন নিয়ে বিস্তৃত। হাকালুকি হাওর নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে। ত্রিপুরায় ওমর মানিক্য নামে এক রাজা ছিলেন। তার সেনাপতির ভয়ে বড়লেখার কুফি দলপতি হাঙ্গর সিং পানিতে পরিপূর্ণ এক গহীন জঙ্গলে লুকিয়ে ছিল। এই ঘটনার জন্য পরবর্তীতে হাঙ্গরলুকি বা হাকালুকি হয়।
বৃহত্তম এই হাওরের উত্তর পশ্চিমে কুশিয়ারা নদী অবস্থিত। এই হাওরের প্রধান আকর্ষনীয় স্থান হচ্ছে বিল। এখানে ২৩৮ টি বিল রয়েছে যা বর্ষায় বিপুল জলরাশিতে ভরে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। এছাড়া প্রতি বছর শীতকালে প্রায় ২০০ এর বেশি প্রজাতির পাখির মেলা বসে। এগুলোই মুলত পর্যটকদের আকর্ষন এর মুল বিষয়বস্তু।
হাকালুকি হাওরের অবস্থান
হাকালুকি হাওর সিলেট জেলা ও মৌলভীবাজারে অবস্থিত। মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুরী, কুলাউরা, সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও বিরিয়ানিবাজার এলাকায় অবস্থিত।
হাকালুকি হাওর কখন ঘুরতে যাবেন
হাকালুকি হাওর শীত ও বর্ষা যে কোনো মৌসুমে ঘুরে আসতে পারেন। শীতকালে হাকালুকি হাওরে গেলে দেখা মিলবে হাজার হাজার অতিথি পাখির। নাম না জানা এই অতিথি পাখি গুলো দেখলে আপনিও নিমেষেই তাদের মধ্যে নীল আকাশে হারিয়ে ডালা মেলে উড়তে থাকবেন।
তামাবিল | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
তামাবিল গোয়াইনঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী একটি এলাকা। তামাবিলের অপর প্রান্তে অবস্থিত ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডাউকি বাজার। তামাবিল থেকে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য হাজার হাজার দর্শনার্থী পারি জমায়। তামাবিলে গেলে দেখা মেলে ছোট বড় অসংখ্য চা বাগানের৷ চারপাশে সবুজ পাহাড় মাঝে স্বচ্ছ পানির লেক ভ্রমনপিপাসুদের মনে এনে দেয় অন্য রকম এক ভাললাগার অনুভুতি।
তামাবিল সিলেট শহর থেকে ৫৪ কিমি দূরে অবস্থিত গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। তামাবিল ভারতের মেঘালয় রাজ্যের মধ্যে অবস্থিত।
লালাখাল
লালাখাল সিলেট জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার কাছে অবস্থিত। লালাখালে গেলে দেখা মিলে নদীর সবুজ পানি আর দুইপাশের পাহাড় সারি। জৈন্তিয়া হিল মেঘালয় পর্বত শ্রেনির সবচেয়ে পূর্বের অংশ। এর ঠিক নিচেই পাহাড়, বন, চা বাগান সহ নদী ঘেরা একটি গ্রাম হচ্ছে লালাখাল। লালাখালের যে নদী রয়েছে পুরো শীতকালে এর রঙ গাড় সবুজ ধারন করে। অন্যান্য সময়ও বৃষ্টি না হলে গাড় সবুজ রঙের দেখা মেলে। লালা খালে গেলে ইরাবতীর পান্থশালা নামে একটি প্রাচিন স্থাপনা রয়েছে। এছাড়াও লালাখালে গেলে চোখে পরবে ছোটবড় অনেক ঝর্না। পাহাড়, ঝর্না এবং ছোটবড় জানা অজানা গাছ মিলে চমৎকার একটি জায়গা হচ্ছে লালাখাল।
হযরত শাহাজালাল (র) এর মাজার | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
হযরত শাহাজালাল (র.) একজন ইসলাম ধর্ম প্রচারক পীর ছিলেন। সিলেট অঞ্চলে তিনিই সর্ব প্রথম ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন।
কথিত আছে যে, হযরত শাহাজালাল (র.) এর মামা মুর্শিদ সৈয়দ আহমদ হযরত শাহাজালাল (র.) কে আরবের এক মুঠো মাটি দিয়ে বলেন এই মাটির মত মাটি স্বাদে, গন্ধে বর্নে যদি কোথাও খুজে পাও তাহলে সেখানেই বসতি গড়ে ইসলাম প্রচার করবে। পরে হযরত শাহাজালাল (র.) এই দায়িত্ব দেন শিস্য শেখ আলীকে। শেখ আলী অনেক জায়গায় ঘোরার পর সিলেটের মাটির সাথে আরবের মাটির মিল খুজে পান। তাই হযরত শাহাজালাল (র.) তার মামার আদেশ অনুযায়ী সিলেটে বসতি গড়ে তুলেন। বিশেষজ্ঞরা বলে থাকেন যে আরবের মত সিলেটেও তেল ও গ্যাস পাওয়া যায়। তাই আরব এবং সিলেটের মাটির মিল রয়েছে।
হযরত শাহাজালাল (র.) এর মাজারে গেলে যা যা দেখতে পাবেন
গজার মাছ
মাজার চত্বরের উত্তরে একটি পুকুর রয়েছে। এই পুকুরে গজার নামে অসংখ্য মাছ রয়েছে। মাজারে আসা দর্শনার্থীরা মাজারে আসলে গজার মাছের জন্য ছোট ছোট মাছ নিয়ে আসেন। কেউ খেতে চাইলে পুকুরের উত্তর কোন থেকে মাছ কিনতে পারে। নামাজের জন্য এই পুকুরে ওজুর ব্যবস্থাও করা আছে। তবে ২০০৩ সালের দিকে কোনো দুষ্ট চক্র পুকুরে বিষ প্রয়োগে মাছ গুলো মেরে ফেলে। যার কারনে পুকুরে অনেক দিন কোনো মাছ ছিলনা। অনেক দিন পর অন্য একটি মাজার থেকে ২৪ টি গজার মাছ এনে আবার পুকুরে মাছ ছাড়া হয়। মাজারের একজন কর্মচারীর মতে গজার এই পুকুরে এখন কয়েকশ গজার মাছ রয়েছে।
জালালি কবুতর ও নিজাম উদ্দিন আউলিয়া
হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়া শাহাজালাল (র.) এর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত ছিলেন। পরে পরিচয় পেয়ে নিজাম উদ্দিন আউলিয়া শাহাজালাল র. কে একজোরা সুরমা রঙের কবুতর উপহার দেন। সিলেট মাজারের আশেপাশে সুরমা রঙের যে কবুতর পাওয়া যায় সেগুলো জালালী কবুতরের জাত। সিলেটের কোনো ব্যক্তি এই কবুতর খাননা। যার কারনে মাজারের আশেপাশে ঝাকেঝাকে কবুতর উড়তে দেখা যায়। মাজার থেকে এই কবুতর গুলোর খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।
জমজমের কুপ ও ঝর্না
প্রচলিত আছে যে হযরত শাহাজালাল (র.) মাজারে একটি কুপ খনন করার আদেশ দেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন কুপটিকে যেন জমজমের কুপের সাথে সংযুক্ত করা হয় এবং তারপর লাঠি দিয়ে মাটিতে আঘাত করার সাথে সাথে জমজমের কুপের সাথে মাজারের কুপের সংযোগ স্থাপিত হয়।
ডেকচি
হযরত শাহাজালাল র. এর মাজারে বড় সাইজের তিনটি ডেকচি আছে৷ এই ডেকচি গুলোর সাইজ এত বড় যে একসাথে সাতটি গরুর মাংস ও সাতমন চাল রান্না করা সম্ভব। এই বিশাল আকৃতির পাতিল ঢাকার মীর মুরাদ দান করেছিলেন। বর্তমানে রান্নার কাজে ব্যবহার না করলেও দর্শনার্থীরা পুণ্যের জন্য এই পাতিলে দান করেন।
শাহাজালালের ব্যবহৃত দ্রব্যাদি
হযরত শাহাজালাল র. ছিলেন একজন বীর মোজাহিদ। তার ব্যবহার করা তলোয়ার, খড়ম, প্লেট, এবং বাটি এখনো মাজারে রয়েছে। দর্শনার্থীরা বেড়াতে আসলে এই দ্রব্যাদি গুলো দর্শন করেন। শাহাজালা র. এর ব্যবহৃত দ্রব্যাদি দেখার জন্য দরগাহ মাদ্রাসা বিল্ডিং এর মধ্য দিয়ে গেলে বা দিকে একটি বাড়ি পরবে৷ এই বাড়িতেই হযরত শাহাজালাল র. এর খড়ম তলোয়ার সহ অন্যান্য জিনিস সংরক্ষন করা আছে।
হযরত শাহাজালাল র. এর মাজার
হযরত শাহাজালাল র. কে মৃত্যুর পর সিলেটের খাদিমপাড়ায়। সিলেট শহর থেকে ৮ কিমি পূর্ব দিকে সিলেট তামাবিল সড়ক থেকে একটি উচ্চ টিলার মধ্যে শাহাজালাল র. এর দরগাহ বা মাজার শরীফ। মসজিদের পূর্ব দিকে গেলেই এই মাজারটি চোখে পরে৷ প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শক পুণ্যের জন্য এই মাজার দেখতে আসেন।
সিলেট জেলার নামকরনের ইতিহাস
সিলেটের দর্শনীয় স্থান সমূহ জানার আগে সিলেট জেলার নামকরনের ইতিহাস জেনে নেয়া প্রয়োজন।কারন একটি স্থানের নামের সাথে জরিয়ে থাকে হাজারো ইতিহাস। আর কোথাও ঘুরতে যাওয়ার আগে সে এলাকা সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকা জরুরী। চলুন তাহলে জেনে নেয়া যাক সিলেট জেলার নামকরনের ইতিহাস-
অনেকে ধারনা করে থাকেন সিলেটে প্রচুর পাথর থাকায় এখান থেকেই সিলেট নামকরন হয়েছে। সিল শব্দের অর্থ পাথর আর শ্রুতিমধুর করার জন্য সিল থেকে এসেছে সিলেট নামটি৷ আবার হিন্দু মিথ বলে অন্য গল্পের কথা। গুহক নামে প্রাচিন গৌড়ে একজন রাজা ছিলেন। তার কন্যার নাম ছিল শিলাদেবী এবং তার নাম অনুসারে হাটের নাম দেন শীলাহাট। কালের বিবর্তনে শীলাহাট থেকে শীলহট এবং সেখান থেকে নাম হয় সিলেট৷
আবার পুরান অনুযায়ী, সতীর সবদেহের ৫১ টি উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে পতিত হয়। সেই খন্ডের একটি খন্ড সিলেটে পতিত হয়। সতীর অন্য নাম ছিল শ্রী সেই শ্রী এর সাথে হট্ট জুড়ে নাম হয় শ্রীহট্ট। তারপর সেখান থেকেই জন্ম নেয় সিলেট নাম।
শেষ কথা | সিলেটের দর্শনীয় স্থান
সিলেট প্রাকৃতিক ভাবে সমৃদ্ধ একটি জেলা। বাংলাদেশের বড় বড় চা বাগানের অবস্থান সিলেটে। ভ্রমন পিপাসুদের কাছে সিলেট হচ্ছে একটি প্রিয় জেলার নাম। সিলেটের গহীন অরণ্য, পাহাড়ের বুক বেয়ে যাওয়া ঝর্ণা, রঙিন পাথর আর ভারতের মেঘালয় সব মিলিয়ে যেন অনন্য মায়াবী একটি স্বপ্নের দেশ সিলেট। যদি আপনি পাহাড় ঝর্ণা ভালবাসেন তাহলে সিলেট হতে পারে আপনার সেই পছন্দের জায়গা। বেশি বেশি ভ্রমন করুন এবং মানসিক প্রশান্তি বয়ে আনুন।