পূরক কোণ কাকে বলে?

পূরক কোণ কাকে বলে?

দুইটি কোণের সমষ্টি যখন 90° অথবা এক সমকোণ হয় তখন একটি কোণকে অপর কোণটির পূরক কোণ বলে।

পূরক কোণ কাকে বলে

চিত্রে OM রশ্মি এবং OL রশ্মি পরস্পর মিলে O বিন্দুতে মিলিত হয়েছে এবং O বিন্দুতে উৎপন্ন করেছে‌‍‌‌ ∠MOL। একইভাবে ON রশ্মি ও OL রশ্মি একত্রে মিলিত হয়েছে O বিন্দুতে এবং O বিন্দুতে উৎপন্ন করেছে ∠LON। 

  এখন, ∠MOL + ∠MOL = ∠MON

অতএব, ∠MOL + ∠LON = 90° [ অর্থ্যাৎ, ∠MON = 90°]

দেখতে পাচ্ছি যে, ∠MOL ও ∠LON কোণ দুটোর যোগফল হবে 90° বা এক সমকোণ। 

সুতরাং বলা যায় যে, ∠MOL ও ∠LON কোণ দুইটি পরস্পর মিলে  পূরক কোণ।

এছাড়াও এই পূরক কোণ দুইটিকে পরস্পর সন্নিহিত কোণও বলে।

আবার এখানে, পুরক কোণ দুটির সাধারণ বাহু হচ্ছে OL. কোনদ্বয়ের অপর দুটি বাহু হল OM ও ON, এবং সাধারণ O বিন্দুতে মিলিত হয়েছে। 

পূরক কোণের কিছু উদাহরণ

নিম্নলিখিত কোনগুলির মধ্যে পরস্পর পূরক কোণ কোনগুলি উল্লেখ করা হলো-

31°,32°,34°,27°,43°,45°,59°,63°,61°,45°

উত্তর:

31° কোণের পূরক কোণের মান হল   (90°-31°) = 59°

32° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-32°) = 58°

34° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-34°) = 56°

27° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-27°) = 63°

43° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-43°) = 47°

45° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-45°) = 45°

59° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-59°) = 31°

63° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-63°) = 27°

61° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-61°) = 29°

45° কোণের পূরক কোণের মান হল = (90°-45°) = 45°

অর্থাৎ এখানে আমরা 31° ও 59° যোগ করে পাই 90°

আবার 45°+ 45° = 90°

এবং 63°+ 27°= 90°

অতএব বলতে পারি যে, (31°,59°),(45°,45°) এবং (27°,63°) পরস্পর পূরক কোণ।

পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য

  • যখন ২ টি কোণের যোগফল ৯০ ডিগ্রি হয় সেই দুইটি কোণ তখন পূরক কোন হিসেবে বিবেচিত হয়। 
  • পূরক কোণ অ-সংলগ্ন কোণ হতে পারে  বা সন্নিহিত কোণ।
  • অ-সংলগ্ন পূরক কোনগুলি সাধারণ শীর্ষ বা একটি পার্শ্ব ভাগ করে না। 
  • দুইটি সম্পূরক কোণের মাঝে পার্থক্য হল ৯০ ডিগ্রি।
  • দুইটি পূরক কোণের প্রত্যেকটি কোণকে একটিকে অপরটির পূরক বলা হয়।
  • পূরক কোনগুলি সব সময় তীব্র কোণ হয়ে থাকে কেননা তারা ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত যোগ করে থাকে। 
  • একটি কোণের সাইন এর গুণফল এবং পূরকের কোসাইন সব সময় ১ এর সমান। 
  • পূরক কোণগুলি ত্রিকোণিমিতিক সমীকরণগুলিকে সমাধান করার জন্য এবং বিশ্ব পরিস্থিতিতে কোণগুলি নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়।

পূরক কোণের ব্যবহার বিধি 

প্রকৌশল

প্রকৌশলে টাওয়া,  ভবন এবং সেতুর মতো কাঠামোর কোণ গণনা করার জন্য পূরক কোণ ব্যবহার করতে হয়।

ত্রিকোণমিতি

সমকোণী ত্রিভুজ সম্পর্কিত যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য ত্রিকোনমিতিতে পূরক কোণের ব্যবহার করা হয়। সমকোণী ত্রিভুজের বাহুর মান এবং অজানা কোণ খুঁজে পেতে সহায়তা করে। 

পদার্থ বিজ্ঞান

 পদার্থবিজ্ঞানে পরব কোণগুলি বিভিন্ন রকমের কোণে একটি বস্তুর উপরে কাজ করে এমন ধরনের শক্তি নির্ধারণ করতে ব্যবহার করা হয়। 

ন্যাভিগেশন

পূরক কোনগুলি একটি গ্লোবের দুইটি বিন্দুর মাঝে দূরত্ব এবং দিক গণনা করার জন্য ন্যাভিগেশনে ব্যবহৃত হয়।

জ্যোতির্বিদ্যা

স্বর্গীয় বস্তুর অবস্থান নির্ধারণের জন্য জ্যোতির্বিদ্যায় এবং তাদের মধ্যকার দূরত্ব 

গণনা করার জন্য পূরক কোনগুলি ব্যবহার করা হয়।

 গঠনের ওপর ভিত্তি করে পূরক কোণ সম্ভাব্য যেসব উপায়ের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় নিচে তা বর্ণনা করা হলো:

  • সন্নিহিত পূরক কোণ
  • বিচ্ছিন্নপূরক কোণ  

সন্নিহিত পূরক কোণ 

যদি পূরক কোনদ্বয়ের একটি সাধারন বাহু থাকে তাহলে তাদেরকে পরস্পর সন্নিহিত পূরক কোণ বলে।

বিচ্ছিন্ন পূরক কোণ 

যদি পূরক কোণদ্বয়ের একটি সাধারন বাহু না থাকে তাহলে তাদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন পূরক কোণ বলে।

সন্নিহিত কোণের বৈশিষ্ট্য 

  • সন্নিহিত কোণের শীর্ষবিন্দু থাকে অভিন্ন। 
  • সন্নিহিত কোন দুটির সমষ্টি ৯০ ডিগ্রি বা এক সমকোণ হলে কোন দুইটি কে পরস্পর পূরক কোণ বলে।
  • সন্নিহিত কোন দুটির সাধারণ একটি বাহু থাকে।
  • কোন দুটির অভ্যন্তরস্থ কোন  বিন্দু সাধারণ হয় না।
  • সন্নিহিত কোন দুইটি সাধারণ বাহুর বিপরীত পাশে সবসময়ই অবস্থান করে।
  • কোন দুইটি পরস্পর সন্নিহিত হলে একটি কোণ অপর কোণটির অংশ হতে পারে না।
  • একই সমতল বিশিষ্ট হয়ে থাকে অর্থাৎ সন্নিহিত কোণদ্বয় একই সমতলে অবস্থান করে।
  • সন্নিহিত কোন দুইটির যোগফল ১৮০° হলে পরস্পর কোণ দুইটিকে সম্পূরক কোণ বলে। এক্ষেত্রে সাধারণ বাহু ছাড়া অন্য রশ্মি দুইটি পরস্পরের সাথে মিলে একটি রেখা তৈরি করে। 

উপসংহার 

পরিশেষে বলা যায় যে, পূরক কোণগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে প্রকৌশলে, নেভিগেশনে, ত্রিকোণমিতিতে, জ্যোতির্বিদ্যা এবং পদার্থবিদ্যা অধ্যয়নের ক্ষেত্রে। পূরক কোণ এর বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার বুঝতে পারা অপরিহার্য কেননা এটি  দূরত্ব এবং কোণ সম্পর্কিত সব রকমের সমস্যা সমাধানের জন্য সহায়তা করে। আপনি একজন বিজ্ঞানী বা প্রকৌশলী বা ছাত্র যে হন না কেন পূরক কোণ কাকে বলে, এর বৈশিষ্ট্য এসব জানা খুব জরুরী আপনার জন্য কারণ এটি আপনাকে সর্বদা গণনা সঠিকভাবে করতে এবং সঠিক ফলাফল অর্জনে সহায়তা করব।  

বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন 

১. পূরক কোণ কি? 

উত্তর: 

দুইটি কোণের সমষ্টি যখন 90° অথবা এক সমকোণ হয় তখন একটি কোণকে অপর কোণটির পূরক কোণ বলে।

২. গঠনগতভাবে পূরক কোণের উৎপন্ন উপায় কয়টি ও কি কি?

উত্তর: দুইটি উপায়ে-

  • সন্নিহিত পূরক কোণ এবং
  • বিচ্ছিন্নপূরক কোণ  

৩.পূরক কোণের বৈশিষ্ট্য গুলো কি? 

উত্তর: 

  • যখন ২ টি কোণের যোগফল ৯০ ডিগ্রি হয় সেই দুইটি কোণ তখন পূরক কোন হিসেবে বিবেচিত হয়।
  • দুইটি পূরক কোণের প্রত্যেকটি কোণকে একটিকে অপরটির পূরক বলা হয়।
  • পূরক কোনগুলি সব সময় তীব্র কোণ হয়ে থাকে কেননা তারা ৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত যোগ করে থাকে। 

Leave a Comment