রেলগাড়ি | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য
রেল গাড়ি হলো একটি যাত্রীবাহী বা মালামালবাহী যানবাহন যা রেলপথে চলাচল করে। রেল গাড়ি সাধারণত একাধিক ঐক্যবদ্ধ গাড়ির সমন্বয়ে গঠিত হয়। প্রতিটি গাড়িতে একটি ইঞ্জিন থাকে যেগুলোর মাধ্যমে রেল চলাচল করে। রেল গাড়ির ইতিহাস বেশ প্রাচীন। প্রথম রেল গাড়িগুলি ১৮২৫ সালে ইংল্যান্ডে চালু হয়। জর্জ স্টিফেনসন এর চেষ্টার মাধ্যমে ১৮২৫ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর বিশ্বে প্রথমবারের মতো রেলগাড়ি চলাচল শুরু করে। তারপর ব্রিটিশ উপনিবেশিক আমলের সময় ভারতীয় উপমহাদেশে রেলগাড়ির প্রচলন শুরু হয়। এরপর থেকে রেল গাড়ি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের প্রথম রেল লাইন তৈরি করা হয় ১৮৬২ সালে দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত। এই রেল লাইন টি ৫৩.১১ কিলোমিটার ছিল। বাংলাদেশের রেললাইন যে প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রন করে তাকে বাংলাদেশ রেলওয়ে বলা হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারী প্রতিষ্ঠান। রেল গাড়ি বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার রয়েছে। যাত্রীবাহী রেল গাড়ি এবং মালামাল পরিবহনকারী রেলগাড়ি। যাত্রীবাহী রেলগাড়ি মানুষকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় বহন করে নিয়ে যায় এবং মালামালবাহী রেল গাড়ি পণ্য ও মালামাল একস্থান থেকে অনু স্থানে নিয়ে যায়। যাত্রীবাহী রেল গাড়ি আবার বিভিন্ন ধরনের শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। যেমন প্রথম শ্রেণির রেল যাত্রীদের জন্য আরামদায়ক আসন, রুমে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থাকে। দ্বিতীয় শ্রেণির রেল গাড়িগুলিতে যাত্রীদের জন্য কিছুটা কম সুযোগ-সুবিধা থাকে এবং অনুরুপভাবে তৃতীয় শ্রেণির যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে কম সুযোগ-সুবিধা থাকে। রেলগাড়ি পরিবেশকে দুষনের হাত থেকে রক্ষা করে। আমরা জানি যে যানবাহনের কালো ধোয়া অনেক ক্ষতিকর। রেলগাড়িতে যেহেতু তেল বা বিদ্যুৎ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তাই রেলগাড়ি থেকে দূষনের পরিমান কম হয়। ফলে পরিবেশের বায়ু দুষিত করতে পারেনা।
রেলগাড়ি | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য
মানুষ প্রতিনিয়ত এক স্থান থেকে অন্য স্থান যেতে বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে থাকে। আধুনিক যানবাহন আবিষ্কৃত হওয়ার কারনে মানুষের জীবনে গতি এসেছে, বেচে যাচ্ছে সময়। রেলগাড়ি হচ্ছে অন্যতম জনপ্রিয় একটি যানবাহন। রেলগাড়ির সুবিধার জন্য অনেকেই দূরদূরান্তে যাতায়াত করার জন্য রেলগাড়ি কে বেছে নেয়। রেলগাড়ির প্রথম দেখা মেলে ইংল্যান্ডে। ১৮২৫ সালে জর্জ স্টিফেনসন নামক এক ব্যক্তি রেল গাড়ি আবিষ্কার করেন। তার জন্যই সারা বিশ্বে প্রথম বারের মত ১৮২৫ সালের ২৭ শে সেপ্টেম্বর রেলগাড়ি যাত্রা শুরু করে। তারপর রেলগাড়ি দেখা যায় ভারত উপমহাদেশে এবং ক্রমশই এর সুযোগ সুবিধার কারনে সারা বিশ্বে জিনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশে রেলগাড়ি যাত্রা শুরু করে ১৮৬২ সালে। বাংলাদেশের দর্শনা থেকে কুষ্টিয়া তে প্রথম রেলগাড়ি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এভাবেই ধীরে ধীরে পুরো বাংলাদেশের রেললাইন স্থাপন করা হয়। এখন বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলের সাথেই রেলপথের সংযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ধীরে ধীরে বাকি অঞ্চল গুলোর সাথেও রেলপথের ব্যবস্থা করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের উদ্যগে ঢাকার সাথে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে এবং ট্রেন চলাচলও শুরু হয়ে গেছে। রেললাইন স্থাপন করা অনেক ব্যয়বহুল হওয়ার কারনে রেললাইন বাড়ানোর জন্য বাংলাদেশ সরকার কে রেললাইন স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করতে হয়। মানুষ দূরে যাত্রা করার জন্য রেলকে বেশি পছন্দ করে। কারন রেলের মধ্যে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। যদিও আগের রেলের মধ্যে এখনকার মতো আধুনিক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেতনা। এখন রেলে যে আধুনিক সুবিধা গুলো পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্যে কিছু সুবিধা হলো: রেল গাড়িতে এসি কেবিন, আরামদায়ক আসন, আধুনিক ক্যান্টিন সহ আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। বেশিরভাগ মানুষ রেল কে দূর পাল্লার বাহন হিসেবে বেছে নেয়ার কারন হলো রেল লাইনে ওয়াশরুম সুবিধা আছে যার কারনে যাত্রা বিরতিতে বাইরে কোথাও যেতে হয় না। প্রয়োজনীয় নাস্তা বা খাবার রেল গাড়ির মধ্যেই কিনতে পাওয়া যায়। রেলগাড়ির আর একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো রেলগাড়ি কখনো জ্যামে আটকে থাকেনা। তবে মাঝে মাঝে সিগন্যালের জন্য রেল গাড়ি দেরী করে। রেলগাড়ি সাধারনত গ্রামীন পরিবেশের মধ্য দিয়ে যায়। কারন রেললাইন সব সময় ফাকা জায়গায় স্থাপন করা হয়। যারা রেলগাড়ি দিয়ে যাতায়াত করে তারা রেলগাড়ির জানালা দিয়ে গ্রামীন পরিবেশ উপভোগ করতে করতে যাত্রা করে। যার কারনে কখনো ক্লান্তি আসেনা। রেল গাড়ির যেমন অনেক সুবিধা রয়েছে তেমনই অনেক অসুবিধাও রয়েছে। কারন রেলগাড়ি সীমিত থাকার কারনে রেল গাড়ির টিকেট সহজে পাওয়া যায়না। রেলগাড়ির আর একটি অসুবিধা হলো রেল গাড়িতে চুরি, ছিনতাই বা ডাকাতির ঘটনা ঘটে থাকে। যার কারনে অনেকেই রেলগাড়িতে যাত্রা করতে চাননা। ইদানিং বাংলাদেশের বিভিন্ন রেললাইনে দূর্ঘটনার পরিমান বেড়ে গেছে। রেলগাড়ি থামতে অনেক সময় লাগে বলে হঠাৎ করে যদি কেউ রেল গাড়ির সামনে পরে যায়, তাহলে সেই ব্যক্তিটিকে বাচানোর জন্য রেলগাড়ি চালক রেলগাড়ি থামাতে পারেনা। যার ফলে সেই ব্যক্তির শরীর কেটে যায় বা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে রেলগাড়িতে কিছু সুবিধা থাকলেও রেলগাড়িতে ভ্রমন সত্যি অনেক আনন্দদায়ক ও উপভোগ্য।
রেলগাড়ি | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য
আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবনগুলির মধ্যে অন্যতম হলো রেলগাড়ি। ১৮০৪ সালে ইংল্যান্ডে প্রথম বাষ্পচালিত লোকোমোটিভ চালু হওয়ার পর থেকেই এটি যুগের পর যুগ ধরে মানুষের জীবনযাত্রাকে পাল্টে দিচ্ছে। এখনও পর্যন্ত রেলগাড়ি তার গুরুত্ব হারায়নি, বরং প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে সাথে আরও আধুনিক ও দক্ষ হয়ে উঠছে। রেলগাড়ি যাত্রার মজা অন্য রকম। দীর্ঘ, দৃষ্টিনন্দন পথ ধরে ছুটে চলা এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা। যাত্রী বগিগুলো, একে অপরের সাথে যুক্ত হয়ে এক সারি বেঁধে চলে, গ্রামের ফসলের বুক চিরে। পুরনো দিনে বাষ্পচালিত ইঞ্জিনের ধোঁয়া আর ঝমঝম আওয়াজে রোমান্টিকতা ছিল; এখন ডিজেল বা বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন আমাদের দ্রুত গতিতে নিয়ে যায়। রেলপথের মাঝে মাঝে আসে স্টেশন, ছুটে যাওয়া মানুষের ঝলক আর প্লাটফর্মে যাত্রীদের উঠানামা; আবার মাঝে মাঝে গ্রামাঞ্চলে ঢুকে পড়া , ক্ষেতের সবুজ, জীবনের সেরা সময় কাটে রেল ভ্রমণে। প্রতিটা স্টেশনেই পাল্টে যায় দৃশ্যপট, যেন জীবনের অধ্যায় বদলে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে রেলগাড়ির ইতিহাস শুরু হয় ১৮৫৩ সালে, যখন হাওড়া থেকে পণ্ডুয়া পর্যন্ত প্রথম রেলপথ চালু করা হয়। ১৮৬২ সালের ১৫ই নভেম্বর চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে কুষ্টিয়ার জগতি পর্যন্ত রেলপথ স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশ রেল যুগে প্রবেশ করে। এই রেলপথটি ৫৩.১১ কিলোমিটার দীর্ঘ ছিল এবং ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে নামক কোম্পানি এটি নির্মাণ করে। এই রেলপথের উদ্বোধন করেন তৎকালীন ভারতের ভাইসরয় লর্ড ক্যানিং। বর্তমানে বাংলাদেশের রেলপথের দৈর্ঘ্য ২,৮৭২ কিলোমিটার। এই রেলপথের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে। রেলগাড়ির বিভিন্ন ধরন রয়েছে। দুর্গম পাহাড়ি পথে চলাচলকারী পাহাড়ি রেলপথ থেকে শুরু করে, শহরের ভিড় কমাতে ব্যবহৃত মেট্রো রেল, আর দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে চলাচলকারী দীর্ঘ রেলপথ। বুলেট ট্রেনের মতো অতি দ্রুতগতির রেলগাড়ি আমাদেরকে ঘণ্টায় এক শহর থেকে অন্য শহরে পৌঁছে দিচ্ছে, আর বৈদ্যুতিক রেলগাড়ি পরিবেশের ক্ষতি কমিয়ে পরিবহনের ক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব ঘটিয়েছে। অন্যদিকে, মেট্রো রেল হলো শহরের ভিড় কমাতে এবং দ্রুত যাতায়াতের জন্য নির্মিত একটি বিশেষ ধরনের রেলগাড়ি। উরাল পথ দিয়ে চলাচলের কারণে মেট্রো রেল শহরের যানজট এড়িয়ে দ্রুত গতিতে মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছে দেয়। ঢাকায় চালু হওয়া মেট্রো রেল শুধুমাত্র যাতায়াতের সময় কমায়নি পাশাপাশি শহরের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রেলগাড়ি শুধুমাত্র মানুষ পরিবহনই করে না, বরং দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরিয়ে দেয়। পণ্যসামগ্রী দ্রুত ও নিরাপদে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে রেলপথ বাণিজ্যেও গতি আনে। রেলগাড়ির আর একটি উল্লেখযোগ্য সুবিধা হলো এটি কখনো জ্যামে আটকে থাকে না। কারণ, রেলগাড়ি নির্দিষ্ট রেলপথ দিয়ে নির্দিষ্ট গতিতে চলাচল করে। তাই, রাস্তায় যেমন যানজট হতে পারে, রেলপথে তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে, সিগন্যালের জন্য মাঝে মাঝে এটি দেরী করতে পারে। যুগের পর যুগ ধরে এটি মানুষের জীবনযাত্রাকে পাল্টে দিচ্ছে। এটি শুধুমাত্র যাতায়াতের মাধ্যমই নয়, বরং অগ্রগতির প্রতীক। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে রেলপথ আরও উন্নত ও গতিশীল হয়ে উঠছে, যা আগামীতে আমাদের জীবনকে আরও সহজ ও আরামদায়ক করে তুলবে।