লটারি ছাড়া কোরিয়া যাওয়ার উপায়
বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে প্রায় প্রতিবছর ৫ থেকে ১০ হাজার শ্রমিক দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে বোয়েসেলের ফি প্রদান করা বাধ্যতামূলক। সরকারি ভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার সুযোগ পেলে নামমাত্র মূল্যে সেখানে যাওয়া যায়। অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিকদের বেশি মজুরি প্রদান করে থাকে দক্ষিণ কোরিয়া। দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের জন্য যেতে হলে অবশ্যই আপনাকে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে যেতে হবে।
এক্ষেত্রে কোন দালাল চক্রের সাহায্য নেওয়া মোটেও উচিত নয়। দক্ষিণ কোরিয়ায় কাজের ভিসার মাধ্যমে যেতে হলে আপনার বয়স হতে হবে সর্বনিম্ন ১৮ থেকে সর্বোচ্চ ৩৯ বছর পর্যন্ত। আপনারা যারা লটারি ছাড়া কোরিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে জানতে চান আজকের আর্টিকেলটি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। চলুন তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
লটারি ছাড়া কোরিয়া যাওয়ার উপায়
সরকারি অথবা বেসরকারি আপনি যে মাধ্যমেই দক্ষিণ করে যেতে চান না কেন সব মাধ্যমে আপনাকে সেখানকার ভাষা জানতে হবে। লটারি ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া যেতে হলে অবশ্যই সেখানকার ভাষা জেনে নিয়ে তারপর ভিসার জন্য আবেদন করা ভালো। লটারি ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য নিন্মক্ত স্টেপ গুলি অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে :-
- প্রথমে আপনাকে সেখানকার ভাষা লিখতে ও বুঝতে জানতে হবে।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতার মান অবশ্যই এইচএসসি বা সমমান হতে হবে।
- অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করে আবেদনের ফি জমা দিতে হবে।
- আপনি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য উপযুক্ত কিনা তার জন্য আপনার বিভিন্ন স্কিল টেস্ট নেওয়া হবে। পরীক্ষাগুলোতে আপনাকে পাস করতে হবে।
- ভিসা ফরম জমা দিতে হবে। আপনি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য অনুমোদন পেয়েছেন কিনা তা সেখানকার সরকার থেকে অনুমতি প্রাপ্ত হতে হবে।
- বোয়েসেল কর্তৃক যে ট্রেনিং এর আয়োজন করা হবে তাতে অবশ্যই অংশগ্রহণ করতে হবে।
- আপনার সব ধরনের স্কিল তাদের আশানরূপ হলে আপনি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য অনুমতি প্রাপ্ত হবেন।
উপরে লটারি ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলো। আশা করছি আপনারা উপকৃত হবেন।
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় 2023
সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় ২০২৩ সম্পর্কে জানতে চাইলে আপনাকে নিচের লেখাটা সম্পূর্ণ পড়তে হবে। সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে হলে আপনাকে অবশ্যই লটারির মাধ্যমে যেতে হবে। প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বোয়েসেলের থেকে ছাড়া লটারির মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় গমন করে। প্রতিবছর এপ্রিল অথবা মে মাসের দিকে এই লটারি ছাড়া হয়। লটারি ছাড়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হলে আপনাকে বোয়েসেলের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানকার নিবন্ধন ফরম পূরণ করতে হবে।
লটারিতে যদি আপনার নাম আসে তাহলে আপনাকে পরের ধাপগুলোতে পর্যায়ক্রমে উত্তীর্ণ হতে হবে। প্রথমত আপনি দক্ষিণ কোরিয়া ভাষা কতটুকু জানেন সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হবে। সাধারণত ২০০ নাম্বারের একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এবং এই পরীক্ষায় পাশ করতে হবে। আপনি যদি ভাষাগত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে থাকেন তাহলে পরবর্তীতে আপনার স্কিল টেস্ট নেওয়া হবে। স্কিল টেস্ট পরীক্ষাতেও আপনাকে উত্তীর্ণ হতে হবে।
এরপর আপনার মেডিকেল ফিটনেস এবং পুলিশ ক্লিয়ারেন্স জোগাড় করে তা জমা দিতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনাকে ২ সপ্তাহের জন্য একটি ট্রেনিং নিতে হবে। ট্রেনিং টি বোয়েসেলের আওতায় অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তারপর নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী আপনি সরকারিভাবে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে পারবেন।
দক্ষিণ কোরিয়া আবেদন ২০২৩
সরকার কর্তৃক বোয়েসেলের মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়া আবেদন ২০২৩ প্রতি বছর প্রকাশ করা হয়। যারা দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কিছু তাদের অবশ্যই বোলসেলের ওয়েবসাইটে গিয়ে সেখানকার আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। দক্ষিণ কোরিয়া কাজে যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে কঠিন কাজ, বিপদজনক কাজ ইত্যাদি ধরনের কাজ সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা নিয়ে যেতে হবে। আপনার যদি কালার ব্লাইন্ডনেসের সমস্যা থাকে তাহলে আবেদন না করাই ভালো।
কারণ দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনাকে রং বোঝার সক্ষমতা থাকতে হবে। আপনাকে অবশ্যই মাদকমুক্ত থাকতে হবে। কোন মাদকাসক্ত ব্যক্তি বা নেশাগ্রস্থ ব্যক্তি দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার জন্য সরকারিভাবে আবেদন করতে পারেন না। আপনি যদি কোন কারণে আগে সরকার দ্বারা শাস্তি প্রাপ্ত হন তাহলে আপনি আবেদন করতে পারবেন না। আপনার উপর যদি সরকার করতে কোন আইন বলবৎ থাকে তাহলে অবশ্যই আপনি দেশ ত্যাগ করতে পারবেন না।
দক্ষিণ কোরিয়া ভিসা ২০২৩
বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশের শ্রমিকরা সাধারণত দক্ষিণ করে যেতে চান কাজের জন্য। এক্ষেত্রে তারা ওয়ার্ক পারমিট ভিসার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রবেশ করেন। তবে কাজের ভিসা বা ওয়ার্ক পারমিট ভিসা ছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া আরও বিভিন্ন ধরনের ভিসা প্রদান করে থাকে। দক্ষিণ কোরিয়ার ভিসা ২০২৩ গুলো হলো:
- ব্যবসায়িক ভিসা,
- কাজের ভিসা,
- স্টুডেন্ট ভিসা,
- সামাজিক কর্মকর্তা ভিসা,
- সাধারণ ভিসা,
- কৃষি ভিসা,
- টুরিস্ট ভিসা,
- প্রবাসী কর্মকর্তা ভিসা ইত্যাদি।
আপনি যে কারণে দক্ষিণ কোরিয়া যেতে চান সেই ধরন অনুযায়ী ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। ভিসার জন্য আবেদন করার সময় আপনাকে জেনে নিতে হবে যে আপনার এই ভিসার মেয়াদ কত দিনের। ভিসার মেয়াদ অনুযায়ী আপনি দক্ষিণ কোরিয়া অবস্থান করতে পারবেন। ভিসার মেয়াদ পার হয়ে গেলে আপনি যদি সেখানে অবস্থান করেন তাহলে আপনি সেখানে অবৈধ অধিবাসী হিসেবে গণ্য হবেন।
কোরিয়া যাওয়ার যোগ্যতা
দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার কিছু কিছু যোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। আবেদন করার আগে আপনার যোগ্যতা না থাকলে সেগুলো তৈরি করে নেওয়া জরুরী। যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তি অনুমোদন প্রাপ্ত হবেন। আসুন জেনে নেই কোরিয়া যাওয়ার যোগ্যতা গুলো কি কি:
- আপনি যদি এইচএসসি বা সম্মান পরীক্ষায় কৃতকার্য হন তাহলে করিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারেন।
- আপনার পাসপোর্ট এর মেয়াদ থাকতে হবে। পাসপোর্ট অবশ্যই বৈধ হতে হবে।
- আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদপত্র এবং আপনার জাতীয় পরিচয় পত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। এখানে গরমেল থাকলে আপনি করিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
- আপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করার মানসিকতা নিয়েই করিয়া যেতে হবে।
- আপনি যদি মাদকাসক্ত হয়ে থাকেন তাহলে কোরিয়া যাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন না।
- আপনাকে কোরিয়ান ভাষা লিখতে এবং পড়তে জানতে হবে।
- আপনার উপর যদি দেশের সরকার করতে কোন আইন চাপানো থাকে তাহলে আপনি দেশের বাইরে গমন করতে পারবেন না।
দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় গুলোর মধ্যে এগুলো খুবই সাধারণ নিয়ম। এই নিয়ম গুলো যদি মেনে চলেন তাহলে আশা করা যায় আপনি খুব সহজেই কোরিয়া যেতে পারবেন।
দক্ষিণ কোরিয়া কোন কাজের চাহিদা বেশি
বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশ থেকে যেসব শ্রমিক দক্ষিণ কোরিয়া কাজের জন্য যান তারা সেখানে গিয়ে কোরিয়ান বিভিন্ন ছোট বা মাঝারি কোম্পানিতে চাকরি করেন। তারা শ্রমিক হিসেবে মোটামুটি ভালো বেতনে চাকুরী করতে পারেন। দক্ষিণ কোরিয়া সরকারিভাবে অথবা বেসরকারিভাবে তাদের ছোট বা মাঝারি কোম্পানির জন্য বাংলাদেশ অথবা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশ থেকে শ্রমিক নিয়ে থাকেন।
তবে তাদের দেশের সব বড় কোম্পানিগুলোতে কোরিয়ান শিক্ষিত শ্রমিকরাই বেশি কাজ করে থাকে। তবে বাংলাদেশ থেকে যদি কোন উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তি তার নিজের যোগ্যতায় দক্ষিণ কোরিয়ায় যান তবে তিনি বড় কোম্পানিতে চাকরি পেতে পারেন। তবে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশ থেকে যারা কাজের জন্য যান তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাঝারি বা ছোট কোম্পানিতে চাকুরীর জন্য যান। এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া তাদের এ ধরনের কোম্পানিগুলোতে বিশাল কাজের বাজার সৃষ্টি করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগেঃ
দক্ষিণ কোরিয়ার বৈধভাবে যেতে হলে অবশ্যই সরকারি ভাবে যেতে হবে। এবং সরকারি ভাবে গেলে অল্প টাকায় দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছানো সম্ভব। আপনি যদি কাজের ভিসার মাধ্যমে দক্ষিণ কোরিয়ায় যেতে চান তাহলে লটারির মাধ্যমে যাওয়া ভালো। এক্ষেত্রে আপনার খরচ হতে পারে ৭০ হাজার টাকা থেকে ১ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। এটা শুধুমাত্র আপনার দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছানোর খরচ।
তবে আপনার আনুষাঙ্গিক আরও বিভিন্ন ধরনের খরচ থাকতে পারে। তবে সব মিলিয়ে খুব অল্প খরচেই দক্ষিণ কোরিয়া সরকারি ভাবে পৌঁছানো সম্ভব। দক্ষিণ কোরিয়া যেতে কত টাকা লাগে আশা করি এই উত্তর আপনারা পেয়েছেন।
দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার নিয়ম ২০২৩
যেসব ধাপ অনুসরণ করে আপনি দক্ষিণ কোরিয়া পৌঁছাতে পারবেন সেসব সম্পর্কে আমরা ইতোমধ্যে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দক্ষিণ কোরিয়া যেতে হলে বেশি অর্থের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু আপনি যেসব স্কিল টেস্ট দিবেন তাতে অবশ্যই আপনাকে পাস করতে হবে।
আপনার মেডিকেল সার্টিফিকেট থাকতে হবে এবং আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা এইচএসসি পাস বা সম্মান পরীক্ষার হতে হবে। আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সুন্দর হতে হবে। এবং আপনি দক্ষিণ কোরিয়া পৌঁছানোর পর যেসব কাজ করবেন সেসব কাজ সম্পর্কে আগে থেকে ধারণা নিয়ে যেতে হবে।
উপসংহারঃ
প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে বিপুর পরিমাণ মানুষ দক্ষিণ কোরিয়া কাজের জন্য যায়। কারণ অন্যান্য দেশ থেকে শ্রমিকরা দক্ষিণ করে বেশি পরিমাণে পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে। এবং অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও পেয়ে থাকে।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা দক্ষিণ কোরিয়া যাওয়ার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়লে আশা করি আপনারা উপকৃত হবেন।
korea visa form
Also Read : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়