সুন্দরবন অনুচ্ছেদ | ২ টি ভিন্ন অনুচ্ছেদ | বাংলা ২য় পত্র অনুচ্ছেদ রচনা

সুন্দরবন

সুন্দরবন | অনুচ্ছেদ-১: পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর জন্য

সুন্দরবন হলো  পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন। এটি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট জেলার কিছু অংশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা এবনের ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার (৬৬%) রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাকি অংশ (৩৪%) রয়েছে ভারতের মধ্যে। সুন্দরবন তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বৈচিত্র্যময় জীববৈচিত্র্য এবং বাঘের আবাসস্থল হিসেবে বিখ্যাত। সুন্দরবনের প্রকৃতি অত্যন্ত মনোরম। এখানে বিভিন্ন ধরনের গাছ  রয়েছে। যেমন :  সুন্দরী, গেওয়া, গরান, কেওড়া, বাইন, ঝাউ, হিজল, মেহগনি, বাবলা, গোলপাতা, ধুন্দুল, পান, জামরুল, তাল, সুপারি, নারিকেল ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের গাছপালা। সুন্দরবনের প্রধান উদ্ভিদ হলো সুন্দরী গাছ। সুন্দরবনে এক সময় অনেক হাতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে সুন্দরবনের বৈচিত্র নষ্ট হওয়ার কারনে ধীরে ধীরে হাতি বিলুপ্ত হয়ে গেছে  এছাড়াও এখানে রয়েছে নানা ধরনের প্রাণী, যেমন বাঘ, হরিণ, চিতাবাঘ, কুমির, সাপ, বানর, উল্লুক, ইঁদুর, বক, মাছ, ব্যাঙ ইত্যাদি। সুন্দরবনে প্রায় জাতের সরীসৃপ আছে। বিষাক্ত সাপের আনাগোনাও অনেক রয়েছে। সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি বাংলাদেশের পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে  অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সুন্দরবনের উপকুলীয় এলাকায় যখন সমূদ্রের পানি দিয়ে ডুবে যায় তখন  এবন সমুদ্রের ঢেউ থেকে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলকে রক্ষা করে। এটি বহু ধরনের অর্থনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।  যেমন  সুন্দর বন এলাকার মানুষরা এখান থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে,  এখান থেকে বনজ সম্পদ  যেমন কাঠ, ফল সহ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ সংগ্রহ করে বিক্রি করে টাকা রোজগার করে থাকে। এছাড়াও পর্যটন শিল্প থেকেও প্রচুর পরিমান অর্থ আসে এবন থেকে। সুন্দরবন একটি সংরক্ষিত এলাকা। এইবন রক্ষার জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেই সাথে আমাদেরও উচিৎ সুন্দরবন রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করা। কার,  এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বনভূমি এবং এটিকে রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

সুন্দরবন | অনুচ্ছেদ-২: এসএসসি (নবম – দশম শ্রেণী) পরীক্ষার জন্য

আমাদের দেশ চিরসবুজের দেশ। চারদিকে তাকালেই চোখে পরে শস্য শ্যামল পরিবেষ্টিত পরিবেশ। বাংলাদেশে ছোট বড় অনেক বন রয়েছে। সুন্দরবন হলো পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ অরণ্য। এখানে চমৎকার সব গাছপালা আর বন্যপ্রানী দিয়ে ভরপুর। এই চমৎকার ম্যানগ্রোভটি বৃহত্তর খুলনা জেলা ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ জুড়ে অবস্থিত। দক্ষিণ অংশের বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেসে  অবস্থিত সুন্দরবন। সুন্দরবনে যে ধরনের উদ্ভিদ রয়েছে সুন্দরবনের  লবনাক্ত মাটির মধ্যেও   কোনো ধরনের ক্ষতি ছাড়া টিকে থাকতে পারে বলে সুন্দরবনকে ম্যানগ্রোভ বন বলা হয়। গবেষকদের মতে, এই বন আজ থেকে দুই তিন হাজার বছর আগে সমুদ্রের নিচে ছিল। গঙ্গা থেকে পলিমাটি জমে সেখানে ভূমি তৈরি হয়। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ জন্ম নেয়। সেখান থেকেই সৃষ্টি হয়েছে সুন্দরবনের। সুন্দরবন নাম হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে এই বনে  সুন্দরী নামে এক ধরনের প্রচুর পরিমান  উদ্ভিদ রয়েছে সেখান থেকেই এই বনের নাম সুন্দরবন। এই বনমোটামুটি অনেক বড় জায়গা জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। সুন্দরবনের দৈর্ঘ্য হলো ২৯০ কিলোমিটার এবং উত্তর দক্ষিণে ১২৯ কিলোমিটার ।  সুন্দরবনের মোট আয়তন হলো ১০,০০০  বর্গ কিলোমিটার যার ৫৮০০ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশে পরেছে। সুন্দরবনে প্রচুর সুন্দরী গাছ হয়। এছাড়াও দেখা পাওয়া যায়  বিভিন্ন ধরনের পশু পাখি। সুন্দরবনে প্রায় সময়ই জোয়ার ভাটা হওয়ার কারনে এখানকার মাটি জলাবদ্ধ অবস্থায় থাকে এবং মাটি ও পানিতে লবনের প্রভাব অনেক বেশি হয়।  সুন্দরনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ পালা থাকায় এর রুপ অনেক বিচিত্র। এই বনে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্ভিদ হলো গেওয়া, গরান, কেওড়া, পশুর, ধুন্দল, বাইন এবং প্রভৃতি। সুন্দরবন অর্থনীতিতে বিশেষ ভাবে অবদান রাখছে। কারন এই বনকে কেন্দ্র করেই হাজার হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। প্রতি বছর এই বন থেকে প্রচুর পরিমাণ মধু সংগ্রহ করা হয়। এখানে বিভিন্ন ফুলের মধু পাওয়া যায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ফুলের মধু হচ্ছে খলিশা, গেওয়া এবং কালোজিরা ফুলের মধু।সুন্দরবনের মধু সারা বাংলাদেশে অনেক জনপ্রিয়। দেশের মানুষের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এই মধু রপ্তানি করা হয়। যার ফলে এই সুন্দরবনের মধুর জন্য প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়। এছাড়াও সুন্দরবনের গাছ কাঠও জ্বালানী হিসেবে  ব্যবহার হয়ে থাকে। এই বন থেকে ফলমুল সংগ্রহ করে অনেকে তাদের পরিবার পরিচালনা লরে থাকে। পর্যটন ক্ষেত্রেও  সুন্দরবন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। কারন পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এটি অনেক জনপ্রিয়। সারা বাংলাদেশ থেকে মানুষ সুন্দরবনের ভ্রমণ করতে যায়। শুধু তাই নয় বিদেশ থেকে অনেক পর্যটক সুন্দরবনে  ভ্রমণ করতে আসে। আমাদের সবার উচিত এই বনকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা। কারণ সুন্দরবন শুধু আমাদের দেশের সম্পদ নয় বরং এটি সারা বিশ্বের সম্পদ।

 

সুন্দরবন | অনুচ্ছেদ-৩: এইচএসসি ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য

সুন্দরবন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন, যার প্রকৃতির রূপ আর বন্যতার উচ্ছ্বাসের এক অপূর্ব মিশ্রণ সবাইকে মুগ্ধ করে। লবণাক্ত সমুদ্রের জলে জেগে ওঠা এই বনভূমি, সবুজ পাতার অপরিসীম সমুদ্রে মায়াবি হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে। সুন্দরবনের নামের উৎপত্তি নিয়ে রয়েছে নানা মত। কথিত আছে, এই নাম এসেছে সুন্দরী গাছ থেকে। এই বনে সুন্দরী গাছ প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। অনেকেই মনে করেন, এই গাছের প্রাচুর্যতার কারণেই বনের নাম হয়েছে সুন্দরবন। এটি বিশ্বের জীববৈচিত্র্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আধার। একদিকে রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের রাজত্ব, যার গর্জনে বন প্রতিধ্বনিত হয়, আবার জলে আছে কুমির। আরও রয়েছে নানান পাখির কলকাকলি, হরিন বানরের সখ্যতা, আর পানিতে লাফিয়ে উঠা ডলফিনের ঝাক। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, সুন্দরবনে বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির বাসস্থান রয়েছে। ১৮৭৮ সালে, ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনকে একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল হিসাবে ঘোষণা করে। এর ফলে বনের উপর মানুষের নিয়ন্ত্রণ আনা সম্বব হয় এবং বনের জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর, সুন্দরবন বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের মধ্যে বিভক্ত হয়ে যায়। বাংলাদেশের অংশে সুন্দরবনের আয়তন ৬,৫১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা সমগ্র বনভূমির প্রায় ৬৬%। ভারতের অংশে সুন্দরবনের আয়তন ৩,৪৮৩ বর্গ কিলোমিটার। সুন্দরবন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি জীববৈচিত্র্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ আবাসস্থল এবং বহু মানুষের জীবনের জীবিকা নির্বাহের উৎস। সুন্দরবন বাংলাদেশের বনজ সম্পদের একক বৃহত্তম উৎস। এখান থেকে কাঠ, জ্বালানী, মন্ড, ঘর ছাওয়ার পাতা, মধু, মৌচাকের মোম, মাছ, কাঁকড়া এবং শামুক-ঝিনুক আহরিত হয়। এইসব সম্পদ থেকে প্রচুর পরিমাণে আয় হয় এবং উপকূলবর্তী জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। সুন্দরবন একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র। প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণ করেন। পর্যটন থেকেও প্রচুর পরিমাণে আয় হয়।সুন্দরবন, সাহিত্যের ক্যানভাসেও রঙ লাগায় জীবন্ত রঙে। এই ম্যানগ্রোভ বনের ঘন গহন, রহস্যময় জলপথ, আর প্রাণীজগৎ কথাসাহিত্যিকদের কল্পনাকে লালন করেছে দীর্ঘকাল ধরে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “সুন্দরবনে সাত বৎসর” উপন্যাসে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও রহস্যময়তার এক অনন্য চিত্র ফুটে উঠেছে। অমিতাভ ঘোষের “দ্যা হাঙ্গরি টাইড” জলদস্যুদের জীবনের কঠিন বাস্তবতা তুলে ধরেছে। কিন্তু এই মায়াবী বনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। মানুষের হস্তক্ষেপ, অবৈধ কাঠ চুরি, পশু শিকার এবং বিষ ব্যবহার করে মাছ ধরা, এই বনের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। সুন্দরবনের সৌন্দর্য আর বন্যতা রক্ষা করা না হলে, আমরা শুধুমাত্র একটি অপূর্ব প্রাকৃতিক সম্পদ হারাবো না, বরং এর উপকারিতা থেকেও বঞ্চিতও হব। ঘূর্ণিঝড় সিডরের ফলে সুন্দরবনের ব্যাপক ভূমিধ্বস হয়। এই ভূমিধ্বসের ফলে বনের জীববৈচিত্র্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বনের অনেক গাছপালা এবং প্রাণী ধ্বংস হয়। ঘূর্ণিঝড় আইলা সুন্দরবনের উপর আরও ভয়াবহ আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সুন্দরবনের অনেক এলাকায় বনভূমি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। এই বন নিজে ঝরের মুখে দারিয়ে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছে। এই ঘূর্ণিঝড়গুলির পাশাপাশি, সুন্দরবন জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং স্বাদুপানির সরবরাহ হ্রাসের কারণে সুন্দরবনের লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটি বনের জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। এছাড়াও, কয়লা চালিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সুন্দরবনের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে দারিয়েছে। সুন্দরবনের রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমরা সকলে মিলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করলে সুন্দরবন চিরকাল আমাদের জন্য একটি জীবন্ত জীববৈচিত্র্যের আধার হিসেবে বেচে থাকবে।

Scroll to Top