আসরের নামাজ কয় রাকাত ! আসরের নামাজের গুরুত্ব
নামাজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। মুসলমানদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। আসরের নামাজ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের তৃতীয় নামাজ। আজকের এই লেখায় আমারা জানব, আসরের নামাজ কয় রাকাত।
আসরের নামাজের রাকাত সংখ্যা
আসরের নামাজের রাকাআত সংখ্যা নিয়ে বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হানাফি মাযহাব অনুযায়ী, আসরের নামাজ আট রাকাত। ৮ রাকাত সুন্নত ও চার রাকাত ফরজ। ফরজ নামাজের আগে চার রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া মুস্তাহাব।
আসরের নামাজের গুরুত্ব
আসরের নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। নামাজ পড়া ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত।”
মুসাফিরের আসরের নামাজ কয় রাকাত?
মুসাফিরের আসরের নামাজ দুই রাকাত। চার রাকাত বিশিষ্ট ফরজ নামাজ মুসাফির অবস্থায় দুই রাকাত পড়াই সুন্নত। হানাফি মাযহাব, শাফেঈ মাযহাব, মালিকী মাযহাব এবং হাম্বলী মাযহাবের সবকটিতেই এই মত রয়েছে।
আসরের নামাজের সময়
আসরের নামাজের সময় শুরু হয় যোহরের ওয়াক্ত শেষের পর থেকে গোধূলির আগ পর্যন্ত বা মাগরিবের নামাজের বা সূর্য ডোবার ২৫ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত।
অন্য এক বর্ণনায়, আসরের সময় হলো যখন মানুষের ছায়া তার দ্বিগুণ হয়। অর্থাৎ, যোহরের সময় শেষ হওয়ার পর থেকে আসরের সময় শুরু হয়। আসরের সময় শেষ হয় যখন সূর্য অস্ত যায়।
আছরের চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত
নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লা-হি তাআলা আরবাআ রাকায়াতি সালাতিল আছরি ফারজুল্লা-হি তাআলা মুতাওয়াজজিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
বাংলা: আমি আল্লাহর জন্য চার রাকাত ফরজ আসরের নামাজ পড়ার নিয়ত করছি। কিবলামুখী হয়ে আল্লাহু আকবার বলে নামাজ শুরু করছি।
অর্থাৎ, এই নিয়তটি আসরের নামাজের ফরজ রাকাআত পড়ার জন্য করা হয়। নিয়তটি করার সময় অবশ্যই সামনে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়াতে হবে এবং মনে মনে বা মুখে উচ্চারণ করতে হবে।
আসরের ফরজ নামাজ পড়ার নিয়ম
আসরের ফরজ নামাজ চার রাকাত। এ নামাজের কুরআন তিলাওয়াত করা, রুকু করা, সিজদা করা, বসা, তাশাহহুদ পড়া, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ার মতো সাধারণ সব নিয়ম রয়েছে।
আসরের নামাজের ধারাবাহিক বর্ণনা
আসরের ফরজ নামাজের ধারাবাহিকতা নিম্নরূপ-
প্রথম রাকাত
- নামাজের নিয়ত করা
- সানা পড়া
- সূরা ফাতিহা পড়া
- কোনো সূরা বা আয়াত পড়া
- রুকু করা
- সিজদা করা
- দাঁড়ানো
দ্বিতীয় রাকাত
- আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ বলা
- সূরা ফাতিহা পড়া
- কোনো সূরা বা আয়াত পড়া
- রুকু করা
- সিজদা করা
- তাশাহহুদ পড়া
- দাঁড়ানো
তৃতীয় রাকাত
- আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ বলা
- সূরা ফাতিহা পড়া (কোনো সূরা বা আয়াত পড়া – ঐচ্ছিক)
- রুকু করা
- সিজদা করা
- দাঁড়ানো
চতুর্থ রাকাত
- আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ বলা
- সূরা ফাতিহা পড়া (কোনো সূরা বা আয়াত পড়া – ঐচ্ছিক)
- রুকু করা
- সিজদা করা
- তাশাহহুদ, দুরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়া
- সালাম ফিরানো
আসরের নামাজের পরের দোয়া
নামাজের পরের দুয়া হলো এমন একটি দুয়া যা নামাজ শেষে পড়া হয়। এ দুয়াটি পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে নামাজের জন্য কবুল প্রার্থনা করা হয়, দোয়া ও মুনাজাত করা হয় এবং আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের আশা করা হয়।
নামাজের পরের দুয়ার কিছু উদাহরণ:
- اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ مِنْ خَيْرِ مَا سَأَلَكَ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا عَاذَ بِهِ عَبْدُكَ وَنَبِيُّكَ، اللَّهُمَّ إِنِّى أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে এমন কল্যাণ চাই যা তোমার বান্দা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) চেয়েছেন। আর আমি তোমার কাছে আশ্রয় চাই এমন অনিষ্ট থেকে যা তোমার বান্দা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আশ্রয় চেয়েছেন। হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে জান্নাত চাই এবং তোমার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নাম থেকে।
- رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا إِنَّكَ أَنْتَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ، وَتُبْ عَلَيْنَا إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ
অর্থ:
হে আমাদের রব! আমাদের থেকে কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি সবকিছু শুনতে ও জানতে পারো। আর আমাদের তওবা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী, দয়ালু।
- اللَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَحْيَا وَالْمَمَاتِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ فِتْنَةِ الْمَسِيحِ الدَّجَّالِ
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কবরবাসীর আযাব থেকে আশ্রয় চাই। আর আমি তোমার কাছে জীবন ও মৃত্যুর ফেতনার আশ্রয় চাই। আর আমি তোমার কাছে মিথ্যা মাসীহের ফেতনার আশ্রয় চাই।
নামাজের পরের দুয়ার কিছু সুন্নত:
- দুয়াটি বিনয় ও নম্রতা সহকারে পড়া।
- দুয়াটি মুখে উচ্চারণ করে পড়া।
- দুয়াটি আন্তরিকতার সাথে পড়া।
- দুয়াটি আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার আশায় পড়া।
নামাজের পরের দুয়া পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে আমাদের সকল চাওয়া-পাওয়ার কথা জানাতে পারি। এ দুয়াটি পড়ার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত ও ক্ষমা লাভের আশা করতে পারি।
পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাত সংখ্যা
ইসলামে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। প্রতিটি নামাজের রাকাত সংখ্যা ভিন্ন ভিন্ন। নিচে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাত সংখ্যা বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
ফজর নামাজ কয় রাকাত
ফজর নামাজে মোট চার রাকাত রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম দুই রাকাত সুন্নাত এবং পরের দুই রাকাত ফরজ।
যোহর নামাজ কয় রাকাত
যোহর নামাজে মোট বারো রাকাত রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত সুন্নাত, পরের চার রাকাত ফরজ, এরপর দুই রাকাত সুন্নাত এবং দুই রাকাত নফল।
আছর নামাজ কয় রাকাত
আছর নামাজে মোট আট রাকাত রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত সুন্নাত এবং পরের চার রাকাত ফরজ।
মাগরিব নামাজ কয় রাকাত
মাগরিব নামাজে মোট সাত রাকাত রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম তিন রাকাত ফরজ, এরপর দুই রাকাত সুন্নাত এবং দুই রাকাত নফল।
ইশা নামাজ কয় রাকাত
ইশা নামাজে মোট পনেরো রাকাত রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত সুন্নাত, পরের চার রাকাত ফরজ, এরপর দুই রাকাত সুন্নাত, তিন রাকাত বিতর এবং দুই রাকাত নফল।
জুম্মা নামাজ কয় রাকাত
জুম্মা নামাজে মোট বারো রাকাত রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চার রাকাত কাবলাল জুম্মা সুন্নাত, দুটি রাকাত ফরজ, চার রাকাত বায়াদাল জুম্মা সুন্নাত এবং দুই রাকাত নফল বা সুন্নাত।
শেষ কথা
এখানে আসরের নামাজসহ অন্যান্য নামাজের রাকাত সংখ্যা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। আশা করি এটি আপনার উপকারে আসবে।